
ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট বন্দর উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়নের লাঙ্গলবন্দ এলাকায় গতকাল মঙ্গলবার রাতে সনাতন ধর্মাবলম্বী বৃহৎ তীর্থ মহাষ্টমী স্নান উৎসব শুরু হয়েছে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পূণ্যার্থীরা লাঙ্গলবন্দ এসে ভীড় জমিয়েছে। পূর্ণ্যার্থীদের সেবা দিতে তীর্থ স্থান এলাকায় বিভিন্ন সংগঠন থেকে ৫৪টি সেবা ক্যাম্প স্থাপন করা হয়। যেখানে বিশুদ্ধ খাবার জল থেকে শুরু করে শিশুখাদ্য এবং মেডিক্যাল সেবা প্রদান করা হচ্ছে। আয়োজকরা জানান, এ বছর মঙ্গলবার রাত ৯ টা ১৮ মিনিটে স্লান লগ্ন শুরু হয়ে আজ বুধবার রাত ১০ টা ৪৭ মিনিটে শেষ হবে। হিন্দু শাস্ত্রমতে ”হে মহাভাগ ব্রহ্মপুত্র , হে লৌহিত্য , আমার পাপ হরণ করো”। এই মন্ত্র পাঠ করে ফুল, বেলপাতা, ধান দুর্বা, হরিতকি, ডাব, আমপাতা পিতৃকুলের উদ্দেশ্যে তর্পণ করেন। পুলিশ প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন থেকে শুরু করে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন শান্তিপূর্ন ভাবে স্নান উৎসব সম্পন্ন করতে। বাংলাদেশ পূজা উৎযাপন পরিষদ নারায়ণগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক ও স্নান উদযাপন কমিটির সদস্য শিপন সরকারকে সকাল থেকেই স্নান এলাকায় বেশ তৎপর থাকতে দেখা গেছে। স্নান উৎযাপন কমিটির কেন্দ্রীয় ক্যাম্প থেকে শুরু করে সকল বিষয়েই তদারকিতে ব্যস্ত সময় কাটাতে দেখা গেছে। জানা গেছে, লাঙ্গলবন্দের ললিত সাধুর আশ্রম থেকে বন্দর সাবদী লোকনাথ মন্দির পর্যন্ত গত বছর ১৭টি ঘাটে স্নান করেছেন পূণ্যার্থীরা। এবছর নতুন ৩টি ঘাটলা বৃদ্ধি করে মোট ২০টি ঘাটে স্নান করে পূণ্যার্থীরা। তীর্থস্থান এলাকায় প্রবেশ মুখে সর্বপ্রথম নাসিম ওসমান স্নান ঘাটের পর পরই নতুন এই তিনটি ঘাটলা নির্মিত হয়েছে। সে গুলো হলো বিষ্ণুপ্রিয়া স্নান ঘাট, হিন্দু সংস্কার সমিতি স্নান ঘাট ও ভদ্রেশ্বর কালীমন্দির স্নান ঘাট। তবে নতুন এই ঘাটলা গুলো অনেকেটাই অসম্পন্ন রেখেই কাজের সমাপ্তি টেনেছেন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান গুলো। পাশাপাশি বছর ব্যাপী স্থানীয় অসাধু কিছু লোকের অবৈধ বালু ব্যবসার কারনে ঘাটলা গুলোর তলা থেকে মাটি সরে গিয়ে তা ব্যবহারের অনুপযোগী অবস্থায় ছিলো। সরকারী দপ্তর গুলোর অক্লান্ত প্রচেষ্টা এবং স্নান উদযাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দের তদারকিতে আপাতত ভাবে ঘাটলা গুলো ব্যবহারের উপযোগী করে তোলা হয়েছে। এছাড়াও বালু ব্যবসায়ীদের অবৈধ ড্রেজিংয়ের ফলে ঘাটলা গুলোতে জলে নব্যতা কমে সেখানে বালির স্তর জমে গেছে। জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শিপন সরকার জানান, আমরা প্রায় মাস খানেক আগে থেকে স্নান উৎসবটি সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ন ভাবে সফল করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান আমাদের সার্বিক সহযোগীতা করেছেন। এছাড়াও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, বিআইডব্লিউটিএ, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর সহ সরকারী সকল দপ্তরের কর্মকর্তার বর্তমানে লাঙ্গলবন্দ এলাকায় নিজ নিজ দায়িত্ব গুলো পালন করে যাচ্ছেন। যার ফলে আমরা যেসকল সমস্যা চিহ্নিত করেছিলাম প্রায় সব গুলোই ইতোমধ্যে সমাধান করতে সক্ষম হয়েছি। বাকি যে নদে নব্যতা ও কচুরি পানার সমস্যা রয়েছে সেগুলো গত সোমবার রাতের মধ্যে আমরা সম্পন্ন করেছি। এতো সমস্যা থাকার পর খুব অল্প সময়ের মধ্যেই আমরা সেগুলো সমাধান করতে পেরেছি তা সম্ভব হয়েছে শুধুমাত্র আমাদের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের আন্তরিকতার কারনে। লাঙ্গলবন্দ স্নান উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকে আমরা তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। এদিকে গত ২ বছর করোনার কারণে অনেকটা সীমিত পরিষরেই মহাতীর্থ লাঙ্গলবন্দ স্নান উৎসব উদযাপিত হয়েছে। করোনার পরই এবারই প্রথম কোন প্রকার বিধি নিষেধাজ্ঞা ছাড়াই স্নান উৎসব পালিত হতে যাচ্ছে। তাই ধারণা করা হচ্ছে বিগত ২ বছরের থেকে এবছর আগত পূণ্যার্থীর সংখ্যা কয়েক গুন বেশি হয়েছে। তা আগত বিপুল সংখ্যক পূণ্যার্থীর সমাগমকে যাতে করে কোন প্রকার গুজবের ছড়িয়ে অপ্রীতিকর ঘটনার সৃষ্টির সুযোগ কেউ না নিতে পারে সেই ব্যাপারে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সর্তকতা অবলম্বন করা হয়েছে। স্নান এলাকায় বসানো হয়েছে পুলিশের ৬টি ওয়াচ টাওয়ার। বিভিন্ন স্পটে বসানো হয় সিটি টিভি ক্যামেরা। জায়গা জায়গা পুলিশের পক্ষ থেকে পূন্যার্থীদের উদ্দেশ্যে সর্তক বার্তা দেয়া হয়। র্যাব পুলিশের পাশাপাশি সেখানে দায়িত্বে রয়েছে আনসার সদস্যরাও। লাঙ্গলবন্দ এলাকায় টহল রয়েছে থানা পুলিশের একাধিক টিম। রাস্তার পাশে কেউ দোকান বসানোর চেষ্টা করলে তাদেরকে সরিয়ে দেওয়া হয়। যতটা সম্ভব তারা পূন্যার্থীদের যাতায়াতের রাস্তা প্রশস্ত রাখার চেষ্টা করেন। অপরদিকে স্নান এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, উৎসবের রূপ নিয়েছে তীর্থস্থান এলাকা। বছর জুড়ে যেই সকল অস্থায়ী মন্দির গুলো বন্ধ রাখা হয়। সেই সকল মন্দির গুলোর প্রতিমা গুলো নতুন করে চাকচিক্য করে স্নান উৎসবের তিথি শুরুর আগেই খুলে দেওয়া হবে সে সকল অস্থায়ী মন্দিরের দরজা। প্রসঙ্গত, উৎসব এলাকায় মেলা বসানোর ব্যাপারে কঠোর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান। গত বুধবার বন্দর উপজেলা প্রশাসনের প্রস্তুতি মূলক সভায় এমন নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে সংসদ সদস্য পুলিশ প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসন সহ হিন্দু নেতৃবৃন্দরাও একমত পোষন করেন। তবে পুলিশ প্রশাসনের তৎপরতার পরেও মেলা যেন আটকে রাখা সম্ভব হয়নি। রাস্তা ছেড়ে খালি জায়গা গুলোতে অনেক ক্ষেত্রে নদীর পাড়ে বালি ফেলে ভরাট করে মেলার জন্য কিছু দোকানপাট বসেছে। নাম প্রকাশ না করা শর্তে স্থানীয় কয়েকজন জানান, বছরে একবার এখানে উৎসব হয়ে থাকে। স্থানীয় লোকজন সারা বছর জুড়ে এই দুই তিনদের উৎসবের দিক চেয়ে থাকে। উৎসবের এই কয়দিন লাখ লাখ টাকার বেচা কেনা হয়ে থাকে। আর যারা বেচাকেনা করে থাকে তারা সবাই নি¤œবিত্ত মানুষ। মেলা চলতে না দেওয়া হলে এই নি¤œ বিত্ত মানুষ গুলোর আয়ের পথটা বন্ধ হয়ে যাবে। অথচ বছর জুড়ে এখানে জায়গা দখল করে বালুর ব্যবসা করা হয়। লাঙ্গলবন্দ এলাকার মাটি কেটে নিয়ে যাওয়া হয়। তারা সবাই প্রভাবশালী। কই এমপি সাহেব তো তাদের বিরুদ্ধে কখন ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলতে শুনলাম না। উনার দৃষ্টি কি শুধু নি¤œবিত্ত মানুষের আয় রোজগারের উপর পরে। চট্রগ্রামের সীতাকুন্ড থেকে ষাটোর্ধ নারী শেফালী(ছদ্মনাম) জানান, তিনি আরো ৫ দিন আগে এখানে এসেছেন। কিন্তু কোথাও বসার জন্য জায়গা পাননি। উনার মত আরো অনেকেই এসেছেন সীতাকুন্ড সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে। শেফালী রানী সাথে করে তার নাতনিকে নিয়ে এসেছেন। উৎসব চলাকালীন সময় রাস্তায় পাশে বসে চাল-ডাল, পয়সা তুলবেন বলে। স্নান শেষে কিছু দান করার রীতি থেকে পূণ্যার্থীরা নিজেদের সাধ্যমত চাল-ডাল খুচরা পয়সা, টাকা দান করে থাকেন। রাস্তার দুই পাশে কাপড় পেতে বসে থেকে এসব চাল-ডাল সংগ্রহ করেন শেফালী রানী। তিনি আরো জানান, তার পরিচিত এমন লোকও এখানে এসেছেন যাদের ২ ছেলে বিদেশে থাকে। কারো ছেলে সন্তান ব্যবসা করেন। যাদের আর্থিক অবস্থা ভাল তারাও এখানে এসে জায়গা দখল করে বসে আছেন। অনেকেই আগে থেকে এসে আশে পাশের বাসা বাড়িতে কাজ করেন। আর আমি অসহায় বিধবা আমার ছোট নাতিকে নিয়ে এসে বসার জায়গা পাইনি। নাতনিকে নিয়ে নাসিম ওসমান স্নান ঘাটে স্নান করছিলেন শেফালী রানী। সেই সময় এই প্রতিবেদকের সাথে কথা হয় তার। নদের জলের অবস্থা কেমন জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, ৫দিন আগে যখন প্রথম আসছিলাম তখন জল থেকে গন্ধ বের হতো স্নান করার সময়। এখন জল অনেকটাই পরিস্কার হয়েছে। আগের মত গন্ধ আসে না।
হাবিবুর রহমান বাদল ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফলে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের সাথে সাথে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা তার দোসররা কেউবা পালিয়েছে আবার কেউ আত্মগোপনে রয়েছে। বিগত পতিত সরকারের আমলে পেশাদার সাংবাদিকরা সব কিছু দেখলেও কোন কিছুই লিখতে পারতনা। আকাঁরে ইঙ্গিতে কোন কিছু লিখলেই সেইসব সাংবাদিকের উপর খর্গ নেমে […]
হাবিবুর রহমান বাদল নারায়ণগঞ্জসহ সারা দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটায় বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে নগরবাসীর আতঙ্কিত হওয়ার ঘটনা প্রতিদিন প্রকাশ পাচ্ছে। এনিয়ে সাধারণ নাগরিকরা সরব হয়ে উঠেছেন। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগ এনে বিভিন্ন মহল থেকে তার পদত্যাগ দাবি করা হচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল সোমবার বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা […]
ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট: আড়াইহাজার থানায় দায়ের করা উপজেলার দুপ্তারা ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি বাবুল মিয়া হত্যা মামলা নিয়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। গত ৩ জুন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বাবুল মিয়ার মৃত্যু হলেও দুই মাস পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় তিনি নিহত হয়েছেন উল্লেখ করে ২২ আগস্ট হত্যা মামলা করেছেন দুপ্তারা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন। এই […]
প্রকাশক ও সম্পাদক
হাবিবুর রহমান বাদল
০১৯১১০১০৪৯০
hr.badal@yahoo.com
বার্তা ও বাণিজ্যক কার্যালয়
৬. সনাতন পাল লেন
(হোসিয়ারী ক্লাব ভবন, তৃতীয় তলা)
৭৬৪২১২১
dbartanews@gmail.com
রেজি: ডিএ নং-২০৯৯