আজ সোমবার | ৫ মে ২০২৫ | ২২ বৈশাখ ১৪৩২ | ৬ জিলকদ ১৪৪৬ | রাত ১১:০৪

না’গঞ্জ যেন জনভোগান্তির শহর

ডান্ডিবার্তা | ০৫ মে, ২০২৫ | ৯:২৭ পূর্বাহ্ণ

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের রাস্তাঘাট মেরামত কবে নাগাদ করা হয়েছে তা সঠিক ভাবে নগরবাসী বলতে পারছেন না। শীতলক্ষ্যার পূর্বপাড়ে নাসিক রাস্তাঘাটের সম্প্রসারণসহ বিগত মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর সময়ে কিছুটা কাজ হলেও শীতলক্ষ্যার পশ্চিমপাড়ে অর্থাৎ মূল শহরে তেমন কোন উন্নয়ন কর্মকান্ডই হয়নি বলা চলে। বরং ওয়াসার দায়িত্ব নাসিক নেয়ার পর এখন নাসিকের ২৭টি ওয়ার্ডেই পানির জন্য নগরবাসীকে ভোগতে হচ্ছে। বিশেষ করে গত বছরের আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে সকল সিটি কর্পোরেশনের মেয়রদের অপসারণ করে অন্তর্র্বতী সরকার। কয়েকদিন পর কাউন্সিলরদেরও দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। স্থানীয় সরকার বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিবকে করা হয়েছে সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক। গত কয়েক মাস জনপ্রতিনিধিহীন সিটি কর্পোরেশনে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন সরকারি কর্মকর্তারা। অতিরিক্ত দায়িত্ব নিয়ে কর্মকর্তারা যেমন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছেন, তেমনি কাঙ্খিত সেবা না পাওয়ার অভিযোগ করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। নগরবাসী নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরশেন থেকে কোন প্রকার সেবা না পেলেও বছরের শুরুতেই করের জন্য তাগিদ দেয়া শুরু করে। এমন কি সময় মত কর পরিশোধ না করলে ক্রোকের হুমকিও দেয়া হয়। অথচ নারায়ণগঞ্জ শহরে ইজি বাইক ও অটো রিকশায় ছয়লাব। ময়লা আবর্জনায় পথচলা দুস্কর। ড্রেন সংস্কারের কাজ হাতে নিয়েছে বেশ কয়েক মাস। যথা সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতে মূল সড়কে হাঁটু পানি জমে। রাস্তঘাটের সংস্কার করার কোন উদ্যোগই নেই নগরকর্তাদের। নগরবাসী সেবার আশায় নাসিক ভবনে ধর্না দিয়েও কর্মকর্তাদের দেখা সাক্ষাত পান না। ফলে নারায়নগঞ্জ সিটি করপোরেশন এলাকা এখন বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এ ব্যপারে কয়েক দফা নাসিকের প্রশাসক ও সচিবের সাথে যোগাযোগ করেও তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা জানান, ড্রেনেজ সিস্টেম আধুনিকি করণ করতে নগরবাসীর সামান্য সমস্য হচ্ছে। অচিরেই ইজি বাইক ও অটো রিকশা নাসিকের রাস্তাঘাটের সংস্কারসহ নগরবাসীর সেবা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে। পাশাপাশি তিনি পর্যপ্ত অর্থ ও লোকবলের সমস্যা রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন। এদিকে, রাজনৈতিক নেতারা বলছেন, সাধারণ মানুষ এ ভোগান্তি থেকে মুক্তি পাবে জনপ্রতিনিধিদের উপস্থিতিতেই। তবে নির্বাচনের পূর্বে অন্তর্র্বতী এ সময়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদেরও আন্তরিকতার সাথে সেবা প্রদানে ভূমিকা রাখার আহŸান জানান তারা। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, শহরের বিভিন্ন এলাকায় বেহাল ড্রেনেজ ব্যবস্থা, জলাবদ্ধতা, খানা-খন্দে ভরা সড়ক, মশক নিধনে ব্যর্থতা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিশৃঙ্খলা, পরিবহন নৈরাজ্যসহ নানা সমস্যায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন তারা। সুপেয় পানির অভাবও ভোগান্তির নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে। নগরীর তিন অঞ্চলে পাইপলাইনে সমস্যা, পাম্প বিকল থাকা এবং দুর্গন্ধযুক্ত পানির অভিযোগ যেন সিটি এলাকার বাসিন্দাদের নিত্যদিনের। কিন্তু এসব বিষয়ে কোথাও অভিযোগ জানিয়ে প্রতিকার পাচ্ছেন না বলেও জানান নগরবাসী। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা হাবিবুর রহমান বলেন, “নাগরিক সেবা পেতে সিটি কর্পোরেশন গেলে দীর্ঘ সময় লাগছে। বর্তমানে যারা আছেন তারা ধীরগতিতে কাজ করছে। ফলে আমাদের ভোগান্তি বাড়ছে। এক্ষেত্রে জনগণ তাদের সমস্যার কথা বলার জন্য কাউকে খুঁজে পায় না, যার ফলে সমস্যাগুলো দীর্ঘস্থায়ী হয়। ফলে সেবাগ্রহীতাদের তাদের নাগরিক সেবা নিয়ে প্রতিনিয়ত ভোগান্তি পেতে হচ্ছে।” এছাড়া, চলমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর সঠিক তদারকি ও সমন্বয়ের অভাবে তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন সমস্যা। নাগরিক মতামত বা স্থানীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে পরামর্শ ছাড়াই বাস্তবায়িত হচ্ছে প্রকল্প, যার প্রভাব পড়ছে সাধারণ মানুষের জীবনে। স¤প্রতি কদমরসুল সেতুর নকশা পরিবর্তনের দাবিও এসেছে নাগরিক মহল থেকে। নারায়ণগঞ্জ নাগরিক আন্দোলন নামে একটি প্ল্যাটফর্ম জানিয়েছে, কদমরসুল সেতুটির পশ্চিম প্রান্তের মুখটি যানজটসহ ভোগান্তি বাড়াবে। নগর পরিবহনের সুবিধার্থে এ মুখের নকশা পরিবর্তন করতে হবে। রাজনৈতিক কর্মীরা বলছেন, গণতান্ত্রিক নগর ব্যবস্থাপনায় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির অনুপস্থিতি শুধু অব্যবস্থাপনাই নয়, জবাবদিহিতার সংকট তৈরি করে। এতে দুর্নীতি, অপচয় ও উন্নয়ন প্রকল্পে সমন্বয়হীনতা বেড়ে যায়। সুশাসনের স্বার্থে দ্রæত নির্বাচন আয়োজনের মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনে একটি কার্যকর প্রশাসনিক কাঠামো গঠন করা জরুরি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। নারায়ণগঞ্জ নাগরিক আন্দোলনের আহŸায়ক রফিউর রাব্বি বলেন, “সিটি কর্পোরেশনে প্রশাসককে দায়িত্ব দেওয়ার পরে অনেক সময় প্রশাসক, সিইও, সচিব তারা অনেকে অনুপস্থিত থাকেন। নারায়ণগঞ্জের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটা সিটি কর্পোরেশন এইভাবে হেলা-ফেলা করে পরিচালনা করা সঠিক না। ফলে দ্রæত ওই স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে নির্বাচন দিয়ে জনপ্রতিনিধি বসানো জরুরি।” তিনি আরও বলেন, “প্রশাসক নারায়ণগঞ্জের লোকও না উনি বাইরে থেকে এসে দায়িত্ব পালন করেন। ফলে তাদের ওইভাবে আন্তরিকতা থাকে না, তাদের দায়বোধ কাজও করে না। যারা ভোটে নির্বাচিত তাদের একটি দায় থাকে। ফলে জনগণ তাদের নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এটার সমাধান হচ্ছে যদি নির্বাচন হয় জনপ্রতিনিধি বসে তাহলে হয়তো এটা পরিবর্তন হবে।” নির্বাচনের আগ পর্যন্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তাদের আরও সক্রিয়ভাবে কাজ করার আহŸান জানিয়ে মহানগর বিএনপির আহŸায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, “আমরা দলীয়ভাবে জাতীয় নির্বাচন দ্রæত আয়োজনের দাবি জানিয়ে আসছি। নির্বাচিত সরকার পরে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের আয়োজন করবে। তখন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা আসলে তাদের জবাবদিহিতা বলেন আর পরবর্তী নির্বাচনে জেতার তাগিদ থেকেও তারা নগরবাসীর সেবার কথা আগে চিন্তা করবেন। তাই দ্রæত সংস্কার করে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা উচিত।” তিনি আরও বলেন, “সিটি কর্পোরেশনে যিনি প্রশাসক আছেন তিনি এখানে অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত, তিনি মন্ত্রণালয়ের কাজের সাথে মিল রেখে সপ্তাহে দুই-তিনদিন সিটি কর্পোরেশনে আসেন। তাকে উচিত হবে মন্ত্রণালয়ের কাজ থেকে সরিয়ে সিটি কর্পোরেশনের জন্য সার্বক্ষণিক করা। কেননা, একটা প্রতিষ্ঠানের প্রধানের সেই প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত থাকা উচিত। তবে, দ্রæত নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনপ্রতিনিধিদের কাজ জনপ্রতিনিধিদের হাতেই যাওয়া উচিত।” গণসংহতি আন্দোলনের নারায়ণগঞ্জ জেলার প্রধান সমন্বয়কারী তরিকুল সুজন বলেন, “একজন জনপ্রতিনিধি সাধারণ জনগণের সংস্পর্শে থেকে যেভাবে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করে থাকেন এবং নাগরিক সেবাদানে প্রচেষ্টা চালিয়ে যান। সেক্ষেত্রে একজন সরকারি কর্মকর্তা সাধারণ জনগণের সমস্যা সরাসরি সেভাবে গুরুত্ব দিয়ে দেখেন না। আমাদের সামাজিক বাস্তবতায় এটাই স্বাভাবিক। সে ক্ষেত্রে এখন জনপ্রতিনিধি শূন্য প্রশাসনে জনগণের সেবার জন্য অনলাইনভিত্তিক কার্যক্রম বাড়ানো উচিত যাতে জনগণ ঘরে বসে সব ধরনের সেবা পেতে পারে। স্থায়ী সমাধানের ক্ষেত্রে সংস্কার শেষে দ্রæত জাতীয় নির্বাচনের পরে স্থানীয় নির্বাচন দিলে সেখানে জনপ্রতিনিধি জনগণের জন্য কাজ চালিয়ে যেতে পারবেন।” জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের সংগঠক শওকত আলী বলেন, “জনপ্রতিনিধি না থাকার কারণে বর্তমানে নাগরিক সেবায় ভোগান্তি হচ্ছে। তারা কার কাছে যাবে সেক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে। যার জন্য বর্তমানে প্রয়োজন বর্তমানে দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের আরও আন্তরিক হওয়া ও দায়িত্বের সাথে কাজ করা। পাশাপাশি দ্রæত স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে জনপ্রতিনিধিরা কাজগুলো এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন এবং জনগণের ভোগান্তি লাঘব হবে।”




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১
১২১৩১৪১৫১৬১৭১৮
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭২৮২৯৩০৩১  
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা