
ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট
নারায়ণগঞ্জে ছাত্র জনতার আন্দোলন দমনে অত্যাধুনিক সব অস্ত্র ব্যাবহার করেছিল শামীম ওসমান ও তার অনুসারীরা। স্বয়ংক্রিয় অত্যাধুনিক এসকল অস্ত্র সাধারণত পুলিশের কাছেও দেখা যায় না। রাইফেল ক্লাবের অস্ত্রের পাশাপাশি আন্দোলন দমন করতে শামীম ওসমান ও তার অনুসারীদের নদী পথে অস্ত্র এনে দেন ফতুল্লার আলোচিত তেল মাফিয়া টুটুল ওরফে তেল টুটুল। আওয়ামী লীগের পতনের এত মাস পরেও এখনও ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন টুটুল। জানা যায়, অত্যাধুনকি এসকল অস্ত্রের ভান্ডার এখনও টুটুলের কাছেই সংরক্ষিত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সামনে আওয়ামী লীগ সক্রিয় হলে নারায়ণগঞ্জে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে এসকল অবৈধ অস্ত্র ব্যাবহৃত হতে পারে। যেহেতু টুটুল স্থানীয় কিছু প্রভাবশালীকে মাসে মাসে ৫০ লাখ করে টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে এখনো নিয়মিত তেল সিন্ডিকেট চালিয়ে যাচ্ছেন যেহেতু আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতাদের নির্দেশ পেলে তাদের ক্যাডারদের হাতে সেসব অস্ত্র তুলে দেবেন টুটুল। পাশাপাশি তেল আনার সঙ্গে গোপনে গান পাউডারসহ নাশকতার বিভিন্ন উপকরণ তিনি এনে দেবেন বলে আওয়ামীলীগের একটি সূত্র জানিয়েছে। জানা যায়, নদীপথে বিভিন্ন জাহাজ ও ট্রলারে করে ফতুল্লার যমুনা ডিপোতে তেল আনা নেয়া করা হয়। ডিপোর তেল চুরির পাশাপাশি এই পথেই চোরাই তেল আনতেন টুটুল। তেলের পাশাপাশি বিভিন্ন যানবাহনে যমুনা ডিপোর ভেতর দিয়ে নানা অবৈধ মালামাল আনতেন তিনি। জানা যায়, ছাত্র জনতার আন্দোলন চলাকালীন সময় শামীম ওসমানের নির্দেশে দেশের বাইরে থেকে তেল চুরির সিন্ডিকেটের সদস্যদের মাধ্যমে বুড়িগঙ্গা নদী হয়ে অস্ত্রের বিশাল চালান দেশে আনেন টুটুল। ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই এর আগে ফতুল্লা থেকে অস্ত্রের বিশাল চালান চাষাঢ়ায় নিয়ে আসেন টুটুল। পরবর্তীতে এই অস্ত্র নিয়ে শহরে তান্ডব চালায় শামীম ওসমান ও তার অনুসারীরা। শহরের নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের সামনে থেকে গুলিবর্ষণ করতে করতে আন্দোলনকারীদের ধাওয়া দিয়ে ডিআইটি এলাকা পর্যন্ত যান শামীম ওসমান। এসময় চারিদিকে এলোপাতাড়ি গুলি ছুঁড়তে থাকেন শামীম ওসমান ও তার অনুসারীরা। ১৯ জুলাই বিকেলে প্রায় একই সময় নয়ামাটি এলাকায় বাড়ির ছাদে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান রিয়া গোপ। সেদিন দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শহরে কোন পুলিশ সদস্যরা ছিল না। শামীম ওসমানকে টুটুলের সরবরাহকৃত এসব অস্ত্রের গুলিতেই রিয়া গোপ নিহত হন বলে জানা যায়। টুটুলের অস্ত্র যোগানের তথ্য একাধিক ছাত্রলীগের কর্মী সেসব বলে বেড়াতো। জানা যায়, সাধারণ অস্ত্রের রেঞ্জ এত বেশি হয় না। অত্যাধুনিক অস্ত্রের গুলির রেঞ্জ বেশি থাকে, এসকল অস্ত্রের গুলি অনেক দূর পর্যন্ত লক্ষ্য বস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম। ধারণা করা হয় এমন অত্যাধুনিক অস্ত্রের গুলিতেই রিয়া গোপের মৃত্যু ঘটে। সেসময় সরকার কর্তৃক সবকিছু কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করায় ময়নাতদন্তের রিপোর্ট নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। যথাযথ রিপোর্ট পাওয়া গেলে এবিষয়ে আরও স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যেত। তেল টুটুলের উত্থানের গল্প যেন সিনেমার গল্পকেও হার মানায়। টুটুলের পুরো নাম জয়নাল আবেদীন টুটুল। তার বাবা বাবা মো: রফিক একসময় ছিলেন ফতুল্লার পঞ্চবটিতে অবস্থিত রাষ্ট্রয়াত্ব তেল কোম্পানী যমুনা অয়েল কোম্পানীর সিকিউরিটি গার্ড। কর্তব্যপালনরত অবস্থায় তিনি মারা যাওয়ার পর তার পরিবারের একজন সদস্য হিসেবে টুটুল যুমনা তেল ডিপোতে কাজ পায়। তবে স্থায়ী কোন চাকরী নয়। অস্থায়ী ভিত্তিতে (নো ওয়ার্ক নো পে) ডিপোর ক্যান্টিন বয় হিসেবে। তার কাজ ছিল প্লেট ধোয়ার। বিনিময়ে দৈনিক ৫০ থেকে ৫৫ টাকা পেতেন। গ্রামের স্কুলে থ্রি-ফোর পর্যন্ত, তারপর ফাইভ-সিক্স নারায়ণগঞ্জের লেখা-পড়ার কথা জানিয়েছেন টুটুল। ক্যান্টিন বয় থেকে এক সময় স্থায়ী চাকরী পেয়ে যান ডিপোর গ্রেজার (তেল মাপার অপারেটর) সেকশনে। তেল মাপার চাকরী পাওয়ার পর টুটুলকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ধীরে ধীরে তার ভাগ্যের চাকা খুলে যায়। অল্পদিনের মধ্যে তেল চুরির বিদ্যা রপ্ত করেন তিনি। প্রতিদিন হাজার হাজার লিটার তেল চুরির সিন্ডিকেটের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন টুটুল। যমুনা অয়েল কোম্পনীর নিয়ন্ত্রণ করা তিনজন কর্মকর্তা ও দুইজন সিবিএ নেতার সমন্বয়ে ওই সিন্ডিকেট। ওই সিন্ডিকেটের ইশারায় বদলী, পদায়ন থেকে শুরু করে সব কিছুই হত সেসময়। যমুনা অয়েল কোম্পানীর সংশ্লিষ্টদের মতে, তেল চুরি সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত এসকল গ্রেজারের প্রত্যেকের দৈনিক আয় কমপক্ষে ১ লাখ টাকা। কখনো কখনো মাসে এ টাকার অংক ছাড়িয়ে যেত কোটিতে। জানা যায়, আওয়ামী লীগের আমলে তেল চুরির টাকায় হাজার কোটি টাকার সম্রাজ্য গড়ে তোলেন টুটুল। টাকার ভাগ পেতেন আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারাও। অবৈধ এ টাকা দিয়ে ফতুল্লাসহ দেশে বিদেশে কোটি কোটি টাকার সম্পদ গড়ে তোলেন টুটুল। পাঁচ আগষ্টের পর আওয়ামী লীগের শেল্টারে বেড়ে ওঠা তেল মাফিয়ার ব্রাজিল বাড়িতে হানা দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা। এসময় তার বাড়িতে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। জানা যায়, পাঁচ আগষ্ট সরকার পতনের খবর পাওয়ার সাথে সাথে পরিবারের সদস্যদের পার্শ্ববর্তী একটি বাড়িতে লুকিয়ে রাখে টুটুল। তবে বাড়িতে আটকে পড়েন তিনি। স্থানীয় জনতা টুটুলের বাড়িতে হানা দিলে বাড়ির ছাদ থেকে রশি বেয়ে পাশের একটি বাড়ির ছাদে আশ্রয় নেন টুটুল। রাত পর্যন্ত সেখানেই থাকেন টুটুল। পরে রাতে স্থানীয় প্রভাবশালীদের সহায়তায় গোপনে অন্যত্র পালিয়ে যান টুটুল। এদিকে পাঁচ আগষ্টের পর স্থানীয় প্রভাবশালীদের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলেছেন টুটুল। তাদের শেল্টারে পর্দার অন্তরালে থেকেই এখনও তেল চুরির সিন্ডিকেট পরিচালনা করছেন টুটুল। জানা গেছে, আন্দোলন দমন করতে দেশের বাইরে থেকে আনা অত্যাধুনিক এসকল অস্ত্রের মজুদ এখনও টুটুলের কাছে রয়েছে। পাশাপাশি বিদেশে পলাতক গডফাদারদের সাথেও নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন তেল টুটুল।
ই-
হাবিবুর রহমান বাদল ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফলে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের সাথে সাথে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা তার দোসররা কেউবা পালিয়েছে আবার কেউ আত্মগোপনে রয়েছে। বিগত পতিত সরকারের আমলে পেশাদার সাংবাদিকরা সব কিছু দেখলেও কোন কিছুই লিখতে পারতনা। আকাঁরে ইঙ্গিতে কোন কিছু লিখলেই সেইসব সাংবাদিকের উপর খর্গ নেমে […]
হাবিবুর রহমান বাদল নারায়ণগঞ্জসহ সারা দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটায় বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে নগরবাসীর আতঙ্কিত হওয়ার ঘটনা প্রতিদিন প্রকাশ পাচ্ছে। এনিয়ে সাধারণ নাগরিকরা সরব হয়ে উঠেছেন। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগ এনে বিভিন্ন মহল থেকে তার পদত্যাগ দাবি করা হচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল সোমবার বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা […]
ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট: আড়াইহাজার থানায় দায়ের করা উপজেলার দুপ্তারা ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি বাবুল মিয়া হত্যা মামলা নিয়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। গত ৩ জুন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বাবুল মিয়ার মৃত্যু হলেও দুই মাস পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় তিনি নিহত হয়েছেন উল্লেখ করে ২২ আগস্ট হত্যা মামলা করেছেন দুপ্তারা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন। এই […]
প্রকাশক ও সম্পাদক
হাবিবুর রহমান বাদল
০১৯১১০১০৪৯০
hr.badal@yahoo.com
বার্তা ও বাণিজ্যক কার্যালয়
৬. সনাতন পাল লেন
(হোসিয়ারী ক্লাব ভবন, তৃতীয় তলা)
৭৬৪২১২১
dbartanews@gmail.com
রেজি: ডিএ নং-২০৯৯