দলের সুনাম রক্ষায় হার্ডলাইনে বিএনপি

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট
বিএনপির সুনাম অক্ষুন্ন রাখার জন্য হার্ডরাইনে রয়েছে দলছি। দলের পক্ষ থেকে কঠোর নির্দেশানা থাকলেও অনেকে দলের সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নানা ভাবে অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে। ইতিমধ্যে ফতুল্লা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াদ চৌধুরী, বন্দর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মাজহারুল ইসলাম হিরনের অপকর্ম প্রকাশ পেয়েছে। এবার বন্দর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক লিটনের বিরুদ্ধে মামলা বানিজ্যের অডিও ফাঁস হয়েছে। দুই জনের বিরুদ্ধে দল ব্যবস্থা নিলেও এখনো বন্দর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক লিটনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সংবাদ পাওয়া যায়নি। দীর্ঘ ১৬ বছর রাজপথের আন্দোলন সংগ্রাম পরিচালনায় ব্যাপক নির্যাতনের শিকার হওয়ায় বিএনপির বহু কথিত নেতাকর্মীরা পটপরিবর্তনের ৯ মাসে আওয়ামী লীগের সাথে নানা ভয় দেখিয়ে আপোষ করে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা ঠিকাদারি নিচ্ছেন আওয়ামী লীগের ব্যবসা-বাণিজ্যে দেখভালের। তাছাড়া বিগত দিনে আওয়ামী লীগে আশ্রয় থাকা বহু ব্যবসায়ীদের হুমকি-ধমকি দেখাচ্ছেন অনেক সময় মিষ্টি কথায় ও ভয় দেখিয়ে কাজ না হলে আগুন লাগিয়ে নিস্ব করে দিয়েছেন বহু ব্যবসায়ীদের প্রতিষ্ঠান। যা ৫ আগষ্টের পর পদে পদে লক্ষ্য করা গেছে। এদিকে বর্তমানে তারেক রহমানের ৩১ দফা সাধারণ জনগণের কাছে বিলিয়ে দিতে বিএনপি নেতাকর্মীদের নানান নির্দেশ থাকলে ও দলের ভাবমূর্তি নষ্ট এবং দলকে বিক্রি করে চালিয়ে আসছেন নানান অপকর্ম। যা স্পষ্ট তথ্য ও প্রমানের ভিত্তিতে দল থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে একে একে করছেন বহিস্কার বিলুপ্ত করছেন কমিটি। এতে করে নিজেদের বড় নেতা হিসেবে আখ্যা দেওয়া অনেকেই পরিচয় পাচ্ছেন বহিস্কৃত নেতা ট্যাগ। এমনই এক দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে গত ১৫ মে ফতুল্লা থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াদ চৌধুরীকে বিএনপির প্রাথমিক সকলদল থেকে বহিস্কার করা হয়। এ ছাড়া এ আগে নারায়ণগঞ্জের এমন একাধিক বিএনপি নেতা হারিয়েছেন তার রাজনৈতিক পরিচয়। বর্তমানে পটপরিবর্তনের পর তারেক রহমানের এই বিচক্ষণ সিদ্ধান্তে সাধুবাদ জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীরা। তাদের দাবি তারেক রহমান রিয়াদ চৌধুরীসহ এর আগে যত বিএনপির নেতার্মীদের বিরুদ্ধে যথাযথ তথ্য প্রমাণ পেয়েছেন এদের দল থেকে বহিস্কার করেছেন। আমরা নারায়ণগঞ্জ বিএনপি তারেক রহমানের সিদ্ধান্তে এক মত পোষন করছি। এদিকে পটপরির্বতনের পর দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ের নারায়ণগঞ্জে বহিস্কার তালিকায় নাম উঠিয়েছেন যারা। গত ২০২৪ সালের ৫ নভেম্বর দলের ভাবমূর্তি নষ্টের দায়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সভাপতি মাজেদুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন সাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সদস্য অকিলউদ্দিন ভূইয়া এবং সিটি কর্পোরেশনের ৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য ও মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহ সভাপতি দেলোয়ার হোসেন খোকন। ২০২৪ সালের ১৪ ডিসেম্বর “দলবল নিয়ে সাংবাদিক মিনহাজ আমানকে শারীরিকভাবে আঘাত ও লাঞ্ছিত করার অভিযোগে ইকবাল হোসেনের কর্মকাÐ দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেনকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। গত ২৩ জানুয়ারী দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে যুবদল নেতা আশরাফ ভূইয়াকে কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আব্দুল মোনায়েম মুন্না ও সাধারণ সম্পাদক মো. নুরুল ইসলাম নয়ন স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বহিস্কার করা হয়। গত ২০ মার্চ দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে রূপগঞ্জ থানা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহŸায়ক শামীম মিয়াকে প্রাথমিক সদস্য পদসহ দল থেকে বহিষ্কার করেন। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদল কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম নয়ন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে। গত ১৫ মে নোয়াগাঁও ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বাবুল হোসেনকে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে দল থেকে বহিস্কার করা হয়। তাছাড়া দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ের পটপরিবর্তনের পর নারায়ণগঞ্জে শতাধিক বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী বহিস্কার হয়েছে বলে জানা গেছে। দফায় দফায় তারেক রহমানের এই বহিস্কার বিষয়ে জেলা বিএনপির আহŸায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ বলেন, দলের নীতির বিরুদ্ধে যে কোন কর্মকাÐের সাথে যেই যুক্ত হোক তাকে দলীয় শাস্তির আওতায় আনা হবে। ইতিমধ্যে পটপরিবর্তনের পর অনেকই বহিস্কার করা হয়েছে। এটা দলের নির্ধারিত বিষয়। তা ছাড়া আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেব তদন্তের ভিত্তিতেই সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত নেন আমরা তার সিদ্ধান্তে সহমত প্রকাশ করছি। মহানগর বিএনপির আহŸায়ক এড. সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান অভিযোগের পর তদন্ত সাপেক্ষেই এই ব্যবস্থাগুলো গ্রহণ করছেন। আর এই বহিস্কার হলো বিএনপি নেতাদের জন্য সতর্ক সংকেত। আর বারবারই আমাদের বোঝানো হচ্ছে যে রিয়াদ চৌধুরীসহ বিগত দিনে আরো বহিস্কৃত অনেকেই যারা হয়েছে তাদের মতো যেন আমরা ও এমন না করি। তারেক রহমান যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছেন তিনি তার অবস্থান থেকে সঠিক। মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব এড. আবু আল ইউসুফ খান টিপু বলেন, তারেক রহমান যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা সময় উপযোগী সিদ্ধান্ত। গত ১৬ বছর আওয়ামী লীগ যা করেছে বিএনপি যদি এমন কিছুই করে তাহলে আন্দোলন করে কি লাভ হলো। সেই ক্ষেত্রে জগণের কাছে আস্থা ও বিশ্বাসের জায়গা গড় তুলতে তারেক রহমান যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন আমরা তা সাধুবাদ জানাই। জেলা বিএনপির যুগ্ম আহŸায়ক মাসুকুল ইসলাম রাজীব বলেন, আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান স্পষ্টভাবে বারবারই বলেছেন ব্যাক্তি কোন অপরাধ দল দায় বহন করবে না। যদি কোন ব্যাক্তি দলের মদ্যে থেকে বা দলের বাহিরে থেকে ও যদি দলের নাম ভাঙ্গিয়ে কোন অপকর্ম করেন তাহলে সেটার দায় দায়িত্ব তাকে নিতে হবে। তাছাড়া ও তারেক রহমান সাহেব আরো বলেছেন এমন অভিযোগ যদি কারো নামে আসে তা প্রমানিত হয় তাহলে দল তার সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিবেনসহ পরিবর্তনের পূর্বে বা এর পর অনেকেই বহিস্কার ও শোকজ হয়েছেন। তা ছাড়া ও তারেক রহমান সাহেব আরো বলেছেন যে, আইনানুগভাবে ও সরকার যাতে সেই অভিযোগে নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়। তারেক রহমানের সিদ্ধান্তে আমরা একমত। ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ আসনের সাবেক সাংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপির সদস্য মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন বলেন, দেশের রাজনৈতিক সব থেকে বড় দল হিসেবে পরিচিত বিএনপি। এছাড়া আন্দোলন সংগ্রামের নানান নির্যাতনের পর গত ৫ আগষ্ট আসে যাকে ঘিরে বিএনপিসহ সারাদেশের মানুষই নতুন সূর্যদয় দেখতে পায়। এদিকে পটপরিবর্তনের পর বিএনপি যেহেতু জনগণের আস্থার দল সেই হিসেবে বিএনপি উপরে ও জনগণের চাহিদা আরো বেড়ে যায়। আর জনগণের এই দুর্বলতাকে আমরা ও বিগত আওয়ামী স্বৈরাচারের মতোই কাজে লাগাই তাহলে তো বিএনপি জনগণের আস্থা হারাবে। এছাড়া গত ১৫ মে বিএনপির সুনামখ্যাতি নষ্ট করা একটি ব্যাক্তিকে দল থেকে বহিস্কার করে ফুতল্লাবাসীর কাছে বিএনপি ফের জায়গা করে নিয়েছে। এছাড়া ও পটপরিবর্তনের পর দলের ভাবমূর্তি নষ্টকারী অনেক নেতারা দল থেকে বহিস্কার ও শোকজ করা হয়েছে যা দলের আগামী দিনের ভালো লক্ষণ। কারণ আমাদের এমন কিছু করা যাবে না যে নেতার নেতৃত্ব প্রশ্নবিদ্ধ হয়। সেই ক্ষেত্রে ফতুল্লাকে দীর্ঘদিনের বহু অপকর্ম থেকে মুক্ত করতে তারেক রহমানের যে সিদ্ধান্ত তা আমরা স্বাগত জানাই।
ই-