
নাসির উদ্দিন
পাঁচশত বছর আগের ইতিহাস নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে কদম রসুল দরগাহ। এটি মুসলিম স্থাপত্যের একটি অনন্য নিদর্শন। নামেই যার পরিচয় বহন করে। এক কথায় রসূলের কদম (পা) কে বুঝানো হয়েছে। আর রাসূল (হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াছাল্লাম) এর কদমের ছোঁয়া পড়েছে এমন একটি পাথর আছে বলেই এই দরগাহের নামটির এমন নামকরণ করা হয়েছে বলে কথিত আছে। যা এই এলাকার ধর্মভক্ত মানুষজন মনে প্রাণে বিশ্বাস করে। দরগাহটি নারায়ণগঞ্জ জেলার অন্যতম একটি দর্শনীয় স্থান যা বন্দর উপজেলার নবীগঞ্জ এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীর কোল ঘেঁষে অবস্থিত। ধারণা করা হয়, দরগায় রক্ষিত পাথরের ফলকের উপর দৃশ্যমান পদচিহ্নটি প্রকৃতপক্ষে হযরত মুহম্মদ (সা.) এর পদচিহ্ন। পরে সেই পাথরটিকে মানুষের পায়ের পাতার আকৃতিতে কাটা হয়। পাথরের এই ফলকটি দরগাহের ভিতর অত্যন্ত যতেœর সাথে সংরক্ষিত করে রাখা আছে। কদম রসুল এই পাথরের মাধ্যমে হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এখানে প্রতিদিন বহু ধর্মপ্রাণ মুসলমান দরগাহ জিয়ারত করতে আসেন। এই দরগাহ ও পাথর নিয়ে লোকমুখে বিভিন্ন ব্যাখ্যা ও গল্প প্রচলিত রয়েছে। কিন্তু এই পাথরের ছাপটি রসুলের পায়ের ছাপ দাবি করা হয়। এই দরগাহের পশ্চিম দিকে যেখান দিয়ে মূল প্রবেশ পথ সেখানে খুব সুন্দরভাবে কারুকাজ করে গড়ে তোলা হয়েছে একটি সুউচ্চ তোরণ। দূর থেকে যে কেউ ভাববে এই তোড়নটিই দরগাহের মূল অংশ। আসলে এটি একটি প্রবেশ তোরণ বা মূল দরগাহের প্রবেশ দেয়াল মাত্র। এই সুউচ্চ জায়গাটির ঠিক মাঝামাঝি অবস্থিত একটি এক গম্বুজ বিশিষ্ট সাদা শ্বেত পাথরের মাজার। আর এই মাজারের ভিতরেই খুব যতেœর সাথে সংরক্ষিত আছে সেই পাথরটি। দেখতে আগের দিনের কাঠের যে খড়ম আছে সেই খড়মের মতোই। এখন থেকে প্রায় ত্রিশ পয়ত্রিশ বছর আগে দর্শনার্থীগণ এটি খুব সহজেই এটি দেখতে পারতো, এই পাথরে চুমো খেতে পারতো। কিন্তু এখন আর আগের মতো এত সহজে পাথরটিকে দর্শনার্থীদের সামনে নিয়ে আসা হয় না। এটা এখন একটি কাঁচের বাক্সের ভিতর রাখা আছে এবং কিছু বিশেষ দিনেই এটা বাক্স থেকে বের করে দেখানো হয়। এই পাথরটি একটি গোলাপজল মিশ্রিত পানির মধ্যে চুবিয়ে সেই পানি ছোট একটি কাঁসের গাসে করে ভক্তদের পান করতে দেওয়া হয়। এই মাজারের সাথেই একটি কবরে মাঝখান দিয়ে বের হয়েছে একটি বিশাল কাঠ গোলাপের গাছ। যা এই মাজারটির মহিমা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। স্থানীয় ৭০ বছর বয়সের বৃদ্ধ মোতালেব মিয়া জানান, তিনি তার বাবা ও দাদাসহ এলাকার অনেকের মুখেই শুনেছেন এক সাধক মক্কায় হজ্ব করতে গেলে সেখানে তিনি এক উচ্চ মাপের এক সাধকের কাছ থেকে এই পাথরটি উপহার হিসেবে পান। আমৃত্যু এই পাথরটিকে তিনি তার বুকে আগলে রাখেন এবং এখানেই মারা যান। তাই রাসুলের (সা.) প্রতি সম্মান জানাতে এবং সাধকের এই ভালবাসাকে কেন্দ্র করে এখানে এই মাজারটি গড়ে উঠে। তবে কদম রসুল দরগাহ বিষয়ে ইতিহাস ঘাঁটাঘাটি করে জানা যায়, বিভিন্ন মুসলিম ইতিহাসে কথিত আছে, মেরাজের রাতে যখন মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) বোরাকে উঠছিলেন তখন বেশকিছু পাথরে নবীজির পায়ের ছাপ পড়ে। এই ছাপ পড়া পাথরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত পাথরটি রয়েছে জেরুজালেমে। ইস্তাম্বুল, কায়রো এবং দামেস্কতেও এর কিছু পাথর রয়েছে। আমাদের বাংলাদেশেও এমন আরো দুটি পাথর রয়েছে জানা যায়, যার একটি আছে চট্টগ্রামে আর অপরটি রয়েছে নবীগঞ্জ কদম রসুল দরগায়। ইতিহাসবিদদের মতে, মাসুম খান কাবুলী নামে একজন আফগান সেনা প্রধান যিনি খাঁর বন্ধু ছিলেন তিনি ষোড়শ শতাব্দীর শেষের দিকে এই নিদর্শনটি একজন আরব সওদাগর-এর নিকট থেকে অর্থের বিনিময় ক্রয় করেন। তারও অনেক পরে সপ্তদশ শতাব্দীর শেষদিকে গোলাম নবী নামে ঢাকার একজন জমিদার নবীগঞ্জের একটি উঁচু স্থানে একটি এক গম্বুজ বিশিষ্ট দরগা নির্মাণ করে সেখানে পবিত্র পাথরটি স্থাপন করেন এবং গোলাম নবীর ছেলে গোলাম মুহাম্মদ কদম রসুল দরগার প্রধান ফটকটি নির্মাণ করেন। আরও জানা যায়, কদম রসুল দরগাহ শরীফ ৫ শত বছরের পুরনো আধ্যাত্মিক অলৌকিক ঘটনার এক প্রাণকেন্দ্র। কদম রসুল দরগাহ শরীফটি গায়েবি উঠেছিলো বলে জনশ্রæতি রয়েছে। কদম রসুলের সাবেক নাম ছিলো মজমপুর গ্রাম। এই এলাকার লোকজনের মতে, এটি আল্লাহতায়ালার অশেষ মেহেরবানীতে এক রাতে মাটির নিচ থেকে উঠেছিলো বলেই মনে করেন। কদমরসুল এলাকাটি নারায়ণগঞ্জের একটি পুরনো উপশহর। বন্দরের কদম রসুল পৌরসভা ১৯৯৩ সালে গঠিত হয়। পরে ২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভা, সিদ্ধিরগঞ্জ পৌরসভা ও কদমরসুল পৌরসভাকে বিলুপ্ত করে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন গঠিত হলে এ অঞ্চল নারায়ণগঞ্জ মহানগরীর অন্তর্ভুক্ত হয়। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১৯-২৭নং ওয়ার্ড কদমরসুল এলাকায় অবস্থিত। কদম রসুল দরগাহর জন্য বন্দরের এ অঞ্চলটি বিখ্যাত। কথিত আছে এই স্থানটি দর্শন করেন সুবাদার ইসলাম খান, মুঘল সম্রাট শাহজাহানসহ আরো অনেক আমির-ওমররা। শাহ সুজা এই দরগার জন্য ৮০ বিঘা জমি দান করেন। পরে ঈসা খাঁর প্রোপুত্র দেওয়ান মনোয়ার খান এখানে একটি ইমারত তৈরি করেন। কিন্তু সেই ইমারতও কালের গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। বন্দরের নবীগঞ্জ এলাকাতে এই কদম রসুল দরগাহটি বিশাল জায়গা নিয়ে প্রায় ৬০ ফুট উঁচু মাটির টিলায় এটির অবস্থান। ১২ রবিউল আউয়াল উপলক্ষে এই কদম রসুল দরগাহকে কেন্দ্র করে ধর্মীয় আচারসহ বিরাট মেলার আয়োজন করা হয়। তাছাড়া শবে বরাত, শবে কদর, শবে মেরাজ, ঈদুল আজহা, ঈদুল ফিতরসহ বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে আলোকসজ্জাসহ নানা রঙে রঙিন হয়ে উঠে এই দরগাহের ভবনসহ আশপাশের এলাকা। এই দরগাহের ভিতর ও বাহিরে আরো একাধিক কবর ও মাজার থাকায় এই ধর্মীয় আবেগের স্থানটিকে যেন আরো বৈচিত্র করে তুলেছে। পাশাপাশি বন্দর তথা নারায়ণগঞ্জ জেলাকে ইতিহাসের পাতায় করেছে সমৃদ্ধ।
হাবিবুর রহমান বাদল ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফলে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের সাথে সাথে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা তার দোসররা কেউবা পালিয়েছে আবার কেউ আত্মগোপনে রয়েছে। বিগত পতিত সরকারের আমলে পেশাদার সাংবাদিকরা সব কিছু দেখলেও কোন কিছুই লিখতে পারতনা। আকাঁরে ইঙ্গিতে কোন কিছু লিখলেই সেইসব সাংবাদিকের উপর খর্গ নেমে […]
হাবিবুর রহমান বাদল নারায়ণগঞ্জসহ সারা দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটায় বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে নগরবাসীর আতঙ্কিত হওয়ার ঘটনা প্রতিদিন প্রকাশ পাচ্ছে। এনিয়ে সাধারণ নাগরিকরা সরব হয়ে উঠেছেন। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগ এনে বিভিন্ন মহল থেকে তার পদত্যাগ দাবি করা হচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল সোমবার বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা […]
ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট: আড়াইহাজার থানায় দায়ের করা উপজেলার দুপ্তারা ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি বাবুল মিয়া হত্যা মামলা নিয়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। গত ৩ জুন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বাবুল মিয়ার মৃত্যু হলেও দুই মাস পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় তিনি নিহত হয়েছেন উল্লেখ করে ২২ আগস্ট হত্যা মামলা করেছেন দুপ্তারা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন। এই […]
প্রকাশক ও সম্পাদক
হাবিবুর রহমান বাদল
০১৯১১০১০৪৯০
hr.badal@yahoo.com
বার্তা ও বাণিজ্যক কার্যালয়
৬. সনাতন পাল লেন
(হোসিয়ারী ক্লাব ভবন, তৃতীয় তলা)
৭৬৪২১২১
dbartanews@gmail.com
রেজি: ডিএ নং-২০৯৯