আজ বৃহস্পতিবার | ২২ মে ২০২৫ | ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ | ২৩ জিলকদ ১৪৪৬ | দুপুর ১২:০৯

সুপ্রিম কোর্ট কি একটু এগিয়ে আসবেন

ডান্ডিবার্তা | ২২ মে, ২০২৫ | ৭:২৪ পূর্বাহ্ণ

সারা হোসেন
চলচ্চিত্র অভিনেত্রী নুসরাত ফারিয়ার জামিনের মধ্য দিয়ে আমরা একদিকে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারি– তাঁকে অন্তত দিনের পর দিন জেল খাটতে হয়নি। এটি কি স্বস্তির, নাকি একটি অবিচারের নিদর্শন? সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মন্তব্যগুলো থেকে বোঝা যায়, অধিকাংশ মানুষ দ্বিতীয়টিকেই সত্য বলে মনে করেন। এ ঘটনা আমাদের সামনে যে মৌলিক প্রশ্নগুলো তোলে, তা খুবই গভীর এবং উদ্বেগজনক। প্রথমত, পুলিশ কেন ফারিয়াকে গ্রেপ্তার করল– যখন তাদের পক্ষ থেকে ন্যূনতম অনুসন্ধানেই জানা যেত, যেসব ঘটনায় তাঁকে অভিযুক্ত করা হয়েছে, সেগুলোর সঙ্গে তাঁর জড়িত হওয়ার সুযোগই নেই? কারণ, তিনি দেশেই ছিলেন না। দ্বিতীয়ত, সরকারি কৌঁসুলি কেন তাঁর জামিন না দেওয়ার আবেদন করলেন? তৃতীয়ত, সংশ্লিষ্ট বিচারক কেন তাঁর জামিন নামঞ্জুর করে কাশিমপুর কারাগারে পাঠিয়ে দিলেন? চতুর্থত, কেন কোনো সরকারি আইন কর্মকর্তা এমন কোনো উপায় খুঁজে পেলেন না, যাতে ফারিয়াকে ৪৮ ঘণ্টা তাঁর স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত না হতে হতো? কেউ কেউ হয়তো বলবেন, ৪৮ ঘণ্টা খুবই কম সময়, যখন অনেকে একই ধরনের মিথ্যা অভিযোগে মাসের পর মাস, এমনকি বছরের পর বছর কারাবন্দি থাকেন। কিন্তু তা ৪৮ হোক, ৪৮০ হোক বা ৪৮০০– যথাযথ কারণ ছাড়া কাউকে আটক রাখা অবশ্যই তাঁর ব্যক্তিগত স্বাধীনতার যে মৌলিক অধিকার, তার বড় লঙ্ঘন। তাহলে এ ঘটনায় দায়ী পুলিশ কর্মকর্তা, কৌঁসুলি ও বিচারককে জবাবদিহির আওতায় কে আনবে? তাদের বিরুদ্ধে কি কোনো শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে? তাদের কেউ কি ক্ষমা চাইবেন? অন্তর্র্বতী সরকারের কোনো সদস্য কি এ ঘটনায় (এবং অনুরূপ অন্যান্য ঘটনায়) নিজেদের ভূমিকা বা নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে আত্মসমালোচনা করবেন? তারা কি শুধু হাত ধুয়ে দায় অন্যের ঘাড়ে চাপাবেন, নাকি উপলব্ধি করবেন যে এ মুহূর্তে তাদের ভূমিকা আরও কার্যকর হওয়া উচিত? আমাদের সুপ্রিম কোর্ট কি স্বপ্রণোদিত হয়ে সংশ্লিষ্ট বিচারকের বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেবেন অথবা ভবিষ্যতের জন্য নির্দেশনা দেবেন? নাকি তারা এ ধরনের নির্বিচার সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রবণতা সম্পর্কে কোনো তদন্ত করবেন? সংবিধান ও বিচার ব্যবস্থার সংস্কার নিয়ে আলোচনাগুলো অর্থহীন ও ফাঁপা হয়ে থাকবে, যদি আমরা এখনই সংস্কারের প্রতিফলন ঘটাই, এমন কোনো বাস্তব পদক্ষেপ না দেখি। এর মানে হলো, কিছু কঠিন সিদ্ধান্ত গ্রহণ– অন্তর্র্বতী সরকারের যেসব সদস্য মানবাধিকারের পক্ষের কণ্ঠস্বর হিসেবে পরিচিত, তাদেরই এগিয়ে এসে এই কার্যক্রমগুলোর জন্য সম্মিলিতভাবে দায়িত্ব নিতে হবে এবং ন্যায়বিচারের প্রক্রিয়াকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। এর মানে আরও হলো, তাদের দ্রæত পদক্ষেপ নিতে হবে যেন ব্যক্তিগত প্রতিশোধ, ব্যক্তিগত লাভ অথবা নিছক নারীবিদ্বেষ কিংবা কারও প্রতি শত্রæতার কারণে এসব করছে। ফারিয়ার গ্রেপ্তার জনঅসন্তোষ ও ক্ষোভকে যেমন জাগিয়ে তুলেছে, তেমনটি দেখা গেছে কয়েক দিন আগে আরেক নাট্যব্যক্তিত্ব ইরেশ যাকেরকে মামলায় জড়ানোর ঘটনায়। এ ধরনের মামলায় বহু অখ্যাত ব্যক্তিও জড়িয়ে পড়েছেন। আমাদের, সাধারণ জনগণের উচিত জোর দাবি তোলা– যারা জুলাই বিদ্রোহ চলাকালীন সংঘটিত ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘন ও অপরাধের শিকার হয়েছেন। সরকার যেন তাদের জন্য প্রক্রিয়াগতভাবে সত্য, ন্যায়বিচার, জবাবদিহি ও ক্ষতিপূরণের বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকার দেয়। কারণ, তখন কয়েকশ মানুষ নিহত এবং হাজার হাজার মানুষ আহত হয়েছেন। কোনো হঠকারী কর্মকাÐে যেন তাদের ত্যাগ ¤øান না হয়ে যায়।
সারা হোসেন: জ্যেষ্ঠ আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট

 




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১
১২১৩১৪১৫১৬১৭১৮
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭২৮২৯৩০৩১  
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা