
মোজাম্মেল হোসেন
অর্ধ শতাব্দী, না, সঠিক হিসেবে বললে ৫৪ বছরের ব্যবধানে দেশে ঐতিহাসিক দুটি ঘটনার একটি দিকের তুলনা মনে আসছে। তা হলো রাজনীতি ও রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে ভিন্ন পরিস্থিতিতে ৯ মাসে কতখানি কার্য সমাধা করা যায়? ধাঁধা লাগছে? ধাঁধার কিছু নেই। খুলে বলছি। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ ও ২০২৪ সালে ছাত্রদের নেতৃত্বে জুলাই অভ্যুত্থান। প্রথম ঘটনায় দেশ স্বাধীন হয়েছে বা বিশ্বের মানচিত্রে একটি নতুন দেশের জন্ম হয়েছে, যার নাম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ। আর দ্বিতীয় ঘটনায় এই দেশটিতে একটি নিপীড়নকারী দুর্নীতিবাজ কঠোর কর্তৃত্ববাদী সরকারের পতন ঘটেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বধীন আওয়ামী লীগ দলীয় সরকার উৎখাত হয়েছে, যারা অতিরিক্ত কারচুপিতে নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংস করে ১৬ বছর একচ্ছত্রভাবে ক্ষমতা আঁকড়ে ছিল এবং সরকারপ্রধানসহ মন্ত্রীরা অধিকাংশ দেশত্যাগ করেছেন। এক নিঃশ্বাসে দুই ঘটনার উল্লেখ করলেও মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপ্তি, গভীরতা, ঐতিহাসিক মাত্রা ও তাৎপর্য অনেক বেশি। তবে দ্বিতীয় ঘটনাটিও শুধু সরকার পরিবর্তন নয়, জনগণের আকাঙ্খা অনুযায়ী রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার সংস্কার করে অধিকতর গণতন্ত্রায়নের সম্ভাবনাপূর্ণ। আবার চিত্তাকর্ষক তুলনাটি হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের স্থায়িত্ব ছিল ৯ মাস। ১৯৭১ সালে ২৫শে মার্চ থেকে ১৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত। ২৬৪ দিনের লড়াইয়ে দেশটি স্বাধীন হয়েছে বাংলাদেশে থাকা হানাদার পাকিস্তানী বাহিনীর ৯৩ হাজার সেনা ঢাকায় মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় মিত্রবাহিনীর যৌথ কমাÐের কাছে আত্মসমর্পণ করায়, যাকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে সর্বাধিক সংখ্যক সৈন্যের আত্মসমর্পণ বলা হয়। জুলাই অভ্যুত্থানের পরে ৮ই আগস্ট ক্ষমতা গ্রহণকারী অন্তর্বতী সরকার ঠিক ৯ মাস পরে এমন একটি সংকটে পড়েছেন যে নিজেরাই বলছেন কাজ করতে পারছেন না। শপথ নিয়ে দায়িত্ব গ্রহণের ২৮৯ দিনের মাথায় সরকারপ্রধান একজন নোবেল জয়ী বিশ্বমানের ব্যক্তিত্ব হতাশ ও ক্ষুব্ধ হয়ে সহকর্মীদের কাছে পদত্যাগের ইঙ্গিত দেন। গত ২২শে মে বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের এমনি একটি সভার পরে সন্ধ্যায় তাঁর ঘনিষ্ঠ স্নেহভাজন অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতা ও ছাত্রদের গঠিত নতুন রাজনৈতিক দলের আহŸায়ক তাঁর সঙ্গে দেখা করে এসে বিবিসিকে জানান, তিনি পদত্যাগের বিষয়ে ভাবছেন। এ সবই সকল সংবাদমাধ্যমে প্রায় একই বিবরণে প্রকাশিত এবং রাজনৈতিক মহল ও জনগণের মধ্যে তুমুল আলোচিত। তবে পরবর্তী দুই দিনে পদত্যাগ হয়নি এবং হাসিনা উৎখাতের আন্দোলনের সমর্থক সকল রাজনৈতিক ও ছাত্র মহল থেকে তাঁকে পদত্যাগ না করার অনুরোধ জানিয়ে নিজেদের মধ্যে ঐক্য দৃঢ় করার আহŸান জানানো হচ্ছে। যদিও অস্থিরতার পূর্ণ অবসান ঘটেছে বলা যায় না। এই পটভূমিতে আমার তুলনা করার বিষয় হলো ঐতিহাসিক ভিন্ন পরিস্থিতিতে হলেও সেই ৯ মাস ও এই ৯ মাসের অনুরূপ দুটি সরকারের কাজের পরিমাণ ও ফলাফল। সরকারের কাজ ও মেয়াদ শেষ না হলেও যেহেতু অপারগতা ও পদত্যাগের কথা বলছেন তাই হিসেবটি করা হলো। আমরা চাই সরকার থাকুক এবং কাজ শেষ করুক। ‘অনুরূপ’ বলছি এই জন্য যে দুটি সরকারই পরিবর্তনশীল অবস্থায় অস্থায়ী বা অন্তর্র্বতীকালীন সরকার, স্বাভাবিক নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্বাচিত সরকার নয়। প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদে নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনাকারী মুজিবনগর সরকার বা অস্থায়ী প্রবাসী সরকারের পেছনে শক্তিশালী জন-অনুমোদন ও বৈধতা ছিল ১৯৭০ সালে নির্বাচিত বলে। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা আর প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্র্বতীকালীন সরকারও ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন হয়েছে জনসমর্থন নিয়েই। আইনিভাবে সংবিধানে অন্তর্র্বতী সরকারের বিধান না থাকায় আপৎকালে সংবিধানের ১০৬ ধারায় রাষ্ট্রপতির পাঠানো রেফারেন্সে সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শে এই সরকার গঠিত। সঙ্গত কারণে উচ্ছেদ হয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগ বাদে বাকি সকল রাজনৈতিক দল ও জনগণের সমর্থনও এই সরকারের প্রতি আছে। তাদের সকলের অপেক্ষা একটি যথার্থ সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে নিয়মিত সরকার গঠন। তাজউদ্দিন আহমেদ ছিলেন অর্থনীতিতে অনার্সসহ বিএ পাশ, মাস্টার্স সমাধা করতে পারেননি নির্বাচনী রাজনীতিতে যোগ দেওয়ায় এবং পরে জেল থেকে পরীক্ষা দিয়ে পাশ করেন এলএলবি। জনগণের অধিকার আদায়ের মাঠের সংগ্রামী রাজনীতি ও স্বল্পকালীন আইন ব্যবসা ছাড়া তাঁর বিস্তৃত পর্যায়ের কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না। বাংলাদেশের বাইরে পৃথিবীর ক’টা লোক তাঁকে চিনতো বলা মুশকিল। তাঁর নেতা ও বাংলাদেশের জনগণের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানে কারাবন্দী। প্রবাসী সরকারের দায়িত্ব নিয়ে কলকাতায় থিয়েটার রোডে সাদামাটা বাড়িতে তাঁর অফিস। আমি নিজেই তাঁকে আগস্ট মাসে ওই অফিসে দেখেছি গরমে ঘেমে নিজের কামরায় শার্ট খুলে জানালায় ছড়িয়ে রেখে গেঞ্জি গায়ে কাজ করছেন। অন্তর্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. ইউনূস নিজ দেশ ছাড়া সারা দুনিয়ায় বড় বড় দেশের বড় বড় পরিসরে কাজের ও বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সঙ্গে ওঠাবসার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন, নানা পুরস্কার ও বহুসংখ্যক সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রিতে ভূষিত। সত্য যে সরাসরি রাজনীতি করার ও রাষ্ট্র পরিচালনার অভিজ্ঞতা তাঁর নেই। তবে আগে রাজনীতি না করেও ইতিহাসে সফল রাষ্ট্রনায়কের সংখ্যা নেহাত কম নয়। মুজিবনগরের অফিসের সঙ্গে ঢাকায় এখন শীতাতপনিয়ন্ত্রিত প্রসাদোপম ভবনে অধুনিক ডিজিটাল প্রযুক্তিসমর্থিত সরকারি দফতরের কোনো তুলনা টানাই চলে না। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক মুজিবনগর সরকারকে কী কী কাজ করতে হয়েছিল। অব্যহত গণহত্যা, ধ্বংসযজ্ঞ, গ্রামের পর গ্রামে অগ্নিসংযোগের মুখে এক কোটি লোক উদ্বাস্তু হয়ে ভারতে চলে গিয়েছিল। ভারত সরকার ও ভারতীয় নাগরিকরা তাদের আশ্রয় দিলেও তালিকা করা, তত্ত¡তালাশ ও স্বেচ্ছাসেবকের অনেক কাজ বাংলাদেশীরা করেছে। শরণার্থী শিবিরে আশ্রয়প্রাপ্তরা ছাড়া সরকারি অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীর পরিবারসহ থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা কলকাতা ও আসে-পাশে করতে হয়েছে। দেশ থেকে যাওয়া যুবকদের ক্যাম্পে রাখা, ভারতীয় প্রশিক্ষণ শিবিরে পাঠানোর নিয়মিত কাজ ছিল। ভারত সরকার ও বিশ্বব্যাপী অন্যান্য দেশ ও আন্তর্জাতিক সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ, প্রতিনিধি পাঠানো, দেন-দরবার, আলোচনা করে মুক্তিযুদ্ধের যৌক্তিকতা বুঝিয়ে সমর্থন আদায় করতে হয়েছে। অস্ত্র সংগ্রহ করতে হয়েছে, যদিও দাতা ও ব্যবস্থাপক মুখ্যত ভারত। কিন্তু দায়-দায়িত্ব তো তাজউদ্দিন মন্ত্রিসভার। দেশের চতুর্দিকের সীমান্ত দিয়ে প্রশিক্ষিত গেরিলারা প্রবেশ করেছে। যুদ্ধের নেতৃত্ব ও পরিচালনায় জেনারেল ওসমানীর নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনীর সেনা কমান্ড ছিল, তবে নীতি নির্ধারণ তো তাজউদ্দিন মন্ত্রিসভার। আর ইতিহাস সন্ধানী প্রত্যেকেই জানেন যে, ওই সরকারকে অভ্যন্তরীণ বিরোধ সামলাতে হয়েছে। প্রথম থেকেই তাজউদ্দিনের প্রধানমন্ত্রী হওয়া নিয়ে একাংশের বিরোধিতা ছিল। পররাষ্ট্রমন্ত্রী খন্দকার মোশতাকের ভূমিকা সন্দেহজনক ছিল, যিনি পরে ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যার অন্যতম চক্রান্তকারী। ভারতেই তাজউদ্দিনের কর্তৃত্বের বাইরে ‘মুজিব বাহিনী’র অস্ত্র প্রশিক্ষণ হয়েছিল। এত সব প্রতিবন্ধকতা ঠেলে তাজউদ্দিনের অস্থায়ী সরকার মুক্তযুদ্ধ সফল করার পর্বতপ্রমাণ কাজ কিভাবে সমাধা করেছিলেন? সুচারুভাবে মুজিবনগরের দফতর গুছিয়ে ঢাকায় এসেছিলেন। বঙ্গবন্ধু ফেরার পর তাঁর হাতে সরকার পরিচালনার ভার ছেড়ে দিয়েছিলেন। প্রফেসর ড. ইউনূসের অন্তর্বতী সরকারের কাজের পরিধি কতটুকু? আমাদের ১৯৯৬ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত যে সাংবিধানিক তত্ত¡াবধায়ক সরকারের ব্যবস্থা ছিল, তিনিটি সংসদ নির্বাচন হয়েছিল, তাদের কাজ ছিল তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন সমাধা করে বিদায় নেওয়া। ড. ইউনূস সরকারের মেয়াদ স্থির হয়নি। হাসিনার সরকারটি উৎখাত হয়ে গেছে। ড. ইউনূস ও তাঁর কয়েকজন উপদেষ্টার কথায় প্রধান তিনটি কাজ এই সরকারের। সেগুলো হলো; (১) জুলাই আন্দোলন দমাতে ব্যাপক হত্যাকাÐ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের দায়ে হাসিনা ও সহযোগীদের বিচার করা, (২) গণতন্ত্রায়ন ও সুশাসনের লক্ষ্যে প্রয়েজনীয় কিছু রাষ্ট্রীয় সংস্কার এবং (৩) সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান করা। বলা বাহুল্য সরকারের দৈনন্দিন রুটিন শাসনকার্য তথা আইন-শৃঙ্খলা ঠিক রাখা, দ্রব্যমূল্য ও অর্থনীতির সূচকগুলি নিয়ন্ত্রণে রাখা প্রভৃতি তো আছেই। বিচার ও সংস্কারের প্রক্রিয়া সঠিকভাবে করে যেতে পারলে ভবিষ্যত সরকারের সময় তা চালু থাকবে। কিন্তু অন্তর্র্বতী সরকার এখনই হাঁফিয়ে গেলেন কেন? গত বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টা যে সমস্যাগুলির কথা বলেছেন তার সবই অন্যদের দোষ। তাঁকে কাজ করতে দিচ্ছে না। প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হচ্ছে। নিজেদের সক্ষমতা-অক্ষমতার মূল্যায়ন কোথায়? সম্ভবত প্রশ্ন করতে হয়, আপনাদের নিয়ত ঠিক আছে তো? এখানেই মুক্তিযুদ্ধের তাজউদ্দিন সরকারের সঙ্গে তুলনা। তাঁদের নিয়ত ঠিক ছিল, কাজ যতই দুরূহ হোক। আপনাদের কাজ যতটুকুই হোক, নিয়ত আছে তো?
হাবিবুর রহমান বাদল ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফলে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের সাথে সাথে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা তার দোসররা কেউবা পালিয়েছে আবার কেউ আত্মগোপনে রয়েছে। বিগত পতিত সরকারের আমলে পেশাদার সাংবাদিকরা সব কিছু দেখলেও কোন কিছুই লিখতে পারতনা। আকাঁরে ইঙ্গিতে কোন কিছু লিখলেই সেইসব সাংবাদিকের উপর খর্গ নেমে […]
হাবিবুর রহমান বাদল নারায়ণগঞ্জসহ সারা দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটায় বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে নগরবাসীর আতঙ্কিত হওয়ার ঘটনা প্রতিদিন প্রকাশ পাচ্ছে। এনিয়ে সাধারণ নাগরিকরা সরব হয়ে উঠেছেন। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগ এনে বিভিন্ন মহল থেকে তার পদত্যাগ দাবি করা হচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল সোমবার বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা […]
ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট: আড়াইহাজার থানায় দায়ের করা উপজেলার দুপ্তারা ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি বাবুল মিয়া হত্যা মামলা নিয়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। গত ৩ জুন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বাবুল মিয়ার মৃত্যু হলেও দুই মাস পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় তিনি নিহত হয়েছেন উল্লেখ করে ২২ আগস্ট হত্যা মামলা করেছেন দুপ্তারা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন। এই […]
প্রকাশক ও সম্পাদক
হাবিবুর রহমান বাদল
০১৯১১০১০৪৯০
hr.badal@yahoo.com
বার্তা ও বাণিজ্যক কার্যালয়
৬. সনাতন পাল লেন
(হোসিয়ারী ক্লাব ভবন, তৃতীয় তলা)
৭৬৪২১২১
dbartanews@gmail.com
রেজি: ডিএ নং-২০৯৯