আজ শনিবার | ৩১ মে ২০২৫ | ১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ | ৩ জিলহজ ১৪৪৬ | বিকাল ৩:৪৯

মর্গ্যান স্কুলে দুর্নীতির তদন্তে বাঁধার মুখে ম্যাজিস্ট্রেট

ডান্ডিবার্তা | ৩০ মে, ২০২৫ | ১২:২০ অপরাহ্ণ

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট
নারায়ণগঞ্জ শহরের দেওভোগে ঐতিহ্যবাহী মর্গ্যান গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজে এক অভিযোগের তদন্তে গিয়ে শিক্ষক ও ছাত্রীদের বিক্ষোভের মুখে অবরুদ্ধ হয়েছেন জেলা প্রশাসনের এক সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। এ সময় ওই ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে শিক্ষক ও ছাত্রীদের বাক-বিতন্ডাও হয়। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে দশটা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত বিদ্যালয়ের ভেতরে এ ঘটনা চলে। শিক্ষক ও ছাত্রীদের অভিযোগ, স্থানীয় এক যুবদল নেতার প্ররোচনায় জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে গিয়ে কয়েকজন শিক্ষকের সঙ্গে অসদাচরণ করেন। এতে ছাত্রীরা বিক্ষুব্দ হয়ে ওঠে। অন্যদিকে, জেলা প্রশাসন বলছে, দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটির অর্থ আত্মসাতের এক অভিযোগের তদন্তে গিয়ে শিক্ষকদের বাধার মুখে পড়েন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। পরে বিদ্যালয়ের ভেতরে ছাত্রীদের মাধ্যমে ‘মব ভায়োলেন্স’ তৈরিরও চেষ্টা করা হয়। এক পর্যায়ে জেলা প্রশাসন ও জেলা শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তারা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। বালিকা বিদ্যালয়টির শিক্ষক, ছাত্রী ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সকাল সাড়ে দশটার দিকে জেলা শিক্ষা অফিসের গবেষনা কর্মকর্তা নাজমুন্নাহার খানমকে সঙ্গে নিয়ে বিদ্যালয়টিতে যান সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাশেদ খান। তিনি জেলা প্রশাসনের উন্নয়ন শাখা, মূল্যায়ন ও পরিবীক্ষন এবং প্রবাসী কল্যাণ শাখার দায়িত্বে আছেন। বিদ্যালয়ের ভেতরে ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে কয়েকজন শিক্ষকদের তর্ক হয়, ম্যাজিস্ট্রেটও তখন উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। এতে প্রতিবাদ জানান কয়েকজন ছাত্রীও। এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা মাইকে ঘোষণা দিলে পাঠদান কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসেন ছাত্রীরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যালয়টির দু’জন শিক্ষক বলেন, জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা রাশেদ খান তদন্তের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা না করে শিক্ষকদের সঙ্গে অসদাচরণ করেন। তাকে নিভৃত করতে চাইলে তিনি আরও উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। “তাকে (রাশেদ খান) আমরা বলি যে, এই স্কুলের সভাপতি ডিসি মহোদয়। ডিসি মহোদয়ের সঙ্গে অন্তত কথা বলেন। এই কথা বললে উনি আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন এবং উনি ম্যাজিস্ট্রেট এই কারণে নানা কথা বলে প্রচ্ছন্ন হুমকি দিতে থাকেন। এমনকি উনি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলার সময় প্রিন্সিপাল যখন চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন তখন তার টেবিলে উপর বসে ছিলেন। এই আচরণ শিক্ষকদের জন্য অপমানজনক”, বলেন একজন সহকারী শিক্ষক। শিক্ষকদের একাংশের অভিযোগ, গত ২১ আগস্ট ছাত্রীদের বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করেন প্রতিষ্ঠানটির সহকারী প্রধান শিক্ষক লায়লা আক্তার। তাকে এই বিদ্যালয়ে পুনরায় আনতে চান শিক্ষকদের একটি অংশ। তারা লায়লা আক্তার দায়িত্বে থাকাকালীন অনৈতিক সুবিধা পেতেন। ওই শিক্ষকরা গণঅভ্যুত্থানের আগে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে সখ্যতা রাখলেও এখন মহানগর যুবদলের সদস্য রাফি উদ্দিন রিয়াদের প্রভাব খাটিয়ে অন্যান্য শিক্ষকদের অবদমিত করে রাখতে চান। ঘটনার সময় বিদ্যালয়ের বাইরে রাফি উদ্দিন রিয়াদের নেতৃত্বে অর্ধশতাধিক তরুণ অবস্থান নিয়ে ছিল বলেও জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা। রাফি উদ্দিন রিয়াদের বিরুদ্ধে গত ১৮ ফেব্রæয়ারি এ বিদ্যালয়ের এক অভিভাবককে বিদ্যালয়ের সামনে মারধরের অভিযোগে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে বলেও জানান শিক্ষকরা। তারা বলেন, রিয়াদ অভিভাবক প্রতিনিধি হওয়ার সুযোগ না থাকা সত্তে¡ও তিনি স্থানীয় বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকায় সেই প্রভাব খাটিয়ে বিদ্যালয়ে নিয়ন্ত্রণ করতে চাচ্ছেন। তবে এ বিষয়ে কথা বলতে যুবদল নেতা রাফি উদ্দিন রিয়াদের মুঠোফোনে কল করা হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি। একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাশেদ খান প্রতিবার কল কেটে দেন। ফলে তার বক্তব্যও পাওয়া যায়নি। তবে, ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে থাকা জেলা শিক্ষা অফিসের গবেষনা কর্মকর্তা মুঠোফোনে বলেন, “একটি অভিযোগের তদন্তে সঙ্গে যাবার জন্য ম্যাজিস্ট্রেট স্যার আমাকে চিঠি দিয়েছিলেন। কিন্তু কী অভিযোগ সে ব্যাপারে আমি জানতাম না। আমি ম্যাজিস্ট্রেট স্যারের সঙ্গে ক্লাসরুমগুলোতে যাই। ক্লাসরুম থেকে বেরিয়ে এসে গেটের সামনে গেলে কয়েকজন শিক্ষক ম্যাজিস্ট্রেট স্যারকে নানাভাবে উত্তেজিত করার চেষ্টা করেন। তিনি আসল নাকি ভুয়া এমন কথাও বলতে থাকেন। পরে মাইকে ঘোষণা দিলে স্টুডেন্টরা জড়ো হয়ে যায় এবং পরিস্থিতি খারাপ দিকে মোড় নেয়। তখন ম্যাজিস্ট্রেট স্যার শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে নিভৃত করেন।” “হ্যা, স্টুডেন্টদের সঙ্গে কথা বলার সময় ম্যাজিস্ট্রেট স্যার প্রিন্সিপালের টেবিলে ঢেলান দিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। তখনও শিক্ষকরা বলে ওঠেন, বেয়াদব ম্যাজিস্ট্রেট প্রিন্সিপালের টেবিলে বসে, এইসব বলতে থাকেন”, যোগ করেন নাজমুন্নাহার। খবর পেয়ে দুপুরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয় সদর মডেল থানা পুলিশের একটি দল। এ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নাছির আহমদ বলেন, “তদন্ত কার্যক্রমকে কেন্দ্র করে ভুল বোঝাবুঝির কারণে একটা উত্তেজিত পরিবেশের সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে সেখানে পুলিশের একটি টিম পাঠানো হয়। তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ম্যাজিস্ট্রেট ও অপর শিক্ষা কর্মকর্তাকে নিয়ে চলে আসেন।” “এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উভয়পক্ষের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে” উল্লেখ করে এ পুলিশ কর্মকর্তা জানান বিষয়টি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। শতবর্ষ পুরোনো ঐতিহ্যবাহী এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ছিলেন জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন। গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে উদ্ভূত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে প্রতিষ্ঠানটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন জেলা প্রশাসক। যোগাযোগ করা হলে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, “আগের প্রধান শিক্ষকের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ হয়েছে- এমন একটি অভিযোগ ৫৮ জন অভিভাবক জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে করেছিল। ওই অভিযোগের তদন্তে নোটিশ দিয়ে শিক্ষা অফিসারদের সাথে নিয়ে গিয়েছিলেন ম্যাজিস্ট্রেট। তখন তাকে অসহযোগিতা করেছেন শিক্ষকরা। প্রথমে তাকে ঢুকতে দেয়নি পরে মব ভায়োলেন্স করার চেষ্টাও করেছিলেন তারা। পুলিশও পাঠাতে হয় সেখানে। যদিও তারা যেভাবে চেয়েছিল সেভাবে বিষয়টি হয়নি।” তবে সামগ্রিক বিষয় নিয়ে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তদন্ত করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১
১২১৩১৪১৫১৬১৭১৮
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭২৮২৯৩০৩১  
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা