আজ শনিবার | ৩১ মে ২০২৫ | ১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ | ৩ জিলহজ ১৪৪৬ | বিকাল ৪:০৫

দিনভর অঝোর বৃষ্টিতে নারায়ণগঞ্জে তীব্র জলাবদ্ধতায় নাকাল নগরবাসী

ডান্ডিবার্তা | ৩০ মে, ২০২৫ | ১২:৩১ অপরাহ্ণ

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট
সকাল থেকে নারায়ণগঞ্জ জেলাজুড়ে অবিরাম বর্ষণ জনজীবনকে সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত করে ফেলেছে। শহর থেকে শুরু করে বিভিন্ন পাড়া মহল্লা পর্যন্ত সর্বত্রই তীব্র জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে, যা সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের পাশাপাশি অর্থনৈতিক কর্মকাÐেও ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। প্রধান সড়কগুলো থেকে শুরু করে অলিগলি পর্যন্ত সর্বত্রই হাঁটু থেকে হাঁটুর উপর সমান পানি জমেছে, যা বর্ষা মৌসুমের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরছে। নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রাণকেন্দ্র চাষাঢ়াসহ প্রেস ক্লাব, উকিলপাড়া, ২নং রেলগেট, ডিআইটি এলাকাগুলোতে পানির কারণে যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রায় অচল। বিশেষ করে, শহরের বিবি রোড ধরে চলাচলকারী শত শত মানুষকে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। এছাড়া, মাসদাইর, গলাচিপা, কলেজ রোড, আমলাপাড়া, কালির বাজার, উকিলপাড়া, নন্দীপাড়া, ডন চেম্বার, টানবাজার, মীনা বাজার, নিতাইগঞ্জ, দেওভোগ, ভূইয়ারবাগ – এই সব এলাকাগুলোতে যেন একেকটি ছোটখাটো হ্রদের রূপ নিয়েছে। রাস্তাগুলো পানিতে ডুবে যাওয়ায় সড়ক আর জলাশয়ের পার্থক্য বোঝা কঠিন হয়ে পড়েছে। সকাল থেকে অফিস-আদালত এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগামী মানুষ বৃষ্টির কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। অনেকে ছাতা ব্যবহার করেও বৃষ্টির ছাঁট এবং জলাবদ্ধতার নোংরা পানিতে ভিজে একাকার হচ্ছেন। পাবলিক ট্রান্সপোর্টের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। রিকশাগুলো শুধুমাত্র শহরের মূল কেন্দ্রগুলোতে চলাচল করলেও জলাবদ্ধতার কারণে বিভিন্ন এলাকার ভেতরের রাস্তাগুলোতে প্রবেশ করতে চাইছে না। অটোচালক অনিক তার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বলেন, “চাষাঢ়া এলাকা যেন কক্সবাজারের সৈকতে পরিণত হয়েছে। এলাকার ভেতরে ঢুকলে অটো রিকশা পর্যন্ত ডুবে যাচ্ছে, এতে অটোরিক্সার মোটর পানিতে তলিয়ে নষ্ট হওয়ার মারাত্মক ঝুঁকি থাকে। তাই আমরা বাধ্য হয়ে অনেক জায়গায় যেতে পারছি না।” যাত্রীরাও চরম বিপাকে পড়েছেন। ফারহানা মাইয়াত বিথী ও প্রিয়ন্তি নামে দুই যাত্রী অভিযোগ করেন, “কিছু কিছু রিকশাচালক যেতে চাইলেও তিনগুণ পর্যন্ত বাড়তি ভাড়া দাবি করছে। এমনিতেই গাড়ির সংকট, তার উপর এমন বাড়তি ভাড়া নেওয়া সাধারণ মানুষের জন্য চরম ভোগান্তি।” অন্যদিকে, রিকশাচালকরা তাদের পক্ষ থেকে দাবি করছেন, জলাবদ্ধতার কারণে রিকশা প্যাডেল করতে অনেক কষ্ট হয় এবং রিকশার গতিও কচ্ছপের মতো ধীর হয়ে যায়। এই বাড়তি শ্রম ও সময়ের কারণেই তারা বাড়তি ভাড়া নিচ্ছেন। অবিরাম বর্ষণের কারণে শহরের বাজারগুলোতেও নেমে এসেছে সুনসান নীরবতা। সকাল থেকে বহু দোকানি বৃষ্টিতে ভিজে দোকান খোলা রাখলেও ক্রেতার দেখা নেই। অনেক দোকানে এখনো এক টাকাও বিক্রি হয়নি বলে জানান তারা। মাছ বিক্রেতা সজল চরম আক্ষেপ করে বলেন, “সকাল থেকে পেটের দায়ে দোকান খোলা রেখেছি, কিন্তু কাস্টমার না থাকায় এখনো স্টাফদের রোজের টাকা দেওয়ার মতোও বিক্রি হয়নি। এমন পরিস্থিতি আগে কখনো দেখিনি।” তার স্টাফরা যোগ করেন, “আমরা কাস্টমারের জন্য বৃষ্টিতে ভিজে কাজ করছি, কিন্তু বেচাবিক্রি না হলে আমাদের পরিবার না খেয়ে থাকবে। এমন বৃষ্টি যদি আরও কয়েকদিন থাকে, তাহলে জমানো টাকাও শেষ হয়ে যাবে।” বিভিন্ন হোটেল-রেস্তোরাঁর মালিকরাও একই ধরনের সমস্যার সম্মুখীন। তাদের দোকানেও ক্রেতার সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। তারা জানান, অন্যান্য দিনে যেখানে ব্যাপক ভিড় থাকে, সেখানে আজ কাস্টমারের উপস্থিতি একেবারেই নগণ্য। তবে, এই বৃষ্টির মধ্যেই কিছু কিছু এলাকার ছোট ছোট খাবারের দোকানে কিছুটা ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। এর কারণ হলো, শহরের কিছু বাড়িতে গ্যাস সরবরাহ না থাকার কারণে স্থানীয়রা বাধ্য হয়ে বাইরে থেকে খাবার কিনে খাচ্ছেন। মেহেদী হাসান নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা তার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “একদিকে গ্যাস নেই, অন্যদিকে এলাকায় হাঁটুর উপরে পানি। বেঁচে থাকার জন্য তো খেতে হবে। তাই বৃষ্টি আর জলাবদ্ধতার মধ্যে ড্রেনের নোংরা পানি পেরিয়ে খাবার কিনতে বের হতে হয়েছে। এই দুর্ভোগের শেষ কোথায় জানি না।” নারায়ণগঞ্জের বর্তমান পরিস্থিতি একদিকে যেমন প্রাকৃতিক দুর্যোগের নির্মম চিত্র তুলে ধরছে, তেমনি অপরিকল্পিত নগর ব্যবস্থাপনা এবং নাগরিক সেবার দুর্বলতাও প্রকটভাবে সামনে নিয়ে এসেছে। এমন পরিস্থিতিতে নগরবাসীর প্রত্যাশা, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রæত এই জলাবদ্ধতা নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে এবং শহরের স্বাভাবিক জনজীবন দ্রæত ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করবে।
ই-




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১
১২১৩১৪১৫১৬১৭১৮
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭২৮২৯৩০৩১  
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা