
আহমেদ স্বপন মাহমুদ
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিসরে এক গভীর হতাশা ও বিপন্ন পরিস্থিতি বিরাজ করছে। জনগণের দীর্ঘদিনের জমে থাকা ক্ষোভ, অসন্তোষ এবং পরিবর্তনের আকাঙ্খা থেকে যে অভ্যুত্থান ঘটেছিল, তার মূল সুর ছিল– মুক্তি, স্বচ্ছতা, জবাবদিহি এবং একটি বহুত্ববাদী গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠা। অথচ মাত্র দশ মাসের ব্যবধানে সেই স্বপ্ন আজ দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে যেসব সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে– বিশেষ করে মাজার ভাঙা, সংখ্যালঘু স¤প্রদায়ের ওপর আক্রমণ, নারীর প্রতি প্রকাশ্য ঘৃণা ও সহিংসতা– সেগুলোর একটি ঘটনাও বিচারের মুখোমুখি হয়নি। এর মধ্য দিয়ে এক অশুভ বার্তা ছড়িয়ে পড়েছে সমাজে– অপরাধীরা রেহাই পাচ্ছে, কারণ তারা শাসকগোষ্ঠীর ঘনিষ্ঠ। ঘটনা পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, এসব অপরাধে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে জড়িত গোষ্ঠীগুলোর মূল হোতারা জামায়াত-শিবির কিংবা এনসিপিসংশ্লিষ্ট। কখনও ছদ্মনামে ‘তৌহিদি জনতা’ বা ‘অমুক ঐক্য মঞ্চ’, আবার কখনও নীরব রাষ্ট্রীয় প্রশ্রয়ে পরিচালিত নানা গোষ্ঠী এসব কর্মকাÐ চালিয়ে গেছে। তা না হলে অপরাধীরা বিচারের আওতায় আসবে না কেন? এসব অপরাধের বিচারহীনতাই প্রমাণ করে যে, এগুলো শুধু কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়; বরং বিশেষ মহলের পৃষ্ঠপোষকতায় সংগঠিত। যে রাষ্ট্র সংবিধান অনুযায়ী নাগরিকের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ, মৌলবাদী শক্তির হাতে নিরপরাধ জনগণকে তুলে দিচ্ছে পরোক্ষভাবে, সেই রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপ পুরোপুরি ব্যর্থ; বরং তা চলছে বিপরীত দিকে। শুধু বিচারহীনতা নয়, বরং এসব গোষ্ঠীকে সরকার প্রকাশ্যেই আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে। ন্যূনতম মানবিক বিবেচনাতেও প্রশ্ন জাগে: কেন এই মৌলবাদী ও প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে এমন আপস? এই সরকার তো ছিল সবার সমর্থনপুষ্ট নির্দলীয় সরকার– যেখানে সব রাজনৈতিক দল তাকে সমর্থন দিয়েছে বিনাবাক্যে। মানুষ চেয়েছিল দুর্নীতিমুক্ত একটি সমাজ– যেখানে নারীর অধিকার, সংখ্যালঘুর নিরাপত্তা এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে। কিন্তু ক্ষমতায় বসার পরপরই সরকারের একের পর এক সিদ্ধান্ত নিয়ে চমকে দিয়েছেন দেশবাসীকে। শীর্ষ সন্ত্রাসীদের মুক্তি, যুদ্ধাপরাধীদের জামিন বা ক্ষমা, ধর্মীয় গোঁড়ামিকে প্রকাশ্য প্রশ্রয়– এসব সিদ্ধান্তে স্পষ্ট যে সরকার কোন দিকে যাচ্ছে। প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে কারামুক্তির ঘটনা, মন্ত্রণালয় বিভিন্ন স্তরে নিয়োগ কিংবা এনসিপি-জামায়াত নেতাদের একসঙ্গে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ– এসবই স্পষ্ট বার্তা দেয় যে কারা সরকার পরিচালনায় প্রভাব রাখছে। আরও উদ্বেগজনক হলো এনসিপি নেতাদের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ। দলীয় তহবিলের অপব্যবহার, প্রভাব খাটিয়ে সরকারি প্রকল্প হাতিয়ে নেওয়া– এসব অভিযোগ সংবাদমাধ্যমে এসেছে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে কোনো তদন্ত শুরু হয়েছে কিনা, তা অজানা। অথচ এই সরকার গণআকাঙ্ক্ষার ভিত্তিতে ক্ষমতায় এসেছিল। জনগণের দাবিকে উপেক্ষা করে, তাদের রক্ত, ঘাম, ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত সুযোগকে নিজের দল ও মতাদর্শ বিস্তারের কাজে লাগানো হাজার হাজার শহীদদের প্রতি এবং আহত পরিবারের প্রতি বিশ্বাসভঙ্গের উদাহরণ। তবে অন্তর্বতী সরকারের সামনে একমাত্র গ্রহণযোগ্য পথ হলো: একটি নিরপেক্ষ, অবাধ ও আন্তর্জাতিকভাবে পর্যবেক্ষিত নির্বাচন আয়োজন। যতই কৌশলের রাজনীতি খেলতে চাওয়া হোক, গণমানুষের চেতনা আজ অনেক বেশি সংবেদনশীল। তাদের বিশ্বাসভঙ্গ হয়েছে, তাদের চোখ খুলে গেছে। তাই ক্ষমতা ধরে রাখার যতই চেষ্টা হোক, সেটি দীর্ঘস্থায়ী হবে না। একটি রাজনৈতিক সরকারের প্রাথমিক দায়িত্ব হলো জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন নিশ্চিত করা। কিন্তু এই সরকার বরং সেই ইচ্ছাকে বিকৃত করেছে। ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে যে রাজনৈতিক ধারা চালু হয়েছে, তা মুক্তিযুদ্ধের অর্জন, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং গণতান্ত্রিক আদর্শের বিরোধী। নারীর অগ্রযাত্রার জায়গায় এসেছে অবদমন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার জায়গায় এসেছে ভয়, আর সহনশীলতার জায়গায় এসেছে উগ্রতা। এত সব সত্তে¡ও বর্তমান সরকার এখনও ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দিতে চাইছে। না। কারণ কি এই যে, সুষ্ঠু নির্বাচনে জনগণ জামায়াত-এনসিপিকে সমর্থন করবে না। সেজন্যই কি সময়ক্ষেপণ চলছে। কিন্তু এবার দেশের মানুষও সম্ভবত জানে, স্বাধীনতার পর এই নির্বাচন হতে যাচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক বন্দোবস্ত। তিনটি জাতীয় নির্বাচনে জনগণ কার্যত ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। তাই এবার নির্বাচন কেবল রাজনৈতিক ক্ষমতার হস্তান্তরের প্রশ্ন নয়, এটি একটি জাতীয় পুনর্জাগরণের প্রশ্ন। একটি অবাধ, স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ নির্বাচনই হবে দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক সংস্কার। এটিই হবে দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের একমাত্র পথ। বস্তুত ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ, নিরপেক্ষ তত্ত¡াবধায়ক কাঠামো প্রতিষ্ঠা এবং সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। আর এই জাতির আত্মত্যাগ, সংগ্রাম এবং বিবেক বারবার প্রমাণ করেছে– যেখানে গণতন্ত্র হুমকির মুখে পড়ে, সেখানেই উঠে দাঁড়ায় এক অপ্রতিরোধ্য জনতার শক্তি।
আহমেদ স্বপন মাহমুদ: কবি ও মানবাধিকারকর্মী
হাবিবুর রহমান বাদল ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফলে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের সাথে সাথে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা তার দোসররা কেউবা পালিয়েছে আবার কেউ আত্মগোপনে রয়েছে। বিগত পতিত সরকারের আমলে পেশাদার সাংবাদিকরা সব কিছু দেখলেও কোন কিছুই লিখতে পারতনা। আকাঁরে ইঙ্গিতে কোন কিছু লিখলেই সেইসব সাংবাদিকের উপর খর্গ নেমে […]
হাবিবুর রহমান বাদল নারায়ণগঞ্জসহ সারা দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটায় বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে নগরবাসীর আতঙ্কিত হওয়ার ঘটনা প্রতিদিন প্রকাশ পাচ্ছে। এনিয়ে সাধারণ নাগরিকরা সরব হয়ে উঠেছেন। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগ এনে বিভিন্ন মহল থেকে তার পদত্যাগ দাবি করা হচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল সোমবার বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা […]
ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট: আড়াইহাজার থানায় দায়ের করা উপজেলার দুপ্তারা ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি বাবুল মিয়া হত্যা মামলা নিয়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। গত ৩ জুন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বাবুল মিয়ার মৃত্যু হলেও দুই মাস পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় তিনি নিহত হয়েছেন উল্লেখ করে ২২ আগস্ট হত্যা মামলা করেছেন দুপ্তারা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন। এই […]
প্রকাশক ও সম্পাদক
হাবিবুর রহমান বাদল
০১৯১১০১০৪৯০
hr.badal@yahoo.com
বার্তা ও বাণিজ্যক কার্যালয়
৬. সনাতন পাল লেন
(হোসিয়ারী ক্লাব ভবন, তৃতীয় তলা)
৭৬৪২১২১
dbartanews@gmail.com
রেজি: ডিএ নং-২০৯৯