আজ বুধবার | ৪ জুন ২০২৫ | ২১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ | ৭ জিলহজ ১৪৪৬ | রাত ২:৪৬

যাদের নিয়ন্ত্রনে মেঘনা ও যমুনা ডিপো!

ডান্ডিবার্তা | ০২ জুন, ২০২৫ | ১০:৩১ পূর্বাহ্ণ

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট
ফতুল্লার পঞ্চবটীতে অবস্থিত রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন দুইটি প্রতিষ্ঠান মেঘনা ও যমুনা তেল ডিপো। এ ডিপো দু’টির পাশেই গড়ে উঠেছে একাধিক তেলচোরের সক্রিয় সিন্ডিকেট। সরকার পাল্টানোর পাশাপাশি পাল্টে যায় তেলচোরদের মুলহোতারা। পতিত আওয়ামীলীগের শাসনামলে গডফাদার খ্যাত শামীম ওসমান ও তার ভাতিজা হাজীসাব খ্যাত আজমেরী ওসমানদের বাহিনীর হাতে জিম্মি ছিলো এ দুটি প্রতিষ্ঠান। শামীম ওসমানের অন্যতম খলিফা শাহ নিজামের নির্দেশে এখানে ছিলেন ফতুল্লা থানা যুবলীগের সভাপতি মীর সোহেল আলী এবং আজমেরী ওসমানের পক্ষে ছিলেন মির্জা পাভেল। এ দুটি সিন্ডিকেটর পরিবর্তে অন্যকেউ এখানে প্রবেশ করতে পারেনি তেলচুরির মহোৎসবে। প্রতিমাসে মেঘনা ও যমুনা ডিপো হতে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিতো এ চোরের দল। ৫ আগষ্ট শেখ হাসিনার পলায়নের পর তা দখলে নেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সহ-সভাপতি ও সাবেক সাংসদ বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ মোহাম্মদ আলী সাহেবের দুই ভাতিজা সাইদুর রহমান রিপন ও হাবিবুর রহমান লিটন,ফতুল্লা থানা বিএনপির সদ্য বহিস্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াদ মো.চৌধুরী এবং ফতুল্লা থানা যুবদলের আহবায়ক মাসুদুর রহমান মাসুদ। বর্তমানে এ চার কুতুবের দখলে রাষ্ট্রীয় দুটি প্রতিষ্ঠান মেঘনা ও যমুনা তেল ডিপো। স্থানীয়দের মতে, ৫ আগষ্ট হাসিনার পলায়নের সাথে সাথে পুলিশের তৎপরতাও ছিলোনা বললেই চলে। শুধুমাত্র চারদিকে অরাজকতা ঠেকাতে মাঠে ছিলো বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কয়েকটি চৌকস দল। সুযোগের সদব্যবহার করতে ৮ আগষ্ট রিয়াদ চৌধুরী ও রিপনের নেতৃত্বে মেঘনা ও যমুনা দখলের কথা ছিলো সকাল সাড়ে ১১টায় কিন্তু সকাল ১০টায় সেনাবাহিনীর একটি টিম উভয় প্রতিষ্ঠানে গিয়ে সেখানে কর্মরত বিভিন্ন লোকদেরকে নিরাপদে ও স্বাচ্ছন্দে কাজ করার নির্দেশ দেন এবং সমস্যা দেখা দিলে তাদেরকে (সেনাবাহিনী) অবগত করার নির্দেশও দেন। এদিকে রাষ্ট্রীয় দুটি প্রতিষ্ঠানে সরকারী নিবন্ধনকৃত সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা তা দেখভাল করতেন। কিন্তু পটপরিবর্তনের সাথে সাথে সেখান থেকে আদায়কৃত টাকাগুলো মোহাম্মদ আলীর ভাতিজা সাইদুর রহমান রিপনের কাছে জমা প্রদানেরও নির্দেশনা দেয়া হয়। এবং সেপ্টেম্বরের ১ তারিখ থেকেই পুরোটাই নিয়ন্ত্রনে নিয়ে নেন সাইদুর রহমান রিপন ও হাবিবুর রহমান লিটন,ফতুল্লা থানা বিএনপির সদ্য বহিস্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াদ মোহাম্মদ চৌধুরী এবং ফতুল্লা থানা যুবদলের আহবায়ক মাসুদুর রহমান মাসুদগং। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই বলেন,রাষ্ট্রীয় এ দুটি প্রতিষ্ঠান থেকে অবৈধভাবে তেল চুরির মাধ্যমে অনেকেই কোটি কোটি টাকা মালিক হয়েছেন। ডিপো থেকে প্রকাশ্যে এবং নদীতে নোঙ্গর করা তেলবাহী জাহাজ থেকে রাতের আধারে তেল চুরির মাধ্যমে রাতারাতি কোটিপতি। তারা বলেন,একটি ট্যাংকলড়ি লোড করা থেকে পাম্পে গিয়ে তেল ডেলিভারী দেওয়া পর্যন্তই চলে তেল চুরির হিড়িক। যার কিছু অংশ চালক-হেলপার পেলেও বেশীরভাগ অংশ চলে যায় ঐ চার কুতুবের কাছে। এছাড়াও ফতুল্লার চাঞ্চল্যকর ব্রাজিল বাড়ির তেলচোর সিন্ডিকেটের শীর্ষ অপরাধী পলাতক আজমেরী ওসমানের অন্যতম সহযোগী বৈষম্য বিরোধী মামলার আসামী টুটুল এখনো অধরা থেকে গডফাদারখ্যাত সাংসদ শামীম ওসমানের আস্থাভাজন ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার উপর হামলা মামলার আরেক আসামী আসামী হাবিবুর রহমান লিটনকে ব্যবহার করে চালিয়ে যাচ্ছে চোরাই তেলের কারবার। এমন খবর সকলের জানা থাকলেও কেউ সেই পুরানো জুজুর ভয় মুখ খুলতে সাহস করছে না। একদিকে সেই ব্যাংক ডাকাতদের সর্দারখ্যাত নয় লাইখ্যা মোহামম্মদ আলী আওয়ামীলীগের শাসনামলে ব্যাপক প্রভাব বিস্তারের পর এখনো (৫ আগস্টের পর থেকে) সেই নয় লাইাখ্যা চাচার প্রভাবে ভাগিনা ফরিদ, সুমন, রনি, ভাতিজা রিপন, চেয়ারম্যান লিটনের মাধ্যমে চোরাই তেলের ব্যবসাসহ সকল অপরাধের রাম রাজত্ব চালিয়ে যাচ্ছে আইনশৃংখলা বাহিনীর নাকের ডগায়। আর আইনশৃংখলা বাহিনীর প্রায় ৯৯ শতাশ কর্মকর্তা কর্মচারী ঘুষ পেলেই তুষ্ট থেকে সকল অপরাধকে বৈধতা দিয়ে চোখ বন্ধ করে রাখছেন বিগত সময়ের মতোই। ফলে তেলচুরির মহোৎসব চলছেই। যেহেতু আইনশৃংখলা বাহিনীর অধিকাংশ কর্মকর্তা কর্মচারীই ঘুষের কাছে হার মেনে অপরাধ কর্মকান্ড চালাতে সহায়তা করার সুযোগে আবার সেই ব্রাজিল বাড়ির তেলচোরদের হোতা জয়নাল আবেদীন টুটুল নয় লাইখ্যা মোহাম্মদ আলীর ভাতিজা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার উপর হামলা মামলার অন্যতম আসামী হাবিবুর রহমান লিটন ও রিপন কে ম্যানেজ করে কোটি কোটি টাকার তেলচুরির কর্মকান্ড সকলের সামনেই চালাচ্ছে। এছাড়াও টুটুলের পাশাপাশি আরেকজন রয়েছেন যিনি হলেন ফতুল্লা চৌধুরী বাড়ির মরহুম কানু চৌধুরীর ছেলে ইকবাল চৌধুরী। তেল চোরের এ সেক্টরে তারও রয়েছে ব্যাপক সুনাম। তিনিও দীর্ঘদিন যাবত এ সেক্টরের সাথে যুক্ত থেকে কয়েক কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। তবে সেখানে কর্মরত অনেকের মতে,শুধুমাত্র দলীয় প্রভাব খাটিয়ে রাষ্টায়াত্ব এ দুটি প্রতিষ্ঠান থেকে রিপন,লিটন,রিয়াদ চৌধুরী,মাসুদ,টুটুল এবং ইকবাল চৌধুরীগংরা বিত্তভৈববের মালিক বনে গেছেন। সরকার বদল হলেও বদল হয়না এ সকল তেলচোরদের স্বভাব। শুধুমাত্র সাইনবোর্ড এবং টাকার প্রভাবে ঘুরেফিরে তাদের দখলেই থাকে সরকারী এ প্রতিষ্ঠান। সরকারের লাভজনক ব্যবসা হলেও রিপন,লিটন,রিয়াদ চৌধুরী,মাসুদটুটুল এবং ইকবাল চৌধুরীগংদের মাত্রাতিরিক্ত তেলচুরির কারনে সরকারকে সবসময়ই লোকসান এবং ভর্তুকি গুনতে হচ্ছে। আর এ লোকসান ঠেকাতেই সরকারকে ধাপে ধাপে বৃদ্ধি করতে হচ্ছে জ¦ালানী তেলের মুল্য। যার এ চরমমুল্য দিতে হচ্ছে দেশের সাধারন মানুষকে আর রাতারাতি কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যাচ্ছেন এ চোর সিন্ডিকেটের সদস্যরা। রাষ্ট্রায়াত্ব মেঘনা ও যমুনা ডিপো দুটি এ সকল তেলচোরের সিন্ডিকেট থেকে রক্ষার জন্য বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) জরুরী ভাবে ব্যবস্থা গ্রহন না করলে অনন্তকাল এ দুটি প্রতিষ্ঠানকে লোকসান গুনতে হবে যার দায়ভার পুরোটাই দেশের খেটে-খাওয়া মানুষের জীবনকে আরো দূর্বিষহ করে তুলবে। অনতিবিলম্ব এ সকল তেলচোরদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের অনুরোধ জানান স্থানীয়রা। এ বিষয়ে অভিযুক্ত হাবিবুর রহমান লিটনের ব্যবহৃত মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি অভিযোগগুলো অস্বীকার করে বলেন, আমরা কি সব নিয়ন্ত্রন করি। দেশের ক্ষমতায় তো আমরা না। কে কে এটার সাথে জড়িত তা বলতে পারবোনা তবে আমি জড়িত নই। আমি ব্যবসা বানিজ্য করি। এই বাল-ছাল তেলের পিছে পড়ে থাকিনা। হাজী মো.সাইদুর রহমান রিপনের মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন,আমি বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ডিলার এন্ড ডিষ্ট্রিবিশন ওনার্স এসোসিয়েশনের ৪ বারের রার্নিং সভাপতি। আমি কেনো এগুলোর সাথে যুক্ত হবো। তাছাড়া আমার জানা মতে নদী কিংবা উপরে কোথাও থেকে আমার নামে তেল উঠেনা। এগুলো কিছু টোকাইয়ের কাজ। আপনি খোজ নিয়ে জানুন এখানে আমার কোন সর্ম্পৃক্ততা রয়েছে কিনা। এ বিষয়ে মাসুদুর রহমান মাসুদ এর মুঠোফোনে তিনি বলেন,আমি মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি ছিলাম। বিগত আওয়ামীলীগের আমলে আমাকে সেখান থেকে বের করে দেয়া হয় এবং আমার দুটি গাড়ি ছিলো তা বিক্রি করে দেই। রিপন এবং লিটন এরা বিএনপির কেউ নয়। বিগত সময়ে এরা আওয়ামীলীগের পক্ষে কাজ করেছে এবং তাদের ৮ তলা ভবনে নৌকার বিশাল ব্যানারও লাগিয়েছিলো। রিপন এখনও মালিক সমিতির সভাপতি হিসেবে আছে এবং লিটন বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দ্বায়িত্ব পালন করছে। রিয়াদ চৌধুরীও একটি অংশের সভাপতি। কয়েকদিন আগে রাজনৈতিকভাবে তাকে বহিস্কার করা হয়েছে। তাকে আবারও দলে নিবে কিনা তা দল সিদ্ধান্ত নেবে। রিপন এবং লিটন যে আওয়ামীলীগ করেছে তার সকল ডকুমেন্ট কিন্তু আমি কেন্দ্রে জমা দিয়েছি এবং তাদের বিষয়ে ফেসবুকে আমার আইডি থেকে বিভিন্ন কথাও লিখেছি। ওদের সাথে আমার কোন সর্ম্পক নেই। তাছাড়া আমার দলতো এখনও ক্ষমতায় আসেনি তাহলে কিভাবে আমি সেখানে গিয়ে এতকিছু করি। আপনি প্রয়োজনে মেঘনা ও যমুনাতে গিয়ে খোজ নিন। আপনি আমাকে মুঠোফোনে যা বলবেন বা জানতে চাইবেন আমি তারই উত্তর দিবো। রিয়াদ মোহাম্মদ চৌধুরী জেলহাজতে থাকার ফলে তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০  
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা