আগামী নির্বাচনে ইসলামী শক্তিগুলি ঐক্য গড়তে চায়

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট
আগামী নির্বাচনে ইসলামী শক্তির একটি বৃহৎ ঐক্য গড়ে তুলতে কাজ চলছে। এ লক্ষ্যে ইসলামী দলগুলোর নেতারা বিগত মাসগুলোতে অনেকগুলো বৈঠক করেছেন। এসব বৈঠক থেকে আগামী নির্বাচনে প্রতিটি আসনে ইসলামী শক্তির একক প্রার্থী নির্ধারণের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। ইসলামী দলগুলোর নেতারা মনে করেন, দেশের প্রায় ৯২ ভাগ মানুষ মুসলমান। কিন্তু এত দিন দেশে যে শাসন চলেছে তাতে ইসলামপন্থীদের অংশগ্রহণ খুবই কম ছিল। দেশও চলছে অনৈসলামিক আইন কানুনে; যা অপ্রত্যাশিত। মূলত দেশের মানুষ ধর্মানুরাগী এবং দেশে ইসলামী অনেক দল থাকার পরও এত দিন অনৈক্যের কারণে শাসনব্যবস্থায় ইসলামপন্থীদের অংশগ্রহণ তেমন ছিল না। এ জন্য ইসলামী দলগুলোর নেতারা এখন মনে করছেন ঐক্যবদ্ধ না হলে দেশে ইসলামী আইনকানুন বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। আগামী নির্বাচনে যাতে সংসদে ইসলামপন্থীদের ভালো অংশগ্রহণ থাকে সে লক্ষ্যে এবার ঐক্যবদ্ধ নির্বাচন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার নয়া দিগন্তকে বলেন, ইসলামী দলগুলোর ঐক্যবদ্ধ নির্বাচন করার একটি উদ্যোগ চলমান রয়েছে। নির্বাচনের তারিখ ঠিক হলে তখন আরো বিষয় আলোচনা করে চূড়ান্ত করা হবে। এ জন্য চূড়ান্ত ঘোষণা আসতে আরো একটু সময় লাগবে। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব ও মুখপাত্র মাওলানা গাজী আতাউর রহমান নয়া দিগন্তকে বলেন, ঐক্যের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। আমরা অনেক আলোচনা করেছি। সামনে আরো আলোচনা হবে। এখনো নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হয়নি, কোন পদ্ধতিতে নির্বাচন হবে সেটা এখনো ঠিক হয়নি, উচ্চ কক্ষ, নি¤œকক্ষ, নারী আসন বিভিন্ন বিষয় নিয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। এসব বিষয় চূড়ান্ত হলেই আমাদের ঐক্যের প্রক্রিয়া আরো এগিয়ে যাবে। আগামী নির্বাচনে আমরা ইসলামী দলের একটি বাক্স রাখতে চাই; যাতে জনগণ ইসলামের পক্ষে তাদের ভোট দিতে পারে। কোনো কোনো দল জোটে থাকবে এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যারা ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে ছিল এমন ইসলামী দলগুলোই নিয়ে ঐক্য হবে। ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের সাথে নির্বাচনে যাওয়া ইসলামী দলগুলো ঐক্যের সাথে থাকবে না। এ ছাড়া ইসলামী ঐক্যজোট ফ্যাসিবাদের সাথে থাকা নেতাদের বাদ দিয়ে এখন নতুন নেতৃত্বে দল চালাচ্ছে। তারাও জোটে থাকবে। খেলাফত আন্দোলনের যে অংশ ফ্যাসিবাদের সাথে ছিল না তারা জোটে থাকবে। আর যে অংশ ফ্যাসিবাদের সাথে নির্বাচনের অংশ নিয়েছে তারা যদি ফ্যাসিবাদীদের বাদ দিয়ে আসে তাহলে আসতে পারবে। আগে তাদের নিজেদের সংস্কার করতে হবে। খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী বলেন, দেশের বেশির ভাগ মানুষ মুসলমান ও ইসলামপ্রিয়। নিয়মিত নামাজ-রোজা করেন। কিন্তু নির্বাচনের সময় এলে দেখা যায় যারা বিজয়ী হন তারা ইসলামী শাসন কায়েম করতে আগ্রহী নয়। আর যেসব ইসলামী দল ইসলামী শাসন চায় তারা বিক্ষিপ্ত থাকায় পাস করবে না জেনে মানুষ ভোট দিতে চায় না। এ জন্য আমরা এবার উদ্যোগ নিয়েছি, যাতে যেসব মানুষ ইসলামকে পছন্দ করেন, যারা মনে করেন একটি মুসলিম দেশে ইসলামপন্থীদের শাসন থাকা জরুরি তারা ভোট দেয়ার সুযোগ পাবেন এবং এতে জাতীয় সংসদে বেশিসংখ্যক ইসলামপন্থীদের যাওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমেদ নয়া দিগন্তকে বলেন, আমরা দেশের সব ইসলামী দল, মত ও পথের লোকদের একটি ঐক্য গড়ে তুলতে চাই। যারা ইসলামী রাজনীতি করেন এবং পীর মাশায়েখ আছেন তাদেরও আমরা একসাথে আনতে চাই। ইসলামী বুদ্ধিজীবী যারা আছেন তাদের সাথেও আলোচনা চলছে। মূলত একটি বৃহৎ ইসলামী ঐক্য গড়ে তুলতে কাজ চলছে। সর্বশেষ গত ২৯ মে ইসলামী দলগুলোর বৈঠক হয়েছিল। আগামী ২৫ জুন আবার বৈঠকের দিন ধার্য রয়েছে। ক্রমেই আমরা ঐক্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। আমরা প্রতি আসনে ইসলামের পক্ষে একক প্রার্থী ঠিক করতে চাই। জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী নয়া দিগন্তকে বলেন, আলোচনা চলমান রয়েছে। তবে এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সবাই এখন যার যার মতো নির্বাচনে প্রস্তুতি নিচ্ছে। সর্বশেষ একক প্রার্থী দেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। বর্তমান সময়ে ইসলামী দলগুলোর ঐক্যের বিষয়টি একটি আশার দিক বলেও উল্লেখ করেন তিনি।