
মোহাম্মদ আনোয়ার
পার্ক লেনের হোটেল ডরচেস্টারে অনুষ্ঠিত ঐতিহাসিক বৈঠকটি বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ মোড় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। অন্তর্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে এ সংলাপটি শুধু রাজনৈতিক সৌজন্যের দৃষ্টান্ত নয়, বরং একটি রূপান্তরশীল গণতান্ত্রিক অঙ্গীকারের প্রতিফলন। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে সারা দেশে সংঘটিত ব্যাপক গণআন্দোলনের বহ্নিশিখায় দীর্ঘদিনের শাসক আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয়। পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-নেত্রীদের আহŸানে এবং আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও অভ্যন্তরীণ আস্থার ভিত্তিতে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয় একটি অন্তর্বতী সরকার। এ সরকারের প্রধান ঘোষণা ছিল গণতন্ত্র পুনর্গঠনের লক্ষ্যে একটি স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক ও আইনের শাসনভিত্তিক রাষ্ট্রীয় কাঠামো পুনঃপ্রতিষ্ঠা। অন্যদিকে, দীর্ঘ আন্দোলননির্ভর রাজনীতির ধারা, দমনপীড়নের দীর্ঘ ইতিহাস এবং সাংগঠনিক দুর্বলতার ফলে বিএনপি এক গভীর রাজনৈতিক সংকটে নিপতিত হয়। এ প্রেক্ষাপটে, লন্ডনে অনুষ্ঠিত ঐতিহাসিক বৈঠকটি হয়ে ওঠে রাজনৈতিক সহনশীলতা, পারস্পরিক আস্থার পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং বহুদলীয় অংশীদারত্বের ঐতিহাসিক প্রয়াস। তারেক রহমানের তরফ থেকে উচ্চারিত ‘আম্মা আপনাকে সালাম দিয়েছেন’ এ বাক্যটি ছিল শুধু সৌজন্যমূলক নয়, বরং খালেদা জিয়ার দূরদর্শী নেতৃত্বের একটি নিপুণ রাজনৈতিক বার্তা। এটি দলীয় ঐক্য ও রাজনৈতিক উত্তরাধিকারবোধের প্রতীক হয়ে উঠেছে। তবে এ সংলাপের পেছনে রয়েছে তীব্র রাজনৈতিক বাস্তবতা। জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন, সাংগঠনিকভাবে দুর্বল এবং কৌশলগত দ্বিধাদ্ব›েদ্ব জর্জরিত বিএনপি নতুন রাজনৈতিক কৌশল প্রণয়নে বাধ্য হয়েছে। সামাজিকমাধ্যমে অপপ্রচার ও বিভ্রান্তির কারণে দলটির ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা শুধরে নেওয়ার এখনই সময়। এদিকে সাধারণ জনগণ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, কার্যকর শাসন ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন চায়। লন্ডনের বৈঠককে তারা দেখছে একটি আশাব্যঞ্জক সূচনা হিসেবে। তবে এ আশাকে বাস্তবে রূপ দিতে হলে প্রয়োজন নির্বাচন-পূর্ব সাংবিধানিক সংস্কার ও নিরপেক্ষ প্রশাসনিক কাঠামো; স্বাধীন ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন কমিশন; প্রতিহিংসার রাজনীতি থেকে সরে এসে অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিবেশ গড়ে তোলা। বৈঠকের একটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো—অত্যন্ত সৌহার্দ্যমূলক পরিবেশে অধ্যাপক ইউনূস ও তারেক রহমানের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তারেক রহমান প্রধান উপদেষ্টার কাছে আগামী বছর রমজানের আগে নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তাব করেন। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও মনে করেন, ওই সময় নির্বাচন হলে ভালো হয়। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তিনি আগামী বছরের এপ্রিলের প্রথমার্ধের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়েছেন। সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা গেলে ২০২৬ সালের রমজান শুরু হওয়ার আগের সপ্তাহেও নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে সেই সময়ের মধ্যে সংস্কার ও বিচার বিষয়ে পর্যাপ্ত অগ্রগতি অর্জন করা প্রয়োজন হবে। তারেক রহমান প্রধান উপদেষ্টার এ অবস্থানকে স্বাগত জানান এবং দলের পক্ষ থেকে তাকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। প্রধান উপদেষ্টাও তারেক রহমানকে ফলপ্রসূ আলোচনার জন্য ধন্যবাদ জানান। বিশেষ সূত্রে জানা গেছে, লন্ডন বৈঠকের আয়োজন ছিল অত্যন্ত কৌশলপূর্ণ এবং দীর্ঘদিনের পরিকল্পিত প্রস্তুতির ফল। অন্তর্র্বতী সরকারের একজন জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা, একটি প্রভাবশালী পশ্চিমা রাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত, আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিসম্পন্ন এক ফটোসাংবাদিক এবং তারেক রহমানের একজন বিশ্বস্ত ব্যারিস্টার—এ চারজন ছিলেন বৈঠকটি সফলভাবে আয়োজনের মূল মধ্যস্থতাকারী। তারা পর্দার অন্তরালে দিনরাত কাজ করে প্রয়োজনীয় সমন্বয় ও আস্থা নির্মাণে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। এ ছাড়া, একটি মধ্যপ্রাচ্যের গুরুত্বপূর্ণ দেশের ‘নীরব কিন্তু নির্ধারক’ সহযোগিতা এ প্রক্রিয়াকে সফল করতে ছিল অত্যন্ত কার্যকর ও তাৎপর্যপূর্ণ। বৈঠকটি শুরু হয় প্রতিনিধি পর্যায়ের সৌজন্য বিনিময় ও ফটোসেশনের মাধ্যমে। পরে এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলে দুই নেতার একান্ত আলোচনা। আলোচনায় উঠে আসে নির্বাচন, বিচার, সংস্কার, এবং রাজনৈতিক সহনশীলতার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াবলি। ড. ইউনূস নিজের রাজনৈতিক অভিলাষ না থাকার কথা স্পষ্ট করেন আর তারেক রহমান দেশের পুনর্গঠনে বিএনপির ৩১ দফার রূপরেখার কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। দেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সরকারপ্রধানের গৃহীত পদক্ষেপেরও তিনি প্রশংসা করেন। তবে এ বৈঠককে কেন্দ্র করে জামায়াতে ইসলামীসহ কিছু দল ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। তারা বলছে, একক দলের সঙ্গে রাষ্ট্রপ্রধানের যৌথ বিবৃতি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের জন্য প্রতিক‚ল। তবে বৃহত্তর রাজনৈতিক বাস্তবতায়, এ সংলাপ দুপক্ষের মধ্যে একটি ন্যূনতম বোঝাপড়ার ভিত্তি গড়ে তুলতে পেরেছে, যা আগামীর রাজনৈতিক অগ্রযাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। এ বৈঠক নিয়ে, ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, লন্ডনে অনুষ্ঠিত বৈঠকটি আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে দেশে চলমান অচলাবস্থা, সন্দেহ ও পারস্পরিক অবিশ্বাস দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তিনি আরও বলেন, ‘বৈঠকের বিষয়বস্তু ও সিদ্ধান্তগুলো দেশের সব রাজনৈতিক দল এবং জনগণের কাছে স্বচ্ছ ও আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা প্রয়োজন, যাতে জাতীয় ঐকমত্য গঠনের পথে বিশ্বাস ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা যায়।’ জনগণ, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম, এখন চায় মর্যাদাসম্পন্ন, সহনশীল ও বিশ্বাসযোগ্য রাজনীতি। তারা নেতৃত্বের নৈতিকতা ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতার মূল্য দেয়। আজকের এ আলোচনার সৌন্দর্য যদি আগামী দিনের কার্যকর রাজনৈতিক কর্মকাÐে প্রতিফলিত হয়, তাহলেই প্রকৃত অর্থে সংলাপের উদ্দেশ্য সফল হবে। এই ঐতিহাসিক সংলাপের অন্তরালে যিনি নীরব প্রেরণা হয়েছিলেন, তিনি হলেন আপসহীন দেশনেত্রী খালেদা জিয়া। তার রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা, প্রজ্ঞা এবং নেতৃত্বগুণ এ বৈঠকের বাস্তবতাকে সম্ভব করেছে। আজ তারেক রহমানের যে পরিণত, বিনয়ী ও কৌশলী ভূমিকায় আমরা অভিভূত, তার ভিত্তি নিহিত রয়েছে খালেদা জিয়ার দীর্ঘ রাজনৈতিক অনুশাসন ও আদর্শে। তবে সবকিছুর পরও চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। বিএনপির অভ্যন্তরে আন্তর্জাতিক পরিমÐলে একটি প্রভাবশালী দেশের প্রাধান্যনির্ভর ক‚টনৈতিক কৌশল, দেশের অভ্যন্তরে মাঠপর্যায়ের সংগঠনের দুর্বলতা, বিভিন্ন এলাকায় দলের নাম ব্যবহার করে অপরাধমূলক কর্মকাÐ এবং নেতৃত্বের কিছু অংশে নৈতিক বিচ্যুতি—এসব মিলিয়ে দলের সামগ্রিক ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, যদি এ অপতৎপরতা ও নৈতিক অবক্ষয় কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণে না আনা হয়, তবে স¤প্রতি অর্জিত ক‚টনৈতিক অবস্থান ও আন্তর্জাতিক সহানুভূতির পুঁজি খুব বেশি দিন টিকে থাকবে না। বরং তা উল্টো দলের ভেতরের দ্ব›দ্বকে আরও প্রকট করে তুলতে পারে। শেষ কথা, বাংলাদেশের সামনে এখন রাজনৈতিক রূপান্তরের একটি ঐতিহাসিক সুযোগ। এ রূপান্তর সফল করতে হলে দরকার হবে জাতীয় ঐকমত্য, অন্তর থেকে নেতৃত্বদানকারী রাজনীতি এবং জনগণের প্রত্যাশার প্রতি শ্রদ্ধাশীল কার্যপরিকল্পনা।
হাবিবুর রহমান বাদল ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফলে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের সাথে সাথে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা তার দোসররা কেউবা পালিয়েছে আবার কেউ আত্মগোপনে রয়েছে। বিগত পতিত সরকারের আমলে পেশাদার সাংবাদিকরা সব কিছু দেখলেও কোন কিছুই লিখতে পারতনা। আকাঁরে ইঙ্গিতে কোন কিছু লিখলেই সেইসব সাংবাদিকের উপর খর্গ নেমে […]
হাবিবুর রহমান বাদল নারায়ণগঞ্জসহ সারা দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটায় বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে নগরবাসীর আতঙ্কিত হওয়ার ঘটনা প্রতিদিন প্রকাশ পাচ্ছে। এনিয়ে সাধারণ নাগরিকরা সরব হয়ে উঠেছেন। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগ এনে বিভিন্ন মহল থেকে তার পদত্যাগ দাবি করা হচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল সোমবার বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা […]
ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট: আড়াইহাজার থানায় দায়ের করা উপজেলার দুপ্তারা ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি বাবুল মিয়া হত্যা মামলা নিয়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। গত ৩ জুন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বাবুল মিয়ার মৃত্যু হলেও দুই মাস পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় তিনি নিহত হয়েছেন উল্লেখ করে ২২ আগস্ট হত্যা মামলা করেছেন দুপ্তারা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন। এই […]
প্রকাশক ও সম্পাদক
হাবিবুর রহমান বাদল
০১৯১১০১০৪৯০
hr.badal@yahoo.com
বার্তা ও বাণিজ্যক কার্যালয়
৬. সনাতন পাল লেন
(হোসিয়ারী ক্লাব ভবন, তৃতীয় তলা)
৭৬৪২১২১
dbartanews@gmail.com
রেজি: ডিএ নং-২০৯৯