আজ মঙ্গলবার | ২৪ জুন ২০২৫ | ১০ আষাঢ় ১৪৩২ | ২৭ জিলহজ ১৪৪৬ | বিকাল ৩:৩৪

রূপগঞ্জে হাটে হাটে নৌকা বিক্রির ধুম

ডান্ডিবার্তা | ২৪ জুন, ২০২৫ | ১০:৫৮ পূর্বাহ্ণ

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট
‘নীল নবগনে আষাঢ় গগনে, তিল ঠাঁই আর নাহিরে, ওগো তোরা যাসনে ঘরের বাহিরে’ গত কয়েকদিনের অবিরাম বৃষ্টি যেন স্বরণ করিয়ে দেয় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের ”আষাঢ়” কবিতাটি। গত কয়েকদিনের অবিরাম বৃষ্টি আর জোয়ারের পানিতে বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে রূপগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চল। অতিবৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে রাস্তাঘাট যখন তলিয়ে যায় তখন চলাচলের মাধ্যম হয় নৌকা। এ কারণে বেড়েছে নৌকার চাহিদা। রূপগঞ্জ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী গোলাকান্দাইল হাটে বিক্রির জন্য দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে নৌকা বিক্রি করতে আসেন ব্যবসায়ীরা। পানি দ্রæত বৃদ্ধি পাওয়ায় নৌকার চাহিদাও কয়েকগুন বেড়েছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ক্রেতারা নৌকা ক্রয় করতে আসেন এ হাটে। পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে নৌকা বিক্রিও বাড়ছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। জানা যায়, অতি বৃষ্টি ও জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় পানিবন্দী হয়ে পড়েছে বিভিন্ন এলাকার মানুষ। অনেক রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে। বসত ঘরেও পানি থৈথৈ করছে। বন্যা কবলিত এলাকায় রাস্তাঘাট তলিয়ে গেলে তখন চলাচলের জন্য নৌকাই একমাত্র ভরসা। তাই চলাচলের একমাত্র মাধ্যম নৌকার চাহিদা বেড়েছে কয়েকগুণ। রূপগঞ্জ উপজেলার ঐতিয্যবাহী গোলাকান্দাইল হাট বসে প্রতি বৃহস্পতিবার। প্রাচীন এ হাট সব ধরনের নৌকার জন্য পরিচিত। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল বলে দেশের দুর-দুরান্ত থেকে ক্রেতা বিক্রেতারা নৌকা বিকিকিনি করতে আসে। এখন বর্ষাকাল। বিভিন্ন এলাকার নৌকা ব্যবসায়ীরা ছোট বড় নৌকা নিয়ে হাজির হয়েছে ঐতিয্যবাহী গোলাকান্দাইল হাটে। আকার ও কাঠের মান ভেদে একেকটি নৌকা বিক্রি হয় ৩ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকায়। তবে চাহিদা মোতাবেক আরও বড় নৌকাও সরবরাহ করা যায় এ হাট থেকে। রূপগঞ্জ উপজেলার গাবতলী, হোরগাঁও সোনারগাঁ উপজেলার মহজুমপরু ও কাইকারটেক এলাকা থেকে নৌকা সংগ্রহ করে গোলাকান্দাইল হাটে নিয়ে আসেন বিক্রেতারা। সকাল থেকেই শুরু হয় নৌকা বিক্রির ধুম। পানি বৃদ্ধির কারনে ক্রেতা হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। শুধু রূপগঞ্জ নয়, আড়াইহাজার, সোনারগাঁ, কালিগঞ্জ, নরসিংদীর মধাবদী, ঢাকার ডেমরা এলাকার ক্রেতারা এই হাট থেকে নৌকা ক্রয় করে। হঠাৎ পানি বৃদ্ধির কারনে এবং চাহিদা মোতাবেক নৌকা সরবরাহ না থাকায় বর্তমানে নৌকার দাম বেশী বলে জানান বিক্রেতারা। পুরিন্দা থেকে নৌকা ক্রয় করতে আসেন আলমগীর (৫২)। তিনি জানান, জোয়ারের পানি ও মেঘের (বৃষ্টি) পানিতে বাড়িতে বন্যা হইছে। চলার পথ ডুইবা গেছে। ঘর থেইকা বাইর হইতে পারিনা। এহন কোন পথ না পাইয়া কোষা (নৌকা) কিনতে আইলাম। আইসা দেহি কোশার দাম অনেক বাড়তি। আড়াইহাজারের পাচঁগাও থেকে আয়নাল মিয়া নৌকা ক্রয় করতে এসেছেন গোলাকান্দাইল হাটে। তিনি বলেন, আগের তুলনায় নৌকা এখন তিনগুন দাম বৃদ্ধি। মাথা নষ্ট হইয়া গেল। কি আর করা বেশী দাম দিয়েই একটা কিনে নিলাম। চলাচল তো করতে হবে। রূপগঞ্জের কুশাবো এলাকার আরিফ মিয়া একটি নৌকা ক্রয় করে বলেন, বৃষ্টি ও জোয়ারের পানি বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। হঠাৎ পানি বেড়ে যাওয়ায় বাড়ি থেকে বের হতে পারছিনা। রাস্তা ডুবে যাওয়ায় বেশী দামেই একটা নৌকা কিনলাম। গোলাকান্দাইল বাগমোর্চা এলাকার শাহজাহান নৌকা ক্রয় করতে এসে বলেন, গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে রাস্তাঘাট তলিয়ে গিয়ে বসত ঘরে হাচু পানি থৈথৈ করছে। দূর্গন্ধযুক্ত কালো পানিতে হাটলে ঘাঁ হয়ে যায়। বেশ কয়েক বছর যাবৎ আমরা এ সমস্যায় আছি। বাচাঁর জন্য বেশী দামে একটি নৌকা নিলাম। নৌকা বিক্রেতা আসু বাবু, স্বপন, তারা মিয়া, রঞ্জন, পরেশ, সুনিলরা জানান, পানি বাড়ায় নৌকার চাহিদা কয়েকগুণ বেড়েছে। এখন নৌকার আমদানী কম কিন্তু বিক্রি বেশী। নৌকার কারিগর তেমন পাওয়া যায়না তাছাড়া কাঠেঁর দাম বৃদ্ধি হওয়ায় নৌকার দামও বেড়েছে। এখন প্রতি হাটে ২ থেকে ৩’শ নৌকা বিক্রি করা যায় বলে জানান তিনি। নৌকা বিক্রেতা মরিন্দ্র চন্দ্র ও সুনীল চন্দ্র দাস বলেন, ঐতিহ্যবাহী গোলাকান্দাইল হাটে ভাল কাঠের সব ধরনের নৌকা পাওয়া যায়। প্রতি বৃহস্পতিবার বিভিন্ন এলাকার লোকজন এই হাট থেকে নৌকা নিয়ে যায়। এখন বর্ষাকাল। নৌকার চাহিদা বেড়েছে। তাই দাম একটু চড়া বলে জানান তারা। নৌকার মিস্ত্রি রাজন জানান, আমি ১০ বছর ধইরা নৌকা বানাই। এখন বর্ষা মৌসুম। আমাদের দিনরাত পরিশ্রম করতে হয়। নৌকার চাহিদা খুব বেড়েছে। ৮ থেকে ৯ হাত নৌকা তৈরী করলে ৭”শ টাকা পাই। আর ১০ থেকে ১২ হাত নৌকা তৈরী করলে ১৫’শ টাকা মজুরী পাই। নৌকার মিস্ত্রি শরীফ, ইব্রাহিম, এনামুল হক, গিয়াস উদ্দিন ও খলিল বলেন, একজন মিস্ত্রি দৈনিক ২টা নৌকা বানাতে পারে। আবার ২ জন মিলে ৫টি নৌকাও বানাতে পারে। তবে বড় নৌকা হলে দুই মিস্ত্রির ১ সপ্তাহ সময় লেগে যায়। এখন আমাদের রাতদিন খাটতে হয়। আষাঢ় শ্রাবন ২ মাস আমাদের কাজের চাপ থাকে। এই দুই মাসে আমাদের ইনকামও বেড়ে যায়।




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০  
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা