আজ রবিবার | ২৯ জুন ২০২৫ | ১৫ আষাঢ় ১৪৩২ | ৩ মহর্‌রম ১৪৪৭ | বিকাল ৫:৪৯

অস্ত্রধারী কাজী সোহাগ অধরা

ডান্ডিবার্তা | ২৯ জুন, ২০২৫ | ১০:৪৫ পূর্বাহ্ণ

বন্দর প্রতিনিধি
সম্প্রতি বন্দর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ব্যাটারি চালিত অটো রিকশা স্ট্যান্ডের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিএনপির দুই গ্রæপের মধ্যে টানা তিন দিনের সংঘর্ষে ডাবল মার্ডারের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে লিপ্ত যা নিয়ে বন্দর সহ জেলা জুড়ে সমালোচনা জন্ম দিয়েছে। বির্তকিত করেছে বিএনপিকেও। ঘটনার পর থেকে বন্দরে বিরাজ করছে ভীতিকর পরিস্থিতি। তবে বন্দরে ব্যাটারি চালিত অটো রিকশা স্ট্যান্ডের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এমন সংঘর্ষ এই প্রথম নয়। এর আগেও একাধিকবার বন্দর সেন্ট্রাল খেয়াঘাটের অটো স্ট্যান্ডের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। যুবদল নেতা পরিচয় দেয়া কাজী সোহাগ প্রকাশ্যে পিস্তল উচিয়ে কয়েক রাউন্ড গুলি ছুড়ার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এ ঘটনায় বন্দর থানায় মামলা দায়ের হলেও কাজী সোহাগকে গ্রেপ্তার বা অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে কোন তৎপরতা দেখায়নি বন্দর থানার পুলিশ। এমনকি জেলা পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার গণমাধ্যমকে কাজী সোহাগকে গ্রেপ্তার এবং অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের ব্যাপারে আশ^স্ত করলেও তার বক্তব্যের প্রতিফলন দেখা যায়নি। জানা গেছে, বন্দর সিএনজি স্ট্যান্ডের দখল নিতে গিয়ে ধাওয়া খেয়ে পিস্তল উচিয়ে গুলি ছুড়ায় ঘটনার মামলার প্রধান আসামি কাজী মাহবুব সোহান ওরফে কাজী সোহাগ প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করতে পারছেনা। পুলিশের ভাষ্যমতে তাকে গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত আছে। কিন্তু আইনের ভাষায় সে এখন পলাতক রয়েছে। এদিকে ৩০ জানুয়ারি সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বন্দরের ২২নং ওয়ার্ডে অবস্থিত সিরাজদৌলা ক্লাব মাঠে টাঙ্গাইল মডেল স্কুল এন্ড ক্যাডেট একাডেমির বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মহানগর বিএনপি নেতা কে.এম জোসেফ এর সাথে তাকে প্রকাশ্যে দেখা গেছে। সাদা রঙের কালো ঠোরা কাটা সোয়াটার পরিহিত অবস্থায় তাকে সেখানে দেখা গেছে। উল্লেখ্য, গত ২১ জানুয়ারি সন্ধ্যা বন্দর সিএনজি স্ট্যান্ড দখল নিতে লোকজন নিয়ে মহড়া দেয় কাজী সোহাগ এ সময় তারা বেশ কয়েকটি সিএনজি ভাঙচুর করে। এঘটনায় গত ২২ জানুয়ারি বন্দর থানায় কাজী মাহবুব সোহান ওরফে কাজী সোহাগ সহ ৮ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত ৫০জনকে অভিযুক্ত করে সিএনজি স্ট্যান্ড এর চালক সমিতির যুগ্ম-সম্পাদক আনোয়ার মোল্লা একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে কাজী মাহবুব সোহান ওরফে কাজী সোহাগ সহ ৮জনের নাম উল্লেখ ও ৫০জনকে অজ্ঞাত আসামি করে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযুক্ত বাকিরা হলো কাজী সোহাগের ভাই স্বদেশ, সিরাজদৌল্লাহ ক্লাব সংলগ্ন মিয়া বাড়ির মৃত গরিব উল্লাহর ছেলে আকাশ, খান বাড়ির মো. রশিদের ছেলে কিমন খান, মদনগঞ্জ এলাকার নায়েব আলীর ছেলে মো. রশিদ, দড়ি সোনাকান্দা এলাকার আশরাফ উদ্দিনের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম ওরফে কালা জাহাঙ্গীর, আদমপুর জিওধারা এলাকার ইউসুফের ছেলে শাহীন, র‌্যালি আবাসিক এলাকার কালু মিয়ার ছেলে আব্দুর রহমান। অভিযোগের ৫দিন পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ হওয়া গুলি ছুড়ার ভিডিও পর্যবেক্ষনের পর ২৭ জানুয়ারি অভিযোগটি মামলা আকারে গ্রহণ করেন বন্দর থানা পুলিশ।  প্রসঙ্গত, কাজী সোহাগের বিরুদ্ধে এর আগে একাধিকবার বন্দর থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে। বন্দর খেয়াঘাট সংলগ্ন কাঠপট্টি এলাকায় একজন গ্যারেজ মালিককে গ্যারেজ ব্যবসা তাকে বুঝিয়ে দিতে হুমকি প্রদর্শন করে। অন্যথায় তাকে মাটিতে মিশিয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এই ঘটনায় ভোক্তভোগী ওই গ্যারেজ থানায় অভিযোগ করলেও কোনো মামলা গ্রহণ করা হয়নি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিএনপি নেতা সোহাগ কর্তৃক ওই রিকশার গ্যারেজের মালিককে মাটিতে মিশিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়ার ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। ওই ভিডিওতে সোহাগকে বলতে শোনা যাচ্ছে গ্যারেজ মালিককে গ্যারেজ ছেড়ে চলে যেতে বলা হচ্ছে। সেই সাথে তাকে বলা হচ্ছে আপনার ভাগ্য ভালো আপনি খান মাসুদের লোক হওয়ার পরও আপনাকে এখন পর্যন্ত কিছু বলিনাই। আপনাকে তো ইচ্ছা করলে এখনোই মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে পারি। এতো কিছুর পর অবৈধ অস্ত্রধারী এই কাজী সোহাগকে আশ্রয় প্রশ্রয় দিয়ে চলেছেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা। মহানগর বিএনপির নেতা মাজহারুল ইসলাম জোসেফ ছাড়াও তাকে জেলা বিএনপির আহŸায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদের পাশে দেখা গেছে। ১২ ফেব্রæয়ারি তাকে জেলা বিএনপির আহŸায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন মহানগর বিএনপির নেতা মাজহারুল ইসলাম জোসেফ। সেখানে অধ্যাপক মামুন মাহমুদ ও মাজহারুল ইসলাম জোসেফের পেছনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে অস্ত্র মামলার প্রধান আসামি এই কাজী সোহাগ কে। অন্যদিকে কাজী সোহাগ যুবদলের কেউ নয় বলে বিবৃতি দিয়েছিলেন মহানগর যুবদলের আহŸায়ক মনিরুল ইসলাম সজল ও সদস্য সচিব শাহেদ আহম্মেদ। কোন অপরাধারী সন্ত্রাসীর কর্মকান্ডের দায় মহানগর যুবদল নিবে বলে গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন যুবদলের এই দুই শীর্ষ নেতা। পাশাপাশি অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছিলেন। একটি সূত্র নিশ্চিত করেছেন, বন্দর খেয়াঘাটে অস্ত্র উচিয়ে গুলি ছুড়ার মামলায় সম্প্রতি কাজী সোহাগের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছিল। সে সময়ও বন্দরে তাকে প্রকাশ্যে ঘুরতে দেখা গেলেও তাকে গ্রেপ্তার করেনি বলে অভিযোগ মামলার বাদী অটো রিকশা ও সিএনজি শ্রমিক কমিটির যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ার হোসেন। অটো রিকশা ও সিএনজি শ্রমিকেরা জানান, কাজী সোহাগ এখনও বন্দর স্ট্যান্ডের নিয়ন্ত্রণ নিতে বিভিন্ন কুটচাল করে যাচ্ছে। তার নিয়ন্ত্রণে কিশোর গ্যাং এর একটি গ্রæপ রয়েছে। যেকোন মুহূর্তে এই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী কাজী সোহাগ আবারো বন্দর স্ট্যান্ডের নিয়ন্ত্রণ নিতে হামলা চালানোর আশঙ্কা করছেন তারা। অন্য দিকে জানা গেছে, বিএনপি নেতারা মুখে যাই বলুক না এই সন্ত্রাসী কাজী সোহাগকে গ্রেপ্তারের ব্যাপারে তাদের তেমন কোন জোড়ালো ভূমিকা রাখতে দেখা যায়নি। যদি কাজী সোহাগকে গ্রেপ্তার করে তার কাছে থাকা অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার না করা হয় তাহলে ভবিষ্যতে হাফেজিবাগের মত বন্দর স্ট্যান্ডেও এমন নৃশংস ঘটনার জন্ম হতে পারে আতঙ্ক গ্রস্থ রয়েছে স্ট্যান্ডের অটো রিকশা ও সিএনজি শ্রমিকেরা।
 




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০  
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা