আজ সোমবার | ২১ জুলাই ২০২৫ | ৬ শ্রাবণ ১৪৩২ | ২৫ মহর্‌রম ১৪৪৭ | বিকাল ৪:১০

জমতে শুরু করেছে ঈদের কেনাকাটা

ডান্ডিবার্তা | ৩০ মার্চ, ২০২৩ | ১০:৪০ পূর্বাহ্ণ

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট চলছে মাহে রমজান। ঈদের এখনো প্রায় এক মাস বাকি। এর মধ্যেই নারায়ণগঞ্জে শুরু হয়ে গেছে ঈদকেন্দ্রিক কেনাবেচা। প্রতিদিনই ক্রেতাদের উপস্থিতি কখনো কম কখনো বেশী। সরগরম হয়ে উঠতে শুরু করছে অধিকাংশ দোকানপাট গুলো। দোকানে দোকানে ঘুরে পছন্দের পোশাক কিনছেন অনেকে। ক্রেতাদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে ব্যবসায়ীরাও বাহারি পোশাকে দোকান সাজিয়েছেন। এদিকে, গত দু-তিন বছরের করোনা মহামারির ধকল কাটিয়ে এবার ঈদ ঘিরে ব্যবসায় লাভের আশা ব্যবসায়ীদের। ভালো বিক্রির আশায় নতুন বিনিয়োগও করেছেন অনেকে। রমজানের শুরু থেকে মার্কেটে ক্রেতাদের কিছুটা উপস্থিতির দেখা পেয়ে, এবার ব্যবসায়ীরা ঈদ নিয়ে আশাবাদি বলে জানিয়েছেন। সরেজমিন চাষাঢ়া থেকে ডিআইটি বঙ্গবন্ধু সড়কের সাথে মার্কেট ও দোকানপাট ব্যবসায়ীরা বলছেন, মহামারি করোনার কারণে ২০২০ সাল থেকেই ব্যবসায় এক ধরনের মন্দা চলছে। ঈদের সময় ব্যবসার অবস্থা ছিল খুবই খারাপ। করোনার ব্যাপক প্রাদুর্ভাবে সরকারি বিধিনিষেধ থাকায় মানুষ তখন অতি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হননি। অনেকে ঈদের কেনাকাটাও করেননি। ব্যবসায়ীরাও দোকান খোলার খুব একটা সুযোগ পাননি। ২০২১ সালেও ব্যবসায়ীদের মন্দা কাটেনি। সে বছরও করোনার প্রকোপে ঈদের কেনাকাটায় মার্কেটগুলোতে কোনো উত্তাপ ছিল না। অনেকটা ঘরবন্দি অবস্থায় ঈদ কেটেছে মানুষের। টানা দুই বছর ব্যবসায় লোকসান গুনে অনেকের পুঁজিতেও টান পড়ে। ব্যবসায়ীরা জানান, পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও ব্যবসায় সুদিন ফেরেনি। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে মার্কেট, শপিংমলসহ অন্যান্য দোকানপাট খোলা রাখার ক্ষেত্রে সরকার সময় বেঁধে দেয়। তার ওপর শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে স্থানীয় ও বিশ্ববাজারে হু হু করে দাম বাড়তে থাকে জিনিসপত্রের। যা খুব দ্রুত অস্বাভাবিক পর্যায়ে পৌঁছায়। ফলে টানা তিন বছর বলতে গেলে লাভের মুখ দেখা হয়নি ব্যবসায়ীদের। তবে ২০২০ ও ২০২১ সালের তুলনায় গত বছর ঈদকেন্দ্রিক বেচাকেনা মোটামুটি ভালো ছিল। বঙ্গবন্ধু সড়কে সায়াম প্লাজায় ‘ওমেন কালেকশন’ দোকানে কাজ করেন মৌ রাণী দাস, তিনি লাইভ নারায়ণগঞ্জকে জানান, মাকের্টে টুকটাক ক্রেতারা আসা শুরু করেছে। প্রধম রোজা থেকে কখনো খুব বেশী ক্রেতা মিলে আবার কখনো একেবারেই থাকে না। সব মিলিয়ে ঈদের বেচাকেনার আমেজ আছে। আশা করি সামনের রোজা গুলোতে আরও ক্রেতা বাড়বে। তিনি আরও জানান, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ প্রভাবে এখন অনেক জিনিস পত্রের দাম বেশী। অনেকটা অস্বাভাবিক দাম। এখন অব্দি লাভের আশা করছি না তেমন। বাকিটা উপর ওয়ালা জানে। অন্যদিকে ক্রেতাদের অনেকে বলছেন, গত বছরের তুলনায় এবার পোশাকের দাম অনেক বেশি। দাম বাড়ার বিষয়টি স্বীকার করছেন ব্যবসায়ীরাও। তারা বলছেন, এখন সবকিছুর দাম বাড়তি। পোশাক তৈরি ও আমদানিতে খরচ বেড়েছে। এ কারণে দামও কিছুটা বাড়তি। কালির বাজারের এক ব্যবসায়ী মো. হৃদয় শেখ বলেন, আমাদের সব থেকে ভালো ব্যবসা হয় রোজার ঈদে। করোনার কারণে ২০২০ ও ২০২১ সালে ব্যবসা খারাপ ছিল। ২০২২ সালে ব্যবসা ছিল মোটামুটি। এবার মনে হচ্ছে ব্যবসা ভালো হবে। সাধারণত ১০ রোজার পর থেকে ঈদের বিক্রি শুরু হলেও এবার রোজার শুরু থেকেই ক্রেতাদের টুকটাক সারা পাচ্ছি। তিনি বলেন, মার্চ মাসটা শেষ হলে এপ্রিলের শুরু থেকে বিক্রি অনেক বেড়ে যাবে। কারণ, মাসের শুরুতে চাকরিজীবীদের হাতে বেতনের টাকা চলে আসবে। অনেকে ঈদ করতে গ্রামের বাড়ি যাবেন। তারা একটু আগেভাগে কেনাকাটা শেষ করবেন। আমাদের ধারণা, এবার চাঁদরাত পর্যন্ত ভালো বেচাকেনা হবে। ডিআইটি শার্ট-পেন্ট বিক্রির দোকানের মালিক মো. মনির হোসেন বলেন, গত তিন বছর ঈদে ব্যবসা ভালো হয়নি। করোনা শুরুর প্রথম দুই বছর তো আমাদের লোকসান গুণতে হয়েছে। গত বছর কিছুটা মুনাফার দেখা পেয়েছিলাম। এবার ভালো ব্যবসা হবে, এই আশায় নতুন করে বিনিয়োগ করেছি। ক্রেতাদের সাড়াও টুককাট আছে। আশা আল্লাহ আমাদের রমজানের বরকত দান করবেন। মার্কেটে পোশাক কিনতে আসা সায়মা আফরোজ মিথিলা নামের এক ক্রেতা লাইভ নারায়ণগঞ্জকে বলেন, ১৫ রোজার পর পোশাকের দাম বেড়ে যায়। তাই এবার একটু আগেই ঈদের পোশাক কিনতে চলে এসেছি। কয়েকটি দোকান ঘুরে দুটি থ্রি-পিস কিনেছি। গত বছরের তুলনা এবার পোশাকের দাম বেশি। গত বছর যে থ্রি-পিস দেড় হাজার টাকায় কিনেছি, এবার সেটির দাম দুই হাজার টাকা রাখা হচ্ছে। ডিআইটি আজহার সুপার মার্কেটের একটি দোকানের বিক্রয়কর্মী মো. রবিন বলেন, আমরা রোজা শুরু হওয়ার আগেই ঈদের পোশাক সাজানো শুরু করেছি। সামনে নতুন নতুন আরও ডিজাইনের পোশাক আনা হবে। ঈদের কেনাবেচা শুরু হয়নি তেমন। শুক্র ও শনিবার ভালো বিক্রি হয়েছে। গত বছরও খুব ভালো ব্যবসা হয়নি। তবে এবার পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন। প্রথম রোজা থেকেই ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে। মনে হচ্ছে এবার বেশ ভালো ব্যবসা হবে। এছাড়া ঈদকে সামনে রেখে জমজমাট হয়ে উঠেছে নারায়ণগঞ্জের জামদানি পল্লী। শীতলক্ষ্যা নদী পাড়ে নারায়ণগঞ্জ জেলায় দেশের একমাত্র জামদানি পল্লী। বংশ পরম্পরায় এই ঐতিহ্যববাহী পোশাক শিল্পের শিল্পী তৈরি হয়, পরিবারের অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা থেকেই। ভিন্ন ধরণের শাড়ী তৈরিতে আংশিক বা পুরোপুরি যন্ত্রের ব্যবহার শুরু হলেও জামদানি তৈরি হয় তাঁতে। ঈদকে সামনে রেখে জামদানি পল্লী এবার বেশ জমজমাট। বর্তমান বাজারে জামদানি শাড়ির চাহিদাও বেশি। তাই শেষ সময়ে রাত দিন কাজ করছে তারা। জামদানির জন্মস্থান নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জের তারাব পৌরসভার নোয়াপাড়া গ্রামে। তবে, জামদানি পল্লী বিস্তৃত হয়েছে নারায়ণগঞ্জের আরো অনেক জনপদে। জামদানি বলতেই শাড়ীর যে প্রচলিত ধারণা ছিল, এখন তার পাশাপাশি সালোয়ার কামিজ ও ছেলেদের জন্য পাঞ্জাবিও তৈরি করা হচ্ছে। যার চাহিদাও রয়েছে বাজারে। আসন্ন ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে ব্যস্ত সময় পার পরছে এখানকার তাঁতীরা। দিনরাত শ্রম দিয়ে তৈরি করছে জামদানিসহ সালোয়ার কামিজ ও পাঞ্জাবি। দেশ ও দেশের বাহির থেকে জামদানি কিনতে রূপগঞ্জ আসছে ক্রেতারা। বিভিন্ন দামের জামদানি কিনে খুশি তারা। ব্যবসায়ীরা বলছে, ঈদকে সামনে রেখে তাদের বেচাবিক্রি ভালো হচ্ছে। দুই হাজার থেকে শুরু করে লাখ টাকা মুল্যের জামদারি শাড়ী তৈরী হয় এখানকার তাঁতগুলোতে। ক্রেতাদের সুবিধার্থে অনলাইনে সরাসরি তাঁত থেকে শাড়ি কেনার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানালেন তারা। রূপগঞ্জে বিসিক শিল্প নগরীর জামদানি শিল্পনগরী কর্মকর্তা বায়েজিদ হোসেন জানান, একটি সময় জামদানি শুধু সমাজের এলিট শ্রেনী মানুষের পন্য ছিল, এখন জামদানি সবাই পড়ে। দিন দিন নারীদের কাছে জামদানি চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। শুধু রূপগঞ্জে জামদানি শিল্প নগরীতে আসন্ন ঈদুল ফিতরে প্রায় বিশ থেকে ত্রিশ কোটি টাকা বিক্রি হয় বলে জানান জামদানি শিল্পনগরী কর্মকর্তা।




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০৩১  
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা