
ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট
নারায়ণগঞ্জে ওসমান পরিবারের অসংখ্য টর্চার সেল রয়েছে। এর মধ্যে এই পরিবারের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জের আলোচিত মেধাবী ছাত্র তানভীর মুহাম্মদ ত্বকীকে অপহরণের পর দুটি টর্চার সেলে নির্যাতন চালিয়ে হত্যার অভিযোগ তোলেন তাঁর বাবা সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বী। একটি টর্চার সেল থেকে ত্বকীর ব্যবহৃত রক্তমাখা প্যান্ট উদ্ধার করেছিল র্যাব। এই দুটি ছাড়াও নারায়ণগঞ্জ শহরের অন্য টর্চার সেলগুলোতে ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে আটকে রেখে নির্যাতন, মুক্তিপণ আদায়, চাঁদাবাজি ও দখলবাজি চালাত ওসমান পরিবার। গত ৫ আগস্ট হাসিনা সরকার পতনের পর বিক্ষুব্ধ জনতা এসব টর্চার সেলের অনেকটি গুঁড়িয়ে দিয়েছে। ত্বকী হত্যায় ব্যবহার করা হয় দুটি টর্চার সেল ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বী জানান, ২০১৩ সালের ৬ মার্চ বিকেল ৪টায় ত্বকী চাষাঢ়ায় সুধীজন পাঠাগারে যাচ্ছিল। পথে তাকে অপহরণ করে পাঠাগারের উল্টোদিকে সায়াম প্লাজায় শামীম ওসমান ঘনিষ্ঠ শাহ নিজামের অফিসে নেওয়া হয়। সেখানে প্রথমে ত্বকীর ওপর নির্যাতন চালানোর পর রাত ৯টায় নেওয়া হয় আল্লামা ইকবাল সড়কে শামীম ওসমানের প্রয়াত বড় ভাই নাসিম ওসমানের ছেলে আজমেরী ওসমানের টর্চার সেলে। পরে গ্রেপ্তারকৃতদের জবানবন্দি থেকে জানা যায়, ওই টর্চার সেলে আজমেরী ওসমান, কালাম সিকদার, রাজীব ও লিটন মামুন মিলে ত্বকীকে হত্যা করেন। কয়েক বছর আগে ওই টর্চার সেল বন্ধ করে তোলারাম কলেজের পাশে একটি ভবনে আজমেরী ওসমান গড়ে তোলেন নতুন টর্চার সেল। গত ৫ আগস্ট ওই টর্চার সেলটি গুঁড়িয়ে দিয়েছে বিক্ষুব্ধ জনতা। নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা স্টেডিয়ামের কাছে অবস্থিত এই পার্ক কয়েক বছর ধরে আলোচনায়। সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক রফিউর রাব্বী বলেন, এই নম পার্ক ছিল কাশিমবাজার কুঠি। এখানে বসেই শামীম ওসমানের লোকজন নানা অপকর্ম করত। বিগত দিনে বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের সম্ভাব্য চেয়ারম্যান ও মেম্বার প্রার্থীদের ডেকে এনে এখানে শাসানো হতো। গত ৫ আগস্ট এই পার্কটিও গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। স্থানীয়রা জানায়, ফতুল্লা ও কুতুবপুর এলাকার কোনো জমি বিক্রি করতে হলে আসতে হতো এই পার্কে। এখানে বসেই শাহ নিজাম সাধারণ ক্রেতা ও জমির মালিকদের নাজেহাল করতেন। নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের ৩০৪ নম্বর কক্ষটি শামীম ওসমানের নামে বরাদ্দ ছিল। শামীম ওসমান শহরের অপছন্দের ব্যবসায়ীদের ডেকে এনে এখানে সায়েস্তা করতেন। সাবেক জাতীয় ফুটবলার সম্রাট হোসেন এমিলি একবার অভিযোগ তুলে বলেছিলেন, এ ক্লাবে তাঁকে ডেকে নিয়ে শামীম ওসমান অস্ত্র ঠেকিয়েছিলেন। গত ৪ আগস্ট ক্লাবটিতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় আর ৫ ও ৬ আগস্ট ক্লাবটি লুট করে বিক্ষুব্ধ জনতা। শামীম ওসমানের ছেলে অয়ন ওসমানের অফিস ছিল চাষাঢ়ায় ডাকবাংলোর পাশে একটি বহুতল ভবনে। মূলত ওই অফিসটি ব্যবহার করা হতো টর্চার সেল হিসেবে। ৫ আগস্টের পর অয়ন ওসমান পালিয়ে গেলে ওই অফিসটিতে তালা মেরে দেওয়া হয়। চাষাঢ়ায় নারায়ণগঞ্জ রাইফেল ক্লাবটিকে অঘোষিত কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করতেন শামীম ওসমান। ইসলামী আন্দোলনের নেতা হাফেজ জাকির হোসেন জানান, ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে কুতুবপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদ থেকে সরে দাঁড়াতে তাঁকে এই ক্লাবে ডেকে এনে চাপ দেওয়া হয়। সরকারি তোলারাম কলেজের ছাত্রসংসদ ছিল প্রকাশ্য এক টর্চার সেল। সাংবাদিক, সাধারণ শিক্ষার্থী, ছাত্রদলের কর্মী কেউই বাদ যায়নি এই টর্চার সেলের নির্যাতন থেকে। ২০২২ সালের ১৫ জুলাই রাতে এই কলেজের সামনের সড়ক দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় ছাত্রদলের চার নেতাকর্মীকে পেটান ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ ঘটনার নেতৃত্ব দেন অয়ন ওসমানের ঘনিষ্ঠ কলেজের ভিপি হাবিবুর রহমান রিয়াদ। ঘটনার খবর পেয়ে সেখানে গেলে ছবি ও ভিডিও ধারণে বাধা দিয়ে দুই সাংবাদিককে মারধর করা হয়। ২০২১ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি দুপুরে সরকারি তোলারাম কলেজে ফরম পূরণ করতে গিয়ে রিয়াদ ও তাঁর লোকজনের মারধরের শিকার হন ওই কলেজের দুই শিক্ষার্থী আতা-ই-রাব্বী ও আব্দুল্লাহ আল মামুন। মূলত কলেজের ছাত্রসংসদের কক্ষে বসে এসব ঘটনা ঘটানো হতো। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তোলারাম কলেজের ভেতর দখল করে রাখা ছাত্রসংসদের কক্ষ গুঁড়িয়ে দেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। মানবাধিকারকর্মী ও নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট মাহাবুবুর রহমান মাসুম বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান ওসমান পরিবার জিম্মি করে রেখেছিল। গত ১৫ বছর নারায়ণগঞ্জের কোনো মানুষ ভয়ে তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পেত না। আমরা চাই বর্তমান প্রশাসন শক্ত হাতে নারায়ণগঞ্জের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক করবে। নারায়ণগঞ্জ শান্তির শহর হোক এটাই আমাদের কাম্য।’ ছাত্র ফেডারেশন নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি ফারহানা মানিক মুনা বলেন, ‘ওসমান পরিবারের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জের মানুষকে সব সময় লড়াই করে টিকে থাকতে হয়েছে। কারণ সব সময় পুরো নারায়ণগঞ্জকে গডফাদারের নারায়ণগঞ্জ বানিয়ে রাখার চেষ্টা অব্যাহত ছিল তাদের। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় তাদের প্রকৃত চেহারা সাধারণ মানুষ দেখতে পেয়েছে। তারা শুধু ওই আন্দোলনের ওপর হামলা চালিয়েছে, বিষয়টি এমন নয়। নারায়ণগঞ্জের মানুষ ত্বকী, বুলু, চঞ্চল, আশিক হত্যাসহ বহু হত্যাকান্ড দেখেছে। এসব হত্যাকান্ডের সঙ্গে শামীম ওসমান ও তাঁর পরিবার জড়িত। তোলারাম কলেজের ছাত্রসংসদকে রীতিমতো তারা টর্চার সেলে পরিণত করেছিল। এ থেকে আমরা পরিত্রাণ পেয়েছি।’
হাবিবুর রহমান বাদল ষোল বছরের স্বৈরশাসনে দেশকে পঙ্গু করে শত দমন পীড়ন আর নির্বিচারে গুলি বর্ষন করে দেড় হাজারের বেশী ছাত্র-জনতাকে হত্যার পরও শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনা তার গতি রক্ষা করতে পারেনি। গত বছরের ৫ আগষ্ট ছাত্র-জনতার রোষানল থেকে বাঁচার জন্য ছোট বোন রেহানাসহ স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। শেখ হাসিনার রাজনৈতিক আত্মসমর্পণ এতটাই […]
হাবিবুর রহমান বাদল নারায়ণগঞ্জসহ সারা দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটায় বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে নগরবাসীর আতঙ্কিত হওয়ার ঘটনা প্রতিদিন প্রকাশ পাচ্ছে। এনিয়ে সাধারণ নাগরিকরা সরব হয়ে উঠেছেন। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগ এনে বিভিন্ন মহল থেকে তার পদত্যাগ দাবি করা হচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল সোমবার বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা […]
ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট: আড়াইহাজার থানায় দায়ের করা উপজেলার দুপ্তারা ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি বাবুল মিয়া হত্যা মামলা নিয়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। গত ৩ জুন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বাবুল মিয়ার মৃত্যু হলেও দুই মাস পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় তিনি নিহত হয়েছেন উল্লেখ করে ২২ আগস্ট হত্যা মামলা করেছেন দুপ্তারা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন। এই […]
প্রকাশক ও সম্পাদক
হাবিবুর রহমান বাদল
০১৯১১০১০৪৯০
hr.badal@yahoo.com
বার্তা ও বাণিজ্যক কার্যালয়
৬. সনাতন পাল লেন
(হোসিয়ারী ক্লাব ভবন, তৃতীয় তলা)
৭৬৪২১২১
dbartanews@gmail.com
রেজি: ডিএ নং-২০৯৯