আজ শুক্রবার | ২০ জুন ২০২৫ | ৬ আষাঢ় ১৪৩২ | ২৩ জিলহজ ১৪৪৬ | বিকাল ৩:০৬
শিরোনাম:
না’গঞ্জে মিছিলের পরিকল্পনা আ’লীগের!    ♦     মাদকাসক্ত ছেলে হত্যার অভিযোগে বাবা-মা গ্রেফতার    ♦     ‎অবৈধ বালু উত্তেলনে শান্তিনগর কবরস্থান ভাঙ্গনের কবলে    ♦     বন্দরের মদনপুরে বৃক্ষরোপন ও তারেক রহমানের ৩১ দফা বাস্তবায়নে লিফলেট বিতরণ    ♦     সদর-বন্দর আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকায় যারা    ♦     যুবলীগ কর্মী শুভ এখন মৎস্যজীবী দলের সভাপতি    ♦     সোনারগাঁয়ে স্কুলে চুরি নিয়ে বিএনপির দুই গ্রæপে সংঘর্ষের আশংকা    ♦     সমঝোতা সফল হবে কি?    ♦     মামুন হত্যা মামলায় সাত আসামিকে কারাগারে প্রেরণ    ♦     না’গঞ্জকে লাশ ডাম্পিং এরিয়াতে পরিনত করেছে অপরাধীরা    ♦    

হারিয়ে যাচ্ছে লেপ-তোষকের কদর

ডান্ডিবার্তা | ২২ নভেম্বর, ২০২৪ | ৯:৩৯ অপরাহ্ণ

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট:

কিছু দিন পরেই জেঁকে বসবে শীত। শীতের রাত মানে লেপের তাপে শান্তির নিদ্রা। তাই গরমের বিদায় জানিয়ে লেপ-তোষক বানানোর হিড়িক পড়ে যায়। অন্যান্য সময়ের তুলনায় লেপ-তোষক তৈরীতে কারিগরদের ব্যস্ততা বেড়ে যায় তুলনামূলক বেশী। ভীড় জমতে শুরু করে তুলায় তৈরী করা দোকান গুলোতে। কেউ নগদ টাকায় আগে থেকে তৈরি করাগুলো কিনে নেয়, কেউ বানানোর জন্য অর্ডার দেয়। অনেকে আবার পুরোনো লেপ-তোশক মেরামত করে থাকেন। কিন্তু নারায়ণগঞ্জে দেখা গেলো এর ভিন্ন চিত্র। শীতের আগমনে কদর নেই লেপ, তোশক ও জাজিমের। আগে এ সময় এসব সামগ্রী তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করলে, বর্তমানে কাজ নেই কারিগরদের। লেপ-তোশকের দোকানগুলোতে ভিড় থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে ক্রেতা শূন্য বিক্রেতারা।

সরেজমিন শহরের কালীর বাজারে দেখা যায়, ব্যবসায়ীরা কেউ স্মার্ট ফোনের মধ্যে লুডু কেউবা আমার পুরোন গল্পে মগ্ন হয়ে সময় পার করছেন। দোকানগুলিতে নেই তেমন কোনো ভীড়। ব্যবসায়ীরা বসে বসে দিন কাটাচ্ছে, নেই কোনো কাষ্টমার। বিক্রেতারা জানায়, দুই একদিন পরপর বড়জোর একটা থেকে দুইটা কাষ্টমার পাওয়া যায়। তাও মাথার বাঁলিশ তৈরীর কাস্টমার। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ আস্তে আস্তে হারিয়ে যাচ্ছে তুলার তৈরী লেপ-তোষকের চাহিদা। মানুষ এখন কম্বল আর ম্যাট্রেসের দিকে ঝুঁকছেন। লেপ-তোষাকের বাজারে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার প্রতি গজ লেপ তৈরির কাপড়ের দাম ৪৫-৫০ টাকা, তোশকের প্রতি গজ কাপড়ের দাম ৪৬-৪৮ টাকা এবং প্রতি গজ জাজিম তৈরির কাপড়ের দাম রাখা হচ্ছে ১৫০-১৮০ টাকা করে। এ ছাড়া প্রতি কেজি কার্পাস তুলার দাম ১৮০-২০০ টাকা, পোলি তুলার দাম ১২০-১৩০ টাকা, উলের দাম ৫৫-৬০ টাকা ও প্রতি কেজি জুটের দাম রাখা হচ্ছে ৩৫-৪০ টাকা করে। এ বছর এক পিস রেডিমেট লেপ বিক্রি হচ্ছে ১৫শ’ থেকে ২৭শ’ টাকার মধ্যে, তোশক বিক্রি হচ্ছে ১৪শ থেকে ২৫শ’ টাকার মধ্যে এবং জাজিম বিক্রি হচ্ছে ৩৫শ’ টাকা থেকে ৪২শ’ টাকার মধ্যে। এ ছাড়া বালিশ বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে। কম্বল-ম্যাট্রেসের কিনতে এসে সোহেল জানান, এখনো শীত নামে নাই। গ্রাম সাইডে বেচাকেনা মোটামুটি থাকলেও শহরে এর বেচাকেনা খুবই কম। দাম বাড়ায় আগের থেকে অনেক খারাপ সময় যাচ্ছে আমাদের। যেখানে মানুষ সংসার চালাতে হিমশিম খায়, সেখানে লেপ তোষক কিভাবে বানায়। জানতে চাইলে লেপ-তোষক কারীগর মো. মোশারফ হোনের জানান, লেপ তোষাকের চাহিদা এখন আর নাই মানুষের মধ্যে। এখন কম্বল আর কমফোর্টারই ব্যবহার করে মানুষ। তুলার চাহিদা আর নাই । সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত মাত্র ২৫০ গ্রাম তুলা বিক্রি হইছে। আগে ১০টা ১৫টা করে লেপ বানাইতাম। এখন তো কাজই নাই। কেউ আর আগের মতো লেপ তোষক বানায় না। এখন শুধু বালিশ বানায়। সামনে শীত বাড়বে, তখন হয়তো দু একটা লেপ তোষকের অর্ডার পেতে পারি। তিনি আরও বলেন, ২৫ বছর যাবত এই ব্যবসায় জরিত। আগে মানুষ লেপ তোষক বানানো জন্য বসে থাকতো। আর এখন কোন রকম ডাল-ভাত খেয়ে বেঁচে আছি। আগের মতো নাই আর আমাদের ব্যবসা। এখন সবই পাওয়া যায় মার্কেটে। গত ৫ বছর যাবত আমাদের ব্যবসার লসের দিকে যাচ্ছে। ১ দিন কাজ করলে ৪ দিন বসে থাকতে হয়। সরকার আমাদের একটা নিদ্রিষ্ট যায়গা করে দিলে আমরা আমাদের পরিবার নিয়ে সুখে থাকতে পারবো। লেপ-তোষক তৈরীর ব্যবসায়ী সনজিৎ সাহা বলেন, মানুষের হাতে এখন টাকা পয়সা নাই। দ্রব্যমূল্য যে হারে বাড়ছে, এতে মানুষ আর লেপ তোষক বানাতে চায় না। এখন তো বাজারের বিভিন্ন ধরণের আইটেম বের হয়ে গেছে। লেপ এর বদলে কম্বল কিনে, দামও কম। লেপের খরচ বেশী, কম্বলে খরচ কম। তাছাড়া লেপের থেকে কম্বল দেখতে সুন্দর বেশী। আগের মতো করে সেই চাহিদা নেই এখন আর। এক সময় শীত থাকতো টানা ৩ মাসেরও বেশী। এখন সেই শীত ১ মাসেই শেষ। লেপ-তোষক তৈরীর কারিগররী পেশা বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি ঐতিহ্য পেশা। এখন শীত আসলে কারিগররা লেপ-তোষক বানাচ্ছে এমন দৃশ্য আর চোখে পড়ে না। বাহারি কম্বল আর ম্যাট্রেসের দাপটে হারিয়ে গেছে লেপ-তোষকের কদর। আর এই সময় ও রুচির মধ্যস্থতায় বিপাকে পড়েছে খেটে খাওয়া লেপ-তোষকের ব্যবসায়ী ও কারিগররা। দীর্ঘদিনের এ ব্যবসাকে না পারছে ছেড়ে দিতে না পারছে ধরে রাখতে। তাদের কারো কাছে এটা ঐতিহ্যে আবার কারোর জন্য এটাই একমাত্র উপার্জনের উৎস। কালির বাজারের এক লেপ-তোষক এক কারিগর বলেন, লেপ-তোষকের কারিগর আমার দাদা ছিলেন, বাবা ছিলেন এখন ৬০ বছর যাবত আমি করছি। আগের মতো করে এখন আর সেই ব্যবসা আমাদের নেই বলা যায়। এখন কম্বল আর ম্যাট্রেসের কারণে আমাদের ব্যবসা অনেকটা নাজেহাল অবস্থা। এখন আর কেউ শিমুল তুলার বালিশ তৈরী করতে আসে না সবাই ফোমের বালিশ কিনে। তুলার তোষক আর কেউ চায় না ফোমের তোষক কিনে। এখন রেডিমেট এর চাহিদা বেশী । লেপের পরিবর্তে কম্বল কিনে মানুষ। এতে করে আমাদের ব্যবসা লসের দিকে। অনেকে লসের কারণে এই পেশা ছেড়ে দিচ্ছে। হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্য। ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে এই পেশার কারিগর।




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০  
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা