না’গঞ্জ আ’লীগের ভবিষ্যৎ অন্দকার

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট
ছাত্র জনতার তোপের মুখে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করার সাড়ে ৪ মাস পার হয়েছে। এদিন থেকেই নেতাকর্মীরা গ্রেফতার আতঙ্কে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। দীর্ঘদিন ক্ষমতার আসনে থাকলেও গত কয়েক মাসেই তাদের অবস্থা বেশ শোচনীয়। কবে নাগাদ তারা পূর্বের অবস্থায় ফিরবেন তা নিয়েও রয়েছে অনিশ্চয়তা। শুরুর দিকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির খারাপ থাকায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা একেবারে ধরাছোঁয়ার বাহিরে ছিলেন। তবে ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু হওয়ায় চিন্তিত হয়ে পড়েছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এরই মধ্যে আওয়ামী লীগের অসংখ্য নেতাকর্মী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হচ্ছেন। যা নিয়ে প্রতিনিয়ত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের দুশ্চিন্তা বাড়ছেই। এদিকে গত তিন মাসে কিছুসংখ্যক নেতাকর্মী পরিবার নিয়ে দেশত্যাগ করতে পারলেও অধিকাংশ নেতাকর্মী এখনো দেশের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে রয়েছেন। অনেকেই আবারও দেশত্যাগের চেষ্টা করছেন। এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-জনতার মৃত্যুর ঘটনায় জেলার বিভিন্ন স্থানে এ পর্যন্ত প্রায় ৯০টি মামলা দায়ের হয়েছে। এইসব মামলায় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের আসামি করা হয়েছে। দীর্ঘ ১৬ বছর ক্ষমতায় থাকার পর পতনের সঙ্গে সঙ্গে তাদের এই পরিস্থিতি হবে তা কখনো কল্পনা করেনি নেতাকর্মীরা। এর আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ১৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের শোকদিবস পালন করার কথা থাকলেও বিএনপিসহ অন্যান্য দলের রাজপথে শক্ত অবস্থানে থাকার কারণে তাদের শোক পালন করতে দেখা যায়নি। পালন করতে পারেননি শেখ হাসিনার জন্মদিনও। এর আগে বিরোধী দলে থাকা অবস্থাতেও কখনো তাদের এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়নি। এদিকে পলাতক আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এখনো নিজ এলাকায় প্রবেশ করতে ভয় পাচ্ছেন। অনেক আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পরিবার নিজ এলাকায় থাকলেও তাদের মধ্যে এক ধরণের ভীতি সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া অনেক স্থানে আবার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মারধর করে পুলিশে সোপর্দ করার ঘটনা ঘটছে। সব মিলিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বর্তমানে খারাপ সময় পার করছেন। গ্রেফতার থেকে বাঁচতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের এভাবে কতদিন পরিবার নিয়ে পালিয়ে বেড়াতে থাকতে হবে তা এই মুহূর্তে বলা অসম্ভব বিষয়। দিনের পর দিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যতো কঠোর হবেন ততোই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার হওয়ার শঙ্কা বাড়বে। এদিকে নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগের সাবেক প্রভাবশালী এমপি ওসমান পরিবারের সদস্যরা দেশের বাহিরে পাড়ি জমিয়েছেন। তাদের কিছুসংখ্যক অনুসারীকেও দেশের বাহিরে দেখা গেছে। অন্যদিকে, একাধিক হত্যা মামলার আসামি হয়ে সাবেক নাসিক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভীও শহর ছেড়েছেন। এর আগে গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক দফা দাবি আদায়ের মুখে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশত্যাগের করেন। হঠাৎ করে ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের সরকারের পতন ঘটবে তা কখনোই আন্দাজ করতে পারে নি দলটির নেতাকর্মীরা। এর ফলে নেতাকর্মীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাসের কোনো ঘাটতি ছিল না। বরং শেখ হাসিনা এভাবে পালিয়ে যাবেন তা কখনোই চিন্তা করতে পারেন নি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এদিকে সারাদেশের মতো নারায়ণগঞ্জেও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর করা হয়েছে। অনেক কার্যালয় লুটপাট করে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। অথচ আওয়ামী লীগের জন্মস্থান বলা হয়ে থাকে নারায়ণগঞ্জকে। দেশের যেকোনো আন্দোলন সংগ্রামে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের অগ্রণী ভূমিকা ছিল। পাশাপাশি ঢাকায় আওয়ামী লীগের কোনো কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হলে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দিকে আলাদা নজর থাকতো সবার। নিজ জেলায় তারা বর্তমানে কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। এদিকে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার সরকারের পতন ও দেশত্যাগের পর থেকেই সারাদেশের মতো নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের রাজনীতির মোড় ঘুরে গেছে। যেখানে কিছুদিন আগেও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বড় বড় কথা বলতেন নিজেদের জানান দিতে ব্যস্ত থাকতেন সেখানে তারা একেবারেই আড়াল হয়ে গেছেন। কেউ কেউ প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করলেও সেটা খুবই অল্প সময়ের জন্য। অথচ কয়দিন আগেও জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা বড় বড় হুংকার দিয়েছেন। দলীয় যে কোনো কর্মসূচিতে নিজেদের বিভিন্নভাবে জানান দেয়ার জন্য ব্যস্ত থাকতেন। সেই সাথে দলীয় পদ-পদবি ব্যবহার করে বিভিন্নভাবে সুবিধাভোগী হয়েছেন। কিন্তু বর্তমান সংকটকালীন সময়ে আর তাদের দেখা মিলছে না।