আজ শুক্রবার | ৮ আগস্ট ২০২৫ | ২৪ শ্রাবণ ১৪৩২ | ১৩ সফর ১৪৪৭ | রাত ১০:০৭

আওয়ামী অপশাসন থেকে মুক্ত না’গঞ্জবাসী

ডান্ডিবার্তা | ০৬ জানুয়ারি, ২০২৫ | ১০:০১ পূর্বাহ্ণ

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট
নারায়ণগঞ্জে নিজেকে বাঘ মতো সাহসী মনে করতেন শামীম ওসমান। তবে সে রাতের আধারে বিড়ালের মত পালিয়ে গেছেন। এতে করে নারায়ণগঞ্জ এখন শান্ত। হকার ইস্যুতে পাল্টাপাল্টি অভিযোগের পর আইভীর মামলা করায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি ২০১৮ সালের ২৮ জানুয়ারি এক প্রস্তুতিমূলক সভা তিনি একথা বলেন। ৫ আগষ্ট আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পর দেশত্যাগ করেন শামীম ওসমান। প্রথমে ভারতের দিল্লী পরে দুবাই নিজ বাড়িতে পরিবার নিয়ে অবস্থান করছেন তিনি। ইতোমধ্যে ছাত্র-জনতা হতাহত ঘটনায় ৪০টি অধিক মামলার আসামী হয়ে পলাতক রয়েছেন শামীম ওসমান ও তার ছেলে অয়ন ওসমান। হকার ইস্যুর ঘটনায় মারামারির পর নাসিক সাবেক মেয়র আইভীর দায়ের মামলা প্রতিক্রিয়া তৎকালীন এমপি শামীম ওসমান বলেছেন, হুদামিছি মামলা দিয়া কাদের ভয় দেখাইতে চান! এরা কী ভয় খাওনের ছেলে নাকী? আপনি বাঘ আর বিড়ালের তফাৎ বোঝেন না? বাঘ আর বিড়ালের তফাৎ বুঝতে শিখেন। এরা তো বাঘ বিড়াল না। আর মনে রাইখেন বাঘের ঘরে বাঘই জন্ম নেয় কোনো বিলাই জন্ম নেয় না। সুতরাং এমন কিছু কইরেন না, বাঘের মুখের সামনে হাত লেলাইয়েন না বেশী। তারা কেউ কিন্তু রাস্তা থেকে উঠে এসে এখানে নেতা হয় নাই। তাদেরকে কর্মীরা ভালোবাসে বলেই তারা নেতা হইছে এখানে। শামীম ওসমান লাগেনা তরা নিজেরাও যদি ডাকে ৪০/৫০ হাজার এক লাখ লোক আসবে। শামীম ওসমান আরও বলেন, হুদামিছি একটা মামলা দিয়ে ফালাইলেন! কোন নেতাকর্মীদের নামে মামলা দিলেন যারা বিএনপি ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ৫০টা মামলা খাইছে। যারা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ৫০টা মামলা খাইয়া মামলার গুষ্টিও মারে নাই তাঁদের নামে আপনি হুদামিছি একটা মামলা দিয়া দিলেন! কর্মীর গাঁয়ে হাত পরবে আর নেতা চুপ করে বসে থাকবে? ঔ নেতাগিরি শামীম ওসমান করে না। শামীম-আইভী দুই ভাই বোন ২০১১ সাল থেকে একাধিক ঘটনায় রীতিমত আলোচনা সমালোচনায় ছিলেন। এমনকি আওয়ামীলীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা তাদের দ্ব›দ্ব বিরোধ বিব্রত ও হতাশায় ছিলেন। ২০১৪ সাল থেকে টানা তিনবারের এমপি শামীম ওসমান নারায়ণগঞ্জের এক দুই অংশ জুড়ে রাজত্ব থাকলেও জনগণের দূরত্ব ছিলেন। ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার ভোট ব্যাংকে মাত্র ৩৩ শতাংশ ভোট পড়ে। পুরো জুলাই জুড়ে যখন নারায়ণগঞ্জে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে স্মরণকালের তান্ডবলীলা হয়। তখন ছাত্র-জনতার উপর আওয়ামীলীগের কেউ মাঠে থাকতে দেখা যায়নি। এতে ১৮ জুলাই বিকালে জেলা মহানগর ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের প্রধান কার্যালয়ে ভাংচুর ও আগুন দেয়ার চেষ্টা করে বিক্ষুদ্ধরা। এর জের ধরে পরদিন ১৯ জুলাই নাশকতাকারীদের বিরুদ্ধে মাঠে নামেন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা শামীম ওসমান ও তার ছেলে অয়ন ওসমান বাহিনী। ওই সময় তাদের সমর্থকরা বলেছেন, শুক্রবার শামীম ওসমান মাঠে না নামলে পুরো শহর জ্বালিয়ে দিত নাশকতাকারীরা। ১৮ জুলাই দুপুর থেকে প্রায় আড়াই ঘণ্টা পুলিশের সঙ্গে ‘কোটা আন্দোলনে’ অংশ নেওয়াদের ব্যাপক সংঘর্ষের পর সন্ধ্যায় শুরু হয় নাশকতা। বিক্ষুদ্ধ জনতা ব্যাপক তাÐব চালান নারায়ণগঞ্জ ক্লাব। ভাঙচুর করা হয় ১৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ অফিস এবং আগুন দিয়ে লুটপাট করা হয় জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের প্রধান কার্যালয়। ভুঁইগড়ে আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের কার্যালয়সহ বিভিন্ন স্থাপনায় আগুন ও ভাঙচুর করে লুটপাট চালানো হয়। সাইনবোর্ড ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে জ্বালিয়ে দেওয়া হয় বেশ কয়েকটি যানবাহন। জানা যায়, ১৯ জুলাই সকালেই নারায়ণগঞ্জ আসেন শামীম ওসমান। দুপুরে বিএনপি ও শিবিরের একটি যৌথ মিছিল বের হয়ে বঙ্গবন্ধু রোড অবরোধের চেষ্টাসহ বিভিন্ন মার্কেটে ভাঙচুর ও লুটপাটের সংবাদ পান। নাশকতা ঠেকাতে নেতাকর্মীদের নিয়ে মাঠে নামেন শামীম ওসমান। তখন তাঁকে লক্ষ্য করে দুর্বৃত্তরা ককটেল ও গুলি ছুড়লে সংঘর্ষ বাধে। পরে শামীম নগরে নেতাকর্মীদের নিয়ে টহল শুরু করেন। এ সময় ডিআইটি ও নয়ামাটি এলাকায় কয়েক’শ নাশকতাকারী ফের ককটেল ও গুলিবর্ষণ শুরু করলে সংঘর্ষ চরম আকার নেয়। এক পর্যায়ে শামীম ওসমান নেতাকর্মীদের নিয়ে পাল্টা ধাওয়া দিলে দুই পক্ষের সংঘর্ষ বাধেঁ। এরপর তাঁর নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড ও সিদ্ধিরগঞ্জে পৌঁছালে সেখানেও নাশকতাকারীরা পিছু হটে। সন্ধ্যায় শামীম ওসমান নেতাকর্মীদের নিয়ে ফতুল্লার বিসিকসহ বিভিন্ন এলাকায় টহল দেন। রাতে শহরে বিক্ষুদ্ধ জনতা তান্ডবে পুড়ে যায় মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহ নিজাম উদ্দিনের মালিকানাধীন নাসিম ওসমান মেমোরিয়াল পার্ক, শামীম ওসমানের ব্যাবসায়িক অংশীদারিতে চলা শীতল এসি বাস ট্রান্সপোর্টের ২৬টি বাস, রপ্তানিমুখী গার্মেন্ট এসবি নিটসহ প্রায় ২০টি যানবাহন। ওই সময় সাবেক কাউন্সিলর আব্দুল করিম বাবু বলেন, রাতে নাশকতাকারীরা নগর ভবনে আগুন দিলে শামীম ওসমানকে ফোন করে নেতাকর্মীদের আসতে বলি। তাঁরা দ্রæত সেখানে এলে নাশকতাকারীরা পালিয়ে যায়। ১৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এইচ এম রাসেল বলেন, নগর ভবনে আগুনের ঘটনায় সদর থানায় সিটি করপোরেশনের করা মামলায় দলের এমন ছেলেদেরও নাম দেওয়া হয়েছে, যারা ১৯ জুলাই বিএনপি ও শিবিরের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মাঠে লড়াই করেছে। মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহা বলেন, আমি ও সভাপতি আনোয়ার হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ বাদল ব্যতীত জেলা ও মহানগর পর্যায়ের কাউকেই দেখলাম না ক্ষতিগ্রস্ত আওয়ামী লীগ অফিসটি দেখতে গেছেন। মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা হুমায়ন কবীর মৃধা বলেন, জেলায় চারজন আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি, মেয়র, উপজেলা-ইউপির চেয়ারম্যান ও কাউন্সিলররা আছেন। কিন্তু শামীম ওসমান আর তাঁর পন্থী লোকজন ছাড়া মাঠে কাউকেই দেখলাম না। মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহ নিজাম উদ্দিন বলেন, নারায়ণগঞ্জের পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে এক শামীম ওসমান ছাড়া কোথাও কেউ নেই। পদ-পদবির জন্য শত শত কর্মী নিয়ে যাঁদের মিছিল করতে দেখি, কেন্দ্রীয় নেতারা এসে যাঁদের গুণকীর্তন করেন, তাঁদেরও মাঠে পাইনি। এদিকে নারায়ণগঞ্জের পরিস্থিতি ও দলের তৃণমূলের ক্ষোভের বিষয়ে ওই সময়ে জানতে চাইলে শামীম ওসমান বলেন, আমি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম। কিন্তু আমাকে মোবাইলে ফোন করে একজন হিন্দু ভদ্র মহিলা রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় তাঁর ও কিশোরী সন্তানের ওপর ঘটা যে বীভৎস বর্ণনা দিয়েছিলেন, তা শুনে হাসপাতালে থাকতে পারিনি। একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে জামায়াত-শিবির ও অগ্নিসন্ত্রাসের বিরুদ্ধে, নারায়ণগঞ্জ আর নারায়ণগঞ্জবাসীকে এই ধ্বংসলীলার হাত থেকে বাঁচাতেই (মাঠে) নেমেছিলাম।
ই-




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা