আজ শুক্রবার | ৩০ মে ২০২৫ | ১৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ | ২ জিলহজ ১৪৪৬ | সকাল ১১:১৭

হঠাৎ বদলে গেলো দৃশ্যপট

ডান্ডিবার্তা | ২৬ মে, ২০২৫ | ১:০৪ অপরাহ্ণ

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট
অন্তর্বতীকালীন সরকার দায়িত্ব নেয়ার ৯ মাসের মাথায় পরিস্থিতি অনেকটা ঘোলাটে, টালমাটাল। অভ্যুত্থানের শক্তিগুলো বিভক্ত, বিভাজিত। স্বার্থের দ্ব›দ্ব, অবিশ্বাসে রাজনৈতিক দলগুলো পাল্টাপাল্টি অবস্থানে। বহুল প্রত্যাশিত একটি জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ধোঁয়াশা সর্বত্র। পরিবর্তন আর সংস্কারের মধ্যদিয়ে নতুন বাংলাদেশ গড়ার আপামর মানুষের প্রত্যাশা অনেকটা ছাই চাপা পড়ার অবস্থা। এই পরিস্থিতিতে চরম অস্বস্তি দেখা দিয়েছে খোদ সরকারেই। প্রবল জনসমর্থন নিয়ে ক্ষমতা গ্রহণ করা অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের প্রতি মানুষের হতাশা এখন চরমমাত্রায়। দলগুলো দ্রæত নির্বাচন চাইছে। সংস্কার প্রক্রিয়া নিয়ে হ-য-ব-র-ল অবস্থা। জাতীয় ঐক্যের সম্ভাবনা দলগুলোর রেষারেষিতে ম্রিয়মাণ হয়ে আসছে। প্রশাসনের পুরনো চিত্র খুব একটা বদলায়নি। সেবার খাতগুলো সেই আগের মতোই চলছে। অনিয়ম, দুর্নীতির হাতবদল ছাড়া আর কিছু দেখা যাচ্ছে না। অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়া শিক্ষার্থীদের দল এবং সংগঠন নিয়ে নানা বিতর্ক-আলোচনা। ঐক্যের ভিত্তিতে যাত্রা শুরু করা অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের একের পর আন্দোলন। উপদেষ্টাদের কারও কারও কার্যক্রম নিয়ে জনমনে অসন্তোষ, প্রশ্ন। এই অবস্থায় দুনিয়াজোড়া পরিচিত ব্যক্তিত্ব প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস সরকার প্রধান হিসেবে ক্ষুব্ধ-হতাশ। পরিবর্তনের প্রত্যাশা পূরণে জাতিকে দেয়া ওয়াদা রক্ষা করতে পারবেন কিনা এ নিয়ে সংশয়ে পড়েছেন এই বিশ্ব বরেণ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি এখন কী করবেন এটি এখন মিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন। মানবজমিনের রাজনৈতিক ভাষ্যকারের মতে তার সামনে এখন দুটি পথ খোলা। হয় তাকে পদত্যাগ করতে হবে। না হয় শক্ত পায়ে দাঁড়িয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে। বলা হচ্ছে অনেক চ্যালেঞ্জ প্রফেসর ইউনূসের সামনে ঘুরপাক খাচ্ছে। হতাশার মাত্রা এতটা বেড়েছে যে, প্রফেসর ইউনূস বৃহস্পতিবার পদত্যাগের সিদ্ধান্ত চূড়ান্তও করে ফেলেছিলেন। জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিতে প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। স্ক্রিপ্ট তৈরির নির্দেশনা দিয়েছিলেন। একইদিন উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে তিনি দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর বিকল্পটি উপস্থাপন করেন। সরাসরি কয়েকজন উপদেষ্টাকে নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বলেন, দলগুলো প্রয়োজনীয় সহায়তা করছে না। শিক্ষার্থীরা বিতর্কিত কর্মকাÐের মাধ্যমে পরিস্থিতি ঘোলা করে তুলছে। এই অবস্থায় জাতিকে দেয়া ওয়াদা তিনি পূরণ করতে পারবেন কিনা তা নিয়ে সন্দিহান। এখন যে পরিস্থিতি তাতে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনও কঠিন হবে। এ অবস্থায় তিনি দায়িত্ব ছেড়ে দিতে চান। নতুন একটি অন্তর্র্বতীকালীন সরকার হতে পারে- এমন কথাও বলেন তিনি। উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে দীর্ঘ আলোচনায় উপদেষ্টারা প্রধান উপদেষ্টাকে দায়িত্ব চালিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করেন। পরিস্থিতি উত্তরণে তারা নিজেরা চেষ্টা চালাবেন বলে প্রতিশ্রæতি দেন। এই বৈঠকের পরই আসলে গুঞ্জন ছড়ায় পদত্যাগ করতে চাইছেন প্রধান উপদেষ্টা। সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি প্রধান উপদেষ্টা বৈঠকে যে আবেগ থেকে দায়িত্ব ছাড়ার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন কয়েকজন উপদেষ্টা বাইরে ভিন্নভাবে তা প্রকাশ করেন। প্রফেসর ইউনূস পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এমন তথ্য বাইরে আনা হয়। কেউ কেউ বলছেন বিশেষ মতলবে এটি করা হয়েছে। এই পক্ষটি নানা সুযোগ-সুবিধা নিয়ে পরিস্থিতি জটিল করে তুলেছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরকারের দূরত্বের কারণও এই পক্ষটি। তারা প্রফেসর ইউনূসকে এক ঘরে রেখে তাদের মতলব আদায় করতে চাইছে। খবর এসেছে, দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি নেতারা কয়েকদিন চেষ্টা চালিয়েও প্রফেসর ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারেননি। কিন্তু পদত্যাগের গুঞ্জন ওঠার দিন সন্ধ্যায় তার সঙ্গে নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতারা দেখা করেন। বাইরে এসে তারা গণমাধ্যমে প্রফেসর ইউনূসের পদত্যাগের অভিপ্রায়ের বিষয়ে খোলামেলা কথা বলেন। চেষ্টা করেও বিএনপি প্রধান উপদেষ্টার সাক্ষাৎ পাচ্ছে না মানবজমিন-এ এমন খবর প্রকাশের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই অবশ্য জানা যায় বিএনপি এবং জামায়াত নেতাদের যমুনায় আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। অতি স¤প্রতি পরিস্থিতি ঘোলা করার পেছনে এনসিপি নেতারা বড় ভূমিকা রেখেছেন। বিএনপি, জামায়াতসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তারা বিতর্কে জড়িয়েছেন। বক্তৃতা-বিবৃতির মাধ্যমে বিদ্বেষমূলক কথা প্রচার করেছেন। এমনকি গণ- অভ্যুত্থানের পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখা সশস্ত্র বাহিনীর বিষয়েও কোনো কোনো নেতা তীর্যক কথাবার্তা বলেছেন। অনেকে বলছেন, রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা না থাকা তরুণ নেতৃত্ব সামনে পেছনের অনেক কিছুই বুঝতে পারছেন না। এতে তারা পুরো রাজনৈতিক পরিস্থিতি যেমন জটিল করে তুলছেন তেমনি নিজেদের ভবিষ্যৎও অন্ধকারের দিকে ধাবিত করছেন। কিন্তু অবস্থা এমনটা হওয়ার কথা ছিল না। এই তরুণরা গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব নিয়ে আপসহীন অবস্থান ধরে রেখে সারা দেশের মানুষের আশার বাতি জ্বেলে দিয়েছিলেন। মানুষ আশা করেছিল তাদের মাধ্যমে রাজনীতিতেও বড় পরিবর্তন আসবে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া উন্নত হবে। অনিয়ম- দুর্নীতির বিরুদ্ধে তরুণদের দল সোচ্চার থাকবে। কিন্তু আদতে দেখা গেল ভিন্ন দৃশ্য। নতুন দল গঠনের আগে-পরে অভ্যুত্থানে নেতৃত্বে থাকা কারও কারও বিরুদ্ধে ক্ষমতা ব্যবহার করে অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ আসতে শুরু করে। একজন তরুণ উপদেষ্টার ব্যক্তিগত কর্মকর্তাকে বহিষ্কার করতে হয় দুর্নীতির অভিযোগ আসার পর। শতকোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠে তার বিরুদ্ধে। ৯ মাসের একটি সরকারের উপদেষ্টার ব্যক্তিগত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ মানুষকে শুধু হতাশই করেনি চরমভাবে ক্ষুব্ধও করেছে। সব কারণেই সবক্ষেত্রে একচ্ছত্র আধিপত্য থাকা সরকার ও এনসিপি তথা বৈষম্যবিরোধী প্ল্যাটফরমের নেতারা কোণঠাসা হতে শুরু করেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদের দেশত্যাগের খবরে বৈষম্যবিরোধীদের প্ল্যাটফরম থেকে যে প্রতিক্রিয়া দেখানো হয় তার জেরে অতি স¤প্রতি পরিস্থিতি হঠাৎ পরিবর্তন হয়। এনসিপিসহ এই প্ল্যাটফরমের নেতারা প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বাসভবন ঘেরাও করেন। তারা টানা অবস্থান নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন অনেকটা অবরুদ্ধ করে রাখেন। আন্দোলন আর আল্টিমেটামের সরকার তড়িঘড়ি করে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার ঘোষণা দেয়। এ নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মিশ্র অবস্থান ছিল। কেউই তড়িঘড়ি ব্যবস্থা চায়নি। সরকার সিদ্ধান্ত নেয়ার পর অবশ্য সবাই স্বাগত জানিয়েছে। হামিদ ইস্যুতে এনসিপি’র আন্দোলনে অবশ্য জামায়াত, ইসলামী দলসহ আরও অনেকে যুক্ত হয়। আর এই আন্দোলনের পরই একের পর এক আন্দোলনে বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি হয় সরকারের জন্য। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আচমকা আন্দোলনের সময় একজন উপদেষ্টাকে পর্যন্ত আক্রান্ত হতে হয়। তথ্য উপদেষ্টার উপস্থিতি ও বক্তব্য ঘিরে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠে। আর এমন নানা ঘটনার জেরেই প্রধান উপদেষ্টা নিজের দায়িত্ব পালন নিয়ে ভাবতে শুরু করেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে উপদেষ্টা পরিষদের নিয়মিত বৈঠক শেষে অনির্ধারিত আলোচনায় দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে অন্য উপদেষ্টাদের সঙ্গে কথা বলেন অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। সেখানে ক্ষোভ ও হতাশার কথা তুলে ধরেন তিনি। উপদেষ্টা পরিষদের ওই বৈঠকের পর প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহŸায়ক নাহিদ ইসলাম। ওই দিন রাতে তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেন, অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ‘পদত্যাগের বিষয়ে ভাবছেন।’ প্রফেসর ইউনূসের পদত্যাগ বিষয়ে নাহিদই প্রথম খোলামেলা তথ্য প্রকাশ করেন। এরপর গুজবের নানা ডালপালা ছড়ায়। পরে অবশ্য উপদেষ্টাদের অনুরোধে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য আরও সময় নেন প্রফেসর ইউনূস। একই দিন সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপি বিদ্যমান পরিস্থিতিতে দলের অবস্থান তুলে ধরে। দলের পক্ষ থেকে উপদেষ্টা পরিষদের কয়েকজন সদস্যের বিষয়ে আপত্তি তুলে তাদের সরিয়ে দেয়ার দাবি জানানো হয়। পাশাপাশি নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা করতে সরকারের প্রতি আহŸান জানিয়ে বলা হয়, ডিসেম্বর নির্বাচন ধরে দ্রæত রোডম্যাপ ঘোষণা না করলে সরকারের প্রতি বিএনপি’র সহযোগিতা অব্যাহত রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। তার আগে গত বুধবার অফিসার অ্যাড্রেসে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তার অবস্থান তুলে ধরেন। বিদ্যমান পরিস্থিতি ও সরকারের অবস্থান নিয়ে তিনি হতাশা প্রকাশ করেন। আসছে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হওয়া উচিত বলেও তিনি মত দেন। বলেন, একটি নির্বাচিত সরকার আসলে দেশের স্থিতিশীলতা আরও উন্নত হবে বলে তিনি মনে করেন। যমুনা ঘিরে উত্তাপ রাজনৈতিক অঙ্গনেও উদ্বেগের জন্ম দেয়। গত বৃহস্পতিবার সরকারের তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম আগে দেয়া বিভিন্ন বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে ঐক্যের আহŸান জানান। চরমোনাই’র পীরের দল ইসলামী আন্দোলনের কার্যালয়ে ৫ দল বৈঠক করে পরিস্থিতি নিয়ে। ওই বৈঠক থেকেও ঐক্যের আহŸান জানানো হয়। তাদের এই মতামতের বিষয়ে জামায়াতের আমীর ডা. শফিকুর রহমানও টেলিফোনে সমর্থন দেন বলে জানানো হয়। অন্যদিকে জামায়াত আমীর নিজেও পরিস্থিতি নিয়ে দ্রæত সর্বদলীয় বৈঠকের আহŸান জানান। দলের সর্বোচ্চ পর্যায়ের বৈঠক থেকেই এ আহŸান জানানো হয়। জাতীয় সরকার গঠনেরও পরামর্শ দেয়া হচ্ছে কয়েক দলের তরফে। এমন পরিস্থিতি নিয়ে বিএনপি, জামায়াত এনপিসিসহ সর্বদলীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রফেসর ইউনূস। তবে পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে তা এখনও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।

 




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১
১২১৩১৪১৫১৬১৭১৮
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭২৮২৯৩০৩১  
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা