
ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট
নারায়ণগঞ্জের রাজনীতি যেন ব্যবসায়ীদের কব্জায় চলে যাচ্ছে। এর আগেও ব্যবসায়ীরাই নারায়নগঞ্জের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করতেন। এবার এর পরিধি আরো বাড়তে শুরু করেছে। নতুন নতুন ব্যবসায়ী উদয় হচ্ছে রাজনীতিতে সংযুক্ত হতে। এদিকে রাজনীতির সূতিকাঘার খ্যাত নারায়ণগঞ্জ সবশেষ ছাত্র গণঅভ্যুত্থানেও ব্যাপক ভূমিকা রেখেছিল। এ জনপদ থেকে প্রাণ হারায় অনেকে। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পরেও রাজপথে সরব বিএনপি ও এর সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীরা যারা বিগত ১৬ বছর ধরে মামলা, হামলা আর বর্বর নির্যাতনের শিকার হচ্ছিলেন। কিন্তু বিএনপিতে যেন আবারো বিগত দেন জাতীয় পার্টির এমপির মত কর্পোরেট হতে শুরু করেছে। রাজপথের বিএনপি এখন ঢুকে যাচ্ছে ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠানে। ২০১৪ সালের ২৬ জুন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে এমপি নির্বাচিত হয়েই জাতীয় পার্টির রাজনীতিকে নির্বাসিত করে দেন সেলিম ওসমান। নিজ ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান উইজডম হয়ে উঠে বিকল্প কার্যালয় ও রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু। টানা ১০ বছর সেই কারখানাতেই বিভিন্ন এলাকার জনপ্রতিনিধি আর রাজনৈতিক নেতাদের ডেকে এনে কর্মকান্ড করতেন সেলিম ওসমান। এবার সেই পথেই হাটঁছেন একই আসনে সংসদ সদস্য হওয়ার স্বপ্নে বিভোর ব্যবসায়ী নেতা মাসুদুজ্জামান। তার ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান মডেল গ্রæপের কারখানা এখন বিএনপির কারো কারো জন্য আশীর্বাদ ও ভরসারস্থল হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেলিম ওসমান এমপি নির্বাচিত হওয়ার পরেই শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কে অবস্থিত জাতীয় পার্টির কার্যালয়টি বন্ধ করে দেন। শহরের কোথাও তাঁর কোন অফিস ছিল না। ফলে সাধারণ মানুষ এমপি সেলিম ওসমানের সঙ্গে দেখা করার কোন সুযোগ পায়নি। তাদের যেতে হয়েছে স্থানীয় কোন প্রভাবশালীর কাছে। তারা দয়া করলেও উইজডমের গেট খোলা হতো না। তবে বিভিন্ন দিবস ঘিরে অনেক আয়োজন থাকতো উইজডমেই। এক কথায় রাজনীতি হয়ে যায় এসিরুম কেন্দ্রীক। বিগত দিনে ওসমানদের বিরোধী মনোভাব দেখালেও সেলিম ওসমানের উপ নির্বাচনের সময়ে তাঁর পক্ষেই ভোট চেয়েছিলেন মাসুদ। এছাড়াও পরবর্তীতে সেলিম ওসমানের প্রভাবে নির্দয়ভাবে হাজীগঞ্জ এলাকার তাদের একটি জমি দখলমুক্ত করা হয়। পরীক্ষার্থীদের বই আগুনে পুড়িয়ে ফেলা সহ অমানবিকতাও ছিল তখনকার গণমাধ্যমের শিরোনাম। এছাড়াও সেলিম ওসমানের নির্দেশে বিভিন্ন উন্নয়ন কাজেও মডেল গ্রæপের মাসুদ দিয়েছেন বড় অংকের অনুদান। এবার তিনি স্বপ্ন দেখছেন এমপি হওয়ার। অনুসরণ করছেন সেলিম ওসমানের পুরো কর্মকান্ড। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকী ঘিরে যখন নারায়ণগঞ্জে ব্যাপক আয়োজন চলছে তখন মডেল গ্রæপে নানা প্রলোভন দেখিয়ে ডেকে নেওয়া হচ্ছে বিএনপির একটি অংশের নেতাদের যারা বিগত ৫ তারিখের পর কার্যত অবহেলিত। সবশেষ পাওয়া খবরে ইতোমধ্যে শহর ও বন্দরে প্রায় দুই শতাধিক স্পটে কাঙালী ভোজের জন্য টাকা দিচ্ছেন মাসুদের মডেল গ্রæপ। খিচুড়ির জন্য ডেগ প্রতি দেওয়া হচ্ছে ১০ হাজার টাকা করে। তবে বিএনপির কেউ কেউ রাজনীতিকেও বিকিয়ে দিচ্ছেন। কারণ মডেল গ্রæপে মাসুদের সঙ্গে সরাসরি কারো ছবি দেখা যাচ্ছে না। কারখানায় কর্মরতদের সঙ্গেই ছবি তুলে নিজেদের জাহির করার চেষ্টা চলছে যেটা এক সময়ে উইজডমেও হতো। বিএনপির নেতারাও বিগত দিনের আন্দোলন সংগ্রামের অর্জনকে বিসর্জন দিচ্ছেন কর্পোরেট রাজনীতির কাছে। দলের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, মডেল গ্রæপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদুজ্জামান আগামীতে নির্বাচন করার আগ্রহ দেখাচ্ছেন। ইতোমধ্যে তিনি ব্যাপক পোস্টারিং করেছেন। অনুসারীরা বলছেন তিনি আগামীতে সদর-বন্দর আসনে লড়বেন। এও খবর বেরিয়েছে মাসুদুজ্জামান ইতোমধ্যে তারেক রহমানের সঙ্গে কথা বলেছেন। বিপরীতে তারেক রহমান জনকল্যাণে নিয়োজিত রাখতে মাসুদুজ্জামানকে আহবান করেছেন। সে কারণেই এবার কিছুটা আটঘাট বেধে মাঠে নামার পরিকল্পনা তাঁর। সে কারণেই জিয়াউর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকী ঘিরে তিনি বিএনপির একটি অংশকে ম্যানেজ করার চেষ্টা করছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান, ঈদের পর একটি মেজবান তথা ঈদ পুনর্মিলনীর আয়োজন করবেন মাসুদ। সেখানে কয়েক হাজার লোকজন সমাগম ঘটবে। তখন তিনি রাজনীতিতে জড়াবেন কি না সেটা জানতে চাইবে। সাজানো নাটক মোতাবেক উপস্থিতিরাও দুই হাত তুলে সমর্থন জানাবেন। মূলত তখন থেকেই রাজনীতিতে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করবেন এ শিল্পপতি নেতা। এর আগে খবরে প্রকাশ পায় ‘‘ছিলেন একজন জাত ব্যবসায়ী। ৫ আগস্টের পর নতুন করে আলোচনায় এসেছেন তিনি। হয়েছিলেন চেম্বারের সভাপতি, কথা বলতেন বিকেএমইএ নিয়েও। কিন্তু চেম্বারের নির্বাচনের আগে হঠাৎ করেই সদস্যদের অঘোষিত ‘লাল কার্ড’ পাওয়ার আগে নিজেকে নির্বাচন থেকে সরিয়ে নেন। পরবর্তীতে চলে বিকেএমইএ নিয়েও কলকাঠি। চেষ্টা করা হয় প্যানেল দিতে। তবে শেষতক আর হয়ে উঠেনি। পর পর দুটি ইস্যুতে কার্যত দেউলিয়াত্ব প্রমাণ হয় মাসুদের ক্ষেত্রে। অতীত এসব ঘুচিয়ে এবার নতুন করে আলোচনায় তিনি। পুরো শহরজুড়ে সাটিয়েছেন পোস্টার। নারায়ণগঞ্জবাসীকে জানিয়েছেন ঈদ উল আজহার শুভেচ্ছা। স্টাইলটা রাজনীতিকদের মতই। বিএনপির একাধিক সূত্র বলছেন, মাসুদুজ্জামানের টার্গেট এবার জনপ্রতিনিধি হওয়া। সেটাকে সামনে নিয়েই আগাতে চান তিনি। দলের একাধিক শীর্ষ নেতার সঙ্গে সুসম্পর্কের জেরেই তিনি জনপ্রতিনিধি হওয়ার দৌড়ে রয়েছেন। এজন্যই আগাম প্রচারণা। তবে বিষয়টি ভালো চোখে দেখছেন না স্থানীয় বিএনপির প্রভাবশালী নেতারা। তারা মনে করছেন ১৫ বছরে পুড়ে অঙ্গার বিএনপিতে টাকার জোরে আগামীতে মনোনয়ন পাওয়া সম্ভব হবে না। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বেও এসেছে দূরদর্শিতা। রাজপথে থাকা হামলা মামলার শিকার কিন্তু স্বচ্ছ ও দলের প্রতি অগাধ আত্মত্যাগী নেতাই বসবেন যে কোন চেয়ারে। নতুবা দলের ভেতরে যেমন দেখা দিবে অস্থিরতা তেমনি কর্মীদের মধ্যেও আসবে হতাশা আক্ষেপ। ২০১১ সালের সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পর ২০১২ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর গার্মেন্ট মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ এর নির্বাচন নিয়েও আলোচিত ছিলেন মাসুদ। তিনি লড়েছিলেন প্রভাবশালী সেলিম ওসমানের বিরোধী প্যানেলে। ভোটে তিনি পরিচালকও হয়ে যান। কিন্তু এর পরবর্তীতে আর বিকেএমইএতে নিজেকে জড়ায়নি। ফলে ব্যবসায়ীদের সঙ্গেও দেখা দেয় দূরত্ব। সা¤প্রতিক সময়ে অনুষ্ঠিত হয় বিকেএমইএ এর নির্বাচন। কয়েক মাস আগে একটি সংগঠনের নামে তিনি গোলটেবিল বৈঠক করে গার্মেন্ট মালিকদের এ সংগঠনে নতুন নেতৃত্ব আনার পরোক্ষ ইঙ্গিত দেন। সমালোচনা করেন সেলিম ওসমান ও হাতেমের। তবে সেটার বহিঃপ্রকাশ ঘটেনি। নির্বাচনের আগে একাধিবার প্যানেল ও ব্যবসায়ীদের একত্রিত করার চেষ্টা হলেও মাসুদকে সায় দেয়নি অনেকেই। ফলে অনেকটা বিনা বাধায় পরিচালক থেকে সভাপতি ও বিকেএমইএ এর নেতৃত্ব কব্জাবন্দী করেন হাতেম। ওসমানদের বিরুদ্ধে এখন কথা বললেও উপ নির্বাচনে সেলিম ওসমানের পক্ষেই তিনি ভোট চান। তল্লা এলাকাতে ১১নং ওয়ার্ডে অনুষ্ঠিত প্রচারণামূলক সভায় মাসুদ ও সেলিম ওসমান পাশাপাশি বসেছিলেন। বক্তব্য দিতে দিয়ে সেলিম ওসমানের পক্ষেই ভোট প্রার্থনা করেন তিনি। পরবর্তীতে হাজীগঞ্জ এলাকার একটি জমি উচ্ছেদ করতে গিয়েও ওসমানদের সহযোগিতা নেন মাসুদ। এছাড়া চেম্বারের বিভিন্ন প্রকল্পে সেলিম ওসমানের হাতে দেন আর্থিক অনুদান। ৫ আগস্টের পর চেম্বারের সভাপতি হন মাসুদ। তবে গত ১৯ ফেব্রæয়ারী নির্বাচনে তিনি ছড়ি ঘুরাতে থাকেন। বিষয়টি ভালোভাবে নেয়নি অন্য ব্যবসায়ীরা। নিজে মনোনয়নপত্র কিনেও শেষে সরিয়ে নেন। ব্যবসায়ীরা তখন নির্বাচনের পক্ষেই ছিলেন। মাসুদ লড়ছে ভোট হতো। কিন্তু কৌশলে নিজেকে সরিয়ে নেন। আবার এও আশঙ্কা ছিল ভোটে পরিচালক হলেও ১৯ পরিচালকের বেয়ারা ভোটে হোঁচট খেতে পারতেন তিনি। কেউ কেউ বলছেন, আগামীতে কোন এক সময়ে হয়তো জনপ্রতিনিধি হতে চান এ ব্যবসায়ী। হতে পারে সেটা মেয়র কিংবা এমপি নির্বাচন। তবে সব কিছু নির্ভর করছে পরিবেশ ও পরিস্থিতির উপর।
হাবিবুর রহমান বাদল ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফলে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের সাথে সাথে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা তার দোসররা কেউবা পালিয়েছে আবার কেউ আত্মগোপনে রয়েছে। বিগত পতিত সরকারের আমলে পেশাদার সাংবাদিকরা সব কিছু দেখলেও কোন কিছুই লিখতে পারতনা। আকাঁরে ইঙ্গিতে কোন কিছু লিখলেই সেইসব সাংবাদিকের উপর খর্গ নেমে […]
হাবিবুর রহমান বাদল নারায়ণগঞ্জসহ সারা দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটায় বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে নগরবাসীর আতঙ্কিত হওয়ার ঘটনা প্রতিদিন প্রকাশ পাচ্ছে। এনিয়ে সাধারণ নাগরিকরা সরব হয়ে উঠেছেন। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগ এনে বিভিন্ন মহল থেকে তার পদত্যাগ দাবি করা হচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল সোমবার বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা […]
ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট: আড়াইহাজার থানায় দায়ের করা উপজেলার দুপ্তারা ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি বাবুল মিয়া হত্যা মামলা নিয়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। গত ৩ জুন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বাবুল মিয়ার মৃত্যু হলেও দুই মাস পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় তিনি নিহত হয়েছেন উল্লেখ করে ২২ আগস্ট হত্যা মামলা করেছেন দুপ্তারা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন। এই […]
প্রকাশক ও সম্পাদক
হাবিবুর রহমান বাদল
০১৯১১০১০৪৯০
hr.badal@yahoo.com
বার্তা ও বাণিজ্যক কার্যালয়
৬. সনাতন পাল লেন
(হোসিয়ারী ক্লাব ভবন, তৃতীয় তলা)
৭৬৪২১২১
dbartanews@gmail.com
রেজি: ডিএ নং-২০৯৯