এমপি হওয়ার খায়েশে মৌসুমী নেতাদের তামাশা!

নাসির উদ্দিন
অন্তর্বতীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে একান্ত বৈঠক শেষে লন্ডনে যৌথ বিবৃতি প্রদানের পর বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু করে দিয়েছে। এতদিন বিচ্ছিন্ন ভাবে প্রচার প্রচারনা চালালেও গতকাল শনিবার থেকে সম্ভাব্য প্রার্থীরা দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে যোগাযোগ শুরু করে দিয়েছে। তবে নারায়ণগঞ্জে সম্ভাব্য এমপি প্রার্থীদের মধ্যে অধিকাংশই বিগত ১৬ বছর আন্দোলন সংগ্রামে মাঠে ছিলেন না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ত্রাগী নেতাকর্মীরা। নারায়ণগঞ্জে এমপি প্রার্থী হবেন এমন প্রার্থীর বিরুদ্ধে আওয়ামীলীগের সাথে আতাঁতেরও অভিযোগ রয়েছে। তবে নারায়ণগঞ্জে বিএনপি থেকে প্রার্থী হচ্ছেন সদর-বন্দর আসনে সাবেক এমপি এড. আবুল কালাম, মহানগর বিএনপির আহবায়ক এড. শাখাওয়াত হোসেন খান, সম্প্রতি কারামুক্ত জাকির খান, মৌসূমী প্রার্থী হিসাবে মডেল মাসুদ, ব্যবসায়ী আবু জাফর বাবুল ওরফে প্রইম বাবুল ও বন্দর উপজেলার সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেনের নাম শুনা যায়। ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ আসনে সাবেক এমপি গিয়াস উদ্দিন, শাহআলম, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহবায়ক অদ্যাপক মামুন মাহমুদ। সোনারগাঁ আসনে সাবেক প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক রেজাউল করিম, সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান। আড়াইহাজার আসনে কেন্দ্রীয় বিএনপির আন্তর্জতিক বিষয়ক সম্পদক নজরুল ইসলাম আজাদ ও আতাউর রহমান খাঁন আঙ্গুর। রূপগঞ্জ আসনে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী মনিরুজ্জামান এবং নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহŸায়ক মোস্তাফিজুর রহমান দিপু ভূইয়া। নির্বাচনের অনুকুল পরিবেশ সৃষ্টি হওয়ায়র সুযোগে কিছু মৌসুমী নেতা যাদের বসন্তের কোকিল বলে অনেকে আখ্যায়িত করেন এমন কিছু নেতার আর্ভিব হতে শুরু করেছে। তাদের খায়েশ জেগেছে এমপি হওয়ার। যারা বিগত ১৫ বছর আওয়ামীলীগের ভয়ে কোন কথা বলতে শুনা যায়নি বা তারা আওয়ামীলীগের সাথে আতাঁত করে নিজেদের রক্ষা করে চলেছেন এখন তাদের মধ্যে কেহ কেহ মাথা চাড়া দিচ্ছে এমপি হওয়ার খায়েশ নিয়ে। জীবনে শহীদ জিয়ার নাম মুখে আনেনি এবার সুযোগ পেয়ে বিশাল গাড়ি বহর নিয়ে শহীদ জিয়ার শাহাদৎ বার্ষিকী পালন করেন। আবার ২০ হাজার লোককে ভ’ড়িভোজ করিয়ে নিজের দাম্ভিকতা জাহির করেন। গতকাল শনিবার শহরের বরফকল মাঠে বিশাল প্যান্ডেল করে মানুষকে খাইয়ে ভোট নেয়ার তামাশা করেছেন। যার বিএনপিতে কোন অবদান নেই বা নাম নেই সে এখন বিএনপির মগুনর্কীত্তনে মুখে ফেনা তুলেছেন। যা রাজনৈদিক নেতাকর্মীরা ধিক্কার দিচ্ছেন আর আওয়ামীলীগ বলছে এ এক নতুন তামাশা। ইতিমধ্যে মডেল গ্রæপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালনা মাসুদুজ্জামান মাসুদ ঘোষণা করেছেন তিনি সদর-বন্দর আসন থেকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে দলের মনোনয়ন চাইবেন। সেই লক্ষ্যেই প্রায় ২০ হাজার নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার ব্যক্তিবর্গের জন্য ঈদ পূণর্মিলনীর নামে ভুড়িভোজের আয়োজন করেছেন। যাকে সবাই মডেল মাসুদ হিসেবেই বেশি চিনেন। এদিকে বিএনপির যারা রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করতে গিয়ে হামলা মামলা জেল জুলুম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তাহলে তাদের কি হবে? যদি মাসুদই দলের মনোনয়ন পেয়ে যান? এমন প্রশ্ন বিভিন্ন মহলের। এ ব্যপারে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহŸায়ক আবুল কাউসার আশা বলেছেন, মডেল গ্রæপের কর্ণধার মাসুদ সাহেব অত্যন্ত সম্মানিত একজন ব্যক্তিত্ব। আধুনিক বাংলাদেশের রুপকার শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকীতে যেভাবে মাসুদ সাহেবের ব্যানার, ফেস্টুন আর গাড়ি বহর আমরা দেখেছি, তা দেখে আমি আনন্দিত। তবে, আরেকটু আনন্দ পেতাম যদি বিগত ১৫ বছরে এই দলটার উপর দিয়ে যে অত্যাচার-জুলুম গেছে তখন তিনি কোনো একটা প্রোগ্রাম যদি এভাবে করতেন। তাহলে এখন যে প্রশ্ন উঠছে হয়তো এসব প্রশ্ন কেউ করতো না। সুদিনে নারায়ণগঞ্জ বিএনপি বিতর্ক হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, আল্লাহ তায়ালা আমাদের ফ্যাসিস্ট থেকে মুক্তি দিয়েছেন। আমরা মুক্ত হয়েছি। গণমাধ্যমও ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে নির্যাতিত হয়েছে। বিএনপি নিয়ে দেশে এবং আন্তর্জাতিকভাবে নানা ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। ঠিক আমাদের বিএনপিকে নিয়ে আগে থেকেই ষড়যন্ত্র অব্যাহত ছিল। যারা বর্তমানকে সুদিন ভাবছে তারাই মূলত চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসীটা করছে। আর আমি এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে সোচ্চার থেকে প্রতিবাদ করায় বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। এতদিন রাজনীতিতে সক্রিয় না হয়ে হঠাৎ বিএনপির রাজনীতিতে প্রভাব রাখতে শুরু করায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ ৫ আসনের সাবেক এমপি আবুল কালাম ও একই আসনে এমপি পদপ্রার্থী মহানগর বিএনপির আহবায়ক সাখাওয়াত হোসেন খান। আবুল কালাম এবং সাখাওয়াত পৃথক বলয় নিয়ে রাজনীতি করলেও মাসুদের বিরুদ্ধে অবস্থান তাদের এক করেছে। সাবেক এমপি কালাম বলেন. সদর-বন্দর আসনে মনোনয়ন পেতে সক্রিয় হয়ে ওঠা মাসুদুজ্জামানকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘আজকে যাদের অর্থবিত্ত আছে তারা আজকে রাজনীতিতে আসতে চায়। রাজনীতি আসার কোন আপত্তি নাই কিন্তু গণতন্ত্র অনুযায়ী পদ পরিক্রমা করে আসতে হবে। রাজনীতিতে তাদের অবদান রেখে আসতে হবে। বিগত ১৬ বছরে রাজনীতিতে দেখা যায়নি আজকে তারা মাঠে এসে এমপি হয়ে যেতে চায়। তাদের কাছ থেকে আমাদের সাবধানে থাকতে হবে। যেদিন যার কাছে ধানের শীষ আসবে সেদিন সকলে আমরা তার সাথে এক সাথে থাকবো। সাখাওয়াত হোসেন খান মাসুদুজ্জামানকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আজকে একটা বিষয় খেয়াল করেছি, ১৫ বছর যাদের মাঠে দেখি নাই, যারা দল করে নাই, যারা বিএনপি থেকে যোজন দূরে ছিল তারা জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী পালন করছেন। বিএনপির নাম শুনলে যারা সামনে আসে নাই তারা আজ বিএনপির কথা বলতে চায়। বিএনপি থেকে নমিনেশন চায়। অনুষ্ঠান করেন কিন্তু আমাদের নেতা তারেক রহমান বলেছেন পরীক্ষা শেষ হয়েছে ৫ আগস্ট ২০২৪ এ। আজকে যারা বিএনপিতে এসে বিএনপিকে বিভক্ত করতে চায় তাদের উদ্দেশ্যে ভালো না। আপনারা সুসময়ে মধু খেতে এসেছেন। মধু আপনাদের ভাগ্যে হবে না ইনশাল্লাহ।