আজ সোমবার | ৪ আগস্ট ২০২৫ | ২০ শ্রাবণ ১৪৩২ | ৯ সফর ১৪৪৭ | রাত ৪:১২

গত বছরের এই দিনে রাজপথ দখলে নেয় শিক্ষার্থীরা

ডান্ডিবার্তা | ০৩ আগস্ট, ২০২৫ | ১১:২৪ পূর্বাহ্ণ

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট
গত বছরের ৩ আগস্ট সারাদেশে চলমান ছাত্র আন্দোলনকে ঘিরে চলমান হত্যাকাÐ, গণগ্রেপ্তারের প্রতিবাদে এদিন ফের নারায়ণগঞ্জের রাজপথে নেমে আসেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ওইদিন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যুক্ত হন তাদের অভিভাবক, শিক্ষক, সংস্কৃতি কর্মী ও অন্যান্য পেশাজীবী লোকজন। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোকে অবরুদ্ধ রাখেন তারা। পরে রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। আগের রাতে গঠিত কমিটিতে ১৩ জনকে সমন্বয়ক ও ৩৬ জনকে সহসমন্বয়ক রাখা হয়। গত বছরের ১৪ জুলাই প্রথম রাজপথে নামেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। পরে পঞ্চমদিনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। কয়েকশ’ শিক্ষার্থী ওইদিন আহত হন। পরদিন ১৯ জুলাই আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমান তার সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে আন্দোলনকারীদের উপর হামলা ও গুলি চালান। এরপর ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ, কারফিউ ও গণগ্রেপ্তারের মুখে নারায়ণগঞ্জ শহরে আন্দোলনকারীরা জড়ো হতে পারেননি। দীর্ঘ বিরতি দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সচল করা হলে ১ আগস্ট সন্ধ্যায় মোমবাতি হাতে চাষাঢ়া শহীদ মিনারে ‘জুলাই আন্দোলনে শহীদ’ স্মরণে কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। ওই কর্মসূচি শুরু করার আগেই পুলিশের লাঠিপেটায় আন্দোলনকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। পরদিন গঠন করা হয় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নারায়ণগঞ্জ জেলা সমন্বয় কমিটি। কমিটিতে সমন্বয়ক করা হয় ফারহানা মানিক মুনা, সাইফুল ইসলাম, সারফারাজ হক সজিব, সাজিদ মোমিন, সাইদুর রহমান, ফৌজিয়া তাসনিম, সৌরভ সেন, ফয়সাল আহমেদ রাতুল, মির্জা সাকিব, রাশেদুল সজিব, রাইসা ইসলাম, শারিয়ান আলায়না সাফা ও নাফিজা আক্তারকে। এছাড়া নাসিমা সরদার, মুন্নি আক্তার প্রত্যাশা, সায়েম মিয়া, নিরসাইদুল হক লিহান, নিরব রায়হান, জান্নাতুল ফেরদৌস নিসা, জুনায়েদ ইসলাম, তাইরান আবাবিল রোজা, আবরার মাহির, মাহতাব হোসেন রিফাদ, আরাফাত বিন আহমেদ, আমিনুল ইসলাম, ফারাবি মাহতাব মাসুম, ওমর ফারুক আফ্রিদি, লুবনা রহমান, মেহেরুন নিসা, মিম জেরিন, সোহান চৌধুরি, আবু সায়েদ, মো. জাহিদুর রহমান শাওন, তানজিলা আক্তার তনু, জাহিদ হাসান, মোহাম্মদ আল রহমান, শাকিল আহমেদ, আব্দুল কাদির, মো. ফাহিম, ইফাদ ইমতিয়াজ অয়ন্ত, চিত্রা ঘোষ পরমা, রায়হান শরিফ, মো. মহিবুল্লাহ, শাহীন আদনান ছিলেন সহসমন্বয়ক। সহসমন্বয়কের পাঁচটি পদ ওই সময় খালি রাখা হয়। পরদিন ৩ আগস্ট ফের রাজপথে নেমে নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়ায় অবস্থান নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ চারটি সড়ক প্রায় ৫ ঘন্টা অবরোধ করে রাখে শিক্ষার্থীরা। পরদিন ফের মাঠে নামারও ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা। সকাল সাড়ে ১১টায় শহীদ মিনার থেকে মিছিল বের করে হাজারো শিক্ষার্থী। মিছিলটি বঙ্গবন্ধু সড়ক প্রদক্ষিণ করে আবারও চাষাঢ়ায় এসে অবস্থান নেয়। তারা ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সংযোগ সড়ক, বঙ্গবন্ধু সড়ক, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পুরাতন সড়ক ও নবাব সলিমউল্লাহ সড়ক; গুরুত্বপূর্ণ এই চারটি সড়ক অবরোধ করে রাখে। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কয়েকবার বৃষ্টি নামলেও এক মুহুর্তের জন্য সড়ক ছাড়েনি বিক্ষুব্দ শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে তাদের অনেকের অভিভাবকদেরও দেখা যায়। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, তারা প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমা প্রার্থনা, কয়েকজন মন্ত্রীর পদত্যাগ, হত্যাকারীদের বিচারের দাবিসহ ৯ দফার দাবি জানিয়েছিলেন। কিন্তু এরপরও সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর হামলা ও গণগ্রেপ্তার বন্ধ না হওয়ায় তাদের ৯ দফা দাবি ১ দফায় রূপান্তরিত হয়েছে। বিক্ষুব্দ শিক্ষার্থীরা এদিন শেখ হাসিনার পদত্যাগেরও দাবিতে বিভিন্ন ¯েøাগান দেন। তবে, পুরো সময়জুড়ে শহরে কোনো পুলিশ সদস্যকে দেখা যায়নি। এমনকি শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করার পর ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যরাও সড়ক ছেড়ে চলে যান। যদিও, অবরোধ শুরুর কিছুক্ষণ পর বেলা ১২টার দিকে বিজিবি সদস্যদের বহন করা কয়েকটি গাড়িকে আটকায় শিক্ষার্থীরা। গাড়ির ভেতরে থাকা কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলার কিছুক্ষণ পরই গাড়িগুলোকে নবাব সলিমউল্লাহ সড়ক দিয়ে এগিয়ে যেতে দেয় শিক্ষার্থীরা। সারাদিনে শহরে ওইদিন কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। বিকেলে শহীদ মিনারে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন চলাকালীন ‘গণহত্যা ও গণগ্রেপ্তার’ এর প্রতিবাদে ‘দ্রোহের গান ও কবিতা’ শিরোনামে সাংস্কৃতিক কর্মসূচির আয়োজন করে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট। এই সময় গান ও কবিতা পরিবেশন করা হয়। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ এই আয়োজনে অংশ নেন। সাংস্কৃতিক জোটের উপদেষ্টা ও নারায়ণগঞ্জে নাগরিক আন্দোলনের অন্যতম নেতা রফিউর রাব্বি বলেন, “আমরা একটি চরম বিপদগ্রস্ত সময়ের মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়েছি। গত কয়েকদিনে শত শত মেধাবী শিক্ষার্থী, ছাত্র-জনতাকে হারিয়েছি। নির্বিচারে গুলি করে তাদের হত্যা করা হয়েছে। একটি স্বাধীন দেশে জনগণের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা এভাবে জনগণের উপর গুলি চালিয়ে হত্যা করেছে। এমনকি হেলিকাপ্টার থেকেও গুলি করা হয়েছে। কোনো গণতান্ত্রিক সরকার এই কাজ করতে পারে না।” ‘গণহত্যার’ বিচার ও অবিলম্বে গণগ্রেপ্তার বন্ধ করে গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মুক্তির দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, “রংপুরে নিরস্ত্র যুবক সাঈদকে কীভাবে হত্যা করা হয়েছে তা বিশ্ববাসী দেখেছে। কিন্তু এই সরকার কখনই এসব হত্যার বিচার করতে পারবে না। যে পুলিশ তার এই দুঃশাসন টিকিয়ে রেখেছে তার বিচার শেখ হাসিনা করতে পারবে না। তাই আমরা এই মুহুর্তে শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবি জানাই। তিনি যদি স্বেচ্ছায় এইসব গণহত্যার দায় নিয়ে পদত্যাগ না করেন তাহলে তাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হবে। তারপর যে জনগণের সরকার গঠিত হবে সেই সরকার দিয়ে প্রতিটি হত্যার বিচার আদায় করা হবে।”তিনি দেশের স্বার্থে শিক্ষার্থীদের কোনো প্রকার ভাঙচুর বা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সাথে না জড়ানোর আহŸান জানিয়ে বলেন, “এই সরকারকে অবশ্যই পদত্যাগ করতে হবে কিন্তু এই দেশ আমাদেরই থাকবে। এই দেশকে রক্ষার দায়িত্বও তাই আমাদের।”বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ছাত্র-শিশু, শ্রমিক, জনতা হত্যার বিচার ও গণহত্যার ঘটনায় সরকারের পদত্যাগ দাবিতে বিকেলে সমাবেশ করে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটি। নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে এ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জেলা সিপিবি’র সভাপতি হাফিজুল ইসলাম।




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা