আজ বুধবার | ১ অক্টোবর ২০২৫ | ১৬ আশ্বিন ১৪৩২ | ৮ রবিউস সানি ১৪৪৭ | দুপুর ২:৩১

ভারতের দালালির’ পর ডা. তাহেরের মুখে জিহাদী জোশ: ডা. জাহেদ

ডান্ডিবার্তা | ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ | ৯:০৭ পূর্বাহ্ণ

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরের ভারত প্রসঙ্গে প্রদত্ত বক্তব্য নিয়ে বেশ চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। এতে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে দেশের রাজনৈতিক মহলে। রাজনৈতিক বিশ্লেষক ডা. জাহেদ উর রহমান জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমিরের মন্তব্যের কড়া সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, নিউইয়র্কে এক সভায় জামায়াতের নায়েবে আমির আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের ভারতের বিরুদ্ধে ধর্মযুদ্ধের আলাপ তুলেছেন। প্রশ্ন হচ্ছে, হঠাৎ কেন তার এমন মন্তব্য? ডা. তাহের তার বক্তব্যে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব এবং ভারতের সঙ্গে সম্ভাব্য সংঘাতের বিষয়ে কথা বলেন। ডা. জাহেদ তার এই বক্তব্যকে ‘জিহাদী জোশ’ হিসেবে অভিহিত করেন। তার আগের ভারত-ঘনিষ্ঠ মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে এটি একটি সুবিধাবাদী রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে তিনি সমালোচনা করেন। ডা. তাহের নিউইয়র্কে এক সংবর্ধনায় দেওয়া বক্তব্যে ভারত কর্তৃক বাংলাদেশ আক্রমণের সম্ভাবনার বিষয়ে কিছু বিস্ফোরক মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, “আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব নিয়ে কারো সঙ্গে কোনো কম্প্রোমাইজ করা হবে না।” তিনি আশা প্রকাশ করেন, ভারত আক্রমণ করুক। কারণ এতে করে ১৯৭১ সালে জামায়াতের ওপর ‘মিথ্যাভাবে চাপানো’ বদনাম ঘুচবে এবং তারা ‘প্রকৃত স্বাধীনতা যোদ্ধা হিসেবে নিজেদের প্রমাণের সুযোগ’ পাবেন। এই জামায়াত নেতা দাবি করেন, ভারত যদি বাংলাদেশে আক্রমণ করে কমপক্ষে ৫০ লাখ যুবক দেশটির বিরুদ্ধে স্বাধীনতার যুদ্ধ করবে, যার এক ভাগ গেরিলা যুদ্ধে যাবে এবং বাকি অর্ধেক বিস্তৃত এলাকায় ছড়িয়ে পড়বে। তিনি এটিকে ‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’র গাজাওয়াতুল হিন্দ সম্পর্কিত যে হাদিস আছে সেটা বাস্তবায়নের মহাপরিকল্পনা হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি দাবি করেন, আওয়ামী লীগ ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে না, বরং সহযোগিতা করবে। অন্য দলগুলোও যুদ্ধ করার মতো সংগঠিত নয়। তাই জামায়াতই হবে সেই ‘সংগঠিত শক্তি’ এবং ‘খাঁটি মুক্তিযোদ্ধা’। ডা. জাহেদ এই বাগাড়ম্বরকে ‘জিহাদী জোশ’ হিসেবে দেখছেন। তিনি প্রশ্ন তোলেন, যে নেতারা গত ১৫ বছর ‘গর্তে লুকিয়ে’ ছিলেন এবং পূর্বে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আতাত করেছিলেন তারা এখন কীভাবে এত বড় জিহাদী কথা বলছেন। ডা. তাহেরের বক্তব্যকে প্রত্যাখ্যান করে তিনি আরও বলেন, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের গণহত্যাকে জামায়াতের সমর্থন করাটা ‘মারাত্মক ক্রাইম’, এটা কোনো ভুল ছিল না। “তার মধ্যে বেশ জিহাদী জোশ দেখা যাচ্ছে। কেন সেটা দেখা যাচ্ছে? আমি মনে করি কয়েকদিন আগে তার আরেকটা বক্তব্যই এটার প্রধান কারণ।” এই রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, ডা. তাহের পূর্বে বিবিসি বাংলায় প্রকাশিত একটি রিপোর্টে ভারতীয় গবেষক শ্রীরাধা দত্তের সাথে বৈঠকে ‘প্রো-ভারত’ (ভারতপন্থী) মন্তব্য করেছিলেন। তিনি ভারতকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেছিলেন যে, জামায়াত অস্ত্র চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত নয় এবং তারা শরিয়া আইন আনবেন না। ডা. জাহেদ মনে করেন, ডা. তাহেরের এই হঠাৎ ‘জিহাদী জোশ’ দেখানোর কারণ হলো, বাংলাদেশে দীর্ঘকাল ধরে বিদ্যমান ভারতবিরোধী সেন্টিমেন্টের কারণে তাঁর পূর্বের ‘প্রো-ভারত’ মন্তব্যের জেরে ভোটের রাজনীতিতে যে সংকট তৈরি হতে পারে, সেই ‘ভারতের দালাল’ তকমাটি সরিয়ে ফেলার চেষ্টা করছেন তিনি। তিনি আরও বলেন, জামায়াতের নায়েবে আমিরের মতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি যখন ‘গাজওয়াতুল হিন্দ’এর আওয়াজ তোলেন, তখন তা আসলে ভারতের বিজেপি সরকারকেই সাহায্য করে। বিজেপি এই বক্তব্য ব্যবহার করে বাংলাদেশে ধর্মযুদ্ধের হুমকি তুলে ধরে তাদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে সুবিধা নিতে পারে। ডা. জাহেদ বলেন, আওয়ামী লীগের সময় গত ১৫ বছরের পর তারা গর্তে ঢুকে ছিল। ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর আওয়ামী লীগের সাথে আতাত করে সমাবেশ করেছিলেন এবং তাদের বিভিন্ন লোকজন ছাত্রলীগ হয়ে উঠেছিলেন। ছাত্রশিবির বা তারা বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগের পার্ট হয়ে তাদের সাথে আন্ডারস্ট্যান্ডিং এর মাধ্যমে চলেছেন। কত বড় জিহাদি তারা। অথচ এই সময়টাতেই বিএনপিকে আমরা দেখেছি মাঠে ক্রমাগত লড়াই চালিয়ে যাওয়া। শুধুমাত্র বিএনপি ক্রমাগত শেখ হাসিনাকে চ্যালেঞ্জ করেছে এবং তার জন্য চরম মূল্য দিয়েছে। ঠিক সেই সময়টায়, এরা গর্তে লুকিয়ে ছিলেন এবং এখন বিরাট লম্বা-লম্বা কথা বলছেন। আর তারা বলছেন এরকম যে ৭১ এ নাকি তাদের বদনাম গেছে যা ১৯৭১ সালে মিথ্যা ভাবে চাপানো হয়েছে। তিনি বলেন, ডাকসুতে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে গিয়ে সেখানে শহীদদের জন্য দোয়া করেন। ডা. তাহের বলছেন, মিথ্যাভাবে চাপানো হচ্ছে। মানে মিথ্যা কথা বলা হয়েছে। এ জাতি জামায়াতকে সম্পর্কে যা বলি আমি প্রায়ই বলি যে ফৌজদারী অপরাধ। ফৌজদারী অপরাধের সাথে জড়িতদের তো ক্ষমার প্রশ্ন আসে না। তারা পলিটিক্যালি এবং নৈতিকভাবে যেভাবে পাকিস্তানের জেনোসাইডকে সাপোর্ট করেছেন—দুই পাকিস্তান এক রাখার শর্তে—ভারতজুড়ে ভয় দেখিয়ে এটাও মারাত্মক ক্রাইম। এটা ভুল না এটা ক্রাইম। উনি বলছেন মিথ্যে ভাবে চাপানো হয়েছে; এবার তারা যুদ্ধ করে এটা করে ফেলবেন। কিন্তু খুব জরুরি কথা তিনি গাজাওয়াতুল হিন্দের কথা আনছেন। কেন এত জিহাদী জোশ? ডা. জাহেদ প্রশ্ন করেন, জামায়াত যদি শরিয়া আইন না আনেন তাহলে আসলে জামায়াত কিসের ইসলামী রাজনীতি করে? তাদের দলের সাথে ‘ইসলামী’ শব্দটা কেন রেখেছে? সেই প্রশ্নটির জবাব আমরা চাইবো। এগুলো স্পষ্ট করতে হবে তাদেরকে। আগামী নির্বাচনের আগেই স্পষ্ট করতে হবে তারা আসলে ইসলামকে কিভাবে অ্যাকোমোডেট করছেন—তাদের দলে তারা যদি ক্ষমতায় যান। আর যদি শরিয়া আইন না আসে তাহলে ইসলাম ব্যবহার করাটা ভ-ামি কিনা সে প্রশ্ন আমরা করতে পারি।




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১  
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা