আজ বুধবার | ১ অক্টোবর ২০২৫ | ১৬ আশ্বিন ১৪৩২ | ৮ রবিউস সানি ১৪৪৭ | সকাল ৮:০৩

সেদিন এলেন বিএনপিতে-আগে ছিলেন কার?

ডান্ডিবার্তা | ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ | ৯:৩২ পূর্বাহ্ণ

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট
নারায়ণগঞ্জে বিএনপির রাজনীতিতে যেই ‘তুঘলকি কা-’ ঘটিয়েছেন ব্যবসায়ী মাসুদুজ্জামান ওরফে মডেল মাসুদ, তার রেশ কাটেনি আজও। বিএনপি কিংবা অন্যান্য রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে শুরু করে প্রতিটি মহলে মডেল মাসুদ ঘিরে নানা আলোচনা ও প্রশ্ন চাউর হচ্ছে এখনো। একটি পক্ষ মডেল মাসুদের এই বিএনপিতে যোগদানের আনুষ্ঠানিকতাকে মনোনয়নের নিশ্চয়তা হিসেবে আলোচনা তুললেও বিষয়টি রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা দেখছেন ভিন্ন ভাবে। অনেকে নেতিবাচক মন্তব্য করছেন মডেল মাসুদকে নিয়ে। বিএনপির ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকর্মীরা নেতিবাচক প্রশ্ন ছুড়ে বলছেন, মডেল মাসুদ যেহেতু সেদিনই বিএনপিতে যোগদান করেছেন, সেহেতু প্রশ্ন উঠেছে যে, আগে কী তিনি ছিলেন? আগে তিনি কোন দলের রাজনীতি করতেন বা কোন দলের সমর্থক ছিলেন? কোন দলের নেতারই বা অনুকম্পায় ছিলেন এতকাল? এখন তিনি কেনই বা বিএনপিতে যোগদান করলেন? এমন অজ¯্র প্রশ্ন উঠেছে মডেল মাসুদকে ঘিরে। বোদ্ধা মহলের মতে, মডেল মাসুদকে নিয়ে বিএনপির ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের এমন প্রতিটি প্রশ্নেই নেতিবাচক ইঙ্গিত বহন করছে। কেননা, আওয়ামী লীগের পতনের পর নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ী সংগঠন চেম্বার অব কমার্সের মাধ্যমে হঠাৎ আলোচনায় আসা মডেল মাসুদ রাতারাতি নিজেকে বিএনপি নেতা হিসেবে প্রচার-প্রচারণা চালানো শুরু করেন। এর আগে তিনি বিএনপির হয়ে রাজপথে নামা তো দূরের কথা এসি রুমে বসেও টু শব্দ টুকুও করেননি। উপরন্ত আওয়ামী লীগের ক্যান্টনম্যান্ট খ্যাত ওসমান পরিবারের অন্যতম সদস্য নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের প্রভাবশালী এমপি সেলিম ওসমানের সাথে বিশেষ সখ্যতা গড়ে দিব্যি ব্যবসা বাণিজ্য চালিয়ে গেছেন বলে রাজনীতিকাঙ্গণে অভিযোগ রয়েছে। সেই তিনিই আওয়ামী লীগের পতনের পর নারায়ণগঞ্জের বিএনপি অঙ্গণে রাতারাতি স্বঘোষিত নেতা বনে যান। শহর থেকে শহরতলীতে বিশাল বিশাল ব্যানার ফেস্টুন সাটিয়ে বিএনপি নেতা হিসেবে স্বঘোষিত পদবী ব্যবহার করেন। এমনকি বিভিন্ন সভায় তিনি নিজেকে সাবেক যুবদল নেতা বলেও পরিচয় দিয়েছিলেন। ৫ আগস্টের পর তিনি নিজেই বিএনপির সদস্য সংগ্রহ অনুষ্ঠানের আওয়োজন করে রাজনৈতিক বক্তব্যও দিয়ে গেছেন। সমালোচনার পারদ তুঙ্গে উঠেছে এখানেই। কেননা, নিজেকে বিএনপির সিনিয়র নেতা দাবি করা এই ব্যবসায়ী নিজেই ঘটা করে আয়োজনের মাধ্যমে বিএনপিতে যোগদান করেছেন! এতে অনেকের চোখ কপালে উঠেছে। প্রশ্নও উঠেছে সমান তালে। বলা হচ্ছে, “আজ তিনি বিএনপি হলেন, আগে তবে কী ছিলেন?” যদিও এর উত্তর আরও আগেই দিয়ে রেখেছিলেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহবায়ক এ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান। আরও বেশ কয়েক মাস আগেই মডেল মাসুদের মুখোশ উন্মোচন করেছেন বিএনপির ত্যাগী ও পরীক্ষিত এই নেতা। তিনি মডেল মাসুদকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, ‘মডেল মাসুদ হলো মেইড ইন আওয়ামী লীগ। তিনি মেইড ইন সেলিম ওসমান। তিনি বিএনপির কেউ না।’ সাখাওয়াত হোসেন খানের এই বক্তব্য তৎকালিন সময়ে ফলাও করে গণমাধ্যমে ছাপা হয়েছিলো। আলোচনার পারদ উঠেছিলো তুঙ্গে। মহানগর বিএনপির আহবায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানের মতে, মাসুদুজ্জামান বিগত সময়ে রাজনীতির মাঠে ছিলেন না। বিএনপি থেকে যোজন যোজন দূরে ছিলেন। বিএনপির নাম শুনলে আসেননি। কিন্তু তিনিই আজ বিএনপির কথা বলতে চান। বিএনপি থেকে নমিনেশন চান। সুসময়ে মধু খেতে চান। তবে বিগত সময়ে রাজনীতির মাঠে না থাকার কারণে ভাগ্যে মধু জুটবে না বলেও তাকে ভর্ৎসনা করেন সাখাওয়াত হোসেন খান। এই বিষয়ে জানতে চাইলে মহানগর বিএনপির আহবায়ক এ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান দৈনিক সংবাদচর্চাকে বলেন, ‘আমরা আগেই বলেছিলাম যে, মাসুদুজ্জামান বিএনপির সাধারন সদস্য পদেও ছিলেন না। যেখানে তিনি ইতিপূর্বে সদস্য পদ সংগ্রহের অনুষ্ঠান করেছিলেন, সেখানে তার নিজেরই নতুন করে বিএনপির সদস্য হতে হলো! নারায়ণগঞ্জবাসী এটাকে হাস্যকর হিসেবে নিয়েছে। সে নিজেকে দানবীর ও সমাজ সেবক হিসেবে প্রচার করে। কিন্তু তিনি নারায়ণগঞ্জে একটি স্কুল, কলেজ মাদ্রাসা বা এমন কিছু করেছে কিনা, সেই তথ্য পাওয়া যায়নি। সে এতদিন যত দান করেছে, সব আওয়ামী লীগকে করেছে, এতদিন যত দান করেছে আওয়ামী লীগকেই করেছে। তার টাকায় বিএনপি নেতাকর্মীরা চলেনি বর্তমানেও তার টাকার বিএনপির নেতাকর্মীদের প্রয়োজন নেই। কিছু নেতাকর্মী তার পাশে আছে এটা ঠিক, কিন্তু যারা আছে তারা কেউই মূল ধারার রাজনীতিতে সম্পৃক্ত নেই। যারা আছে তারা হয় বহিস্কৃত নয় তো স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করা লোক।’ সাখাওয়াত হোসেন খান আরও বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জ বার নির্বাচনে মডেল মাসুদ বিএনপির প্যানেলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে ভিন্ন একটি প্যানেলকে দাঁড় করিয়েছিল। রেজা ও গালিবকে বিএনপি থেকে বহিস্কারও করা হয়েছিল। মডেল মাসুদ যদি সত্যিকার অর্থেই বিএনপির লোক হতো, তাহলে তো তিনি বিএনপির বিরুদ্ধে কাজ করতো না। এতেই প্রতীয়মান হয় যে, মডেল মাসুদ বিএনপির পক্ষের লোক না। সে অন্যকারো প্রেসক্রিপশন বাস্তবায়নের মিশনে নেমেছে।’ এক প্রশ্নের জবাবে সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, ‘বিএনপিতে কাল অন্তর্ভুক্ত হয়ে পরশু দিনই সে মনোনয়ন পেয়ে যাবে, এটা ভাবার কোনো কারন নেই। এগুলো দলের প্রকৃত নেতাকর্মীরা মেনে নিবে না। আসলে টাকা দিয়ে নির্বাচন করা যায়, কিন্তু ভালো কোনো উদাহরণ নেই। বিগত সময়ে মোহাম্মদ আলী সাহেব সিরাজ সাহেবের মত প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচন করেছিলো। কিন্তু নাকানি চুবানি খেয়েছে। সুতরাং নেতাকর্মীরা কোনো সুবিধাবাদী লোককে মেনে নিবে না। আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেব আগেই বারংবার বলেছেন যে, যারা দলের জন্য নিবেদিন ছিলো, ১৬ বছর যারা নির্যাতিত, নিপীড়িত ও হামলা মামলার শিকার হয়েও দলের জন্য সক্রিয় থেকেছে, রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে গেছে, তাদের মধ্য থেকেই যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তিকে মূল্যায়ন করা হবে। তাই  আমরা মনে করি যে, দলের হাই কমান্ড ভেবে চিন্তেই সঠিক সিদ্ধান্ত নিবে।’




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১  
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা