আজ বুধবার | ১৪ মে ২০২৫ | ৩১ বৈশাখ ১৪৩২ | ১৫ জিলকদ ১৪৪৬ | সকাল ৯:২৫

সন্ত্রাসের জনপদে রূপ নিচ্ছে বন্দর

ডান্ডিবার্তা | ১১ জানুয়ারি, ২০২৩ | ৮:১৮ পূর্বাহ্ণ

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট দীর্ঘ দিন পর বন্দরের উত্তরাঞ্চল ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। স্থানীয়দের অভিযোগ মদনপুর এলাকায় আবার নতুন করে নব্য কামুর উত্থান ঘটেছে। এক সময় বন্দরের সব চেয়ে আলোচিত সন্ত্রাসের জনপদ ছিল মদনপুর, ফুলহর, মুরাদপুর, দেওয়ানবাগ ও ধামগড় এলাকা। সেই সময় কামু ও সুরত আলী বাহিনীর আতঙ্কে দিন কাটাত এলাকার মানুষ। সেই আগের অবস্থার দিকে যাচ্ছে সেই মদনপুর। এখন নতুন করে গজিয়েছে অহিদ ও আইয়ূব বাহিনী। তাদের দ্বারা সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, ভ’মিদস্যুতা ও মাদক সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করার অভিযোগ রয়েছে। এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, বন্দরের ফুলহর এলাকার হানিফার ছেলে অহিদ যার দাদা এক সময় ছিল জিয়ারউর রহমানের গড়া গ্রাম সরকার প্রধান। অহিদ বিএনপি ঘরানার হলেও সে নিজেকে আওয়ামীলীগের নেতা দাবি করে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে চলেছে। চতুর অহিদ বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শামীম ওসমান ও এম এ রশিদের ছবি দিয়ে নিজের ছবির সাখে ব্যানার ফেস্টুন টানিয়ে বনে যায় ছাত্রলীগ নেতা। এক সময় সে নিজেকে ছাত্রলীগ নেতা পরিচয় দিলে তাকে তোলারাম কলেজের ভিপি রিয়াদ ডেকে এনে সাসিয়ে দিলে সে নিজেকে যুবদল নেতা পরিচয় দিতে শুরু করে। আর সে এমএ রশিদের তোষামদি করে এবং এমএ রশিদকে বাবা বলে ডাকার সুবাধে অনায়াসে বিভিন্ন অপকর্ম করে যাচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অহিদ আওয়ামীলীগের কেউ নয়। সে কোন কমিটিতে নেই। তারপরেও সে নিজেকে আওয়ামীলীগ নেতা দাবি করে অপরাধ কর্মকান্ড করে বেড়াচ্ছে বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেন। এলাকাবাসী আরো জনান, অহিদ এক সময় বিয়ার ব্যবসা করত। এখনো তার সেল্টারে মদনপুর এলাকায় মাদক ব্যবসা চলে। সে আওয়ামীলীগের নাম ব্যবহার করে ইতিমধ্যে একটি বাহিনী গড়ে তুলেছে। এলাকাবাসী বলেন, এমএ রশিদের আষ্কারায় সে অরাধ করে অনায়াসে পার পেয়ে যাচ্ছে। সে শীর্ষ আওয়ামীলীগ নেতাদের সাথে সখ্যতা রেখে হাতিয়ে নেয় গরুর হাট, শুধু তাই নয় সে বন্দরের কেওঢালা এলাকার হাবিব মিয়ার ইটভাটা জবর দখল করে নেয়। সে অবৈধ ইটভাটার জন্য মাটি আনার জন্য সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদকের মালিকানাধীন জমি নষ্ট করায় জমির কেয়ারটেকার মিজান বাধা দেয়ায় তাকে অমানবিক ভাবে নির্যাতন করে হত্যার চেষ্টা করে। তাকে অর্ধমৃত অবস্থায় মাটিতে ফেলে রেখে তার পকেটে ইয়াবা ও চাকু দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে। আহত মিজানকে পুলিশ চিকিৎসা করিয়ে মাদক উদ্ধারের মামলা দিয়ে জেলে পাঠায়। অহিদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে ক্ষিপ্ত হয়ে এলাকাবাসী প্রতিবাদ সভা ও বিক্ষোভ মিছিল করে। এছাড়া তার সহযোগি আউয়ূব মেম্বার যিনি একসয় জামাতের পিষ্টপোষক ছিল। সেই জামাত ঘরানার লোককে থানা আওয়ামীলীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক করা হয়েছে। এলাকাবাসী জানান, এই আউয়ুব মেম্বার এরমধ্যে ৫টি বিয়ে করেছে। সে নারীদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ে নাটকের পর তাদের জীবন নষ্ট করে তাদের বিতারিত করার তার অভ্যাস। এই আইয়ূব মেম্বার বিভিন্ন লোকের জমি কিনে ও জবর দখল করে এখন আইয়ূব নগর গড়ে তুলেছে। এছাড়া বন্দর বাজার এলাকার আরেক ত্রাস খান মাসুদ। তার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে মুখ খুলেছেন সদর-বন্দর আসনের সাংসদ সেলিম ওসমান। দেখা যায়, বন্দরের রাজনীতিতে খান সাহেব বললে নাসিক ২২ নং ওয়ার্ডবাসী ছাত্রলীগ নেতা থেকে যুবলীগ নেতা বনে যাওয়া খান মাসুদকে বুঝায়। যিনি ওসমান পরিবারের খুবই বিশ্বস্ত লোক হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিয়ে বেড়ান। তবে সে নিজের স্বার্থের জন্য সবকিছু করতে পারেন। এর উদাহরন হলো ২০২২ সালে অনুষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলায় অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের সময় কলাগাছিয়া ইউনিয়ন এর আওয়ামী লীগের নৌকা সমর্থিত প্রার্থীর বিরুদ্ধে গিয়ে প্রকাশ্যে জাতীয় পার্টি মনোনীত লাঙ্গল সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় নামতেও দ্বিধা করেননি। এবার এমপি সেলিম ওসমানের এক বক্তব্যকে কেন্দ্র করে আবারও আলোচনায় আসেন খান মাসুদ। বিভিন্ন মিডিয়ায় সেই বক্তব্যসহ খান মাসুদের অতীত কর্মকা- নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা করা হয়। তবে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ছাত্রলীগ থেকে যুবলীগ নেতা বনে যাওয়া খান মাসুদ বেপরোয়া হয়ে উঠে বলে জানা যায়। এই সময়ের মধ্যেই সে একটি বিশাল ক্যাডার বাহিনী গড়ে তোলে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়। আর বাহিনী গড়ের তোলার পর থেকেই বিভিন্ন অপারেশনে জড়িত হয় মাসুদ বাহিনীর নাম। এরপর এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করে বন্দরে অবৈধ বাজার ও বেবীস্ট্যান্ডসহ বিভিন্ন পরিবহন চাঁদাবাজিতে আধিপত্য বিস্তার করে মাসুদ। এরপর স্থানীয় ডিস ব্যবসাকে নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার জন্য স্থানীয় আরেক সন্ত্রাসী দুলালের সাথে দ্বন্দ্বে জড়ায় মাসুদ। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন সময় অস্ত্রের মহড়া ও হামলা মামলা ও ভাঙচুর চালালে দলীয় ও একটি পরিবারের সাইনবোর্ড থাকায় তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে প্রশাসনও ব্যর্থ হয়। এরপর ওসমান পরিবারের মধ্যস্থতায় সেই বিষয়টি ধামাচাপা দিলে কিছুটা হলেও স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়ে এলাকাবাসী। খান মাসুদের নিয়ন্ত্রণে একটি বিরাট মাদক সিন্ডিকেটও ছিল বলে জানা যায়। যা প্রকাশ্যে আসে ২০১৭ সালে যখন তার আস্তানায় হানা দিয়ে র‌্যাব-১১ তাকে গ্রেফতার করে। সে সময় র‌্যাব তার আস্তানা থেকে পিস্তল, ২ রাউন্ড গুলিসহ বিদেশী বিয়ারের ক্যান, ২ বোতল বিদেশী মদ ও ৬ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করে বলে জানা যায়। এরপর তার বাহিনীর বিরুদ্ধে পুলিশ সদস্যদের পিটিয়ে অস্ত্র ছিনতাইয়ের অভিযোগও রয়েছে। গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে কলাগাছিয়ার চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী কাজিম উদ্দিন প্রধানের বিরুদ্ধে গিয়ে জাতীয় পার্টির প্রার্থী দেলোয়ার প্রধানের লাঙ্গলের পক্ষে প্রকাশ্যে প্রচারণায় অংশ নেয় খান মাসুদ। অন্যদিকে সেলিম ওসমান জাতীয় পার্টির সমর্থিত এমপি হলেও তার ছোট ভাই শামীম ওসমান আওয়ামী লীগের এমপি। যদিও আওয়ামী লীগের একটি পক্ষকে বলতে শোনা যায় এই আসন শামীম ওসমানের না, তাই তিনি এখানকার নির্বাচনে কোন ভূমিকা রাখেননি। কিন্তু তৃণমূল আওয়ামী লীগের দাবি, আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সময় এখানকার আওয়ামী লীগের সমর্থন প্রয়োজন পড়ে। তাছাড়া তিনি বন্দরের এমপি না হলেও নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী নেতা হিসেবে বন্দরে তার বিশাল একটি সমর্থক আছে। তাই বড় ভাই সেলিম ওসমানের নিজ দলীয় কাজে আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দকে ব্যবহারে শামীম ওসমানের নীরব থাকা মানেই তার সমর্থন আছে। কারণ বন্দর আওয়ামী লীগের বিভিন্ন বিষয়েই তিনি ভূমিকা রেখে থাকেন। এইসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে খান মাসুদ বলেন, আমি রাজনীনিতি করি বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে নিয়ে। রাজনীতি করতে গেলে দীর্ঘদিন মাঠে থাকলে মানুষ হিসেবে আমারও কিছু ভুল-ভ্রান্তি থাকতে পারে। তবে আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে তা মিথ্যা। বিশেষ করে আমরা মানুষের ন্যায্য অধিকার নিয়ে কাজ করি বলে, যেকোন সালিশে ন্যায় বিচার করি বলে আমার কাছে আমার এলাকার বাইরে থেকে ভূক্তভোগীরা বিভিন্ন অভিযোগ নিয়ে আসে। সেখানে আমি চেষ্টা করি তাদের পক্ষে ন্যায় বিচার করতে। এদিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বন্দর খেয়াঘাট সংলগ্ন সকল অবৈধ দোকানপাটের চাঁদা যায় খান মাসুদের দফতরে। অটো বা সিএনজি স্ট্যান্ডের চাঁদা তোলে তার বাহিনী। খেয়াঘাটের এক দোকানী বলেন, আমি প্রতিদিন ২শ’ টাকা ভাড়া দিয়ে ফুটপাতে দোকার করি। আর দোকানের জায়গা ভাড়া নেন খান মাসুদের লোক সেলিম। এ বিষয়ে পুলিশ দেখেও না দেখার ভান ধরে রয়েছে। কেহ কেহ বলছে এ সকল অপরাধীদের অবৈধ অর্থের কিছু অংশ পুলিশ পেয়ে থাকে তাই পুলিশের নাকের ডগায় এ সকল সন্ত্রাসীরা অপরাধ করে যাচ্ছে। এলাকাবাসী দাবি করেন, নব্য সন্ত্রাসী অহিদ যে ভাবে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি নিজের ছবির সাথে সাটিয়ে অপকর্ম করছে তাকে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর নাম কুলষিত করছে সেই সাথে আওয়ামীলীগকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। আগামী নির্বাচনে এসকল সন্ত্রাসীদের জন্য আওয়ামীলীগের বদনাম মানুষের মুখে মুখে থাকবে। এখনই তাদের প্রতিহত করা প্রয়োজন। এ জন্য জেলা আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষন করেন এলাকাবাসী।




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১
১২১৩১৪১৫১৬১৭১৮
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭২৮২৯৩০৩১  
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা