আজ শুক্রবার | ১৫ আগস্ট ২০২৫ | ৩১ শ্রাবণ ১৪৩২ | ২০ সফর ১৪৪৭ | সকাল ৮:৩৭

না’গঞ্জ বিএনপিতে আ’লীগের গুপ্তচর!

ডান্ডিবার্তা | ২৮ জানুয়ারি, ২০২৩ | ১১:২৫ পূর্বাহ্ণ

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপিতে আওয়ামীলীগের গুপ্তচর রয়েছে মনে করছে দলটির তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। সরকার বিরোধী আন্দোলন চাঙ্গা থাকলেও কিছু নেতা রয়েছে যারা কোন কর্মসূচিতে অংশ নেন না। বিগত সময় যারা আওয়ামীলীগের সাথে আতাঁত করে চলেছেন তাদের অনেককে কর্মসূচিতে দেখা যায় না। তাঁরা বলছেন, বর্তমান নেতৃত্বকে শুরু থেকেই একটি গ্রুপ মেনে নিচ্ছে না এবং তারা কখনো চায়নি তারা সামনের সারিতে আসুক। কারণ এ নেতারা সামনের সারিতে থাকলে সরকার দলের এজেন্ডা বাস্তবায়নে ব্যর্থ হবে বিএনপির ভেতরে ঘাপটি মেরে থাকা সুবিধাভোগীরা। দলের একাধিক নেতা জানান, গত সংসদ নির্বাচনে ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ আসনে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট থেকে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে লড়েন জমিয়তের নেতা মনির হোসাইন কাশেমী। কিন্তু নির্বাচনের শুরু থেকেই বিএনপি নেতা শাহআলম, বর্তমানে জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক মামুন মাহমুদ সহ অনুগামী একটি বড় সিন্ডিকেট মাঠে নামেনি। বরং তারা তখন কাশেমীর সঙ্গে নানা সময়ে দেনদরবার করেছেন রাজধানীর বিভিন্ন অভিজাত হোটেলে বসে। একজন বিএনপি নেতা তখন কাশেমীর কাছে ২ কোটি টাকা চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি সেটা দিতে না পারায় তখন মামুন মাহমুদের নেতৃত্বে টিম মাঠে নামেনি। এর পর থেকেই ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ আসন কেন্দ্রীক বিএনপির রাজনৈতিক বলয় নিজেদের মুঠোবন্দী করে নেওয়ার চেষ্টা করেন মামুন মাহমুদ। ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির নিজেদের মত করেও নিতে থাকেন তিনি। ফতুল্লায় নেতৃত্বে আসেন শাহআলমের অনুগামীরা। শাহআলম নিজেকে গুটিয়ে নিলেও পর্দার পেছন থেকে কলকাঠি নাড়েন। তবে গত ১৫ নভেম্বর জেলা বিএনপির ৯ সদস্যের আহবায়ক কমিটি দেওয়ার পর থেকে সব কিছু বদলে যেতে শুরু করে। কারণ গিয়াসউদ্দিন ও রূপগঞ্জের গোলাম ফারুক খোকনের নেতৃত্বে কমিটি আসবে এটা ছিল অনেকের কল্পনার বাইরে। সে কারণেই একটি গ্রুপ বেশ নাখোশ। ফলে এ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন মামুন মাহমুদ। যদিও তার ব্যাপারে কয়েকবার আওয়ামী লীগের এমপি শামীম ওসমান প্রকাশ্য বক্তব্য রেখেছেন। তাকে ‘ভদ্রলোক’ বলেও আখ্যা দিয়েছেন। বিপরীতে গিয়াসউদ্দিনকে ইঙ্গিত করে ‘খুনী’ নেতা বলেও মন্তব্য করেন। গত কয়েক মাস ধরে শামীম ওসমানের বক্তব্যে বার বার এ বিষয়টি উঠে এসেছে। সম্প্রতি সিদ্ধিরগঞ্জ গিয়েও গিয়াসের পরোক্ষ সমালোচনা করেছেন শামীম ওসমান। বিএনপির একাধিক নেতা জানান, মামুন মাহমুদের সঙ্গে আগেও আওয়ামী লীগের কথিত নেতা সাত খুন মামলার প্রধান আসামী নূর হোসেন ও তার ভাইদের সখ্যতা ছিল। ওই সময়ে মামুনকে সিদ্ধিরগঞ্জে বিএনপির কার্যালয় করে দিয়েছিলেন নূর হোসেন। তাছাড়া নূর হোসেনের ভাইকে রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করেন মামুন। মূলত সিদ্ধিরগঞ্জের রাজনীতিতে গিয়াসউদ্দিনকে কোনঠাসা করতেই মামুন হাত মেলান নূর হোসেনের সঙ্গে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সারা দেশের মত নারায়ণগঞ্জ জেলার সবকটি আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তবে ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ আসনটি ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগের হেভিওয়েট প্রার্থী শামীম ওসমান থাকার ফলে এই আসনটিতে সবার নজর ছিল। আর নির্বাচনের মনোনয়ন ইস্যুতে বিএনপি দলটি থেকে একদিক হেভিওয়েট নেতারা মনোনয়ন প্রত্যাশী করে। বিএনপি দলীয় সাবেক সাংসদ গিয়াসউদ্দিন, জেলা বিএনপির সহ সভাপতি শাহআলম সহ আরো কয়েকজন মনোনয়ন প্রত্যাশা করেছিলেন। তবে দলের এসব হেভিওয়েটদের বাদ দিয়ে অনেকটা নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে শেষ সময়ে এসে ২০ দলীয় জোটের শরীক দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব ও জেলার সভাপতি মুফতি মনির হোসাইন কাশেমীকে মনোনয়ন দেয়া হয়। এদিকে বিএনপি দলটির নেতাকর্মীরা কাশেমীকে কিছুতেই মেনে নিতে পারেনি। যেকারণে তারা অনেকটা মনক্ষুন্ন হয়ে এই আসনের ধানের শীষের নির্বাচন বয়কট করে। আর তাতে করে কাশেমীর পাশে বিএনপি দলীয় কোন নেতাকর্মী ছিলনা। এতে করে কাশেমী একা হয়ে পড়লে জেলার বাইরে থেকে বিভিন্ন মাদ্রাসার লোকজনকে দিয়ে নির্বাচনী প্রচারণার কাজ সারতে চেয়েছিল। কাশেমী মার্কা বসন্তের কোকিলরা সবসময় মধু গ্রহণ করতে এসেছে। তার মত অর্থাৎ কাশেমী মার্কা বসন্তের কোকিল অনেকেই আছে যারা দলের সুসময়ে মধু পান করতে আসে। আবার দলের দুঃসময়ে পাশ কাটিয়ে পালিয়ে যায়। এসব নেতাদের মাইনাস করতে না পারলে বিএনপি দলটিকে আরো কড়া মাশুল দিতে হবে। ঠিক এভাবেই আগামীতে মনির কাশেমীর মত একজন নেতার জন্য আটঘাট বেধে মাঠে নেমেছে নেতারা নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটি গঠনের পরে আকস্মিক শামীম ওসমানের এ ধরনের বক্তব্য নিয়ে শুরু হয়েছে নানা ধরনের সমীকরণ। যদিও তিনি এর আগেও জেলা বিএনপির বর্তমান কমিটির প্রথম যুগ্ম আহবায়ক মামুন মাহমুদের উপর ছুরিকাঘাত নিয়েও একাধিক সমাবেশ ও কর্মসূচীতে বক্তব্য রেখেছিলেন। সেখানে শামীম ওসমান বক্তব্যে মামুন মাহমুদকে ‘ভদ্রলোক’ হিসেবেই অভিহিত করেছেন। বিপরীতে জেলা বিএনপির কমিটি গঠনের পর এ নেতৃত্বে ‘খুনীরা’ চলে এসেছেন বলেও মন্তব্য ছুড়েছেন। ফলে বিএনপির কোন কোন নেতাকে নিয়ে যে অজানা শঙ্কা কাজ করছে সেটাও প্রতীয়মান। গত ২৪ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপির ব্যানারে শহরে গণমিছিল বের হয়। ওই মিছিল চলাকালে চাষাঢ়াতেই অবস্থান করেন শামীম ওসমান। নিজ দল আওয়ামী লীগের সম্মেলন ছেড়ে তিনি কেন সেদিন নারায়ণগঞ্জ ছুটে এসেছিলেন ব্যাখা এসেছে তাঁর কণ্ঠেই। বক্তব্য অনুযায়ী আওয়ামী লীগের সম্মেলনের চেয়ে নারায়ণগঞ্জের বিএনপির গণমিছিলটি অধিক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল শামীম ওসমানের কাছে। শামীম ওসমানের কাছে গুরুত্ব হলেও সেই ব্যাখায় রীতিমত আতঙ্ক ভর করেছে বিএনপির নেতাকর্মীদের উপর। শামীম ওসমান ২৬ ডিসেম্বর সিদ্ধিরগঞ্জে এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘‘সেদিন খবর ছিলো আমার কাছে। ওই দিন যে মিছিলটা (বিএনপির গণমিছিল) হবে, ওই মিছিলে এই এলাকারই এক সন্তান বিএনপি করে তাকে টার্গেট করা হবে। বিএনপির ভেতর থেকেই করবে। এই খবর শুনে আমি নারায়ণগঞ্জ চলে আসছি। বিএনপির মিছিলের পাশেই আমার গাড়ি নিয়ে বসেছিলাম। আমাকে সাংবাদিকরা জিজ্ঞেস করলো, আপনার উপর যদি হামলা হইতো? আমি বলছি, হইলে হইতো। আমাকে মাইরা যদি কেও খুশি হইতো, তাইলে হইতো। আমি যদি আগের শামীম ওসমান হই, তাহলে ওই দশ বিশ হাজার লোক আমার সামনে দাঁড়ানোর ক্ষমতা রাখে না। আমার কাজ ছিলো ওইটাকে ওয়াচ করা। ওনারাও দেখছে আমি বইসা আছি। ওনাদের মিছিল শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে, ওনারা চলে গেছেন। আমি শুধু এতোটুকুই বলেছি, যে ভাষাটা একটু সুন্দর করেন।’’ এ নিয়ে বিএনপির ভেতরে শুরু হয়েছে বেশ তোলপাড় সঙ্গে দেখা দিয়েছে আতঙ্কের। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শামীম ওসমানের বক্তব্যে কয়েকটি বিষয় সামনে চলে এসেছে। প্রথমত বিএনপির এক নেতার উপর আঘাত আসবে এ খবরটি শামীম ওসমানের কাছে কে প্রকাশ করলো। নিশ্চয় তাহলে দলের ভেতরে গুপ্তচর লুকায়িত আছে। তিনি শামীম ওসমানের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে খবরটি প্রকাশ করেছেন। দ্বিতীয়ত শামীম ওসমানের কাছে খবর পৌছানোর পর তিনি ঢাকা থেকে ছুটে এসেছিলেন। কিন্তু এ আসার পথের সময়টুকুর মধ্যেও হামলাটি বা আঘাতটি হতে পারতো। তাহলে একজন দায়িত্বশীল মানুষ তার উপরে এমপির মত প্রভাবশালী ব্যক্তি বিষয়টি জানার পরেও কেন প্রশাসনকে দিয়ে মিছিলকে থামানোর বা আটকানোর চেষ্টা করেনি। তৃতীয়ত শামীম ওসমান এ খবর পাওয়ার পর নিজ দলের নেতাদের অবহিত করেনি। এটা তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন। তাঁরও উচিত ছিল সেটা নিজ দলের দায়িত্বশীলদের অবহিত করা। কিন্তু সেটা করেনি। চতুর্থত শামীম ওসমান বলেছেন তিনি বিষয়টি ‘ওয়াচ’ করতে এসেছিলেন। এবং তিনি সেটা করেছেন। একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তির কাছে যেহেতু খবর ছিল আঘাত হবে। সেহেতু তিনি শুধু প্রত্যক্ষ করতেই গাড়িতে কেন বসেছিলেন সে প্রশ্নও ঘুরপাক খাচ্ছে বিএনপির নেতাকর্মীদের কাছে। পঞ্চমত শামীম ওসমান দাবী করেছেন তিনি জানতেন কার উপর আঘাত আসবে। এবং ওই লক্ষ্যে থাকা ব্যক্তিটি যে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এলাকার সেটাও তিনি প্রকাশ করেছেন। এটা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে কৌতুহল সবচেয়ে বেশী। তাহলে কে সেই টার্গেটে থাকা ব্যক্তি সেটা প্রকাশও জরুরী মনে করছেন সকলে। তাহলে অনেক ধোঁয়াশা কেঁটে যাবে। প্রসঙ্গত ৯ সদস্যের জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটিতে বর্তমানে তিনজন হলেন সিদ্ধিরগঞ্জের। তাঁরা হলেন আহবায়ক গিয়াসউদ্দিন, প্রথম যুগ্ম আহবায়ক মামুন মাহমুদ ও যুগ্ম আহবায়ক মনিরুল ইসলাম রবি।




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা