আজ শনিবার | ১৬ আগস্ট ২০২৫ | ১ ভাদ্র ১৪৩২ | ২১ সফর ১৪৪৭ | সকাল ৮:৫৫

পারিবারিক সিদ্ধান্তে হত্যাকান্ড

ডান্ডিবার্তা | ০২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ | ১১:৫৩ পূর্বাহ্ণ

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট আল আমিন। বয়স ২২। পরিবারের অজান্তে এক সময় পেশাদার চোর ও ছিনতাইকারী হয়ে উঠে সে। চুরি-ছিনতাইয়ের কারণে প্রায় এলাকায় শালিস দরবার বসে আলআমিনকে নিয়ে। এতে বিব্রত হয় পরিবারের লোকজন। একপর্যায়ে শিকল দিয়ে বেঁধে রেখেও তাকে এই পথ থেকে ফেরাতে পারেনি তারা। আজ ওর বাড়ি তো কাল অন্যবাড়ি, কেউ রেহাই পায় না তার চুরি থেকে। নানা কটুকথা শুনতে শুনতে হাঁফিয়ে উঠে আলামিনের পরিবার। তার চুরিতে অতিষ্ঠ হয় আত্মীয়-স্বজনরাও। মান-সম্মান রক্ষায় নিরুপায় হয়ে আল আমিনকে দুনিয়া থেকে বিদায় করার পরিকল্পনা নেয় তার-ই স্বজনরা। নির্মমভাবে পিটিয়ে আহত করার পর শ্বাসরোধে তাকে হত্যা করে আল আমিনের লাশ গুম করে রাখা হয়। পরে ৯৯৯-এ ফোন পেয়ে পুলিশ অজ্ঞাত লাশ হিসেবে ক্ষেতের মধ্যে আবর্জনার স্তুপের ভেতর থেকে আল আমিনের মরদেহ উদ্ধার করে। নিজেদের রক্ষায় নিহতের মা বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামীদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করে। কিন্তু সত্য বড় কঠিন। পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব-১১ ছাঁয়া তদন্ত করতে গিয়ে গ্রেপ্তার করে মামলার বাদী নিহত আল আমিনের মা, বড় ভাইসহ ৪জনকে। বেরিয়ে আসে ঘটনার আদ্যপ্রান্ত। চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের হামসাদি এলাকায়। গত ১৭ জানুয়ারি আল আমিনের লাশ উদ্ধার করা হয়। গত মঙ্গলবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-১১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল তানভীর মাহমুদ পাশা জানান, সোমবার রাতে সোনারগাঁয়ের পূর্ব সনমান্দি এলাকায় অভিযান চালিয়ে আল আমিন হত্যার ঘটনায় ৪জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- সৈয়দ হোসেন সাগর (২৮), মো. কবির হোসেন (৩২), মো. ইউসুফ (৩২), নাসিমা বেগম (৪৪)। যেভাবে আল আমিনকে হত্যা করা হয়. র‌্যাব তানভীর মাহমুদ পাশা জানান, গ্রেপ্তারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, নিহত আল-আমিন (২২) মূলত এলাকায় চুরি এবং ছিনতাই কাজে জড়িত ছিল। তার এই কাজের জন্য তার পরিবারকে প্রায় সময়ই বিব্রত হতে হয় এবং বারবার জরিমানা দিতে হয়। এই নিয়ে গ্রামে স্থানীয় সালিশ হয়। তার এরূপ আচরণের জন্য প্রায় সময়ই তার পরিবার তাকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখতো। গত ৯ জানুয়ারি রাতে সে শিকল খুলে পালিয়ে গেলে তাকে আর খুঁজাখুঁজি করে পাওয়া যায়নি। পালিয়ে যাওয়ায় তার পরিবার ও তার প্রতিবেশীরা পুনরায় চুরি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটতে পারে ভেবে আল আমিনের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়। এদিকে র‌্যাব-১১ এর ছায়া তদন্তের এক পর্যায়ে তদন্ত কাজে নিহত আল আমিনের পরিবারের অনিহা এবং অসহযোগিতা পরিলক্ষিত হলে আল আমিনের বড় ভাই ইউসুফকে সন্দেহ হয় এবং তাকে র‌্যাব-১১ এর সদর দপ্তরে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে সে উক্ত হত্যাকান্ডের ব্যাপারে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেয়। তার বক্তব্য মতে, আল আমিন চুরি ও ছিনতায়ের কাজে জড়িত থাকার কারণে তার প্রতি বিক্ষুব্ধ হয়ে আল আমিনের চাচাতো ভাই সৈয়দ হোসেন সাগর, প্রতিবেশী কবির এবং জহির তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। এরই প্রেক্ষিতে গত ১০ জানুয়ারি সন্ধ্যায় আল আমিনকে তার বাড়ি থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে ফসলের মাঠে সৈয়দ হোসেন সাগর, কবির এবং জাহির গামছা দিয়ে মুখ বেঁধে মারধর করছে বলে আল আমিনের মা নাছিমা বেগম জানতে পারে। বিষয়টি আল আমিনের মা তার বড় ছেলে ইউসুফকে জানালে ইউসুফ ঘটনাস্থলে যায় এবং তার ভাইকে মারধর না করতে অনুরোধ করে। পরবর্তীতে ইউসুফ মুগড়াপাড়া পুরাতন সেবা ক্লিনিক এলাকায় নাইট ডিউটির কাজ করে বিধায় সে তার কর্মস্থলে ফিরে আসে। সে রাতেই আল আমিনের মা ইউসুফকে আবার ডাকলে সে ঘটনাস্থলে পুনরায় যায় এবং সেখানে তার মা ও তার মামা শহীদুল্লাহ এবং সৈয়দ হোসেন সাগর, জহির এবং কবিরকে দেখতে পায়। ইউসুফ তার মাকে ভাই আল-আমিনের কথা জিজ্ঞাসা করলে সে জানতে পারে যে আল-আমিনকে সৈয়দ হোসেন সাগর, কবির এবং জাহির মিলে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে জমির আইলের উপরে রাখা স্তুপের মধ্যে লুকিয়ে রেখেছে। ঘটনাস্থলে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা ইউসুফ, তার মা ও মামাকে এ ব্যাপারে মুখ খুললে তাদেরকেও হত্যা করবে বলে হুমকি দেয়। ওদিকে গত ১৭ জানুয়ারি সোনারগায়ের হামসাদি এলাকার জমির আইলের উপর জমানো আগাছার স্তুপের মধ্য থেকে অজ্ঞাত হিসেবে আল-আমিন (২২) এর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে নিহত আল-আমিনের মা নাছিমা বেগম বাদী হয়ে সোনারগাঁ থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা