আজ শুক্রবার | ১৫ আগস্ট ২০২৫ | ৩১ শ্রাবণ ১৪৩২ | ২০ সফর ১৪৪৭ | সকাল ১১:৩০

জেলা আ’লীগে নয়া বিরোধের পদধ্বনী!

ডান্ডিবার্তা | ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ | ১০:৫১ পূর্বাহ্ণ

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট নারায়ণগঞ্জ আওয়ামীলীগের উত্তর-দক্ষিণের রাজনৈতিক বিরোধ দীর্ঘ দিনের। এ বিরোধের সাথে তাল মিলিয়ে নিজেদের অবস্থান শক্ত রেখেছে জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আবদুল হাই ও সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ মো. বাদল। ২০১৬ সালে আংশিক কমিটি দেয়ার পর সেই কমিটি পূর্ণাঙ্গ হওয়ার পর এই দুজনে মধ্যে তিক্ততা ছিল ভছর জুড়ে। কমিটির বেশিরভাগ নেতারাই তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ তুলেছেন। শত অভিযোগের পরও গতবছরের ২৩ অক্টোবর জেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলনে তাদেরকে স্বপদে বহাল রাখার ঘোষণা দেয় আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সেই সাথে হাই-বাদলের বিভক্তিও বেড়েছে। সম্মেলনের পাঁচ মাস পেরুলেও এক কাঁতারে আসতে পারেননি তারা দু’জন। ফলে জেলা আওয়ামীলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে আসতে আগ্রহী আওয়ামীলীগের ত্যাগী নেতারাও ঝুলে রয়েছেন। কেন্দ্রের চাপ-তৃণমূলের তাগিদ কোনটাই হাই-বাদলকে এক করতে পারেনি। তবে আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে কেন্দ্রের অব্যাহত চাপে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পৃথকভাবেই তাদের মনোনিত পূর্ণাঙ্গ কমিটি কেন্দ্রে পাঠাচ্ছেন বলে জানিয়েছে একটি সূত্র। সূত্র জানিয়েছে, জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে আগ্রহী আওয়ামীলীগের ত্যাগী নেতার কমতি ছিলনা। সেখানে মৌনভাবেও আগ্রহ দেখিয়েছিলেন প্রভাবশালী সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান। এছাড়া লিস্টে ছিলেন ত্যাগী আরো অনেক আওয়ামীলীগ নেতারা। কিন্তু তারপরেও সংগঠনকে শক্তিশালী করতে বিভেদ কমাতে মৌখিক সতর্কবানী দিয়ে আবদুল হাই ও ভিপি বাদলকে স্বপদে বহাল রাখার সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্র। কিন্তু তাতে বিশেষ কোন লাভ হয়নি। সিদ্ধান্তে গরমিল আর পছন্দে অমিলের কারণে হাই-বাদল একত্রিতভাবে কেন্দ্রে খসড়া পূর্ণাঙ্গ কমিটি পাঠাতে পারেননি। সূত্র জানায়, জেলা আওয়ামীলীগের কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার ব্যাপারে কেন্দ্রের অব্যাহত চাপে ঢাকার একটি হোটেলে স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতারা আবদুল হাই ও ভিপি বাদলকে এক করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সেই চেষ্টাও নিষ্ফল হয়ে যায়। যার দরুণ আগামী নির্বাচনের আগে জেলা আওয়ামীলীগের কমিটি পূর্ণাঙ্গ করে দলকে শক্তিশালী করার ব্যাপারে কেন্দ্রের মিশনের আস্থার প্রতিদান দিতে ব্যর্থ হয়েছেন তারা। এদিকে পদে না থাকায় সিনিয়র আওয়ামীলীগ নেতারাও স্ব স্ব ক্ষেত্রে থেকে তৃণমূল আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের একত্রিত করতে পারছেন না। এতে ত্যক্ত ও বিরক্তি প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় নেতারা। এদিকে সূত্র জানিয়েছে, কেন্দ্রের অব্যাহত চাপে অবশেষে হাই ও বাদল আলাদা আলাদাভাবে জেলা আওয়ামীলীগের খসড়া পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা কেন্দ্রে পাঠাতে যাচ্ছেন। যেখানে আবদুল হাইয়ের পছন্দ করা ৭৫ জনের একটি তালিকা কেন্দ্রে পাঠাবেন তিনি। যেই তালিকায় তার মনোনিত ব্যক্তিরাই প্রাধান্য পাবে। অপরদিকে আবু হাসনাত শহীদ মো. বাদলও অনুরূপ তার পছন্দের ৭৫ জনের তালিকা কেন্দ্রে পাঠানোর জন্য ঠিক করেছেন। তবে তারা দুইজনই জানেন, কেন্দ্রে পাঠানো তালিকায় সভাপতি কিংবা সাধারণ সম্পাদকের একক আধিপত্য থাকবেনা। তাই সূত্র জানিয়েছে, এক্ষেত্রে বিশেষ কৌশলের আশ্রয় নিয়েছেন আবদুল হাই। কেন্দ্রে আবদুল হাই ৭৫ জনের তালিকাই পাঠাবেন, তবে সেই তালিকার অর্ধেক অর্থাৎ ৩৭ বা ৩৮ জনের নামের পাশে বিশেষ স্টার (তারকা) চিহ্ন দিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের বোঝানোর চেষ্টা করবেন, কমিটিতে যাতে স্টার দেয়া ব্যক্তিরা ঠাঁই পায়। মার্কিং দেয়া ব্যক্তিদের জায়গা করে দিতে আবদুল হাই এতো মরিয়া কেন সেই প্রশ্নও অনেক নেতৃবৃন্দ প্রশ্ন তুলছেন। এদিকে ভিপি বাদলও তার পছন্দের ব্যক্তিরা যাতে কমিটিতে জায়গা পায় সেব্যাপারে বিশেষ চিহ্ন দিয়েই কেন্দ্রে তালিকা পাঠাবেন বলে জানায় সূত্র। আওয়ামীলীগের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, আবদুল হাইয়ের তুলনায় জেলার আওয়ামীলীগ নেতাদের কাছে আবু হাসনাত শহীদ মো. বাদলের গ্রহণযোগ্যতা বেশি। এর কারণ হিসেবে তারা বলেন, অতীতের নানা কর্মকা-ের জন্য আবদুল হাইকে নেতাকর্মীরা বিশ্বাস করেনা। আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী এমপি, মেয়র থেকে শুরু করে জেলার ত্যাগী নেতারাও আবদুল হাইকে বিশ্বাস করতে পারছেনা। আর এই কারণে কাউকে সাথে না পেয়ে আবদুল হাই ঘরে বসে নিজে নিজেই পছন্দনীয় ব্যক্তিদের নাম তালিকায় ঢুকিয়ে কেন্দ্রে পাঠানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে আবদুল হাইয়ের এই ফর্মুলা কেন্দ্রে বুমেরাং হবে বলে মনে করছেন জেলার আওয়ামীলীগ নেতারা। তারা বলছেন, সভাপতি কিংবা সাধারণ সম্পাদক যেসব নাম কেন্দ্রে পাঠাবেন, তা বুঝেশুনেই কেন্দ্র নাম নির্বাচন করে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করবেন। যেসব নাম সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের আলাদাভাবে পাঠানো তালিকায় একই থাকবে সেসব নাম জেলা আওয়ামীলীগের কমিটিতে থাকার সম্ভাবনা বেশি। তবে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক যেসব ব্যক্তির নাম কেন্দ্রে পাঠাবেন এবার সেগুলো যাচাই-বাছাই কেন্দ্র গুরুত্বসহকারে করবে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে হাইব্রীড কিংবা সুবিধাভোগী কোন ব্যক্তি যাতে সংগঠনের ক্ষতিসাধণ করতে না পারে সেজন্যই এবার পূর্ণাঙ্গ কমিটির ব্যাপারে খোঁজ-খবর নেবে কেন্দ্র। সূত্র জানায়, ইতিমধ্যে জেলায় আওয়ামীলীগের প্রবীণ-ত্যাগী আওয়ামীলীগ নেতাদের ব্যাপারে কেন্দ্র তথ্য সংগ্রহের কাজ শেষ করেছে। ফলে ঘরে বসে কেউ কমিটি চূড়ান্ত করলেও কেন্দ্রে গিয়ে ওইসব নাম হালে পানি পাবেনা। সূত্র জানায়, আবদুল হাই যেসব নাম তার তালিকায় ঢুকিয়েছেন সেই খসড়া পূর্ণাঙ্গ কমিটি আওয়ামীলীগ সভানেত্রী বরাবর পাঠানোর চেষ্টা করবেন। তাতে সমর্থ্য না হলে সভানেত্রী পর্যন্ত পৌঁছায় এমন ব্যক্তির কাছেই তালিকা হস্তান্তর করবেন। অপরদিকে সূত্র জানিয়েছে, জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ মো. বাদল তার তৈরি করা পূর্ণাঙ্গ তালিকা দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কিংবা সাংগঠনিক সম্পাদক পদের কোন নেতার কাছে জমা দিতে পারেন। এক্ষেত্রে আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজমের কাছে জমা দেয়ার সম্ভাবনাই বেশি বলে জানিয়েছে সূত্র। এদিকে জেলা আওয়ামীলীগের তৃণমূল নেতাকর্মীদের মতামত, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহণ শুরু করে দিয়েছে কেন্দ্র। হাই-বাদলের বিরোধের জেরে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে দেরী হলে এতে খেসারত দিতে হতে পারে কেন্দ্রের। আর এর দায় তারা কেউ এড়াতে পারেনা। আবদুল হাইয়ের তুলনায় ভিপি বাদলের গ্রহণযোগ্যতা বেশি থাকায় তার উপর তৃণমূল কর্মীদের চাপ রয়েছে। তবে হেভীওয়েট নেতাদের দিয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটির খসড়া তৈরি করতে না পারায় কমিটি কেন্দ্রে পাঠাতে গড়িমসি করছেন আবদুল হাই। এতে তার উপর ত্যক্ত-বিরক্ত কর্মীরা। অনতিবিলম্বে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে তারা কেন্দ্রে তালিকা পাঠানোর আহবান জানিয়েছেন।




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা