আজ শুক্রবার | ১৫ আগস্ট ২০২৫ | ৩১ শ্রাবণ ১৪৩২ | ২০ সফর ১৪৪৭ | সকাল ১১:১০

গ্যাস-বিদ্যুতের বাড়তি মূল্যে নাকাল শিল্প মালিকরা

ডান্ডিবার্তা | ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ | ১০:৪২ পূর্বাহ্ণ

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট বেড়েই চলছে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম। কয়েক মাস পরপরই নতুন করে গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির খড়গ নেমে আসছে শিল্পখাতে। এতে দিশাহীন হয়ে পড়েছেন শিল্প কারখানার মালিকরা। মূল্যবৃদ্ধির চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন তাঁরা। সেই সঙ্গে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস-বিদ্যুৎও পাচ্ছেন না। এরই মধ্যে নতুন করে গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি মড়ার ওপর খাড়ার ঘাঁ হিসেবেই পড়েছে শিল্পখাতে। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী বৃহৎ শিল্পে প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম ১১ টাকা ৯৮ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৩০ টাকা করা হয়েছে। সে হিসাবে দাম বেড়েছে প্রায় তিন গুণ। একই সঙ্গে শিল্পে উৎপাদিত নিজস্ব বিদ্যুৎকেন্দ্রের (ক্যাপটিভ) জন্য ইউনিটপ্রতি গ্যাসের দাম ১৬ থেকে বাড়িয়ে ৩০ টাকা করা হয়েছে। এর আগে গ্যাস সংকট নিয়ে গত কয়েক মাস ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। উৎপাদনের খরচ বাড়লেও শিল্প বাঁচাতে প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম ২৫ টাকা পর্যন্ত দিতে রাজি হয়েছিলেন ব্যবসায়ীরা। তবে তারা নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহের নিশ্চয়তা চেয়েছিলেন। কিন্তু সেই ২৫ টাকার পরিবর্তে ৩০ টাকা হলেও মিলছে না নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ। এ অবস্থা চলতে থাকলে শিল্পখাত ধ্বংস ছাড়া অন্য কোনো পথ দেখছেন না মালিকরা। শিল্প মালিকরা জানান, গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব শিল্পখাতের প্রতিটি সেক্টরেই পড়বে। এরই মধ্যে ডাইং বিল বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে, নিটিং বিলও বাড়ছে। সেইসঙ্গে সব জিনিসপত্র এবং আনুষঙ্গিক কাঁচামালের দাম বেড়েছে। ফলে উৎপাদিত পণ্যের খরচ বেড়ে যাবে। একই সঙ্গে মিলছে না নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস-বিদ্যুৎও। এতে শিল্প মালিকরা আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতার সক্ষমতা হারাবেন। বায়ারদের সঙ্গে সমঝোতা করে বর্ধিত মূল্যে অর্ডার আনা কঠিন হয়ে যাবে। সবমিলিয়ে শিল্পমালিকরা বহুমুখী সংকটে পড়ছেন। ফতুল্লার একটি অ্যাপারেলসের মালিক মো. আক্তার হোসাইন অপূর্ব বলেন, আমরা ৪-৫ মাসের অগ্রিম অর্ডার নিয়ে কাজ করি। হঠাৎ করে গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির কারণে যাদের অর্ডার নেওয়া হয়েছে আগের মূল্যে তাদের দেওয়া কঠিন হয়ে যাবে। যেহেতু ফেব্রুয়ারি থেকেই গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্য বাড়ানো হয়েছে সে কারণে প্রোডাকশন খরচও বেড়ে যাবে। আমাদের লাভের পরিমাণ কমে যাবে। কেউ কেউ হয়তো লোকসানে পড়তে পারেন। কারণ প্রোডাকশন খরচ বেড়ে গেলে এমনিতেই মূল্য বেড়ে যাবে। ফলে উভয় সংকটে পড়বেন তারা। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে এমনিতেই সবকিছুর দাম বেড়েছে। এখন যদি নতুন করে দাম বাড়ানো হয় তাহলে অর্ডারের কোয়ান্টিটি কমে যাবে। কোয়ান্টিটি কমে গেলে এক্সপোর্টে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এতে ডলারও কম আসবে। যেটা রিজার্ভে প্রভাব ফেলবে। আর রিজার্ভ কমে গেলে এলসি করতে পারবো না। সবমিলিয়ে একটা ঝামেলায় পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকছে। তিনি আরও বলেন, যেহেতু দাম বেড়েছে এখন আর কিছু করার নেই। তবে এ অবস্থায় আমরা নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস ও বিদ্যুৎ চাচ্ছি। কিন্তু সেটাও দেওয়া হচ্ছে না। ফেব্রুয়ারি থেকেই গ্যাস ও বিদ্যুতের বর্ধিত মূল্য কার্যকর হয়েছে। কিন্তু এক সপ্তাহ ধরে নারায়ণগঞ্জ অঞ্চলে গ্যাস নেই। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১৩-১৪ ঘণ্টাই গ্যাস থাকে না। ফলে উৎপাদন কমে যাচ্ছে। একদিকে প্রোডাক্ট উৎপাদন কমছে অন্যদিকে বাতাস ঢুকছে গ্যাসের সঙ্গে। আমরা বাতাসেরও বিল দিচ্ছি। বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সহ-সভাপতি (অর্থ) মোর্শেদ সারোয়ার সোহেল বলেন, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ায় এর প্রভাব পড়াটাই স্বাভাবিক। তবে আমরা এটা কাটিয়ে নিতে পারতাম যদি নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস-বিদ্যুৎ পেতাম। নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস পেলে প্রোডাকশনে কাভার দিয়ে কিছুটা হলেও সমাধান করা যেত। যেহেতু সরকারকে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে আমাদের ক্ষেত্র থেকেও হয়তো ফিডব্যাক দিতে পারতাম। কিন্তু একটাই কথা আমাদের পিওর গ্যাস দিতে হবে। অনেক সময় গ্যাসের সঙ্গে বাতাস আসে। যেটার বিল পরিশোধ করতে হয়। একেবারে পিওর এবং নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস দিতে হবে; যেন ডায়িংয়ে তিন শিফটেই মাল নামাতে পারি। এখন দুই কিংবা দেড় শিফটে মাল নামানো যায়। তিনি আরও বলেন, বিদ্যুতের ক্ষেত্রে সরকার আরও আগে থেকেই স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। সেই অনুযায়ী দামও বাড়ানো হয়েছে। তাহলে এখন আবার কেন দাম বাড়ানো হলো? স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার পরও যদি নেতিবাচক চলে তাহলে একজন নাগরিক হিসেবে অন্য দেশের কাছে লজ্জায় পড়তে হয়। আশা করি সরকার গ্যাস ও বিদ্যুতের বিষয়টি দেখবেন। তিনি বলেন, দেশের উন্নয়নের জন্য নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস ও বিদ্যুতের অনেক বেশি প্রয়োজন। যদি আমরা উন্নত দেশের দিকে যেতে চাই তাহলে পুরোপুরিভাবে গ্যাস ও বিদ্যুৎ দিতে হবে। যদি গ্যাস ও বিদ্যুৎ নিরবচ্ছিন্নভাবে পাওয়া যায় তাহলে সরকারকে যেমন কাভার দিতে পারবো তেমনি বৈদশিক মুদ্রা আয়ের ক্ষেত্রেও এগিয়ে যেতে পারবো। তবে সাধ্যের বাইরে মূল্যবৃদ্ধি করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা মনে করেছিলাম ২২ থেকে ২৫ টাকার মধ্যে বাড়াবে। কিন্তু সেটা হলে গেলো একেবারে ৩০ টাকা। একবারে এত টাকা বাড়ানো আমাদের জন্য কষ্টের। কারণ আমাদের অর্ডার নেওয়া হয় কমপক্ষে তিনমাস আগে। এই সময়টা দেওয়া উচিত ছিল। যে অর্ডারগুলো নেওয়া হয়েছে বায়ার হঠাৎ করেই তার দাম বাড়িয়ে দেবে না। এক্ষেত্রে সরকারের আরেকটু চিন্তা-ভাবনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। এরপরও দেশের উন্নয়নের স্বার্থে কাজ করে যাবো। বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, গ্যাসের দাম বাড়ার কারণে অবশ্যই এর প্রভাব সব জায়গায়ই পড়েছে। এরই মধ্যে ডায়িং বিল বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে, নিটিং বিল বাড়ছে। আবার সব এক্সেসরিজ এবং আনুষঙ্গিক যত মেটেরিয়াল আছে সবকিছুরই দাম বেড়েছে। কারণ তাদেরও উৎপাদন খরচ বেড়েছে। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের কোনো উপায় নেই। তবে আমার মনে হয় একটা সুযোগ রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ও বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সবার কাছেই অনুরোধ ফেব্রুয়ারি থেকে বর্ধিত হার কার্যকরের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু ফেব্রুয়ারিতে আমরা গ্যাস পাচ্ছি না। যেদিন থেকে মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণা দেওয়া হলো সেদিন থেকে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জ জোনে ওইদিন থেকে গ্যাসের সংকট অনেক প্রকট আকার ধারণ করেছে। একদিকে আমরা গ্যাস পাবো না, অন্যদিকে বর্ধিত মূল্য দেবো। এটা আসলে আমাদের জন্য মড়ার ওপর খাড়ার ঘাঁ। আমরা অনুরোধ করবো যখন থেকে স্বাভাবিক পরিমাণে গ্যাস দেওয়া যাবে তখন থেকে বর্ধিত হার যেন কার্যকর করা হয়। ৩০ টাকা থেকে অন্তত যতটুকু সম্ভব কমানো হয়। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) নারায়ণগঞ্জের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (ভারপ্রাপ্ত) মুহাম্মদ আশিকুর রহমান বলেন, গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধিতে সর্বোপরি প্রভাব পড়াটাই স্বাভাবিক। শিল্পখাতে অল্প বাড়লেও এটার প্রোডাকশন খরচ বাড়ে। এটার চাপটা সমিতির ওপর পড়ে। ক্ষেত্রবিশেষে বেতন-ভাতা নিয়েও দেরি হয়। রপ্তানি খাতে প্রভাব পড়ে। তবে এক সময় শিল্প মালিকরা বলেছিলেন নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ করা হলে মূল্যবৃদ্ধি করলেও কোনো আপত্তি নেই। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই হয়তো সরকার নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহের জন্য গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে। সর্বোপরি এবার যে দাম বাড়িয়েছে পার্সেন্টেস হিসাবে শিল্প গ্যাসের ক্ষেত্রে একটু বেশিই হয়ে যায়। এই দামটা তাদের সঙ্গে আলোচনা করেই বাড়ানো উচিত ছিল। তবে কিছুটা প্রভাব পড়লেও রপ্তানি আয়ে মনে হয় তেমন একটা প্রভাব পড়বে না। আর আমাদের এখানে রপ্তানিটাই বেশি হয়। ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি) ফতুল্লা অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী সামছুজ্জামান মোক্তাদির বলেন, কোনো গুরুত্বপূর্ণ কারণ ছাড়া বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করা হয় না। সিস্টেমে সমস্যা না হলে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করার কোনো সুযোগ নেই। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করি সরবরাহ ঠিক রাখার। আর ইমার্জেন্সি অথবা ব্রেকডাউন হলে অল্প সময়ের জন্য বিদ্যুৎ চলে যায়। তাছাড়া এমনিতে কোনো লোডশেডিং দেওয়া হয় না। গ্যাস সংকট প্রসঙ্গে তিতাস গ্যাসের নারায়ণগঞ্জ কার্যালয়ের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মামুনুর রশীদ বলেন, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আমরা চেষ্টা করবো যেন দ্রুত সমস্যার সমাধান করা যায়।




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা