আজ শুক্রবার | ১৫ আগস্ট ২০২৫ | ৩১ শ্রাবণ ১৪৩২ | ২০ সফর ১৪৪৭ | সকাল ৬:২৪

মেয়াদ শেষেও চেয়ারে তিনি

ডান্ডিবার্তা | ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ | ১০:০৪ পূর্বাহ্ণ

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট নারায়ণগঞ্জ গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ শীতল চন্দ্র দে’র চাকুরির মেয়াদ ৬০ বছর পূর্ণ হয়েছে গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর। অবসরে চলে যাওয়ার পর সহকারী প্রধান শিক্ষক নিলুফার ইয়াছমিনের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তরের পরও তিনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পরিষদ (গভর্নিং বডি) তাকে পাঁচ বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন শীতল চন্দ্র। তবে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন বলছে, অবসরে যাওয়ার পরও শীতল চন্দ্র দে’র প্রতিষ্ঠান প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালনের বিষয়টি নিয়ম বহির্ভূত। গভর্নিং বডি তাকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিতে চাইলেও সেক্ষেত্রে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অনাপত্তির আদেশের প্রয়োজন হবে। তিনি এমন অনাপত্তি এখনও পাননি। গত ১২ ফেব্রুয়ারি চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও স্বপদে বহাল থাকার এক অভিযোগের প্রেক্ষিতে নারায়ণগঞ্জ গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজে তদন্তে যান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) ইসমত আরা। ওই সময় তিনি অভিযোগের সত্যতা পান বলে জানান। পরে শীতল চন্দ্র দে’কে নিয়ম অনুযায়ী সহকারী প্রধান শিক্ষক নিলুফার ইয়াসমিনের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তরের নির্দেশ দেন। ইসমত আরা বলেন, ‘চলতি বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি জারি করা একটি পরিপত্রে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ বলছে, বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক থাকা অবস্থায় অপর কোন শিক্ষককে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বা কলেজ শাখা হলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব অর্পন করা যাবে না। নিয়ম অনুযায়ী নারায়ণগঞ্জ গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন প্রতিষ্ঠানটির সহকারী প্রধান শিক্ষক নিলুফার ইয়াসমিন। তার কাছে দায়িত্ব হস্তান্তরও করেছিলেন অবসরে যাওয়া শীতল চন্দ্র দে। কিন্তু গভর্নিং বডির এক রেজুলেশনে তিনি নিজেকে পুনরায় অধ্যক্ষের পদে রেখে দায়িত্ব পালন করছেন।’ ‘পরিপত্রে আরও বলা হয়েছে, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ছয়মাসের মধ্যে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেবেন। তিনি না পারলে ছয় মাস পর তার পরিবর্তে জ্যেষ্ঠতার ক্রমানুসারে অপর তিন শিক্ষকের কাউকে ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিতে হবে। কিন্তু অবসরে যাওয়া কোন শিক্ষক তো এই দায়িত্বে থাকতে পারবেন না। এটি নিয়ম বহির্ভূত। এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে তাকে অবশ্যই সরকারি নির্দেশনা মানতে হবে। মন্ত্রণালয়ে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের জন্য আবেদন করেছেন শীতল চন্দ্র দে। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের অনাপত্তি না পাওয়া পর্যন্ত শুধুমাত্র গভর্নিং বডির রেজুলেশনের ভিত্তিতে তিনি অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করতে পারেন না।’ এদিকে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ইসমত আরার বিরুদ্ধে ‘অসদাচরণের’ অভিযোগ তুলে বুধবার বেলা সাড়ে এগারোটার দিকে প্রতিবাদ সভা করেছেন শীতল চন্দ্র দে’র অনুসারী কয়েকজন শিক্ষক। এই সভা থেকে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ইসমত আরাকে প্রত্যাহার ও সহকারী প্রধান শিক্ষক নিলুফার ইয়াসমিনকে অবাঞ্ছিত ঘোষণার দাবি জানান। তাদের অভিযোগ, ১২ ফেব্রুয়ারি বিকেলে স্কুলে এসে শীতল চন্দ্র দে’কে অধ্যক্ষের কক্ষ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়ে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক। এতে প্রধান শিক্ষক মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। শীতল চন্দ্র দে’র পক্ষে নারায়ণগঞ্জ গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী শিক্ষক আব্দুল্লাহ আল সাইফ বলেন, শীতল চন্দ্র দে স্কুলের গভর্নিং বডির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নিয়োগ পেয়েছেন। আমরা তাকেই ওই পদে চাই। এতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক। তবে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ইসমত আরা বলেন, ‘নিয়মের বাইরে গিয়ে তিনি (শীতল) অধ্যক্ষের চেয়ার দখল করে রেখেছেন। নিয়ম অনুযায়ী তাকে দায়িত্ব হস্তান্তরের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই কারণে তিনি ক্ষুব্দ হয়ে তার অনুসারী শিক্ষকদের দিয়ে আমার বিরুদ্ধে এমন কার্যক্রম করাচ্ছেন।’ তবে এই বিষয়ে কথা বলতে গভর্নিং বডির সভাপতি হামিদুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে শীতল চন্দ্র দে’র অধ্যক্ষ হিসেবে বহাল থাকার পক্ষেই যুক্তি দেন। তিনি বলেন, ‘গত ১৫ নভেম্বর গভর্নিং বডির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শীতল চন্দ্র দে’কে অধ্যক্ষ হিসেবে পাঁচবছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়। স্কুলের উন্নয়ন ও সুন্দরভাবে চালানোর স্বার্থে আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এডিসি মহোদয় এসে তাকে নিয়োগ দেওয়ার ব্যাপারে বৈধতা আছে কিনা এমন প্রশ্নে আমরা কাগজপত্র দিয়েছি।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা সব নিয়ম মেনেই তাকে নিয়োগ দিয়েছি। এই বিষয়ে আপত্তি থাকলে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক অধিদপ্তর করবে। তারা যদি আবেদন বাতিল করেন তাহলে বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ জানতে চাইলে শীতল চন্দ্র দে বলেন, ‘২০০১ সালে নারায়ণগঞ্জ গার্লস স্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাই। ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠানটি কলেজে উন্নীত হলে সব নিয়ম মেনে অধ্যক্ষের দায়িত্ব পাই। গত ১৪ ডিসেম্বর আমার চাকরির মেয়াদ শেষ হয়। পরে গভর্নিং বডি আমাকে পুনরায় চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়। গভর্নিং বডি তো আমার ব্যাপারে কোন আপত্তি দেখাচ্ছে না। তারাই নিয়োগ দিয়েছে। আমি জেলা শিক্ষা অফিসারের মাধ্যমে অধিদপ্তরে আবেদন করেছি। তারা আবেদন নাকচ করে দিলে দায়িত্ব ছেড়ে দেবো।’ তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, ‘দীর্ঘবছর এই স্কুলে থাকাকালীন শীতল চন্দ্র দে বিভিন্ন খাতে দুর্নীতি ও অনিয়ম করেছেন। এমন অভিযোগ একাধিকবার তার বিরুদ্ধে উঠেছে। কিন্তু গভর্নিং বডির সদস্যরাও এই অনিয়ম, দুর্নীতির সাথে যুক্ত থাকায় প্রতিবারই ছাড় পেয়েছেন। মেয়াদ শেষ হয়ে যাবার পরও তাকে সপদে বহাল রাখার পেছনের কারণও এই দুর্নীতি ও অনিয়ম চালিয়ে যাওয়া।’




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা