আজ শুক্রবার | ১৫ আগস্ট ২০২৫ | ৩১ শ্রাবণ ১৪৩২ | ২০ সফর ১৪৪৭ | রাত ৪:১০

কাঁচপুরে খুনীদের বাড়ি ঘরে আগুন ঘটনাস্থলে ডিআইজি ॥ বাকরুদ্ধ মা

ডান্ডিবার্তা | ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ | ৯:৫৬ পূর্বাহ্ণ

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট সোনারগাঁয়ে কাঁচপুর ইউনিয়নের পাঁচপাড়া এলাকায় জমি সংক্রান্ত বিরোধে মো. আসলাম সানি (৪৮) ও শফিকুল ইসলাম রনি (৩৫) নামের দুই ভাইকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগে বিক্ষুদ্ধ স্বজন ও এলাকাবাসী রাত সাড়ে ৯টার দিকে হত্যাকান্ডে জড়িতদের বাড়িতে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে করে তাদের ২টি বসত ঘরসহ ১০টি ভাড়া দেওয়া কক্ষ পুড়ে ছাই হয়ে যায়। তবে এ সময় কেউ বাড়িতে ছিলোনা, ঘর তালাবদ্ধ ছিলো। গত রোববার রাত সাড়ে ৯ টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে চেষ্টা করে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, কাঁচপুর ইউনিয়নের পাঁচপাড়ার দুই নম্বর ওয়ার্ডের মৃত সানাউল্লাহর ছেলে আসলাম সানী, শফিকুল ইসলাম রনিকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় সন্ধ্যার পর থেকে স্বজন ও এলাকাবাসী বিক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠে। এক পর্যায়ে তারা তালাবন্ধ ঘরে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে করে নিহতের চাচা মহিউদ্দিনের বাড়িঘর পুড়ে ছাই হয়ে যায়। তাছাড়া পাশ্ববর্তী গাছপালাও পুড়ে যায়। আগুনে বাড়িঘরের আসবাবপত্রসহ মূল্যবান জিনিস পত্র পুড়ে ভূষ্মিভূত হয়ে যায়। বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার খবর পেয়ে সোনারগাঁ থানা পুলিশ রাত ১০টার দিকে ঘটনাস্থলে পৌছে। পুলিশ আসার আগেই বাড়িঘর আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এলাকাবাসী জানায়, দুটি হত্যাকান্ডের বিষয়ে পুলিশের কড়া নজরধারী থাকা দরকার ছিল। হত্যকান্ডের পর পুলিশ ঘটনাস্থলে আসলেও পরবর্তীতে তারা চলে যায়। এমন সুযোগে নিহতদের বিক্ষুদ্ধ স্বজনরা অভিযুক্তদের বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। পুলিশের সচেতনার অভাবে বিক্ষুদ্ধরা আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটিয়েছে। কাঁচপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য হাসান খাঁন বলেন, হত্যাকান্ডের পর ঘটনাস্থল থেকে বাড়ি চলে যাওয়ার পর জানতে পারি রাত সাড়ে ৯ টার দিকে আগুন দিয়ে সবকিছু জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। পরে বিদ্যুৎ অফিস ও তিতাস গ্যাস অফিসে খবর দিয়ে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এদিকে গতকাল সোমবার দুপুরে বাংলাদেশ পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি সৈয়দ নুরুল ইসলাম (পিপিএম, বিপিএম বার) হত্যার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তিনি নিহতদের পরিবারের সদস্যদের সাথে দেখা করে শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর শোক প্রকাশ করে খুনিদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির আশ্বাস দেন। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন, নারায়ণগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল পিপিএম, সোনারগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মাহাবুব আলম, পরিদর্শক (তদন্ত) আহসান উল্লাহ, কাচঁপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেনসহ অন্যান্য পুলিশ সদস্যরা। সোনারগাঁ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ আহসান উল্লাহ বলেন, অগ্নিকান্ডের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এর সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এদিকে তিন সন্তানকে নিয়ে কাঁচপুরের পাঁচপাড়া এলাকায় সুখে শান্তিতেই বসবাস করে আসছিলেন জহুরা বেগম। কিন্তু এক ঘটনাতেই নিমেষেই শেষ হয়ে গেলো গোটা পরিবার। জমি নিয়ে বিরোধের জেরে তিন ছেলের মধ্যে তার দুই ছেলে খুন হন। আর মেজো ছেলে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি রয়েছে। দুই ছেলেকে হারিয়ে এখন পাগলপ্রায় ষাটোর্ধ্ব জহুরা বেগম। গতকাল সোমবার সকালে সোনারগাঁয়ের কাঁচপুর পাঁচপাড়া এলাকায় নিহতের নিজ বাড়িতে কথা হয় তার সঙ্গে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, আমার সব শেষ হয়ে গেলো, আমি এখন কি নিয়ে বাঁচবো? আমার নাতি-নাতনিরা কাকে বাবা বলে ডাকবে? ওদেরকে এখন কে দেখবে? আল্লাহ কেন এতো বড় শাস্তি আমাকে দিলো। বোন আর দুলাভাইয়ের সঙ্গে ওমরা হজে যাওয়ার কথা ছিল শফিকুল ইসলাম রনির। সে অনুযায়ী নেওয়া হয়েছিল সব প্রস্তুতিও। কিন্তু হজে আর যাওয়া হলো না তার। জমি নিয়ে বিরোধের জেরে চাচাদের হাতে খুন হন রনি ও তার বড় ভাই। সামান্য জমি নিয়ে ওরা আমার সন্তানকে এভাবে খুন করতে পারলো। আল্লাহ ওদের মাফ করবে না। আমি ওদের ফাঁসি চাই। আর কিছু চাই না আমি। আনাস আহমেদ আদনান। বয়স ১ বছর দুই মাস ছুঁইছুঁই। সারাদিন বাবার সঙ্গে খুনশুটিতেই সময় কাটতো তার। কিন্তু গত রোববার থেকে বাবাকে না পেয়ে অনেকটাই নিশ্চুপ হয়ে গেছে। অবুঝ শিশুটি কিছু না বুঝলেও হয়তো বাবাকে দেখতে না পেয়ে মন বিষণœ তার। যার সাথে খেলা করে দিন পার হতো আনাসের। গত দুইদিন ধরে সেই খেলার সঙ্গীকে কাছে পাচ্ছে না। বলছিলাম জমি নিয়ে বিরোধের জেরে খুন হওয়া শফিকুল ইসলাম রনির ছেলের কথা। সাড়ে ২ বছর আগে সানজিদা আক্তারের সঙ্গে বিয়ে হয় রনির। সুখেই দিন কাটছিল তাদের। বিয়ের ১ বছর পর ঘরের মুখ উজ্জ্বল করে জন্ম নেয় আনাস। গতকাল সোমবার দুপুরে কথা হলে নিহত রনির স্ত্রী ও আনাসের মা সানজিদা আক্তার বিলাপের সুরে বলেন, গত রোববার থেকেই বাবাকে কাছে না পেয়ে ছেলেটা কেমন যেনো হয়ে গেছে। ভালো করে কথা বলতে না পারলেও বারবার বাবা বাবা শব্দ উচ্চারণ করছে। আমার ছেলেকে কি জবাব দিবো আমি? আমি তো একা হয়ে গেলাম। আমার ছেলেকে কিভাবে মানুষ করবো এখন? তিনি আরও বলেন, আনাস ওর বাবার ভক্ত বেশি। বাবাকে না পেয়ে ঠিকমতো খাওয়া দাওয়াও করছে না। সামান্য জমি নিয়ে এভাবে জলজ্যান্ত দুটো মানুষকে হত্যা করে ফেললো ওরা? আল্লাহ ওদেরকে ছেড়ে দিবে না। আমার ছেলেকে যারা বাবাহারা করেছে এর কঠিন বিচার আল্লাহ একদিন না একদিন করবেই। এর আগে, গত রবিবার দুপুরে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে মো. আসলাম সানি (৪৮) ও শফিকুল ইসলাম রনি (৩৫) খুন হয়। এ ঘটনায় রফিকুল ইসলাম (৪০) নামের আরো এক ভাই আহত হন। পাঁচপাড়া এলাকার ওই তিন ভাইয়ের সঙ্গে চাচা মো. মহিউদ্দিনের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে জমি নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। তাঁদের বাড়ির পাশ দিয়ে সরকারি একটি সড়কের ড্রেন করা হচ্ছিল। ওই ড্রেনের জায়গা নিয়েই তর্কবিতর্কের একপর্যায়ে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত নিহতদের চাচাতো ভাই মো. মোস্তফা (৪০), মামুন হোসেন (৩৫), মফিজুল ইসলাম (২৫), মারুফসহ (১৮) তাদের পরিবারের সবাই ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছেন। নিহতদের স্বজন আবু নাইম মিয়া জানান, কাঁচপুর এলাকার পাঁচপাড়ার দুই নম্বর ওয়ার্ডের মৃত সানাউল্লাহর ছেলে আসলাম সানী ওই এলাকার গ্রাম্য চিকিৎসক আতাউর রহমানের কাছ থেকে ৩ শতাংশ জমি ক্রয় করে। এ জমিসহ পাশবতী আরো একটি জমি দাবি করে তার চাচা মহিউদ্দিন, চাচাতো ভাই মোস্তফা, মামুন ও মারুফ। এ নিয়ে আসলাম সানী, শফিকুল ইসলাম রনি ও রফিকুল ইসলামের সাথে দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব চলছিল। তাদের জমির পাশ দিয়ে সরকারি অর্থায়নে ৩ লাখ ১১ হাজার ২’শ ৪১ টাকা ব্যয়ে এলজিএসপি-৩ এর আওতায় খাস পাড়া আলী হোসেনের বাড়ি থেকে হারুনের বাড়ি পর্যন্ত আরসিসি ও ড্রেন নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এ ড্রেন মহিউদ্দিনের জায়গার ওপর দিয়ে যাচ্ছে এমন দাবি করে তাঁরা। এ নিয়ে চাচা মহিউদ্দিনের সঙ্গে আসলাম সানীর তর্কবিতর্ক হয়। এক পর্যায়ে চাচাতো ভাই মোস্তফার নেতৃত্বে তাঁরা আসলাম সানী ও শফিকুল ইসলাম রনি ও রফিকুল ইসলামকে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে আহত করে। পরে তাদের হাসপাতালে নিয়ে গেলে আসলাম সানী ও শফিকুল ইসলাম রনি মারা যায়। রফিকুল ইসলামকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। সোনারগাঁ থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) আহসান উল্লাহ জানান, মরদেহগুলো ঢাকা মেডিকেল কলেজে ময়নাতদন্তের পর তাদের নিজ বাড়িতে আনা হবে। এ ঘটনায় থানায় এখনো কোনো অভিযোগ বা মামলা হয়নি। ঘটনার পর থেকে জড়িতরা সবাই পলাতক রয়েছেন। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। ঘটনাস্থলে প্রচুর পরিমাণে পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে। ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহতের পরিবারকে সমবেদনা জানান এবং জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদান করার আশ্বাস দেন ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি সৈয়দ নুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, এই ঘটনাটি আমাদের খুব মর্মাহত করেছে। বাংলাদেশে আইন আছে। কোনো অপরাধী অপরাধ করে পার পাবে না। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত প্রত্যেকটি আসামিকে আইনের আওতায় আনা হবে। এইসব ঘটনা যখনই ঘটে তখনই আমরা চেষ্টা করি আসামিদের দ্রুত গ্রেফতার করার এবং প্রকৃতপক্ষে কি ঘটনা ঘটেছে তার রহস্য উদঘাটন করে দ্রুত ঘটনার চার্জশীট দিয়ে আসামির শাস্তি নিশ্চিত করার। এর ফলে আগামীতে অন্য কেউ যেনো এমন অপরাধ করার সাহস না পায়। আশা করছি, খুব শিগগিরই এই ঘটনায় সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করতে পারবো। যাতে করে নিহতের পরিবার আশ্বস্ত হতে পারে হামলাকারীদের বিচার হয়েছে। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) চাইলাউ মারমা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিবি) তরিকুল ইসলাম, সোনারগাঁ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুব আলম প্রমুখ।




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা