আবার ভাঙ্গছে মহানগর বিএনপি!

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির নতুন কমিটি দেয়ার পর থেকেই একের এক ঘটনায় বিতর্কিত হচ্ছে। আর আহবায়ক সাখাওয়াত হোসেন খান ও সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ টিপুকে মহানগর বিএনপির নেতারা মেনে নিতে পারছেন না। কোনোভাবেই কমিটিটি দাঁড়াতে পারছেনা। একের পর এক ঘটনায় মহানগর বিএনপি বর্তমানে নাজুক অবস্থায় চলে এসেছে। যে কোনো সময় হয়তো এই কমিটি ভেঙ্গে দেয়া হতে পারে। সেই সাথে আবারও মহানগর বিএনপির নতুন কমিটির ঘোষণা আসবে এমনটাই গুঞ্জন শহরে চাউর হচ্ছে। দলীয় সূত্র বলছে, নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির কমিটি ঘোষণার শুরু থেকেই আহবায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান ও সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ টিপুর বাইরে গিয়ে আরেকটি বলয় গড়ে উঠে। যে বলয়টি দলীয় প্রত্যেক কর্মসূচিতেই আলাদাভাবে শোডাউন করে থাকে। সেই সাথে তাদের শক্ত অবস্থানও রয়েছে। অনেক সময় তাঁরা কমিটির বাইরে থেকেও সাখাওয়াত টিপুকেও ছাড়িয়ে যায় জনসমাগমের দিক দিয়ে। বিপরীতে সাখাওয়াত-টিপুর ভরসা করতে হয় বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের ওপর। এরই মধ্যে গত ২২ ফেব্রুয়ারি নুর মোহাম্মদ পনেছকে আহ্বায়ক ও নাজমুল হক রানাকে সদস্য সচিব করে বন্দর থানা বিএনপির ৪১ সদস্য বিশিষ্ট আহবায়ক কমিটির ঘোষণা দিয়েছেন সাখাওয়াত হোসেন খান ও আবু আল ইউসুফ খান টিপু। বন্দর থানা বিএনপির এই কমিটিতে যুগ্ম আহ্বায়ক পদে রয়েছেন আসাদুজ্জামান বাদল, নাছির উল্লাহ্ টিপু, ইকবাল, কামরুল হাসান সাউদ চুন্নু, মো. সেলিম, সোহেল খান বাবু ও মাসুদ রানা। সেই সাথে তাদেরকে আগামী ৯০দিনের মধ্যে প্রতিটি ওয়ার্ডে সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠন করে থানা সম্মেলনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই কমিটি ঘোষণার আগে আহবায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান ও সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু মহানগর বিএনপির অন্যান্য নেতাদের সাথে কোনো রকম যোগাযোগ করেননি। আহবায়ক আর সদস্য সচিব ছাড়া আর কেউই এই কমিটি সম্পর্কে অবগত নয় বলে নেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়। যা নিয়ে মহানগর বিএনপির নেতাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। এই কমিটি দেয়াকে কেন্দ্র করে অনেকেই সাখাওয়াত ও টিপুর বলয় ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন। সেই সাথে আরও কয়েকজন তাদের বলয় ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সর্বশেষ মহানগর বিএনপির বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক পদে থাকা এমএইচ মামুন সাখাওয়াত ও টিপুর বলয় ছেড়ে দিয়েছেন। সবমিলিয়ে মহানগর বিএনপির কমিটিতে থাকা ১০ জন যুগ্ম আহবায়কের মধ্যে ৬ জন যুগ্ম আহবায়ক সাখাওয়াত-টিপুর বাইরে চলে গেছেন। সেই সাথে তাদের সাথে সদস্য পদে থাকা নেতারাও রয়েছেন। ফলে দিন দিন সাখাওয়াত টিপুর বলয়ের বিপরীতে থাকা নেতাদেরই বলয়টি বড় হতে শুরু করেছে। আর এমতাবস্থায় সাখাওয়াত-টিপুর বলয়টির নড়েবড়ে অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। একই সাথে পাল্টা কমিটি করার ঘোষণাও দিয়েছেন সাখাওয়াত-টিপুর বিপরীতে থাকা নেতারা। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে শহরের চাষাঢ়ায় একটি রেস্টুরেন্টে সাখাওয়াত টিপুর বিপরীতে থাকা নেতাকর্মীরা মিলিত হয়ে সভা করেছেন। সভায় সকলেই নিজেদের মতামত ব্যক্ত করে বক্তব্য রাখেন। সভা শেষে উপস্থিত সকলের পক্ষে অ্যাডভোকেট জাকির হোসেন বলেন, অচিরেই নারায়ণগঞ্জ মহানগরের আওতাধীন নারায়ণগঞ্জ সদর থানা, বন্দর থানা ও বন্দর উপজেলা এই তিনটি কমিটি ঘোষণা করা হবে। দুই একদিনের মধ্যেই সেই কমিটি হয়ে যাবে। আমরা আলোচনা করেছি সকলেই মতামত ব্যক্ত করেছেন এবং সকলেরই মতামত পজিটিভ হয়েছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই তিনটি কমিটি উপহার দেয়া হবে। আমরা সকলেই ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। যারা রাজনীতি করে যারা আন্দোলন সংগ্রাম করে তাদের নিয়েই কমিটি হবে। এদিকে ঢাকা বিভাগের সহ সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ সাখাওয়াত-টিপুর বিপরীতে থাকা নেতাদের সাথে আবার নতুন করে যোগাযোগ করতে শুরু করেছেন। তাদেরকে বুঝানোর চেষ্টা করছেন যেন সকলের সাথে সমন্বয় করে কাজ করা যায়। যদি প্রয়োজন হয় আবার যেন নতুন করে কমিটির ঘোষণা দিয়ে মহানগর বিএনপির নেতাদের সবাইকে এক ব্যানারে আনা যায়। তাঁরা বিরোধ নিষ্পত্তি করতে চান। তার আগে গত ১৩ সেপ্টেম্বর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির ৪১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটিতে আহ্বায়ক হিসেবে অ্যাডভোকেট মো. শাখাওয়াত হোসেন খান এবং সদস্য সচিব হিসেবে অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপুকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। আর এই কমিটি ঘোষণার পর থেকেই নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীরা দুইভাগে বিভক্ত হয়ে পরেছেন। একটি অংশের নেতাকর্মীরা অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান ও অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপুকে যেন কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না। কমিটি গঠনের পর থেকে নানা বিতর্কিত ঘটনা ঘটেই যাচ্ছে। সেই সাথে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি থেকে ১৫ জন নেতা পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। পদত্যাগকারী নেতারা হলেন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটিতে যুগ্ম আহ্বায়ক পদে থাকা আব্দুস সবুর খান সেন্টু, হাজী নুরুদ্দিন, বন্দর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মুকুল ও সিটি কর্পোরেশনের ২৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আবুল কাউসার আশা। সেই সাথে সদস্য পদে থাকা পদত্যাগকারী নেতারা হলেন আওলাদ হোসেন, হান্নান সরকার অ্যাডভোকেট বিল্লাল হোসেন, মনোয়ার হোসেন শোখন, আলমগীর হোসেন, অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান মোল্লা, শহীদুল ইসলাম রিপন, অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান মোল্লা, আমিনুর ইসলাম মিঠু, ফারুক হোসেন, অ্যাডভোকেট শরীফুল ইসলাম শিপলু, মো. ফারুক হোসেন। এসকল পদত্যাগকারী নেতারা আলাদাভাবে কর্মসূচি পালন করে আসছেন। সেই সাথে এসকল পদত্যাগকারী নেতাদের নেতৃত্বে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপিতে একটি বলয় গড়ে উঠেছে। তাঁরা আলাদাভাবে দলীয় কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে থাকে। পাশাপাশি তারা দিন দিন শক্তিশালী বলয়ে রূপ নিচ্ছেন।