মহানগর স্বেচ্ছাসেবকলীগে পুরনোদেরই কদর বাড়ছে

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট গত বছর নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ জেলা মহানগর স্বেচ্ছাসেবকলীগের কমিটি সহ ওয়ার্ড থানা কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। সেখানে কমিটিগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ থাকার কারণে বিলুপ্ত করা হয়। সেই বিলুপ্ত কমিটি হওয়ায় এক বছর পর নারায়ণগঞ্জ মহানগর স্বেচ্ছাসেবকলীগের সম্মেলনের দিক ছুটছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। ইতোমধ্যে নারায়ণগঞ্জ মহানগরের শহরের ৯টি ওয়ার্ড সম্মেলন সম্পন্ন হয়েছে। চলতি মাসে ১০, ১১, ১২ তারিখে সিদ্ধিরগঞ্জের ৯টি ওয়ার্ড সম্মেলন, তার পরে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা সম্মেলন আয়োজনে প্রস্তুতি চলছে। এরপর বন্দর থানা ৯টি ওয়ার্ড সম্মেলনের পর বন্দর থানা ও নারায়ণগঞ্জ মহানগর স্বেচ্ছাসেবকলীগের সম্মেলন ঘোষণা করা হবে। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জ মহানগর স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে নেতাদের লাইন দীর্ঘ হচ্ছে। প্রত্যাশী প্রার্থী ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে দীর্ঘ দিন ধরে রাতদিন কাজ করে যাচ্ছে। কেন্দ্রীয় নেতারা তাদের কাজের গতিশীল লক্ষ্য করে যাচ্ছে। নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি পদে আলোচনা রয়েছে সাবেক সভাপতি জুয়েল হোসেন, কায়কোবাদ রুবেল ও আলী হাসান সজীব। তাদের পাশাপাশি ইতোমধ্যে গণমাধ্যমে আলোচনা রয়েছে এমপি শামীম ওসমানের আস্থাভাজন জেলা যুবলীগ নেতা জানে আলম বিপ্লব। অপরদিকে সাধারণ সম্পাদক পদে জেলা যুবলীগের তথ্য ও গবেষনা বিষয়ক সম্পাদক তাহের উদ্দিন আহম্মেদ সানি, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাইফউদ্দিন আহম্মেদ দুলাল প্রধান ও সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জয়। এদের মধ্যে সভাপতি তালিকা শামীম ওসমান পন্থী জানে আলম বিপ্লব ও জুয়েল হোসেন ওরফে ভাগিনা জুয়েল, কায়কোবাদ রুবেল মেয়র আইভীর ঘনিষ্ট জাহাঙ্গীর আলমের ভাতিজা ও আলী হাসান সজীব হলেন আনোয়ার হোসেন আস্থাভাজন। সাধারণ সম্পাদক পদে সবচেয়ে বেশি আলোচনা রয়েছেন তাহের উদ্দিন আহম্মেদ সানি। তিনি জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও মহানগর আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জি এম আরাফাতের এক ঘনিষ্ট কর্মী। শিক্ষিত জীবনে ছাত্রলীগের পর জেলা যুবলীগের রাজনীতি জড়িত হয়ে মহানগর স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হয়েছেন। তার সাথে আলোচনা রয়েছেন জেলা ডিবি কাছে ফেনসিডিল সহ গ্রেপ্তার হওয়া মহানগর স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও নাসিক সাবেক কাউন্সিলর সাইফুদ্দিন আহম্মেদ দুলাল। তিনি এর পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামীলীগের অধিনে ২৩নং ওয়ার্ডের সভাপতি প্রার্থী হয়েছেন। মূলত তিনি আওয়ামীলীগ না স্বেচ্ছাসেবকলীগের দায়িত্ব পালন করবেন, এমন কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। এই দুইজনের সাথে রয়েছে মহানগর স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জয়। তিনি মহানগর স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি জুয়েল হোসেনের ঘনিষ্ঠ কমিটি। বয়স অল্প হলেও কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাদের সাথে তার যোগাযোগ রয়েছে সর্বাধিক। মহানগর স্বেচ্ছাসেবকলীগের কমিটি ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে একাধিক বৈঠক হয়েছে। সেখানে এমপি শামীম ওসমান ও মেয়র আইভীর সমন্বয়ে মহানগর স্বেচ্ছাসেবকলীগের কমিটি সাজিয়ে দেয়া আলোচনা হয়েছে। বিলুপ্ত কমিটির কাউকে কোন পদে রাখা যাবে কিনা সম্মেলনে আগে সে বিষয়ে তুলে ধরা হবে জানিয়েছে তারা। কেন্দ্রীয় নেতারা জানিয়েছে, আগে ওয়ার্ড কমিটিগুলো সাজিয়ে তুলি তারপর থানা কমিটি হওয়া পর মহানগর স্বেচ্ছাসেবকলীগের নতুন নেতৃত্বে দিকে আমরা এগিয়ে যেতে চায়। কোন নেতা কার পক্ষে লোক, সেগুলো আমাদের দেখার প্রয়োজন নেই। সাবেক ও বর্তমান নেতারা আমাদের অনেক সহযোগিতা করে যাচ্ছে। এমনকি এমপি শামীম ওসমান ও মেয়র আইভী আমাদের অনেক প্রয়োজনে সহযোগিতা করেছেন। মহানগর আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি পদে যদি জুয়েল হোসেন আসতে না পারে তাহলে এখানে জানে আলম বিপ্লবের নাম উঠে আসতে পারে। তিনি ফতুল্লা ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা হলেও তার নাসিক ১১ ও ১২নং ওয়ার্ডের একাধিক বাড়ি রয়েছে এবং আত্মীয় স্বজন রয়েছে। এদিকে সভাপতি আলোচনা রয়েছেন মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনের আস্থাভাজন আলী হাসান সজীব। তিনি মহানগর আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবকলীগের সম্মেলনগুলোতে বয়কট করেছেন। তার পাশাপাশি ১০ থেকে ১৮নং ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবকলীগের নেতাদের সাথে মতবিনিময় করেছেন। কোন ভাইকে খুশি করার সম্মেলন মানি না বক্তব্যে রেখেছেন। তার এই বক্তব্যে শহরে প্রশংসা কুড়িয়েছে সজীব। কেন্দ্রীয় নেতারা ইতিমধ্যে জানিয়েছেন, দেশের বাহিরে থাকায় আনোয়ার হোসেনের সাথে আলাপচারিতা হয়নি। তার সাথে আলাপ করে শহরের ৯টি ওয়ার্ড কমিটি ঘোষনা করা হবে। অপরদিকে মহানগর আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারণ সম্পাদক পদে তাহের উদ্দিন আহম্মেদ সানি আলোচনা সর্বাধিকভাবে রয়েছেন। তাহের উদ্দিন সানি ১৯৯১ সনে ক্লাস সিক্সে থাকাবস্থায় চাচা রাষ্ট্রীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত সাবেক জাতীয় দলের ফুটবলার আশরাফ উদ্দিন চুন্নু ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ আসনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নৌকার মার্কায় নির্বাচন করেন। শিশুকাল থেকেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বুকে ধারণ করে শেখ হাসিনার নৌকা মার্কার জন্য সভা সমাবেশ মিছিলে অংশগ্রহণ শুরু করি। দলের অনেক সিনিয়র নেতারা আমাদের বাড়িতে আসতেন, তাদের দেখে দেখেই রাজনীতি করার অনুপ্রেরণা জাগে। জয় গোবিন্দ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৯৫ এসএসসি শেষ করে ও ঢাকা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে এইচএসসি শেষ করে সরকারি তোলারাম বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রাজুয়েশন করার জন্য ভর্তি হন। তারপর থেকেই ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়া শুরু করি। ১৯৯৬-২০০১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের পক্ষে সভা সমাবেশ মিটিং মিছিল সবকিছুতে অংশগ্রহণ করি। ২০০৩ সালে গঠিত নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের (নিপু-আরাফাত) কমিটির কার্যনির্বাহী সদস্য মনোনীত হয়। চার দলীয় জোট বিরোধী সকল আন্দোলনে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জি এম আরাফাতের নেতৃত্বে অংশগ্রহণ করি। হরতাল, অসহযোগ আন্দোলন, ঢাকা অভিমুখী লং মার্চ, মানববন্ধন সহ সকল আন্দোলন সংগ্রামে সরকারের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে সক্রিয় ছিলাম। ২০০৫ সালে ১৭নং ওয়ার্ড (তৎকালীন ৮নং ওয়ার্ড, নারায়ণগঞ্জ পৌরসভা) ছাত্রলীগের আহ্বায়ক নির্বাচিত হয়। ২০১০ সালে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী যুবলীগের (কাদির- বাদল) কমিটিতে তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক নির্বাচিত হয়। ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং স্থানীয় সকল নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের পক্ষে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করছি। নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবলীগের কমিটি গঠন হওয়ার পর যুবলীগের প্রতিটি প্রোগ্রামে সক্রিয় অংশগ্রহণ করি। কোভিড-১৯ চলাকালীন সময়ে দলীয় কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবক হয়ে মানুষের সেবায় পাশে থেকেছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের সাফল্য ও উন্নয়নের প্রচার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও অন্যান্য মাধ্যমে প্রচার করতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে যাচ্ছি। ২০২২ সালের স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রতিটি দলীয় অনুষ্ঠানে সক্রিয় অংশগ্রহণে রয়েছি। গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক মাস শুরু হওয়ার পর থেকে নারায়ণগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রম থেকে শুরু করে থানা, ইউনিয়ন এবং মহানগরের ওয়ার্ড ভিত্তিক সম্মেলনে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের পাশে থেকে সকল কার্যক্রমে কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশে থেকে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। তাহের উদ্দিন আহম্মেদ সানি পারিবারিকভাবে রাজনীতি ও সামাজিকভাবে সব সময় সক্রিয়। ১৯৭১ সনে মুক্তিযুদ্ধে আমাদের এলাকায় পাক হানাদার বাহিনী সর্বপ্রথম আমাদের বাড়ি আগুনে পুড়িয়ে দেয়। আমার দাদা মরহুম নুর উদ্দিন সরদার ১৯৬৬ সনে জনগণের ভোটে পাইকপাড়া ইউনিয়নের বিডি মেম্বার নির্বাচিত হন। আমার দাদা এলাকার একজন স্বনামধন্য বিচারক ছিলেন, বঙ্গবন্ধু যখন পাইকপাড়া মিউচুয়াল ক্লাবে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠা করার জন্য সভা করেছিলেন সেই সভাতে আমার দাদা সহ এলাকার অনেক মুরুব্বীরা উপস্থিত ছিলেন। সানি’র বাবা কামাল উদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশ রেলওয়ে, বিজেএমসি,নারায়ণগঞ্জ স্পোর্টিং ক্লাবের কৃতি ফুটবলার ছিলেন। তিনি পাইকপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটিতে ২৫ বছর সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। আমহাট্টা জামে মসজিদের সভাপতি, নারায়ণগঞ্জ তানজিম এসোসিয়েশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সহ অনেক সেবামূলক সংগঠনে জড়িত ছিলেন। সানির চাচা রাষ্ট্রীয় পদকপ্রাপ্ত জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার আশরাফ উদ্দিন চুন্নু বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক ও যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনার অত্যন্ত পছন্দের এবং আবাহনী ক্রীড়া চক্রের প্রতিষ্ঠাতা শেখ কামাল সাহেবের স্নেহধন্য ছিলেন। তার বিয়ের অনুষ্ঠানে নারায়ণগঞ্জে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত হয়েছিলেন। বর্তমানে তিনি আবাহনী লিমিটেডের পরিচালক এবং শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। সামাজিকভাবে তাহের উদ্দিন সানি বিশ্বের সর্ববৃহৎ মানব সেবামূলক সংগঠন রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জ জেলা ইউনিটের যুব সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে ১৯৯৭ সাল থেকে কাজ করছি। পরপর দুইবার জেলা ইউনিটের যুব প্রধান এবং পরপর দুই বার জেলা ইউনিটের কার্যনির্বাহী সদস্য পদে নির্বাচিত হয়। প্রাথমিক চিকিৎসা, দুর্যোগ কালীন ব্যবস্থাপনা, ত্রাণ ব্যবস্থাপনার উপর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়ে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছি। এছাড়া হাবিব শপিং কমপ্লেক্স নামে বৃহত্তর একটি মার্কেটের মালিক সমিতির নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদে ব্যবসায়ীদের ভোটে নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করেছি। এছাড়া বিভিন্ন সামাজিক ও সেবামূলক সংগঠনের সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত আছি, আদর্শ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন নামে একটি ৩৫ বছরের প্রাচীন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করছি। বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগে সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হয়েছি।