আজ শুক্রবার | ১৫ আগস্ট ২০২৫ | ৩১ শ্রাবণ ১৪৩২ | ২০ সফর ১৪৪৭ | রাত ৪:৪৩

রমজানের আগে দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতিতে মানুষ দিশেহারা

ডান্ডিবার্তা | ১০ মার্চ, ২০২৩ | ১২:১৩ অপরাহ্ণ

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট রমজানের আগে হুহু করে বাড়ছে নিত্যপন্যের দাম। আর এ বিষয়ে জানতে চাইলে নিতাইগঞ্জের পাইকারি ব্যবসায়ীদের মুখস্থ বোল ‘আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেশি। তাই তেলের দাম বাড়ছে। কারণ ভোজ্য তেল পুরোটাই বিদেশ থেকে আমদানী করতে হয়।’ এদিকে, দ্রব্য মুল্য স্থিতিশীল আছে কিনা, কেউ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বেধে দেয়া দামের চেয়ে বেশি দামে পণ্য বিক্রি করছে কিনা এসব দেখতে এখনো কোন টিম নিতাইগঞ্জ পরিদর্শন করেনি। শীঘ্রই পাইকারি বাজারের হাল দেখতে বাজার পরিদর্শনে বের হবে জেলা প্রশাসনের বাজার মনিটরিং টিম। নিতাইগঞ্জের কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, বাজার মনিটরিং টিম না জানি কি টিম প্রতি বছরই বাজারে আসে। তাঁরা এসে কিছুক্ষণ দোকানিদের ভুল ধরেন। মূল্য তালিকা টানাতে বলেন। বা মূল্য তালিকা সামনে রাখতে বলেন। কয়েকটি পণ্য চেক করে হুটহাট করে জরিমানা আদায় করে। এছাড়া তাঁরা পাটের ব্যাগ ব্যবহার ও পণ্যের মূল্য তালিকা টানানোর বিষয়ে সতর্ক করেন। নিতাইগঞ্জের পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, পাইকারি বাজারে ভোজ্য তেল ও চিনি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বেধে দেয়া দরেই বিক্রি হচ্ছে। তবে সেখান থেকে কিনে নিয়ে বিভিন্ন উপজেলার খুচরো ব্যবসায়ীরা পাঁচ টাকা লাভে তেল ও চিনি বিক্রি করছে। এটাই ওদের চিরাচিত প্রথা। পাইকারি বাজার আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে উঠানামা করে। জানা গেছে, ভোজ্যতেলের দামের ঊর্ধ্বগতিতে দিশেহারা নারায়ণগঞ্জের সাধারণ জনগণ। দীর্ঘ সময় ধরে উত্তপ্ত ভোজ্যতেলের বাজার। এর মধ্যে গত সপ্তাহে বোতলজাত সয়াবিনের দাম আরেকদফা বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। বর্তমানে প্রতি লিটার সয়াবিন কিনতে ভোক্তাদের ব্যয় করতে হচ্ছে ১৮০ টাকা থেকে ২০০ টাকা। খুচরার পাশাপাশী পাইকারি বাজারেও গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে সয়াবিন ও পাম উভয় তেলের দামমণপ্রতি বেড়েছে ১৫০ টাকা। নিতাইগঞ্জের তেল ব্যবসায়ীরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে এখনো বুকিং দর ওঠানামা করছে। তাই সয়াবিন ও পাম উভয় তেলের দাম স্থির থাকছে না। তেলের বাজার পুরোটাই আমদানি নির্ভর। এখানে আন্তর্জাতিক বাজারে কমলে দাম এমনিতে কমে যাবে। বর্তমান বাজারে এস আলম গ্রুপ ও সিটি গ্রুপের ভোজ্যতেল বেশি বিক্রি হচ্ছে। বাজারে মূলত দুই শিল্প গ্রুপের আধিপত্য রয়েছে। তবে ভোক্তাদের অভিযোগ, বরাবরের মতো বাজার চাহিদাকে কাজে লাগিয়ে ব্যবসায়ীরা তেলসহ ভোগ্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট তৈরি করে কারসাজির মাধ্যমে দাম বৃদ্ধি করে থাকেন। পাইকারি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুই সপ্তাহ আগে প্রতি মণ (৩৭ দশমিক ৩২কেজি) পাম তেল বিক্রি হয়েছে ৪ হাজার টাকায়। ১৫০ টাকা বেড়ে গিয়ে বর্তমানে বিক্রিহচ্ছে ৫ হাজার ৩০ টাকায়। অন্যদিকে দুই সপ্তাহ আগে প্রতি মণ সয়াবিন তেল বিক্রি হয়েছে মণপ্রতি ৫ হাজার ২৮০ টাকায়। বর্তমানে মণপ্রতি ১৫০ টাকা বেড়ে গিয়ে বিক্রি হচ্ছে ৬ হাজার ৭১৬ টাকায়। নিতাইগঞ্জের কয়েকজন তেল ব্যবসায়ী আরো জানান, পাইকারী বাজারে পণ্য বেচাকেনা ও লেনদেনে কিছু প্রথা চালু আছে। নিজেদের সুবিধার অনেক প্রথা আছে যেগুলো আইনগতভাবে স্বীকৃত নয়। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ডেলিভারি অর্ডার (ডিও) স্লিপ। তেল কিংবা অন্য কোনো পণ্য কেনাবেচায় ডিও বেচাকেনার মাধ্যমে আগাম লেনদেন হচ্ছে। দেখা যায়, পণ্য হাতে না পেলেও ওই স্লিপটি বেচাকেনা হচ্ছে। কোনো কোম্পানি বাজার থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ পণ্যের ডিও কিনে নেয়। যে দরে ডিও কেনা হয়, তার বাজারদর যদি বেড়ে যায় তখন পণ্যটি ডেলিভারি দিতে তারা গড়িমসি করে। আবার দেখা যায়, কোম্পানির পণ্যই আসেনি কিন্তু ডিও কিনে রেখেছেন অনেক বেশি।এর ফলেও কোম্পানি বাজারে পণ্য ডেলিভারি দিতে পারে না। ফলে এসব পণ্যের দামও নিয়ন্ত্রণেথাকে না। এক্ষেত্রে তেল ও চিনির ডিও বেচাকেনা বেশি হয়। ডিও কারসাজির কারণে মাঝে মাঝেপণ্যের দাম আকাশচুম্বি হয়। এই সুযোগে কিছু মৌসুমী ব্যবসায়ী কোটি কোটি টাকাহাতিয়ে নেন। দাম বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে নিতাইগঞ্জের ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী মোঃ বাবুল ভুঁইয়া বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে এখনো চাঙা সয়াবিন ও পাম তেলের বাজার। এক বছরের ব্যবধানে পাম তেলের দাম বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। এছাড়া সয়াবিনের দাম বেড়েছে দেড় গুণের বেশি। বর্তমানে পাম তেলের সরবরাহ সংকট রয়েছে বলে জানতে পেরেছি। আমাদের দেশে পাম তেল আসে ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া থেকে। করোনাকালীন সৃষ্ট জটিলতার কারণে দেশ দুটিতে প্রত্যাশিতউৎপাদন হয়নি। আবার সয়াবিন আমদানি হয় ইউক্রেন, ব্রাজিল ও অস্ট্রেলিয়া থেকে। সেখানে ঘাটতি ছিল। জানা গেছে, ভোজ্যতেলের বুকিংদর দিন দিন বেড়েছে; যার প্রভাব পড়েছে বাজারে। নিতাইগঞ্জের বাজারে সিটি গ্রুপ ও এস আলম গ্রুপের পণ্যই বেশি বেচাকেনা হয়। বলা যায়, এই দুই শিল্প গ্রুপের আধিপত্য রয়েছে। তেলের বাজার বাড়লে সিন্ডিকেট কারসাজির প্রশ্নটি ওঠে। এটি মোটেও সত্য নয়। কারণ বিশ্বব্যাপী ভোজ্যতেলের বাজার চাঙা। পাইকপাড়ার কয়েকজন পুরনো ব্যবসায়ীর অভিযোগ, তেলের বাজার দিন দিন নিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ছে। এমনিতে দেশে ভোগ্যপণ্যের বাজার সবসময় ব্যবসায়ীদের মর্জির ওপর নির্ভর করে। তাঁরা নিজেদের স্বার্থে বিভিন্ন অজুহাত দাঁড় করিয়ে ক্রেতাদের পকেট কাটেন। ভোগ্যপণ্যের বাজারে যেভাবে তদারকি হওয়া দরকার সেটা হচ্ছে না। প্রশাসন মাঝে মাঝে আকস্মিক অভিযানে বের হয়ে কিছু জরিমানা করে। প্রশাসনকে নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা