আজ মঙ্গলবার | ১৩ মে ২০২৫ | ৩০ বৈশাখ ১৪৩২ | ১৪ জিলকদ ১৪৪৬ | বিকাল ৩:৫৮

মহানগর বিএনপির দুই গ্রুপে উত্তেজনা

ডান্ডিবার্তা | ১৮ মার্চ, ২০২৩ | ৩:১৬ অপরাহ্ণ

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপিতে পাল্টাপাল্টি কমিটি ও কমিটি নিয়ে একে অপরকে উদ্দেশ্য করে তীর্যক মন্তব্যের কারণে উত্তপ্ত মহানগর বিএনপির রাজনীতি। থানা কমিটি নিয়ে মহানগর বিএনপির শীর্ষ নেতাদের কাঁদা ছোঁড়াছুঁড়িতে বিক্ষুব্ধ মহানগর বিএনপির তৃণমূলের নেতারা। কারণ দলের আন্দোলনমুখী সময়ে দলীয় কর্মসূচি বাস্তবায়ন থেকে একে অপরের তীর্যক মন্তব্য করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। কেউ বলছেন কোনো লাঙ্গল মার্কা, নৌকা মার্কার দালালদের কাছে মাথানত করবো না। আবার কেউ বলছেন সরকারী দলের এমপির কাছ থেকে ২ কোটি টাকা নিয়ে নির্বাচন করেছে এবং নেতাকর্মীদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা চেয়ে পদবাণিজ্যের কথা। নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির নেতাদের মধ্যে একে অপরে ক্ষমতাসীনদের আতাঁতের গোমর ফাঁস করে একের পর এক বিস্ফোরক বক্তব্য রাখছেন। যার কারণে আন্দোলন সংগ্রামের এই মোক্ষম সময়ে মহানগর বিএনপির নেতৃত্বের ভাটা পড়ার শংঙ্কা তৈরী হয়েছে।সূত্র বলছে, নারায়ণগঞ্জ সদর থানা বিএনপি কমিটি গঠনের ৭দিনের মধ্যে সদর থানা বিএনপির পাল্টা কমিটি দেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির একাংশের নেতারা। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জ সদর থানা বিএনপিতে মাসুদ রানাকে আহ্বায়ক এবং এড. আনোয়ার প্রধানকে সদস্য সচিব করে ৫৭ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন দেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন খান এবং সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু। তবে কমিটি গঠনের সাপ্তাহ খানেকের মধ্যেই পাল্টা কমিটি দেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির পাঁচ যুগ্ম আহবায়বক। সদর থানা বিএনপির ৮১ সদস্য বিশিষ্ট পাল্টা কমিটিতে হাজী মোহাম্মদ ফারুক হোসেন আহ্বায়ক এবং মোহাম্মদ আওলাদ হোসেনকে সদস্য সচিব করা হয়। পাল্টা কমিটি গঠনের পর থেকেই নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি এবং মহানগর বিএনপির একাংশের নেতারা কমিটি নিয়ে একে অপরকে উদ্দেশ্য করে পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে লিপ্ত হয়ে পড়েন। পাশাপাশি বক্তব্যে সরকারি দলের সাথে আতাঁতের গোমড় ফাঁস করতে থাকেন পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে মাধ্যমে। গতকাল ১৫ মার্চ দুপুরে সদর থানা বিএনপির পরিচিতি সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এড. সাখাওয়াত হোসেন খান থানা বিএনপির একাংশের নেতাদের উদ্দেশ্য করে বলেন, ২৭ বছর পর নারায়ণগঞ্জ সদর থানা বিএনপির কমিটি গঠন করেছি। এই কমিটি গঠনের পর সরকারী দল ও সদর-বন্দর আসনে যিনি শাসন করছেন তাদের ভালো লাগে নাই। যার কারণে তাদের দোসরদের দিয়ে এই সদর থানা বিএনপির কমিটিকে বিতর্কিত করার জন্য এবং এই কমিটি যে গতিতে আন্দোলন সংগ্রাম করছে সেটাকে বাধাগ্রস্থ করার জন্য আজকে তাদের দোসরদের নিয়ে পাল্টা কমিটি গঠনের যে হীন চেষ্টা করছে, সেই অপচেষ্টা সংকুলে বিনষ্ট হবে। আমরা বলতে চাই, আজকে যারা পাল্টা কমিটি করেন, পাল্টা কমিটি গঠন করেন কেন? আপনারা তো দীর্ঘদিন দায়িত্বে ছিলেন। ওই সময় কমিটি করেননি কেনো? ওই সময় কমিটি করলে তো আজকে আরো অনেক নেতৃত্ব দেয়ার মত নেতা পাওয়া যেতো। ওই সময় তো বিএনপিকে আপনারা সরকারি দলের কাছে, সদর-বন্দর আসনের এমপির কাছে ইজারা দিয়ে দিয়েছিলেন! বিএনপিকে ইজারা দিয়ে বিএনপিকে পরিকল্পিতভাবে দূর্বল করে রেখেছেন। যারা পদত্যাগ করেছেন তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলতে চাই, আসলে আপনাদের পদত্যাগ করাটা যে ভুল হয়েছে, সঠিক কাজ করেনি সেটা প্রমাণিত হচ্ছে। গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়েছিলেন কমিটিতে আপনারা থাকবেন না, পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছিলেন। যেই থুথু ফেলিয়েছিলেন সেই নিজে থুথু এখন গিলে খেতে চাচ্ছেন। উনারা এখন কমিটির নেতা দাবি করে পাল্টা কমিটি দিতে চান।আপনাদের আমরা শত্রুমনে করি না। যদি দলের গঠনতন্ত্র মানেন, তাহলে আপনারা আমাদের ভাই, আর যদি সরকারি দলের দালালি করে বিএনপিকে ক্ষতিগ্রস্থ করতে চান তাহলে আপনারা আমাদের ভাই হতে পারেন না। অপরদিকে অনুষ্ঠানের প্রধান বক্তার বক্তব্যে এড. আবু আল ইউসুফ খান টিপু বলেন, দেশ নায়ক তারেক রহমান শহীদ জিয়ার যে আদর্শ অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান ও অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপুর কাছে যে আমানত দিয়েছে, সেই আমানত রক্ষা করতে শরীরের রক্ত দিতেও প্রস্তুত আছি। কোনো অন্যায়, কোনো হুংকার, কোনো লাঙ্গল মার্কা, নৌকা মার্কার দালালদের কাছে মাথানত করবো না, যারা বিএনপি ক্ষমতায় থাকাবস্থায় টিনের ঘর থেকে ৫তলা দশ তলা ভবনের মালিক হয়েছেন তাদের হুংকার সাখাওয়াত-টিপু ধমে যাবে না। যারা তারেক রহমানের নির্দেশ ও অনুমোদনকে উপেক্ষা করে চলছেন। তাদেরকে বলতে চাই, যদি সত্যি শহীদ জিয়ার আদর্শে রাজনীতি করে থাকেন তাহলে, তারেক রহমানকে ভালোবেসে থাকেন, শেখ হাসিনার হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে চান তাহলে দলের নিয়ম মেনে রাজনীতি করুন। আমরা কিন্তু বধির নই, আমরাও কথা বলতে জানি। আমরা কথা বলা শুরু করলে মুখ দেখাতে পারবেন না। তবে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন খান এবং সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপুর এ সমস্ত মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি ও বন্দর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মুকুল স্থানীয় গণমাধ্যমে বলেন, বিএনপিতে দালাল কারা তা জানে সবাই। ২০১৬ সালের সিটি নির্বাচনে সরকারী দলের এমপির কাছ থেকে ২ কোটি টাকা নিয়ে নির্বাচন করেছে কারা তাও সবাই জানে। মুকুল বলেন, মজার বিষয় হলো, যিনি দালাল দালাল বলে বক্তব্য রাখছে সেই এড. সাখাওয়াতের বিরুদ্ধেই ২ কোটি টাকার অভিযোগ রয়েছে। আরও মজার বিষয় হলো, এই অভিযোগ আবার করেছেন এড. আবু আল কারা দালাল তা ইউসুফ খান টিপু নিজেই। এখন কারা আওয়ামীলীগের দালালী করে এবং নেতাকর্মীদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা চেয়ে পদবাণিজ্য করছে তারা আপনারা সবাই ভালো করেই জানেন। তিনি আরও বলেন, আমি শুধু এটুকুই বলতে চাই, কয়লা ধুলে ময়লা যায় না। ঠিক তেমনি ২০১৬ সালের নির্বাচনের পূর্বে যেভাবে আওয়ামীলীগের দালালরা ২কোটি টাকা খেয়েছিলো, এবারও ঠিক একইভাবে ঐ দালালরা সরকারী দলের দালালী করে মহানগর বিএনপিকে দুর্বল করার চেষ্টা করছে। এছাড়া নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন খান এবং সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপুর তীর্যক মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক এম এইচ মামুন বলেন, আওয়ামী সরকার শুধু মাত্র সংবিধানের দোহাই দিয়ে দেশের গণতন্ত্র দেশের ভোট অধিকার, সমস্ত কিছু ধ্বংস করে দিল। আপনিও তার মতো করছেন আজকে আপনি সদর থানার পরিচিতি সভায় আপনি আমাদেরকে গঠনতন্ত্র শিক্ষা দিচ্ছেন। আর তা না মানলে তারা দলে থাকতে পারবেন না। দল কি আপনার আর আপনার সদস্য সচিবের। আর আপনি কাদেরকে দালাল বলছেন। আপনি একবার চিন্তা করে দেখেন বিগত দিনের মেয়র নির্বাচন, আপনি চিন্তা করে দেখেন ১০ ডিসেম্বরের ভয়ে আপনি কোথায় থেকে রাজনীতি পরিচালনা করেছেন। আপনি ৯ তারিখ পর্যন্ত কোথায় ছিলেন, কোথায় বসে রাজনীতি পরিচালনা করেছেন। এটা তো প্রশ্নবৃন্দ। আপনি কাকে সরকারি দালাল বলছেন, আপনি কি জানেন জানেন, নূর উদ্দিন হাজী কত মামলা আসামী, আপনি জানেন, আব্দুস সবুর খান সেন্টু কত মামলার আসামী। আমি আপনাকে প্রশ্ন করলাম আপনি আর আপনার সদস্য সচিব কত মামলার আসামী। আমি আপনাকে বলতে চাই চিন্তা ভাবনা করে কথা বলেন সহনশীল হন। আর আপনার সদস্য সচিবকে ও বুঝান যিনি আপনার ও চরিত্র হরন করছে। যে আজকে আপনারা এক সাথেই রাজনীতি করতেছেন। অতএব আপনি রাজনীতিকে রাজনীতিভাবে চলতে দেন। রাজনীতিকে রাজনীতির সাথে মোকবেলা করুন। অযথা দমকা-দমকি করে নারায়ণগঞ্জে রাজনীতি করা অসম্ভব। এছাড়াও আপনি আজকে আতাউর রহমান মুকুল সাহেব যিনি উপজেলার চেয়ারম্যান ছিলেন। উনাকে নিয়ে আপনি যেভাবে অপপ্রচার করছেন এটা থেকে ও বিরত থাকুন। কারণ যদি আপনার কথা মতো উনি সরকারি দলের সাথে আতাঁত করে চলতো তাহলে কেন তাকে মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক রাখা হলো। বিগত দিনে মহানগর বিএনপির যে কমিটি ছিল সেটার মধ্যে ও আপনি বিদ্রোহী ছিলেন। আপনি সে সময় একা দলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছেন। এখনও আমরা আপনার ও আপনার সদস্য সচিবের অন্যায়ের প্রতিবাদ করছি। তাই বলি এই কথা বাদ দিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করুন। পাল্টাপাল্টি বক্তব্য এবং ক্ষমতাসীনদের সাথে আতাঁতের গোমড় ফাঁসে দুইগ্রুপের মধ্যেই দেখা দিয়েছে উত্তেজনা। যার কারণে আন্দোলন সংগ্রামের এই মোক্ষম সময়ে মহানগর বিএনপির নেতৃত্বের ভাটা পড়ার শঙ্কা তৈরী হয়েছে।




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১
১২১৩১৪১৫১৬১৭১৮
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭২৮২৯৩০৩১  
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা