
ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট হিন্দু সম্প্রদায়ের তীর্থ ভূমি নারায়ণগঞ্জের বন্দরের লাঙ্গলবন্দে স্নান উৎসবের শেষ দিন আজ। দিনটিকে ঘিরে ইতোমধ্যে ৮ লাখ পূণ্যার্থী অংশ নিয়েছে। গত মঙ্গলবার এই স্নান উৎসব শুরু হয়, শুক্লা তিথি অনুযায়ী উৎসব শেষ হয় বুধবার রাত ১০টা ৪৯ মিনিটে। লাঙ্গলবন্দ স্নান উদযাপন পরিষদের সভাপতি সরোজ সাহা জানান, ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কাসহ কয়েকটি দেশের অনেক তীর্থযাত্রী এই স্নান উৎসবে যোগ দিয়েছে। বন্দরের মুছাপুর ইউনিয়নের লাঙ্গলবন্দের ১৮টি ঘাটে একযোগে এই স্নান উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এ বছর প্রায় ১২ থেকে ১৩ লাখ পূণ্যার্থী হতে পারে। হিন্দু শাস্ত্রমতে, ‘হে মহাভাগ ব্রহ্মপুত্র, হে লৌহিত্য, আমার পাপ হরণ করো’ এ মন্ত্র পাঠ করে ফুল, বেলপাতা, ধান দুর্বা, হরিতকি, ডাব, আমপাতা পিতৃকুলের উদ্দেশ্যে তর্পণ করেন পুণ্যার্থীরা। দিচ্ছে উলু ধনী। গত মঙ্গলবার রাতে ¯œান উৎসবের উদ্ধোর করেন সদর-বন্দর আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান। তিনি বলেন, এটা শুধু নারায়ণগঞ্জের প্রোগ্রাম না। আমি এমপি হওয়ার পরের বছরে এখানে একটা গুজবে ১০জনের প্রাণ গেছে। এমন গুজব যদি কেউ আবারো ছড়ানোর চেষ্টা করলে মনে রাখবেন এটা রাষ্ট্রীয় প্রোগ্রাম, কাউকে কোন প্রকার ছাড় দেওয়া হবেনা। আমি পুলিশ সুপারকে কঠোর ভাবে নির্দেশনা দিচ্ছি, গুজব ছড়ানো ব্যক্তি যেই হোক তাকে যেন ছাড় না দেওয়া হয়। পূর্ণ্যার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা আর একটা বছর অপেক্ষা করেন। উন্নয়ন কাজ গুলো সম্পন্ন হলে আপনাদের আর কোন কষ্ট হবেনা স্নান উৎসবে। গত মঙ্গলবার রাত ১০টায় তিথি লগ্নে মঙ্গল প্রদীপ জ্বেলে উৎসবের উদ্বোধন করেন রামকৃষ্ণ মিশনের স্বামী একনাথনন্দজী মহারাজ স্নান উৎসব অনুষ্ঠানের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সদর-বন্দর আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান চন্দন শীল, জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফেজ, জেলা পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার মোহাম্মদ আলী, এফবিসিসিআই এর পরিচালক প্রবীর কুমার সাহা, মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা, বন্দর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান সানাউল্লাহ সানু, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কুদরত-এ-খোদা, মুছাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেন। লাঙ্গলবন্দ স্নান উদযাপন পরিষদের সভাপতি সরোজ কুমার সাহার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শিপন সরকার। আরো উপস্থিত ছিলেন, এফবিসিসি আই এর জেলা পরিষদের ২নং ওয়ার্ডের সদস্য মাসুম আহম্মেদ, মহনগর জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পদাক ও ২৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আফজাল হোসনে, বন্দর উপজেলার নারী ভাইস চেয়ারম্যান ছালিমা হোসেন শান্তা, ধামগড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামাল হোসেন সহ অন্যান্যরা। পাপ মোচনের আশায় ভক্ত শ্যামল পাল জানান, নদে স্নান করলে পাপ মোচন হয়। শরীর মন সুস্থ থাকে, দেশ বাসী শান্তিতে থাকবে বলে মনে করছেন। কিশোরগঞ্জ থেকে আসা শিলা রাণী বলেন, গোসল করে মানত করেছি, মেয়ের বিয়ে হলে আসছে বছর আবার আসবো। রাজঘাটের পুরোহিত বঙ্গ চক্রবর্তী জানান, ১২ বছর পর বুধ অষ্টমী পড়েছে, সে জন্য ভক্তদের উৎসাহ বাড়তি, আজকে রাজ ঘাটে তিলপরিমান ঠাই দেওয়া যাচ্ছে না। গত দু’বছর করোনার কারণে অনেকটা সীমিত পরিসরেই লাঙ্গলবন্দে স্নান উৎসব উদযাপিত হয়েছে। করোনার পরই এবারই প্রথম বিধি নিষেধাজ্ঞা ছাড়াই স্নান উৎসব পালিত হয়। ফলে আগত পুণ্যার্থীর সংখ্যাও কয়েক গুণ বেশি। নারায়ণগঞ্জ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শিপন সরকার বলেন, আমরা মাস খানেক আগে থেকে স্নান উৎসবটি সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সফলের লক্ষ্যে কাজ করেছি। সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান আমাদের সার্বিক সহযোগিতা করেছেন। এছাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, বি আইডব্লিউটিএ, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরসহ সরকারি সব দপ্তরের কর্মকর্তার বর্তমানে লাঙ্গলবন্দ এলাকায় নিজ নিজ দায়িত্বগুলো পালন করেন। ফলে আমরা যেসব সমস্যা চিহ্নিত করেছিলাম প্রায় সবগুলোই এরই মধ্যে সমাধান করতে সক্ষম হয়েছি। এ বিষয়ে বন্দর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বি এম কুদরত-এ-খুদা বলেন, স্নান উৎসব উপলক্ষে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সব প্রস্তুতি ছিল। শান্তিপূর্ণভাবে উৎসবটি সম্পন্ন করতে পেরেছি। এদিকে প্রচুর সংখ্যক স্নানোর্থীর আগমনে লাঙ্গলবন্দের তিন কিলোমিটার জুড়ে তিল ধারণের জায়গা ছিলনা। গতকাল বুধবার ভোর থেকে আরও বাড়তে থাকে পূণ্যার্থীদের ভীর। গতকাল বুধবার সকাল থেকে হাজারো পূণ্যার্থী নলিত মোহন সাধু ঘাট, অন্নপূর্ণা ঘাট, রাজঘাট, মাকরী সাধু ঘাট, গান্ধী (শ্মশান) ঘাট, ভদ্রেশ্বরী কালী ঘাট, জয়কালী মন্দির ঘাট, রাজঘাট, রক্ষাকালী মন্দির ঘাট, পাষাণ কালী মন্দির ঘাট, প্রেমতলা ঘাট, মণি ঋষিপাড়া ঘাট, ব্রহ্ম মন্দির ঘাট, দক্ষিণেশ্বরী ঘাট, পঞ্চপান্ডব ঘাট ও পরেশ মহাত্মা আশ্রম ঘাট দিয়ে পূণ্য স্নান করেছেন। ১৯টি স্নানঘাটে দল বেধে, স্বপরিবারে কেউবা এককভাবে ধর্মীয় রীতি রেওয়াজ অনুযায়ী স্নানে অংশ নিচ্ছেন সনাতন ধর্মের অনুসারীরা। প্রতিটি স্নানঘাটেই রয়েছে স্নানার্থীদের উপচে পড়া ভীড়। বিশেষ করে রাজঘাট ও গান্ধীঘাটে স্নানোর্থীদের সমাগম চোখের পড়ার মত। ৭ বছর আগে রাজঘাটের কাছে ব্রিজ ভেঙ্গে পড়ার গুজবে হুড়োহুড়িতে ১০ জনের প্রাণহানী ঘটে। ঘটনাটি স্নানোর্থীদের স্মরণ থাকলেও এ নিয়ে তাদের মধ্যে কোনো ভয় বা আতংক নেই বলে জানান তীর্থযাত্রীরা। এবার সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়েছে স্নানোৎসব। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, শ্রীলংকা, নেপাল থেকেও প্রচুর দর্শনার্থী লাঙ্গলবন্দ স্নানে অংশ নিয়েছেন। পূণ্যার্থীদের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠে লাঙ্গলবন্দ তিন কিলোমিটার এলাকা। স্নানোর্থীরা জানান, ব্রহ্মপুত্র নদে স্নান করলে পাপ মোচন হয়, ব্রহ্মার কৃপা লাভ করা যায়। এ দিকে গত মঙ্গলবার রাত পৌনে ১১ টার দিকে স্নানোৎসবের উদ্বোধন করেন সদর-বন্দর আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা একেএম সেলিম ওসমান। এ সময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সেলিম ওসমান বলেন, মহাতীর্থ লাঙ্গলবন্দের উন্নয়নে দেড়শ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে আধুনিক গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছে। যেখানে এক সঙ্গে পাঁচ শতাধিক গাড়ি পার্কিং করা যাবে। পূণ্যার্থীদের থাকার জন্য ডরমিটরী ভবন নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। সুষ্টুভাবে স্নান সম্পাদনের জন্য ১৯টি স্নানঘাটের নির্মাণও চলমান। এ মেগা প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে পর্য়টন কেন্দ্রে পরিনত হবে লাঙ্গলবন্দ। গত মঙ্গলবার রাত ৯ টা ১৮ মিনিটে শুরু হওয়া এই পূণ্যস্নান শেষ হয়েছে গতকাল বুধবার রাত ১০ টা ৪৭ মিনিটে। অর্ধশতাধিক স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান খাবার সরবরাহ ও নানা সেবামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। এ ছাড়া স্নানোর্থীদের স্বাস্থ্য সেবায় নিয়োজিত ছিল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একাধিক মেডিকেল টিম। স্নানকে ঘিরে নারায়ণগঞ্জ সিভিল সার্জন অফিস থেকে ৫টি মেডিকেল টিম কাজ করে। এছাড়া ঘাটগুলো মেরামতে কাজ করেছে বিআইডব্লিউটিএ। পাশাপাশি বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করেছে জনস্বাস্থ্য বিভাগ। কাঁচপুর হাইওয়ে থানার টিআই (ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) মোহাম্মদ ইব্রাহিম জানান, দীর্ঘ ১২ ঘন্টা যানজট ছিল তবে সন্ধ্যার পরে থেকে যানজট কিছুটা কমেছে। কাঁচপুর থেকে গজারিয়া পর্যন্ত যানজট ছিল। তবে যানজট যা কমেছে তা পুলিশের চেষ্টায়। কারণ এখনো পূণ্যার্থীদের ঢল রয়েছে। লাঙ্গলবন্দের এটুকু সড়কে দুই লাখ মানুষ যদি একসাথে নেমে যায় তাহলে তো যানজট হবেই। তবে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি নিয়ন্ত্রণের। তিনি বলেন, এর মধ্যে সবচেয়ে বড় বিপত্তি হচ্ছে মোড়ে মোড়ে হাত তুলেই সকলে রাস্তা পারাপার হয়ে যান মানুষ। এর মধ্যে গাড়ি চলমান থাকলে দুর্ঘটনার শঙ্কা থাকে। রাস্তা পারাপারের কারণেও যানজট হয়। আমাদের ২০টির মত টিম কাজ করে যানজোট নিয়ন্ত্রণে।
হাবিবুর রহমান বাদল ষোল বছরের স্বৈরশাসনে দেশকে পঙ্গু করে শত দমন পীড়ন আর নির্বিচারে গুলি বর্ষন করে দেড় হাজারের বেশী ছাত্র-জনতাকে হত্যার পরও শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনা তার গতি রক্ষা করতে পারেনি। গত বছরের ৫ আগষ্ট ছাত্র-জনতার রোষানল থেকে বাঁচার জন্য ছোট বোন রেহানাসহ স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। শেখ হাসিনার রাজনৈতিক আত্মসমর্পণ এতটাই […]
হাবিবুর রহমান বাদল নারায়ণগঞ্জসহ সারা দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটায় বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে নগরবাসীর আতঙ্কিত হওয়ার ঘটনা প্রতিদিন প্রকাশ পাচ্ছে। এনিয়ে সাধারণ নাগরিকরা সরব হয়ে উঠেছেন। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগ এনে বিভিন্ন মহল থেকে তার পদত্যাগ দাবি করা হচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল সোমবার বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা […]
ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট: আড়াইহাজার থানায় দায়ের করা উপজেলার দুপ্তারা ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি বাবুল মিয়া হত্যা মামলা নিয়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। গত ৩ জুন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বাবুল মিয়ার মৃত্যু হলেও দুই মাস পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় তিনি নিহত হয়েছেন উল্লেখ করে ২২ আগস্ট হত্যা মামলা করেছেন দুপ্তারা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন। এই […]
প্রকাশক ও সম্পাদক
হাবিবুর রহমান বাদল
০১৯১১০১০৪৯০
hr.badal@yahoo.com
বার্তা ও বাণিজ্যক কার্যালয়
৬. সনাতন পাল লেন
(হোসিয়ারী ক্লাব ভবন, তৃতীয় তলা)
৭৬৪২১২১
dbartanews@gmail.com
রেজি: ডিএ নং-২০৯৯