আজ শুক্রবার | ১৫ আগস্ট ২০২৫ | ৩১ শ্রাবণ ১৪৩২ | ২০ সফর ১৪৪৭ | রাত ২:২৩

মেরাজের মায়ের বুকফাঁটা আর্তনাদ

ডান্ডিবার্তা | ০৫ এপ্রিল, ২০২৩ | ১২:৪২ অপরাহ্ণ

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট আমার ছেলেকে ওরা কুপিয়ে মেরে ফেলেছে। মেরাজের একটা হাত-পা ভেঙে ফেললেও জীবিত থাকলে মুখখানা দেখে সারাটা জীবন পার করে দিতে পারতাম। এখন আমার নাতির কী হবে? ছেলের বউকে কী করে বোঝাবো?’ কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন নিহত ওয়ার্কশপ ব্যবসায়ী মেরাজুল ইসলাম জয়ের মা নাসরিন বেগম। গতকাল মঙ্গলবার নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার ছালেহনগর এলাকায় নিজ বাড়িতে বসে ছেলের কথা স্মরণ করে কাঁদছিলেন তিনি। এর আগে, গত সোমবার সন্ধ্যায় ইফতারের আগ মুহূর্তে বন্দর উপজেলার রুপালি আবাসিক এলাকায় আয়মান ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপের সামনে সাত-আট জন দুর্বৃত্ত মেরাজুল ইসলাম ও আল আমিন নামে দুজনের ওপর ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। এতে তারা গুরুতর আহত হন। তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে রাত ৯টার দিকে মেরাজুলের মৃত্যু হয়। অপরজন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। নাসরিন বেগমের সঙ্গে কথা বলতে বলতে তার মেজো ছেলে সাজিবুল ইসলাম শুভ বাড়িতে প্রবেশ করে। এ সময় শুভ হামলাকারীদের নাম উল্লেখ করতেই তার কাছে ছুটে যান মা নাসরিন বেগম। ছেলেকে চুপ করতে বলেন। চুপ না থাকলে, হামলাকারীদের বিষয়ে মুখ খুললে তাকেও ওরা মেরে ফেলবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘এক ছেলেকে হারিয়েছি, আর কাউকে হারাতে চাই না। আমি শুধু আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই।’ নাসরিন বেগমের তিন ছেলের মধ্যে মেরাজুল ইসলাম জয় সবার বড়। স্বামী আজহারুল ইসলাম এজা দ্বিতীয় বিয়ে করে অন্যখানে চলে যাওয়ায় পুরো সংসারের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন নাসরিন বেগম। তিনি অন্যের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালিয়ে আসছেন। সম্প্রতি তার বড় ছেলেসহ তিন ছেলে সংসারে অবদান রাখা শুরু করে। ওয়ার্কশপ ব্যবসার পাশাপাশি ভবন নির্মাণে ব্যবহৃত পাথর ব্যবসা শুরু করেন মেরাজুল। মেরাজের মা বলেন, ‘পাথর ব্যবসা নিয়ে কাউন্সিলর শাহীনের লোকজন, কাজল ও মাসুদ বাহিনী মেরাজের ওপরে অসন্তুষ্ট ছিল। এ নিয়ে তাদের সঙ্গে বিরোধ তৈরি হয়। এ কারণে প্রায় ছয় মাস ধরে পাথর ব্যবসার পাশাপাশি ওয়ার্কশপ ব্যবসা শুরু করেন মেরাজুল। ওয়ার্কশপ ব্যবসা করতে ৫০ হাজার টাকা কিস্তি তুলে দিয়েছিলেন। সম্প্রতি পাথর ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছিল মেরাজুল, তারপরও ওরা বাঁচতে দিলো না। এই পাথর ব্যবসা ওর জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।’ ছেলের ব্যবসা দিয়ে ভাগ্যের চাকা ঘুরতে শুরু করেছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘দিন দিন আমার ছেলের ব্যবসা জমে উঠেছিল। গত কয়েক মাস ধরে আলোর মুখ দেখতে শুরু করেছিলাম। তাই ছেলে আমাকে কাজে যেতে নিষেধ করে। আমাকে বাড়িতে থাকতে বলে। এখন তো আমার মেরাজ নেই, এখন আমার কী হবে?’ পাথর ব্যবসা মেরাজের জীবনে কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে উল্লেখ করে নিহতের মেজো ভাই শুভ বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমার ভাই পাথরের ব্যবসা করে আসছিল। এই ব্যবসা নিয়ে এলাকার কাউন্সিলর শাহীনের লোকজন, কাজল মিয়াসহ বেশ কয়েকজনের সঙ্গে বিরোধ তৈরি হয়। কিছু দিন আগে এসব বিষয় নিয়ে তাদের সঙ্গে ঝগড়া হয়েছিল। পরে আমার ভাই পাথর ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছে। তারপরও ওরা আমার ভাইকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। মৃত্যুর আগে আমার ভাই সবার নাম বলে গেছে। এ ছাড়া আল আমিন হাসপাতালে আহত অবস্থায় সবার নাম বলেছে।’ নিহতের ছোট ভাই আজমীর হোসেন সম্রাট বলেন, ‘আমার ভাই মারা যাওয়ার আগে হামলাকারীদের নাম বলে গেছেন। স্থানীয় ২১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শাহীন মিয়ার নেতৃত্বে তার ভাগ্নেসহ তার লোকজন এই হামলা করেছে। আমরা তাদের বিচার চাই।’ এদিকে, হামলাকারীদের নাম-পরিচয় জানতে পেরে গত সোমবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে এলাকাবাসী ও নিহতের স্বজনরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। তারা কাউন্সিলর শাহীন ও তার লোকজনের বিরুদ্ধে নানা স্লোগান দেয় এবং তাদের বিচার দাবি করেন। এ সময় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী কাউন্সিলর কার্যালয়ে ইটপাটকেল ছুড়ে মারে। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এদিকে ওয়ার্কশপ ব্যবসায়ী মেরাজুল ইসলাম জয়কে (২৭) কুপিয়ে হত্যার ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন ওই হামলায় আহত আল আমিন (২৬)। আল আমিনের ভাষ্য মতে, সিটি করপোরেশনের ২১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. শাহীন মিয়ার নেতৃত্বে একদল যুবক এই হামলা চালিয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মেরাজুল ও আল আমিন ওয়ার্কশপে বসে ইফতারের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এ সময় তাদের ওপর হামলা চালানো হয়। হামলাকারীদের মুখ কাপড় দিয়ে বাঁধা থাকায় চিনতে পারেননি প্রত্যক্ষদর্শীরা। এ ঘটনায় আব্দুর রব (৪৮) ও স্বপন (৩৮) নামে দুই জনকে আটক করেছে পুলিশ। গত সোমবার গভীর রাতে বন্দর থানার রুপালী আবাসিক ও ছালেহনগর এলাকায় পৃথক অভিযান চালিয়ে এদেরকে আটক করা হয়। নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘এই ঘটনায় আমরা দুষ্কৃতকারীদের শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছি। পুলিশ দুই জনকে আটক করেছে। তদন্তের খাতিরে তাদের নাম বলা সম্ভব হচ্ছে না। বাকি আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এখন পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। তারপরও এলাকার যথেষ্ট পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা