আজ শুক্রবার | ১৫ আগস্ট ২০২৫ | ৩১ শ্রাবণ ১৪৩২ | ২০ সফর ১৪৪৭ | রাত ৪:০৮

দ্বিধাবিভক্তিতে বিপর্যস্ত বিএনপি

ডান্ডিবার্তা | ২০ এপ্রিল, ২০২৩ | ১২:১৯ অপরাহ্ণ

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে থেকেই যেন দ্বিধাবিভক্ত অবস্থায় রয়েছে নারয়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপি। জেলা ও মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীরা এখন থেকেই কয়েক গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। সম্ভাব্য মনোনয়ন পত্যাশীরা নিজস্ব বলয় তৈরি করছেন। আর এই বলয় তৈরি করতে গিয়ে নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীরা বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হচ্ছেন। বিভিন্ন কর্মসূচিতে সেই বলয় পরিলক্ষিত হচ্ছে। সেই সাথে কর্মসূচির থেকে বেশি বলয়কেই গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। সূত্র বলছে, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী বছরের শুরুতেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সে হিসেবে দিন যাওয়ার সাথে সাথে ঘনিয়ে আসছে এই জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আর এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা সরব হতে শুরু করেছে সংশ্লিষ্ট এলাকাকে ঘিরে। তারই ধারাবাহিকতায় নারায়ণগঞ্জেও মনোনয়ন প্রত্যাশীরা প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। আর এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রতিবারের মতো এবারও বিভিন্ন আসন কেন্দ্রিক বিএনপি দলীয় সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীরা প্রস্তুত হচ্ছেন। যদিও বিএনপির নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে এখনও নিশ্চিত নয়। তবে আগে থেকেই তাঁরা প্রস্তুতি নিয়ে রাখছেন। দলীয় সূত্র বলছে, ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ আসনে বিএনপি দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন ও অধ্যাপক মামুন মাহমুদ। তাদের মধ্যে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মামুন মাহমুদ বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে থামিয়ে দেয়া হয়। এবারও তিনি আশাবাদী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বিএনপি দলীয় মনোনয়ন পাবেন। এরই মধ্যে ২০২২ সালের ১৫ নভেম্বর বিকেলে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির ৯ সদস্য বিশিষ্ট আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। আর এই কমিটিতে আহ্বায়ক হিসেবে রয়েছেন ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন ও সদস্য সচিব হিসেবে রয়েছেন গোলাম ফারুক খোকন। সেই সাথে কমিটিতে ১ম যুগ্ম আহবায়ক হিসেবে রয়েছেন মামুন মাহমুদ। অন্যান্য যুগ্ম আহবায়ক হিসেবে রয়েছেন মনিরুল ইসলাম রবি, শহিদুল ইসলাম টিটু, মাসুকুল ইসলাম রাজীব, লুৎফর রহমান খোকা, মোশারফ হোসেন ও জুয়েল আহমেদ। আর এই কমিটি গঠনের পর থেকে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহবায়ক মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন ও সদস্য সচিব গোলাম ফারুক খোকনের নেতৃত্বে বিএনপির নেতাকর্মীরা জোরালো ভূমিকা রেখে যাচ্ছেন। এমন কোনো কর্মসূচি পরলক্ষিত হচ্ছে না যেখানে নেতাকর্মীদের সরব উপস্থিতি দেখা মিলছে না। সেই সাথে এই কমিটি হওয়ার পর অনেকটা বেকায়দায় পড়ে গেছেন মামুন মাহমুদ। বর্তমানে তিনি নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির কমিটি থেকে দূরে অবস্থান করছেন। মনোনয়নের প্রত্যাশায় যেন তার কিছুটা ভাটা পড়ে গেছে। তারপরেও তিনি আলাদাভাবে কর্মসূচি পালন করে নিজেকে জাহিরের চেষ্টা করে যাচ্ছেন। আর এই কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা দ্বিধাবিভক্ত হচ্ছেন। আর এই বিভক্তিতে যেন উস্কে দিচ্ছেন ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য শামীম ওসমান। আগামী দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে তিনি নিজের পথ পরিষ্কার করতে গিয়ে গিয়াস উদ্দিনকে খুনির সাথে তুলনা করে বিপরীতে মামুন মাহমুদকে ভদ্রলোক হিসেবে আখ্যা দিয়ে আসছেন। সেই সাথে গত বছরের ২৫ এপ্রিল ইফতারের পর নয়াপল্টন এলাকায় নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির তৎকালীন সদস্য সচিব মামুন মাহমুদকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাতের ঘটনার গিয়াস উদ্দিনকে দায়ি করে আসছেন শামীম ওসমান। এদিকে শামীম ওসমান বারবার ভদ্রলোক হিসেবে সম্ভোধন করা প্রসঙ্গে সাম্প্রতিক সময়ে এক সাক্ষাৎকারে মামুন মাহমুদ বলেছিলেন, শামীম ওসমানের সাথে আমার কখনও দেখা হয় নাই। উনার সাথে টকশোতে একবার দেখা হয়েছিল। এছাড়া বিয়ে অনুষ্ঠানে দেখা হয়েছিল। কিন্তু কথা হয়নি। উনার সাথে জীবনে কোনোদিন কথা হয়নি কোনোদিন দেখাও হয়নি। যোগাযোগ তো পরের কথা। আমরা যেহেতু রাজনীতি করি। রাজনৈতিক কর্মকা-ে সামাজিক কর্মকা-ে একজন নেতার সাথে দেখা সাক্ষাৎ হতে সেটা দোষের কিছু বলে মনে করি না। কিন্তু আমি আমার আদর্শ থেকেও বিচ্যুত হয়েছি কিনা জনগণসহ আমার দলের নেতাকর্মীরা মূল্যায়ন করবে। দলীয় মনোনয়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন, আমি শতভাগ আশাবাদী। যেহেতু আমি মাঠে রয়েছি সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত হয়েছি। গত ১৫ বছরে নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র নেতাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত এবং নিপীড়িত। একনিষ্ঠভাবে দলের পক্ষে ছিলাম এবং গত নির্বাচনেও আমাকে দল মনোনয়ন দিয়েছিল। আগামী নির্বাচইে অবশ্যই আমি মনোনয়ন পাবো এবং এই আসনটি বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানকে উপহার দিতে সক্ষম হবো। অন্যদিকে মামুন মাহমুদের ছুরিকাঘাতের ঘটনায় বিএনপির নেতাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়ায় শামীম ওসমানকে দোষারোপ করছেন গিয়াস উদ্দিন ও তার অনুসারীরা। এখানে শামীম ওসমান মামুন মাহমুদকে ব্যবহার করে বিএনপি নেতাদের ফাঁসানোর চেষ্টা করছেন বলে তাদের দাবি। সেই সাথে এসকল ঘটনায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই গিয়াস উদ্দিন ও মামুন মাহমুদের বিরোধের সূত্রপাত ঘটতে যাচ্ছে। তাঁরা হয়তো কেউ কাউকে সহজে ছাড় দিবেন না। দিন যাওয়ার সাথে সাথে এই বিরোধ আরও তীব্র আকার ধারণ করবে। একই সাথে ২০২২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির ৪১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটিতে আহ্বায়ক হিসেবে অ্যাডভোকেট মো. শাখাওয়াত হোসেন খান এবং সদস্য সচিব হিসেবে অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপুকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। আর এই কমিটি ঘোষণার পর থেকেই নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি দুইভাগে বিভক্ত হয়ে পরেছেন। সেই সাথে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি থেকে ১৫ জন নেতা পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। পদত্যাগকারী নেতারা হলেন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটিতে যুগ্ম আহ্বায়ক পদে থাকা আব্দুস সবুর খান সেন্টু, হাজী নুরুদ্দিন, বন্দর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মুকুল ও সিটি কর্পোরেশনের ২৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আবুল কাউসার আশা। সেই সাথে সদস্য পদে থাকা পদত্যাগকারী নেতারা হলেন আওলাদ হোসেন, হান্নান সরকার অ্যাডভোকেট বিল্লাল হোসেন, মনোয়ার হোসেন শোখন, আলমগীর হোসেন, অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান মোল্লা, শহীদুল ইসলাম রিপন, অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান মোল্লা, আমিনুর ইসলাম মিঠু, ফারুক হোসেন, অ্যাডভোকেট শরীফুল ইসলাম শিপলু, মো. ফারুক হোসেন। কিন্তু তাদের ফিরিয়ে নেয়ার জন্য দুই দফায় আল্টিমেটাম দিয়েছিলেন মহানগর বিএনপির আহবায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান ও সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু ইউসুফ খান টিপু। প্রথম দফায় আল্টিমেটাম দেয়া হয় ২০২২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর মহানগর বিএনপির কার্যকরী কমিটির প্রথম সভায়। এরপর আবার দ্বিতীয় দফায় একই বছরের ১৮ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির এক সভার আয়োজন করা হয়। আর এই সভায় নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সব ইউনিটের কমিটি বিলুপ্ত করে দেয়া হয়। পাশাপাশি পদত্যাগকারীদের ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেওয়া হয়। গত ২ এপ্রিল কেন্দ্রীয় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত দফতর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স স্বাক্ষরিত আতাউর রহমান মুকুলের বরাবর প্রেরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০২২ সালের গত ১৩ সেপ্টেম্বর গঠিত নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটিতে আপনাকে যুগ্ম আহ্বায়ক পদে মনোনীত করা হয়েছিল। পরবর্তীতে ২০২২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে এই পদে দায়িত্ব পালন করা আপনার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না মর্মে আপনি আবেদন করেছেন। আপনার আবেদনের প্রেক্ষিতে আপনার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হয়েছে। একইভাবে মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হাজী নুরুদ্দিনের বরাবরও এই বিজ্ঞপ্তি প্রেরণ করা হয়েছে। তবে এই পদত্যাগপত্র গ্রহণকে তেমন গুরুত্ব না দিয়ে বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসছেন তাঁরা। সেই সাথেই এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে সদর-বন্দর আসন এলাকায় মাঠ গোছানো শুরু করেছেন। আর এই মাঠ গোছাতে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপিতে বিভক্তি সৃষ্টি হচ্ছে। সেই সাথে মহানগর বিএনপিতে দুইটি গ্রুপ মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে।




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা