আজ শুক্রবার | ১৫ আগস্ট ২০২৫ | ৩১ শ্রাবণ ১৪৩২ | ২০ সফর ১৪৪৭ | রাত ১২:১৯

সোনারগাঁয়ে পলিথিন জাকিরের ফাঁসির দাবিতে এলাকাবাসীর মানববন্ধন

ডান্ডিবার্তা | ০৪ মে, ২০২৩ | ১০:৪৪ পূর্বাহ্ণ

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট সোনারগাঁ উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের যুবলীগ নেতা পলিথিন জাকিরের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস, নৌ-চাঁদাবাজী ও ভূমিদস্যুতার অভিযোগ এনে তাকে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান করেছে এলাকাবাসী। গতকাল বুধবার বিকাল ৪টা থেকে ৫টা পর্যন্ত সোনারগাঁ উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের জৈনপুর বালুর মাঠে শত শত নারী-পুরুষ পলিথিন জাকির ও তার সহযোগিদের গ্রেফতার করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে মানববন্ধন করে। জেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের ভবনাথপুর, ভাটিবন্দর, রতনপুর, জিয়ানগর, জৈনপুর, কান্দারগাঁও, পিরোজপুর, চেঙ্গাকান্দি, ও ছয়হিস্যার গ্রামবাসীরা মানববন্ধনে অংশ নেয়। তারা অভিযোগ করে বলেন, পিরোজপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি পলিথিন জাকির ও তার সহযোগিরা দীর্ঘদিন ধরে মেঘনা নদীতে চলাচলরত বিভিন্ন নৌযানে চাঁদাবাজী, ভূমিদস্যুতা, নিরীহ গ্রামবাসীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করে আসছে। জাকির ও তার বাহিনীর অত্যাচারে এলাকায় সাধারণ মানুষ বসবাস করতে পারছে না। ছয়হিস্যা গ্রামের বাসিন্দা আক্তার সরকার জানান, যুবলীগ নেতা জাকির হোসেনের নেতৃত্বে তার সহযোগী সৈকত হোসেন, মিজানুর রহমান, সবুজ মিয়া, কাইল্যা শাহ্ আলী, শহিদ ও শাহীন হোসেনের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসীরা এলাকার নিরিহ মানুষের বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট করে আসছে। পলিথিন জাকির ও তার সহযোগিদের চাঁদাবাজির কারণে মেঘনা নদীতে চলাচলরত নৌযান মালিক শ্রমিকরা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। উল্লেখ্য যে, হকার থেকে কোটিপতি যুবলীগ নেতা পলিথিন জাকির একসময় মাছ বাজারে পলিথিন ব্যাগ ফেরি করে মাছের ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করত। এরপর হঠাৎ করে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি বনে যান তিনি। এর পরেই রাতারাতি শতকোটি টাকার মালিক। স্থানীয়রা জানান, ঢাকার বনশ্রীতে তার আলিশান বাড়ি, নীলা সুপারসপ নামে বনশ্রীতে বিশাল সুপারসপসহ সোনারগাঁয়ে কয়েকটি বাড়ি রয়েছে। এমনকি সোনারগাঁ রিসোর্ট সিটি এলাকায় শতবিঘা জমি, ঢাকার আবাসিক এলাকায় ফ্ল্যাটও রয়েছে তার। এলাকাবাসী জানান, সোনারগাঁ উপজেলার কান্দারগাঁও গ্রামের মোনতাজ উদ্দিনের ছেলে জাকির হোসেন ওরফে পলিথিন জাকির। জীবন নির্বাহের তাগিদে একসময় মাছ বাজারে পলিথিন ব্যাগ বিক্রি করতো। যার ফলে এলাকায় তাকে ‘পলিথিন জাকির’ নামেই চেনে সবাই। পরে মেঘনা ঘাটে হকারির পাশাপাশি এলাকায় বালু ভরাট ও জমি বিক্রির দালালিও চালিয়ে যান সমান তালে। একসময় ‘সোনারগাঁ রিসোর্ট সিটি’ নামে একটি আবাসন প্রকল্পের জমি ক্রয় ও বালু ভরাটের দায়িত্ব পেয়ে বেপরোয়া হয়ে ওঠে পলিথিন জাকির। সাধারণ মানুষের জমি দখল, ভুয়া দলিলে জমি বিক্রি এবং বালু ভরাটের টেন্ডারবাজি করার পর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। জাকিরের নেতৃত্বে মেঘনা নদীতে চলাচলরত বিভিন্ন নৌযান থেকে চাঁদাবাজি, গণপরিবহনে ডাকাতি, মাদক কারবার নিয়ন্ত্রণসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসমূলক কার্যকলাপের প্রতিবাদে এলাকাবাসী কয়েকবার মানববন্ধন করলেও কোন প্রতিকার পায়নি। দুটি হত্যা ও নৌ-চাঁদাবাজিসহ প্রায় ডজনখানেক মামলার আসামি পলিথিন জাকির। ২০১২ সালে রিপন হত্যা, ২০১৪ সাথে সাধন হত্যা ও ২০১৫ সালে গোলজার হত্যায় সক্রিয়ভাবে অংশ নেয় পলিথিন জাকির। ২০১৮ সালের ৩ জানুয়ারি খুন হয় জাকিরের সকল অপকমের সাক্ষী ভাগিনা মোহাম্মদ আলী। এলাকাবাসী আরও জানান, চতুর জাকির তার সেকেন্ড ইন কমান্ড সাধন এবং ভাগিনা মোহাম্মদ আলীকে হত্যার আগে পরিকল্পিতভাবে অন্যকে ফাঁসিয়ে মোটা অংকের টাকা আদায়ের জন্য খুন হওয়ার দু-এক দিন আগে সোনারগাঁ থানায় তাদের নিরাপত্তা চেয়ে সে নিজে বাদী হয়ে সাধারণ ডায়েরি করেন। ডায়েরি করার দুই দিন পর সাধন এবং একদিন পর মোহাম্মদ আলীকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জানান, জাকির যদি তার কোনো আত্মীয় কিংবা তার ব্লকের নেতার নিরাপত্তা চেয়ে সাধারণ ডায়েরি করেন তাহলে স্পষ্ট যে এক সপ্তাহের মধ্যে ওই আত্মীয় কিংবা নেতা নিশ্চিত খুন হবে। তার ভাগিনা মোহাম্মদ আলী হত্যার মামলার ভয় দেখিয়ে সে কোটি টাকার বাণিজ্য করেছে বলেও জানা যায়। অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৭ সালে মার্চ মাসে সোনারগাঁ উপজেলা যুবলীগ সম্মেলনের মাধ্যমে তৎকালীন ২টি হত্যা মামলাসহ প্রায় ডজন মামলার আসামি জাকিরকে পিরোজপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি হিসেবে নাম ঘোষণা করেন। অভিযোগ ওঠে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে জাকিরের কাছে পদ বিক্রি করেন উপজেলা যুবলীগ সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নু ও সাধারণ সম্পাদক আলী হায়দার। যুবলীগের নাম ভাঙিয়ে অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠে জাকির। একই বছর আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী মন্ত্রীর সাথে তার ছবি ফেসবুকে ভাইরাল করে প্রশাসনসহ বিভিন্ন দপ্তরে অবৈধ সুবিধা আদায় করেন। জাকির হোসেন বর্তমানে শত কোটি টাকার মালিক বলে একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেছে। পিরোজপুর এলাকায় গিয়ে জানা যায়, পিরোজপুর ইউনিয়নের পূর্ব কান্দারগাঁওয়ে পলিথিন জাকিরের মালিকানাধীন “সন্তোসা” নামে অনুমোদনহীন একটি রিসোর্ট রয়েছে। রিসোর্টের আড়ালে নির্বিঘেœ নারীদেরকে লোভ দেখিয়ে নিয়ে এসে যৌন কাজে লিপ্ত করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এসব অনৈতিক কর্মকান্ডে ক্রমশ জড়িয়ে পড়ছে শিশু-কিশোররাও। রিসোর্টটি স্থানীয়দের গোদের উপর বিষ ফোড়ার মত অবস্থা হয়ে দাড়িয়েছে। রিসোর্ট ব্যবসার আড়ালে পলিথিন জাকির সোনারগাঁয়ের পিরোজপুর এলাকায় নারী জমজমাট অবৈধ ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। বৈদ্যের বাজার এলাকার খেয়াঘাটে গিয়ে জানা যায়, ‘মেসার্স পিয়াল এন্টারপ্রাইজ’ নামে বৈদ্যের বাজার থেকে মেঘনা ঘাট পর্যন্ত ইজারা নেন পলিথিন জাকির। অতিরিক্ত চাঁদাবাজির কারণে তার ইজারা বাতিল করা হলে ‘কান্দারগাঁও যুব কল্যাণ সমিতি’র নামে আবারও ইজারা নেন। একই অভিযোগে তা বাতিল হলে পুনরায় ইজারা পায় কান্দারগাঁও গ্রামের একতা সংঘের সভাপতি আমজাদ হোসেন। কিন্তু ইজারার নিয়ন্ত্রণ থাকে জাকিরের হাতেই। ইজারা বাতিল হলেও জোরপূর্বক নৌপথে চাঁদাবাজি করতেই থাকে জাকির। সোনারগাঁ উপজেলায় নৌপথের চাঁদাবাজির একচ্ছত্র অধিপতি জাকির। স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, নৌযান থেকে চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করে জাকিরের সন্ত্রাসী বাহিনীর ২০-২৫ জনের একটি দল। যারা তিন থেকে চারটি নৌকার মাধ্যমে এ কাজ করে থাকে। প্রতিটি নৌকায় ৬-৮ জন করে সন্ত্রাসী যুবক থাকে। তাদের রয়েছে গজারির লাঠি থেকে শুরু করে আধুনিক অস্ত্র। এ ব্যাপারে পলিথিন জাকিরের সাথে যোগাযোগ করতে কয়েকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তাকে পাওয়া যায়নি। জাকিরের ছোট ভাই আল-আমিন নৌ-চাঁদাবাজির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমরা ঠিকাদারি করে টাকা রোজগার করছি। মহাখালীতে ‘জাকির রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড ডেভেলপার কোম্পানি লিমিটেড’ নামে আমাদের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আছে।




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা