আজ শুক্রবার | ১৫ আগস্ট ২০২৫ | ৩১ শ্রাবণ ১৪৩২ | ২০ সফর ১৪৪৭ | রাত ২:১৫

হোসিয়ারি পল্লী পরিদর্শনে মজুরী বোর্ডের চেয়ারম্যান

ডান্ডিবার্তা | ০৯ মে, ২০২৩ | ১২:০৪ অপরাহ্ণ

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট হোসিয়ারি শিল্পে নিয়োজিত শ্রমিকদের নি¤œতম মজুরী হার নির্ধারনের বিষয়ে পর্যালোচনা করতে নারায়ণগঞ্জের কয়েকটি হোসিয়ারি কারখানা পরিদর্শন করেছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রনালয়ের অধীনে নি¤œতম মজুরী বোর্ডের চেয়ারম্যান সিনিয়র জেলা জজ লিয়াকত আলী মোল্লা। গতকাল সোমবার সকালে নগরীর হোসিয়ারি পল্লীখ্যত উকিলপাড়া এলাকার নিউ বিধান হোসিয়ারি ও নিউ নাসিমা হোসিয়ারি এবং নয়ামাটিস্থ সেঞ্চুরী হোসিয়ারি ও নিউ গুডলাক হোসিয়ারির কারখানা পরিদর্শন করেন নি¤œতম মজুরী বোর্ডের চেয়ারম্যান সহ বোর্ডের অন্যান্য সদস্যগন। নারায়ণগঞ্জ হোসিয়ারি শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি স্বপন দত্ত ও সাধারন সম্পাদক মোঃ আওলাদ হোসেন পরিদর্শন দলের সদস্যদের কারখানাগুলো পরিদর্শন করতে সহযোগীতা করেন। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ হোসিয়ারী এসোসিয়েশনের সভাপতি শেখ মোঃ নাজমুল আলম সজল, সহ-সভাপতি (জেনারেল) মোঃ কবির হোসেন, সহ-সভাপতি (এসোসিয়েট) সাঈদ আহমেদ স্বপন, পরিচালক (জেনারেল) মোঃ আতাউর রহমান, বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজী আলী আহমেদ শেখ, মোজাম্মেল হক, আলহাজ্ব আবদুল হাই, আমিরুল্লাহ রতন, আলহাজ্ব মনির হোসেন, সাব্বির আহমেদ সাগর, বাবু বৈদ্যনাথ পোদ্দার, সাখাওয়াত হোসেন সুমন, আবুল বাশার (বাসেত), পরিচালক (এসোসিয়েট) আলহাজ্ব নাছির শেখ, হাজ্বী মোঃ শাহীন হোসেন, আলহাজ্ব নাছিম আহমেদ, আলহাজ্ব আতাউর রহমান, আলহাজ্ব মিজানুর রহমান। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন আল মদীনা হোসিয়ারির স্বত্তাধিকারী আলহাজ্ব মোঃ শাফিউদ্দিন সহ হোসিয়ারি এসোসিয়েশনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ। এছাড়াও এ বছরও শহরের অগ্রিঝুঁকিপূর্ণ ভবন পরিদর্শনের কাজ চলছে। তবে অগ্নিঝুঁকিপূর্ণ ভবন ও মার্কেটে অভিযানের ফলাফল এখনো জানা যায়নি। ফায়ার সার্ভিসের দৃষ্টিতে শহরের নয়ামাটি এলাকা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। অধিকাংশ ভবনের ফায়ার লাইসেন্স নেই। ব্যবসায়ীক এই এলাকার ভবন মালিকরা খুবই বেপরোয়া। একটি ভবন আরেকটির গা ঘেঁষারেষি করে গড়ে উঠেছে। মার্কেটে নেই পানির রিজার্ভার। নেই বিকল্প সিঁড়ি। যে সিড়ি আছে তাও অত্যন্ত চিকন। সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে নয়ামাটি হোসিয়ারী এলাকার সড়ক ও অত্যন্ত সরু। ভয়াবহ অগ্নিঝুঁকিতে থাকা নয়ামাটি এলাকার ব্যবসায়ীরা এ ব্যাপারে উদাসীন। বড় ধরনের কোন দুর্ঘটনা না ঘটলে সচরাচর কেহ সতর্ক হয় না। সূত্রমতে, নয়ামাটি হোসিয়ারী এলাকা অগ্নিকান্ডের রেডজোন। এখানে কোন ধরনের অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই। অগ্নিঝুঁকিতে ভবনগুলো পরিদর্শন চলছে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিদর্শকরা পরিদর্শন শুরু করেছেন। যে সকল ভবনের ফায়ার লাইসেন্স নেই সে সকল ভবন মালিকদের জেল জরিমানা হওয়ার কথা। ফায়ার লাইসেন্স না থাকলে এবং ভবনে অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকলে ভবন মালিককে সর্বোচ্চ ৬ বছরের কারাদ- দেয়া হতে পারে। নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস অচিরেই নয়ামাটি এলাকায় অভিযান চালাবে বলে জানান। বার বার মার্কেট এর ব্যবসায়ী ও ভবন মালিকদের সতর্ক করা হলেও তারা সেসবে কর্ণপাত করেন না। দিনে দিনে এই এলাকা আরও বেশিমাত্রায় ঘিঞ্জি হয়ে উঠছে। এক সময় তিন-চারতলা বিশিষ্ট বিল্ডিং ছিল। বর্তমানে ৭ তলা থেকে ৮ তলা পর্যন্ত ভবনের অভাব নেই। ব্যবসায়ীরা জানান, নয়ামাটি এলাকায় যুগের পর যুগ ধরে ফায়ার সার্ভিস সেবা দিয়েছে বিকল্প পথে। এক করিম মাকের্ট পর্যন্ত মিনার গার্মেন্টসের গলি পর্যন্ত ফায়ারের গাড়ি ঢুকে। সেখান থেকে পাইপ টেনে নিয়ে যাওয়া হয় ভেতরে ঘটনাস্থলে। আরেকটি পথ হচ্ছে লয়েল ট্যাঙ্করোড দিয়ে গাড়ি ঢুকিয়ে নয়ামাটি আখড়ার পেছনে নেয়া হয়। সেখান থেকে পাইপ টেনে নিতে হয়। এভাবেই চলছে অগ্নিনির্বাপণের কাজ। নারায়ণগঞ্জ সদর থানার সামনে দিয়ে লয়েল ট্যাংক রোডে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঢুকিয়ে নিতে হয় আখড়ার পেছনে। সেখান থেকে পানির পাইপ বিভিন্ন মার্কেটের ভেতর দিয়ে অগ্নিকান্ডেরস্থলে নিয়ে যাওয়া হয়। নয়ামটির ভেতরে অধিকাংশ ভবনেই পানির রিজারভর নেই। এই এলাকায় নেই কোন জলাধারও। সত্তরের দশকেও থানা পুকুরপাড় নামে নারায়ণগঞ্জ সদর থানার সামনে একটি বড় পুকুর ছিল। আশির দশকেও পুকুরের অস্তিত ছিল। নব্বইয়ের দশকে এসে পুকুর ভরাট করে ফেলা হয়। জানাগেছে, নয়ামাটি এলাকায় ব্যস্ত সময় দু’দিক থেকে দু’টি রিকশা আসলে সাইড দেয়ার জায়গা থাকে না। দুই রিকশার পেছনের চাকার নাট আড়াআড়িভাবে আটকে যায়। এই টক্কর ছাড়াতে ১০ মিনিটের যানজট বেধে যায়। চোখের পলকে এই যানজট বাড়তে থাকে। এরমধ্যে গলির মুখে একটি ঠেলাগাড়ি ঢুকলে আর রক্ষে নেই। যানজট অবধারিত। নয়ামাটির ভেতরে অধিকাংশ ব্যবসায়ী হেঁটে চলাফেরা করতে অভ্যস্ত। অনেকে নিজের প্রাইভেটকার করিম মার্কেটের সামনে বা গুলশান সিনেমা হল এলাকায় রেখে ভেতরে হেঁটে প্রবেশ করেন। হেঁটে চলাফেরা করতেই তাঁরা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। নয়ামাটিতে কোন অগ্নিকা- ঘটলে এখনো ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ভেতরে ঢুকতে পারে না। ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি নিয়ে বিকল্প পথ ব্যবহার করতে হয়। সূত্রমতে, নয়ামাটি বিখ্যাত হোসিয়ারীর জন্য। পাশাপাশি এখানেও সুতা ও কেমিক্যালের ব্যবসাও রয়েছে। সেই হিসেবে টানবাজার ও নয়ামাটি এলাকা দুটিকে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্িতি করেছেন নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস। টানবাজার ও নয়ামটি এলাকা ফায়ার সার্ভিসের “রেডজোন’ হিসাবে চিহিত এলাকা। অথচ এ বিষয়ে ব্যবসায়ীরা একেবারেই উদাসীন। বড় দুর্ঘটনার কয়েকদিন প্রশাসন তৎপর থাকে। এরপর আবার পুরনো চিত্র। ২০১৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি শহরের টানবাজার এলাকায় আবাসিক ভবন থেকে কেমিক্যালের গোডাউন সরিয়ে নিতে নির্দেশ দিয়েছিল প্রশাসন। এ জন্য ১০ দিন সময় চেয়েছিলেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু প্রায় তিন বছর পার হলেও সেই সিদ্ধান্ড বাস্তবায়িত হয়নি। শহরের প্রাণকেন্দ্রে কোন জলাধার নেই। আগে নারায়ণগঞ্জ সদর থানার পাশে ছিল থানা পুকুর পাড় পুকুর। এখন তাও নেই। শহরের নয়ামাটি কিম্বা উকিলপাড়া ও দ্বিগুবাবুর বাজারে আগুন লাগলে ফায়ার সার্ভিসের রিজার্ভ গাড়ির পানি শেষ হতেই ছুটতে হয় শীতলক্ষ্যা নদীতে। নয়ামাটি কিম্বা ডিআইটি এলাকায় আগুন নেভাতে পানি শেষ হলে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা ছুটে যায় ফজর আলী টাওয়ারে। ফজর আলী টাওয়ারে পানির বড় রিজার্ভার আছে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা বলেন, এখন শহরে পানির উৎস হয়েছে শেখ রাসেল পার্ক ও বাবুরাইল লেক প্রকল্পটি। এখান থেকে প্রচুর পানি মিলবে। তবে এটা কোন সমাধান নয়। শহর এলাকার জলাধারের বিকল্প হতে পারে পিলার হাইড্রেন্ট। শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট ও বাণিজ্যিক এলাকায় পিলার হাইড্রেন্ট বসানোর বিকল্প নেই। কেননা শহরের নয়ামাটি এলাকাসহ কয়েকটি এলাকা খুবই ঘিঞ্জি এলাকা। রাস্তা অত্যন্ত সরু। ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঢুকতে পারে না। এমন প্রতিকূল অবস্থা থেকে আমাদের মুক্তি দিতে পারে একমাত্র পিলার হাইড্রেন্ট। জানাগেছে, নারায়ণগঞ্জের হোসিয়ারী শিল্প কারথানা গড়ে উঠেছে শহরের নয়ামাটি, উকিলপাড়া, দেওভোগ মার্কেট ও লয়েল ট্যাঙ্ক রোড এলাকায়। হোসিয়ারী সমিতির তথ্য মতে, হোসিয়ারী এসোসিয়েশনের অর্ন্তৃক্ত দুই হাজার হোসিয়ারী কারখানা এবং এর বাইরে প্রায় ১০ হাজার হোসিয়ারী কারখানায় দুই লক্ষাধিক শ্রমিক কর্মরত আছেন। উল্লেখিত এ চারটি এলাকার মধ্যে সবচেয়ে অগ্নিকান্ডের ঝুঁকিতে রয়েছে নয়ামাটি, উকিল পাড়া এলাকার হোসিয়ারী শিল্পকারখানা। এ এলাকায় প্রবেশের সড়ক অত্যন্ত সরু, প্রায় শতাধিক মার্কেটে পাচ হাজার হোসিয়ারী কারখানা রয়েছে। প্রতিটি মার্কেট একেকটার সাথে আরেকটা সংযুক্ত। মার্কেটগুলোতে কোন বিকল্প সিঁড়ি নেই। অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটলে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন হোসিয়ারী মালিক ও শ্রমিকরা। ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিফেন্সের মতে, প্রাচ্যেরডান্ডি নারায়ণগঞ্জ শহর সর্বোচ্চ অগ্নিঝুঁকিতে রয়েছে। একটি প্রধান সড়ক নির্ভর এই শহরের বাণিজ্যিক এলাকায় প্রতিবছর অগ্নিকা-ে কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হচ্ছে। ঘটছে প্রাণহানির ঘটনা। রেডজোন এরিয়া হচ্ছে, শহরের নিতাইগঞ্জ থেকে শুরু করে নিমতলী, মিনাবাজার, টানবাজার হয়ে নয়ামাটি। ১নং রেলগেট ফলপট্টি হয়ে কালিরবাজার। কালিরবাজার থেকে মেট্রো সিনেমা মোড় হয়ে ভনচেম্বার পর্যন্ত রেডজোনভূক্ত এলাকায় পরেছে। নিতাইগঞ্জে মেইন সড়কে ট্রাকস্ট্যান্ড। তাছাড়া ভেতরেও ট্রাক পার্কিং করা থাকে। কোন গোডাউনে আগুন লাগলে ট্রাকের জন্যই ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ছুকতে পারবে না। তাছাড়া নিতাইগঞ্জের ভেতরের রাস্তা সব সময় দখলে থাকে। তেলের ড্রাম। কেমিক্যালের ড্রাম। বিভিন্ন মালপত্র। ঠেলাগাড়ি রাখা হয় রাস্তার উপর। বার বার সতর্ক করা হলেও ব্যবসায়ীসমাজ তোয়াক্কা করে না বলে জানান নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস সুত্র। এই ঝুঁকিপূর্ন এলাকায় মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস ও ব্যবসা করে আসছে। আর এ যেন মৃত্যু জেনেও বসবাস।




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা