আজ শুক্রবার | ১৫ আগস্ট ২০২৫ | ৩১ শ্রাবণ ১৪৩২ | ২০ সফর ১৪৪৭ | ভোর ৫:০৫

বাজারে এসেছে সোনারগাঁয়ের রসালো ফল লিচু

ডান্ডিবার্তা | ১১ মে, ২০২৩ | ১১:০৭ পূর্বাহ্ণ

মোঃ রইস উদ্দিন(রিপন)

বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী মসলিন খ্যাত ঈঁশাখার প্রাচীন রাজধানী সোনারগাঁয়ের মধুমাসের রসালো ও সুস্বাধু ফল লিচু এখন বাজারে সয়লাভ। আবহাওয়া প্রতিকূল ও অতিরিক্ত খড়ার কারণে এবছর আগেই পেঁকে গেছে বাগানের লিচু। অন্য জেলার তুলনায় সোনারগাঁয়ের মাঁটি ও আবহাওয়া লিচু চাষের জন্য বেশ উপযোগী। তাই সোনারগাঁয়ের চাষিরা লিচু বাগান করতে বেশ আগ্রহী। বিভিন্ন লিচু বাগান ঘুরে দেখা যায় প্রতিটি বাগানে গাছে গাছে থোকায় থোকায় টসটসে লাল সাদা কাঁচা পাকা লিচু ঝুলছে। লিচু বাগানের দিকে তাকালে দেখা যায় বাগানের সারিসারি গাছের ডালে ডালে ঝুলছে রসালো লিচু ফলের গুচ্ছ দেখলেই খেতে ইচ্ছে করে। বাগানের ভিতরে গিয়ে ঘুরে দেখা যায় প্রতিটি লিচু গাছে রয়েছে বৈদ্যুতিক বাতি, চারকোনা টিন লটকানো। বৈদ্যুতিক বাতি জ্বালানো হয় রাতে অর্থাৎ সন্ধ্যার পর থেকে এবং চার কোনা টিনের শব্দ শোনা যায় দিনে ও রাতে সবময়। বাগানে চারকোনা টিনের বাজানো উচ্চ শব্দে ও বৈদ্যুতিক বাতির কারণে বাগানের লিচু রক্ষা করা যায় কাক ও বাঁদুর থেকে। আবার বাগান মালিকরা ও বাগান কর্মীরা বাগানের লিচু রক্ষায় রাত জেগে পাহারা দিচ্ছে। সোনারগাঁ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আফরোজা সুলতানা বলেন অনাবৃষ্টি, একদিনের শিলা ও খড়ার কারণে গত বছরের তুলনায় এবার লিচুর ফলন কিছুটা কম হয়েছে এবং লিচু ও তেমন বড় হয়নি। তবে এ বছর লিচুর মূল্য বেশি হওয়ায় বাগানিরা লিচু বিক্রি করে বাগান মালিক ও লিচু ব্যবসায়ীরা লাভবান হবেন বলে এমনটি আশা করছেন কৃষি কর্মকর্তা। লিচু গাছে মুকুল আসা থেকে শুরু করে বাগান থেকে লিচু ভেঙে বিক্রি করা পর্যন্ত কৃষি বিভাগের পক্ষ হতে লিচু বাগানিদেরকে সব রকম পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। কৃষি কর্মকর্তা আরো বলেন ব্যবসা পুরোপুরি ভাগ্যের উপর নির্ভর করে। এবছর লিচুর মূল্য অন্য বছরের তুলনায় বেশি হওয়ায় বাগানিরা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন এবং লাভবান হবেন। বাগান মালিক ও লিচু ব্যবসায়ীদের সূত্রে জানা যায় সোনারগাঁ উপজেলায় ছোট বড় সব মিলিয়ে ৪ থেকে ৫ শত বাগান রয়েছে। বাড়ির আঙ্গিনায়, খালি ভিটিতে, ফাঁকা জমি ও পুকুরের পাড় সহ বিভিন্ন খালি জায়গায় সোনারগাঁয়ের বাগানিরা লিচু গাঁছ লাগিয়ে লিচু বাগান করে থাকে। সোনারগাঁয়ে সব ইউনিয়নেই কম বেশি লিচু বাগান রয়েছে। তবে পৌরসভা, মোগরাপাড়া ও বৈদ্যের বাজার ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি লিচু বাগান রয়েছে। সোনারগাঁ উপজেলায় পৌরসভার সহ প্রায় ৫০ থেকে ৬০টি গ্রামে লিচুর চাষ হয়ে থাকে। এর মধ্যে পৌরসভার গোয়ালদী, ইছাপাড়া, দত্তপাড়া, হরিষপুর, পানাম গাবতলী, দুলালপুর, খাসনগর, দিঘীরপাড়, চিলারবাগ, হাত-কোপা, লাহাপাড়া বাগমুছা, অর্জুনদী, গোবিন্দপুর ও বালুয়া দিঘীরপাড়। বৈদ্যের বাজার ইউনিয়ন এর দামোদরদী, হামছাদী, হারিয়া ও পঞ্চবটি। মোগরাপাড়া ইউনিয়নের গুহাটটা ও ফুলবাড়িয়াতে সবচেয়ে বেশি লিচুবাগান রয়েছে। সোনারগাঁয়ের বাগানীরা কদমী, মোজাফফরপুরী, চায়না-৩, এলাচি ও পাতি এই ৫ জাতের লিচুর চাষ করে থাকেন। তবে আকারে বড় ও বেশি রসালো এবং ক্রেতা চাহিদা হওয়ায় কদমি লিচুর চাষ বেশি করে থাকেন। সোনারগাঁয়ের বাগান মালিকরা প্রতিবছর এক একটি বাগান ৪ থেকে ৫ লক্ষ টাকায় বিক্রি করে থাকেন। লিচু চাষে আগ্রহী বাগানিরা প্রকারভেদে এবার ১ হাজার পিস কদমি জাতের লিচু বিক্রি করছেন ৪ হাজার টাকা থেকে ৪হাজার ৫০০শত টাকা পর্যন্ত এবং অন্যান্য জাতের ১ হাজার লিচু বিক্রি করছেন ২ হাজার ৫০০শত টাকা থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত। বাগানি ও ক্রেতারা (আগত পাইকার) বলছেন অন্য বছরের তুলনায় এ বছর লিচুর দাম একটু বেশি। তবে এ বছর লিচুর দাম বেশি হওয়াতে বাগানিরা লাভবান ও খুশি। বাড়তি আয়ের জন্য পাশাপাশি বাগানিরা লিচু বাগানে মধু চাষ ও করে থাকেন। সোনারগাঁয়ের লিচু ব্যবসায়ীরা বলেন অন্য এলাকার লিচুর চেয়ে সোনারগাঁয়ের লিচু সুস্বাদু ও রসালো এবং সিজনে লিচু বাজারে সবার আগে আসায় চাহিদা অনেক বেশি থাকে। বাগানিরা এলাকার মানুষের চাহিদা মিটিয়ে পাইকারদের মাধ্যমে রাজধানীর সর্ববৃহৎ ফলের আড়ৎ যাত্রাবাড়িতে পৌঁছে দিচ্ছে সোনারগাঁয়ের এই লাল টসটসে রসে ভরা বাহারি জাতের লিচু। যাত্রাবাড়ির ফলের আড়ৎ হতে এখন প্রতিদিন বিভিন্ন জেলার আগত লিচু ব্যবসায়ীরা সোনারগাঁয়ের লিচু ক্রয় করে নিয়ে দোকানে, হাঁটে, বাজারে, গ্রামগঞ্জে ও শহরের অলিতে গলিতে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছে। বিক্রি করার উদ্দেশ্যে পাইকারেরা বাগান মালিকদের কাছ থেকে টুকরি ভর্তি লিচু ক্রয় করে নিয়ে আসে সোনারগাঁয়ের বৃহৎ বাজার মোগরাপাড়া চৌরাস্তায়। তাই মোগরাপাড়া চৌরাস্তায় প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা রাত পর্যন্ত ক্রেতা বিক্রেতার ভীড় লেগেই থাকে। নরসিংদী বেলানগর জেলখানার মোড় (সাউথ বাংলা ব্যাংকের নিচ) তরোয়া থেকে আসা এক ফলের ব্যবসায়ী মোঃ হোসেন মিয়ার সাথে সাথে কথা হলে তিনি জানান দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে সোনারগাঁ এলাকায় ব্যবসা করছেন এবং লাভবান হচ্ছেন। ব্যবসায়ী হোসেন মিয়া বলেন সোনারগাঁয়ের লিচু পোকা ও কেমিক্যাল মুক্ত। তাই সোনারগাঁয়ে লিচুতে ক্রেতাদের আগ্রহ বেশি। এমনকি সোনারগাঁয়ের লিচু মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, আমেরিকা সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পৌঁছে যাচ্ছে। তাই সোনারগাঁয়ের লিচুর এতো চাহিদা ও সুনাম রয়েছে দেশের সর্বত্র।




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা