আজ শুক্রবার | ১৫ আগস্ট ২০২৫ | ৩১ শ্রাবণ ১৪৩২ | ২০ সফর ১৪৪৭ | ভোর ৫:২৩

অগ্নি ঝুঁকিতে হোসিয়ারি পল্লী

ডান্ডিবার্তা | ১৪ মে, ২০২৩ | ১০:০৫ পূর্বাহ্ণ

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট প্রাচীনকাল থেকেই বাণিজ্যিক নগরী হিসেবে পরিচিত নারায়ণগঞ্জ। এই নগরীর অন্যতম বাণিজ্যিক এলাকা হচ্ছে নয়ামাটি হোসিয়ারি পল্লী। একশতক আগে নারায়ণগঞ্জে গড়ে উঠেছে হোসিয়ারি ব্যবসা। প্রতিদিন কয়েক শ’ কোটি টাকার হোসিয়ারি পণ্যের বেচাকেনা হয় এখানে। অথচ নিরাপত্তার দিক থেকে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হচ্ছে এটি। সম্প্রতি বঙ্গবাজার এবং নিউ মার্কেটে অগ্নিকা-ের পর এই নারায়ণগঞ্জের হোসিয়ারি পল্লীর অগ্নিঝুঁকির বিষয়টি বেশ আলোচিত হয়েছে। হোসিয়ারি ব্যবসায়ীদের মতে, অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা নারায়ণগঞ্জের নয়ামাটি এলাকা সবচেয়ে অগ্নিঝুঁকিতে রয়েছে। এই এলাকা এতটাই অগ্নিঝুঁকিতে রয়েছে যে আগুন লাগলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লেগে যাবে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে। অপরিকল্পিতভাবে ভবনগুলো নির্মাণন করার ফলে আগুন লাগলে মুহূর্তের মধ্যে অন্য ভবনে ছড়িয়ে যাবে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা না থাকায় এখনে অগ্নিঝুঁকি সবচেয়ে বেশী। অগ্ননির্বাপনের জন্য যে ব্যবস্থা রয়েছে এগুলো দিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না। ফলে যেকোনো ছোট অগ্নিকা- ভয়াবহ রূপ নেয়ার আশঙ্কা ব্যবসায়ীদের।তবে নারায়নগঞ্জের হোসিয়ারি পল্লী নয়ামাটিকে অগ্নিঝুঁকি থেকে বাঁচাতে নানা উদ্যোগ নেয়ার কথা জানিয়েছেন হোসিয়ারি শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্টরা। নয়ামাটি হোসিয়ারি পল্লীকে ঝুঁকিমুক্ত করে কিভাবে আধুনিকায়ন করা যায় সেই পরিকল্পনা করছে তারা। ঝুঁকি কমাতে কি কি ব্যবস্থা নেয়া যায় এ বিষয়ে শ্রম অধিদফতর, বিসিক, ফায়ার সার্ভিস, ডিপিডিসিকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সরেজমিন দেখা গেছে, নয়ামাটি এলাকায় যে ভবনগুলোতে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে সেই ভবনগুলোর প্রায় ৯০ ভাগই একটির সাথে ঘেঁষে আরেকটি ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। দু’টি ভবনের মধ্যে নির্দিষ্ট জায়গা ফাঁকা রাখার নিয়ম থাকলেও সেই নিয়মকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এক দেয়ালেই দু’টি ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। সরুপথ দিয়ে মালামাল আনা নেয়া করছে হোসিয়ারি শ্রমিকরা। জানা গেছে, দোকানপাটগুলোতে রাখা হয় না অগ্নিনির্বাপক মেশিন, বালু বা পানির ব্যবস্থা যাতে অগ্নিকা-ের শুরুতেই নিজস্ব সক্ষমতায় সেটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়। প্রতিদিন এই মার্কেটে হাজার হাজার ক্রেতা ও সাধারণ মানুষের যাতায়াত করলেও সে তুলনায় রাস্তাগুলো অত্যন্ত সঙ্কুচিত। এর মধ্যে রাস্তাগুলোর প্রবেশ পথে গড়ে উঠেছে অবৈধ দোকানপাট। সঙ্কুচিত রাস্তা এবং প্রবেশ মুখে অবৈধ দোকানপাটের কারণে ফায়ার সার্ভিসের গাড়িগুলো ভেতরে প্রবেশ করতে পারবে না।হোসিয়ারি মালিক মজিবুর রহমান জানান, নয়ামাটি দেশের বৃহৎ হোসিয়ারি ব্যবসাকেন্দ্র অথচ এখানের রাস্তাগুলো খুবই সরু। আমরা সবসময় অগ্নিঝুঁকিতে থাকি। বড় কোনো অগ্নিকা- ঘটলে অনেক ক্ষতির মুখে পড়তে হবে ব্যবসায়ীদের। তিনি বলেন, ‘এখানে ভবনগুলো একটির সাথে আরেকটি লাগানো। মাঝে কোনো ফাঁকা জায়গা নেই। একটি ভবনেও পানির জন্য আন্ডারগ্রাউন্ড রিজার্ভার নেই। ২৫ ফুট রাস্তার প্রয়োজন। কিন্তু নয়ামাটির রাস্তা হচ্ছে ৬ থেকে ৭ ফুট। এ ছাড়া ভবনগুলো রাস্তার ওপরে নির্মাণ করা হয়েছে। যে কারণে ফায়ার সার্ভিসের কোনো গাড়ি যেতে পারে না। বৈদ্যুতিক সংযোগগুলোও এলোমেলো। অবৈধ সংযোগ আছে। এসব কারণে নয়ামাটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা।’ নারায়ণগঞ্জ কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের উপ-মহাপরিদর্শক ড. রাজীব চন্দ্র দাস বলেন, নারায়ণগঞ্জে আমাদের হোসিয়ারি সেক্টর পুরোটাই অগ্নঝুঁকিতে রয়েছে। এখানে শিশু শ্রমিক আছে এবং নিরাপত্তা ঝুঁকিও আছে। ফায়ারের কোনো সেফটি নাই। অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটলে মানুষ যে বের হয়ে আসবে তাও সম্ভব না। তাই এখানে আমাদের লাইসেন্স দেওয়াও বন্ধ আছে। বন্দরে একটি ইপিজেড হওয়ার কথা। তাদের সেখানে স্থানান্তর করার একটি পরিকল্পনা আছে। কারণ দুর্ঘটনা ঘটে গেলে অনেক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। মন্ডলপাড়া ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক ফখরুদ্দিন আহম্মেদ বলেন, নারায়ণগঞ্জ শহরের নয়ামাটি এবং এর নিকটবর্তী প্রতিটি হোসিয়ারি পল্লী ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্যে আছে। আমরা মাঝে মাঝে ভাবি যদি এখানে কোনো বড় ধরনের অগ্নিকান্ড কিংবা অন্য কোনো দুর্ঘটনা হয়, তাহলে আমরা কি করবো! এই হোসিয়ারী পল্লীগুলোর রাস্তাঘাট সরু। আগুন লাগলে ফায়ার সার্ভিসের গাড়িও ঢুকবে না। যেসব দালান ও বিল্ডিংয়ে হোসিয়ারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে, তার বেশিভাগই মেয়াদোত্তীর্ণ এবং জরাজীর্ণ অবস্থায় আছে। তাই যদি এই প্রতিষ্ঠানগুলো এখান থেকে সরিয়ে নেওয়া হয় বা স্থানান্তর করা হয়, তাহলে তো খুবই ভালো হবে। আমিও মনে করি এটাই করা উচিৎ। নইলে বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে দেখা যাবে কেউ এর দায় নেবে না। এরআগে নয়ামাটিতে অগ্নিঝুঁকি নিয়ে নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল আরেফিন জানিয়েছিলেন, ‘২০২০ সালে নয়ামাটি এলাকায় জরিপ করেছিলাম। সেখানে প্রায় অর্ধশত বহুতল ভবন রয়েছে যেগুলোতে প্রায় দুই হাজার ২০০ হোসিয়ারি রয়েছে। একটিতেও অগ্নিনির্বাপনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। তখন আমরা নোটিশ দিয়েছিলাম। কিছু পরিবর্তন এসেছে; কিন্তু ঝুঁকি কমেনি। উল্লেখ্য, ১৯২১ সালে বাবু সতীশ চন্দ্র পাল নারায়ণগঞ্জের টানবাজারে প্রথম হোসিয়ারি কারখানা প্রতিষ্ঠা করেন।




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা