আজ শুক্রবার | ১৫ আগস্ট ২০২৫ | ৩১ শ্রাবণ ১৪৩২ | ২০ সফর ১৪৪৭ | ভোর ৫:১৫

কর্মীদের সংঘাতে বিব্রত বিএনপি

ডান্ডিবার্তা | ৩০ মে, ২০২৩ | ১০:০৭ পূর্বাহ্ণ

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট নারায়ণগঞ্জে বিএনপির কেন্দ্রী নেতাদের সামনে নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় বিব্রত হয়ে পড়েছে নারায়ণগঞ্জ বিএনপি। নারায়ণগঞ্জ বিএনপির শীর্ষ নেতারা কেন্দ্রকে জবাব দিতে পারছে না। প্রকাশ পেয়েছে তাদের সাংগঠনিক দুর্বলতা। নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির কর্মসূচিতে সামনে দাঁড়ানো নিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিশৃঙ্খলার ঘটনায় বিব্রত দলটির দায়িত্বশীল নেতা থেকে শুরু করে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা। প্রত্যেকটি কর্মসূচিতেই নেতাকর্মীদের এমন বিশৃঙ্খলার কারণে হাজারো মানুষের জমায়েত সত্ত্বেও কর্মসূচির যেমন সৌন্দর্যহানি ঘটছে ঠিক তেমনিভাবে সাধারণ মানুষের কাছে দলটিকে হাসির পাত্রে পরিণত করছে। তবে এমন বিশৃঙ্খলা এড়াতে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি। জেলা বিএনপির একাধিক সূত্রে এমনই তথ্য পাওয়া যায়। গত বছরের ১৫ নভেম্বর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ৯ সদস্যবিশিষ্ট জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়। এতে জেলা বিএনপির আহবায়ক করা হয় ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনকে এবং সদস্য সচিব করা হয় জেলা যুবদলের আহবায়ক গোলাম ফারুক খোকনকে। এ কমিটি হওয়ার পর মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনের নেতৃত্বে জেলা বিএনপি আসে। তার নেতৃত্বে এখনো পর্যন্ত জেলা বিএনপির প্রত্যেকটি কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে পালন করা হয়েছে। কোনো কর্মসূচিতেই মারামারি কিংবা ধাক্কাধাক্কির মতো কোনো বিশৃঙ্খলা ঘটেনি। তবে জেলা বিএনপি যখন মহানগর বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ কর্মসূচি পালন করেছে তখন বিশৃঙ্খলার ঘটনা ঘটেছে। তাই যেকোনো বিশৃঙ্খলা এড়াতে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সঙ্গে জেলা বিএনপি আপাতত কোনো কর্মসূচি পালন করতে ইচ্ছুক নয়। নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির কর্মসূচিতে চরম বিশৃঙ্খলার পর থেকেই জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। জেলা বিএনপি এখন থেকে যেকোনো কর্মসূচি পালন করার পূর্বে বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নিবে। এছাড়া জেলা বিএনপির আগের কর্মসূচির তুলনায় আগামী কর্মসূচিগুলো যেনো আরও সুশৃঙ্খলভাবে পালন করা যায় সেদিকে বেশি লক্ষ্য রাখবে নেতৃবৃন্দ। জেলা বিএনপির একাধিক নেতা জানিয়েছেন, মহানগর বিএনপির কর্মসূচিতে যে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়েছে তা জেলা বিএনপির কর্মসূচিতে ঘটলে তা দলের জন্য সুখকর হবে না। এতে তৃতীয় পক্ষ সুযোগ নেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া জেলা বিএনপির আহবায়ক মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন এখন ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের প্রধান টার্গেট। তাই তার নেতৃত্বাধীন কোনো কর্মসূচিতে বিশৃঙ্খলা ঘটলে তার দিকে আঙ্গুল তুলতে পিছপা হবেন না ক্ষমতাসীনরা। বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী এমপি শামীম ওসমানের প্রধান টার্গেটই একন গিয়াস উদ্দিন। বর্তমানে জেলা বিএনপির কোনো কর্মসূচিতে মারামারি কিংবা ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটলেই গিয়াস উদ্দিনকে তুলোধোনা করে ছাড়বেন তিনি। সর্বশেষ গত ২৩ মে বিকেলে শহরের খানপুর এলাকায় বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচিতে মারামারির ঘটনা ঘটে। এদিন কর্মসূচি শুরু হওয়ার আগেই দুপুর থেকেই কর্মসূচিস্থলে নেতাকর্মীরা জড়ো হতে থাকেন। সেই সাথে পদযাত্রা পূর্ববর্তী সমাবেশে বক্তব্য শুরু হয়। বক্তব্য শুরু হওয়ার সাথে সাথেই যুবদল নেতা মাজহারুল ইসলাম জোসেফ মিছিল নিয়ে প্রবেশ করেন। এসময় তাকে মহানগর যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক শাহেদ স্বাগত জানিয়ে থামাতে বলেন। আর এতেই জোসেফের লোকজন শাহেদের উপর ক্ষেপে যায়। এসময় শাহেদ ও জোসেফের অনুসারীদের সাথে বাকবিত-া ও মারামারির ঘটনা ঘটে। পরে অন্যান্য নেতারা এগিয়ে এসে তাদের শান্ত করেন। তাদের থামাতে গিয়ে জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুকুল ইসলাম রাজীবের মোবাইল চুরি হয়ে যায়। আর এই চুরির দোষ পড়ে জোসেফের অনুসারীদের উপর। পরে আবার দ্বিতীয় দফায় তাদের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটে। রাজীব শাহেদ জোসেফ বারবার তাদের অনুসারীদের থামার কথা বললেও তাঁরা থামছিল না। এসময় সমাবেশস্থলে আসেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। আর এসময়ে রিজভীর পাশে দাঁড়ানো নিয়ে বিএনপির সহ আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ ও আড়াইহাজার থানা বিএনপি নেতা মাহমুদুর রহমান সুমনের লোকজনদের মধ্যে বাকবিতন্ডা ঘটে। সুমনকে ধাক্কা দেন আজাদের এক অনুসারী। তখন সুমনের পক্ষে জেলা যুবদলের সদস্য সচিব মশিউর রহমান রনির লোকজন মিলে আজাদের লোকজনদের উপর চড়াও হলে শুরু হয় ফের মারামারি। প্রধান অতিথি রুহুল কবির রিজভী মাইক হাতে নিয়ে থামানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। এক পর্যায়ে তাঁরা শান্ত হন। পদযাত্রা শেষে ওই মারামারির ঘটনার রেশ ধরে শহরের মিশনপাড়া এলাকার বৈশাখী হোটেলের সামনে সাখাওয়াত ও টিপুর সাথে কথা বলার সময়ে মশিউর রহমান রনিকে মারতে আজাদের অনুসারী রফিক। পরে রফিককে সেখান থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। তারপর রনির অনুসারীরা রফিককে একা পেয়ে রাস্তায় ফেলে বেদম মারধর করে। সেই সাথে দফায় দফায় মারামারির ঘটনা ঘটে। খানপুর হাসপাতালে ছাত্রদল নেতা আতা-ই-রাব্বীকে রনির অনুসারি মনে করে রাজীবের অনুসারীরা মারধর করে। এভাবে পুরো ঘটনাজুড়েই এই কয়েকজন নেতাকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়ে থাকে। এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহবায়ক মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন বলেন, ওইদিন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির কর্মসূচিতে যে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটেছে। এটা কোনো দলীয় বিষয় না। এটা হয়েছে আড়াইহাজারের দুই নেতার দ্বন্দ্বের কারণে। শুনেছি কারা আগে দাঁড়াবে এ নিয়ে বিশৃঙ্খলা ঘটে। এটা এক কথায় থানার নেতৃবৃন্দের অন্তঃকোন্দলের বহিঃপ্রকাশ বলে আমি মনে করি। এদিকে মহানগর বিএনপি কর্মসূচিতে যারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছেন তাদের একাধিক ভিডিও কেন্দ্রীয় নেতাদের হাতে পৌঁছেছে বলে জানা যায়। তারা ভিডিওগুলো দেখে যাচাই বাচাই করে ওইসব নেতাদের শাস্তির সম্মুখীন করবেন। এবারের ঘটনাটি নিয়ে কেন্দ্রীয় বিএনপির বেশ সিরিয়াস। তাই তাঁরা মারামারির বিষয়টি সহজভাবে গ্রহণ করছেন না। বিএনপির কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ ও আড়াইহাজার থানা বিএনপি নেতা মাহমুদুর রহমান সুমনের উপর বেশি ক্ষোভ কেন্দ্রীয় নেতাদের। তাদের মধ্যে চলমান দীর্ঘদিনের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ তারা নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির কর্মসূচিতে ঘটিয়েছে। পাশাপাশি মহানগর বিএনপির কর্মসূচিতে জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক মাসুকুল ইসলাম রাজীব ও জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান রনির মাতুব্বরী ভালো চোখে নেয়নি বিএনপি। তাই বিশৃঙ্খলার দায়ে এই চার নেতার শাস্তির সম্মুখীন হতে পারে। অন্যদিকে, নিজেদের মধ্যে এমন সংঘর্ষ, মারামারি ঘটনার ফলে কর্মসূচিগুলোতে যেমন বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হচ্ছে একইভাবে কর্মী-সমর্থকদের নিয়ন্ত্রণ করা নিয়ে মহানগর নেতারা বারবার ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছেন। পাশাপাশি বিএনপিকেও তাঁরা প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলছেন। নারায়ণগঞ্জ বিএনপির কর্মসূচিগুলোতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে আসা কেন্দ্রীয় নেতারাও এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। দিন যতোই যাচ্ছে কর্মসূচিগুলোতে বিএনপির নেতাকর্মীরা ততোই তাদের উচ্ছৃঙ্খল মনোভাব প্রকাশ করছেন। বিএনপির কর্মসূচিতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হওয়া যেনো এটা এখন চিরায়ত নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাধারণ মানুষের মতে, বিএনপি দীর্ঘদিন ক্ষমতায় না থেকেই যেভাবে কর্মসূচির নামে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করছে ক্ষমতায় থাকলে তাঁরা কি যে করবে? তাদের এই সময়টায় যেখানে ঐক্যবদ্ধ থাকা বেশি প্রয়োজন ওই সময় তাঁরা নিজেদের স্বার্থে দলের মধ্যে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করছে। যা নিজেদেরই বিপদ ডেকে আনবে।




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা