আজ শুক্রবার | ১৫ আগস্ট ২০২৫ | ৩১ শ্রাবণ ১৪৩২ | ২০ সফর ১৪৪৭ | রাত ২:১৬

সিদ্ধিরগঞ্জে নুর হোসেনের ভাই ভাতিজারা বেপরোয়া

ডান্ডিবার্তা | ৩০ মে, ২০২৩ | ১০:২৬ পূর্বাহ্ণ

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট সিদ্ধিরগঞ্জে বিভিন্ন অপকর্মের হোতা সমালোচিত ব্যক্তি তাজুল ইসলাম ও নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুন মামলার ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত আসামি ঘাতক নুর হোসেনের ভাই কাউন্সিলর নুর উদ্দিন এবং ভাতিজা কাউন্সিলর শাহজালাল বাদল ফের বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। আতংঙ্ক যেনো কাটছেই না নাসিক ৩ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীদের। একের পর এক অপকর্ম করে প্রায়ই পত্রিকার শিরোনাম হতে দেখা গেছে এই ব্যাক্তিদের। তবে এতো অপরাধ করেও পার পেয়ে যাওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীদের মাঝে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক। জানা যায়, ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল মোড়ের উত্তর পাশে গড়ে উঠা বহুতল ভবন বিশিষ্ট বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আজিজ কো-অপারেটিভ শপিংমলটি জোরপূর্বক ভাবে সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে রাতের আধাঁরে দখল করে নিয়েছেন নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুন মামলায় ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত আসামি ঘাতক নুর হোসেনের ভাই কাউন্সিলর নুর উদ্দিন ও ভাতিজা বিতর্কিত কাউন্সিলর শাহজালাল বাদল। আর শপিংমলটি দখলে নিতে সন্ত্রাসী বাহিনীর নেতৃত্ব দেন সে সময় তৎকালীন আজিজ কো-অপারেটিভ কোম্পানীর কতিপয় অসাধু কর্মচারী (তাদের নামে মার্কেট থেকে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের দায়ে ১০/১৫ টি মামলা রয়েছে) সাইফুল ইসলাম, নূর মোহাম্মদ রাকিব, আলিফ হোসেন, হাসান মাহমুদ, কামাল হোসেন, অমিত এবং কাউন্সিলর বাদল ও নুরুদ্দিনের প্রায় শতাধিক অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অংশ নেয়। পরে এই সন্ত্রাসী বাহিনীরা আজিজ কো-অপারেটিভ এর কর্মচারীদের মারধর, লুটপাট ও ভাংচুর করে। এ ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগীরা।দিনে আজিজ কো-অপারেটিভ শপিংমল হলেও রাতের চিত্র পুরোটাই ভিন্ন। নাম পরিবর্তন করে হয়ে যায় সৌদি বাংলা। গত বেশ কিছুদিন পূর্বে সিদ্ধিরগঞ্জের চিটাগাং রোডের মুক্তি স্মরনিতে অবস্থিত সমবায়ের মার্কেট আজিজ কো-অপারেটিভ শপিংমল নামেই সাধারণ মানুষ দেখে আসছিল। হঠাৎ করেই শপিংমলটির সাবেক কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম ও নুর হোসেনের ভাই নুর উদ্দিন, ভাতিজা শাহজালাল বাদল তাদের সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে রাতের অন্ধকারে সমবায়ের মার্কেট আজিজ কো-অপারেটিভ শপিংমলের নাম পরিবর্তন করে সৌদি বাংলা শপিংমলের নামে ব্যানার ফেস্টুন লাগিছে।সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সাল থেকে নির্মাণ কাজ শুরু করে আজিজ কো-অপারেটিভ। ২০২৩ সাল পর্যন্ত ভবনটির প্রায় ৮০% নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়। আজিজ কো-অপারেটিভ এরই মধ্যে ২৫৭ টি দোকান কিস্তিতে বিক্রয় করে। বাকী নির্মাণ কাজ চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে সম্পূর্ন করে ক্রেতা ও জায়গার মালিকদের দোকান বুঝিয়ে দেওয়ার কথা ছিলো । কিন্তু আজিজ কো-অপারেটিভ এর সাবেক চেয়ারম্যান এম তাজুল ইসলাম তার ভাই রফিকুল ইসলাম এবং নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুন মামলার প্রধান আসামী নূর হোসেনের ভাই নূরু উদ্দিন ও তার ভাতিজা শাহজালাল বাদল গত ২৭ শে ফেব্রুয়ারী রাতের আধাঁরে আজিজ কো অপারেটিভ এর মার্কেটটি দখল করে নেয়। কে এই তাজুল ইসলাম? তিনি এক সময়ে আজিজ কো-অপারেটিভ এর চেয়ারম্যান (বর্তমানে সাবেক) ছিলেন। তাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক অভিযোগ। এর আগেও তিনি ইসলামি ব্যাংক, ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্সুরেন্সসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থআত্মসাতের দায়ে বিতারিত হয়েছেন। তাজুল ইসলাম যুদ্ধাপরাধি ও জঙ্গি অর্থায়নে সহযোগীতাও করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সূত্রে আরও জানা যায়, সমবায় মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. প্রশান্ত কুমার রায় গত ২০১৬ সালে আজিজ কো-অপারেটিভ এর সার্বিক বিষয় তদন্ত করে তিনশত কোটি টাকা আত্মসাৎ ও একশত বারো কোটি টাকা কানাডায় পাচারের সত্যতা পায়। এছাড়াও তাজুল ইসলাম কানাডার বেগম পাড়ায় বাড়ি করার তালিকায় ত্রিশ জনের মধ্যে তার নামও উঠে আসে। এর প্রেক্ষিতে সমবায় মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. প্রশান্ত কুমার রায় আজিজ কো-অপারেটিভ এর সাবেক চেয়ারম্যান এর দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন কে ব্যাবস্থা নিতে বলেন এবং একটি তদন্ত রিপোর্ট সি.আই.ডি তে পাঠান। এছাড়াও সমবায়ের বিভিন্ন তদন্ত শেষে গত বছরের ১৮ সালে সমবায় অধিদপ্তরের যুগ্ম নিবন্ধক মোঃ দিদার উদ্দিন আহম্মেদ রমনা থানায় একটি মামলা করেন। যার প্রেক্ষিতে তিনশত কোটি টাকা আত্মসাৎ ও ২০১৯ সালে সি.আই.ডির করা মামলায় একশত বারো কোটি টাকা কানাডায় পাচারের দায়ে গত চার বছর যাবত কারাগারে ছিলেন। এদিকে তার বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাত ও মানি লন্ডারিং সহ বিভিন অপরাধে বর্তমানে অর্ধশতাধিক মামলা রয়েছে। তিনি আজিজ কো-অপারেটিভ এর ১৭০ টি শাখার গ্রাহকদের একশত বারো কোটি টাকা আগামী ৬ মাসের মধ্যে প্রদান করবেন এই মর্মে মুচলেকা দিয়ে হাইকোর্ট থেকে ২০২২ সালের ৫ ডিসেম্বর ৬ মাসের জামিনে আসেন। যা দেশের সকল প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়া প্রচার করে। কিন্তু আজ প্রায় ছয় মাস অতিবাহিত হওয়ার পরও তিনি আজিজ কো-অপারেটিভ এর গ্রাহকদের কোন প্রকার টাকা পরিশোধ না করে বরং আজিজ কো-অপারেটিভ এর বর্তমান পরিচালনা পরিষদ, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ আজিজ কো-অপারেটিভ এর আমানতকারীদের হত্যার হুমকি ও বিভিন্ন রকম হয়রানি মূলক কাজ করছেন। আজিজ কোঃ অপারেটিভ এর গ্রাহকরা জমাকৃত অর্থ ফিরে পাওয়ার জন্য যারা তাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন তাদেরকে উল্টো মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। জানা গেছে, অভিযুক্ত তাজুল ইসলাম কারাগার থেকে জামিনে মুক্ত হয়ে আজিজ কোম্পানির গ্রাহকদের টাকা ফেরত না দিয়ে বরং সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে আজিজ কো-অপারেটিভ এর সকল সম্পদ দখল করে বিক্রি করে দিয়ে কানাডায় পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। কিছুদিন পূর্বেও তিনি ও তার স্ত্রী পাসপোর্ট অফিসে যোগাযোগ করে ছিলেন। তাছাড়া তাজুল ইসলাম আজিজ কো-অপারেটিভ এর আমানতকারীদের একশত বারো কোটি টাকা না দিয়ে তার জামিনের মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য আমানতকারীদের ভূয়া প্রাপ্তি স্বিকার এর কাগজ পত্র তৈরি করার ও সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে জমাদানের চেষ্টা করছেন বলে জানা গেছে। এদিকে সর্বশেষ গত শনিবার আজিজ কো-অপারেটিভ কমার্স এন্ড ফাইনান্স ক্রেডিট সোসাইটি লিঃ এর আমানতকারীরা ঢাকা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে একটি মানববন্ধন করেন। মানববন্ধনে আজিজ কোÑঅপারেটিভ এর আমানতকারীরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাদের দাবি তাদের কষ্টার্জিত অর্থ যা (অর্থআত্মসাতকারী) তাজুল ইসলাম কানাডায় পাচার করেছেন তা ফিরিয়ে দিতে এবং তাজুল ইসলাম যেন বিদেশে পালিয়ে যেতে না পারে সে ব্যবস্থা গ্রহণ করার আহবান জানান আমানতকারীরা। সমবায় অধিদপ্তরের মাননীয় ডিজি, সমবায় মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে আবেদন করেন আমানতকারীরা। তারা জানান সিদ্ধিরগঞ্জের চিটাগাংরোডে যে আজিজ কো অপারেটিভ শপিং মল নির্মিত হচ্ছে তা যেন সন্ত্রাসীদের কাছ থেকে দখল মুক্ত করে আজিজ কো-অপারেটিভ এর কাছে ফিরিয়ে দেন। বিষয়টি অস্বীকার করে নাসিক ৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শাহজালাল বাদল মুঠোফোনে বলেন, আজিজ কো অপারেটিভ নামে কোন শপিংমল নেই। যেটা আছে সেটা সৌদি বাংলা। আমি জোর করে কোন ব্যানার ফেন্টুন লাগাইনি। প্রশাসন কি ঘুমিয়ে আছে? অপরাধ করলে প্রশাসন আছে। এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো: মঞ্জুরুল হাফিজ (বিপিএএ) বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি। এদিকে নারায়ণগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার মো: গোলাম মোস্তফা রাসেল বলেন, কোন সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সাথে জড়িত এমন কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। তাকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। হোক সে সাধারণ মানুষ কিংবা জনপ্রতিনিধি। আইনের উর্ধে কেউ নন।




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা