আজ শুক্রবার | ১৫ আগস্ট ২০২৫ | ৩১ শ্রাবণ ১৪৩২ | ২০ সফর ১৪৪৭ | রাত ১২:১২

যুবদলের নেতৃত্ব নিয়ে তৃনমূলে ক্ষোভ

ডান্ডিবার্তা | ০১ জুন, ২০২৩ | ১০:৪৯ পূর্বাহ্ণ

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট মহানগর যুবদলের দায়িত্ব নিয়েছিলেন যুবক বয়স অতিক্রম করা মমতাজ উদ্দিন মন্তু এবং বিএনপি থেকে আসা মনিরুল ইসলাম সজল। আহবায়ক ও সদস্য সচিবের দায়িত্ব পেয়ে প্রাণভরে করেছেন কমিটি বাণিজ্য। দল সাজানো তো দূরে থাক রীতিমত নিধিরাম সর্দারে পরিণত হয়েছেন এই দুই নেতা। নিধিরাম সর্দারি কেবল নিজেদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখেননি, বাকি নেতাদের মাঝেও ছড়িয়ে দিয়েছেন সেই প্রভাব। কারণ মন্তু সজলের এমন কারিশমা দেখে যুবদল রেখে অন্য সংগঠনে মনযোগী হয়েছেন সম্ভাবনাময় নেতারা। কথিত আছে, কোন এক গ্রামে নিধিরাম সর্দার নিজেদের সাহস শক্তির ব্যাপক জাহির করতেন। তিনি বোঝাতেন যে নিধিরাম অনেক শক্তিশালী ও সাহসী। গ্রামে ডাকাত আক্রমণ করলে গ্রামবাসীর ভয় নেই, কারণ নিধিরাম তো আছেই। একদিন সত্যি সত্যি ডাকাত হানা দিয়ে গ্রাম লুটে নিলো। কিন্তু নিধিরামের সাহসিকতা তো দূরে থাক, ছায়াও দেখা যায়নি। গ্রামবাসী জানতে চাইলো কোথায় সেই শক্তি সাহস? আর উত্তরে নিধিরাম জানায়, ঢাল তলোয়ার থাকলেই দেখিয়ে দিতাম। নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের নেতাদের অবস্থা কর্মীদের কাছে ঠিক এমনই। গত এক বছরের বেশ সময় ধরে কমিটি এনে দিচ্ছি, আনছি, সব রেডি, আর কটা দিন। এভাবেই ঘুরিয়ে চলছেন। কখনও টাকার অভাব, কখনও নেতা জেলে, কখনও পরিস্থিতি অনুকূলে না, কখনও ষড়যন্ত্র চলছে এভাবেই কমিটি আটকে থাকার অজুহাত দিতেন কর্মীদের কাছে। বিনিময়ে দিনের পর দিন পদপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে টাকা, উপঢৌকন নিয়ে নিতেন। পাঁচ দশ হাজার থেকে শুরু করে লাখ টাকা নেয়ারও অভিযোগ শোনা যায়। বাদ যায়নি বাসায় বাজার করানো থেকেও। সর্দারি করতে গিয়ে নেতাকর্মীদের কাছে রীতিমত ঘৃণার পাত্রে পরিণত হয়েছেন শীর্ষ দুই নেতা। এর পরেও যুবদলে থাকা বাকি তিন নেতার উপর ভরসা রেখে কিছু কর্মীরা এখনও যুবদলকে সক্রিয় করে রাখছেন। সূত্র বলছে, মহানগর যুবদলের অথর্ব নেতৃত্বের কারণে সম্ভাব্য নেতার অনেকেই যুবদলের রাজনীতির আশা ছেড়ে দিয়েছেন। বিশেষ করে ছাত্রদলের রাজনীতি ছেড়েছেন, কিংবা যুবদলে পদ প্রত্যাশী এমন নেতারা যুক্ত হচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবক দল কিংবা মূল বিএনপির রাজনীতিতে। যুবক বয়সে যেখানে আকর্ষণ থাকার কথা যুব রাজনীতিতে, সেখানে যুবদলের রাজনীতি উপেক্ষা করে রীতিমত ঘৃণা প্রকাশ করছেন তাঁরা। যার পেছনে রয়েছে যুবদলের নির্লজ্জ কমিটি বাণিজ্য ও নিধিরাম সর্দারি। মহানগর যুবদলের আহবায়ক ও সদস্য সচিবের বিরুদ্ধে গত এক বছরের বেশি সময় ধরে জমেছে অভিযোগের পাহাড়। নেতা থেকে শুরু করে তৃণমূল কর্মী পর্যন্ত অবগত আছেন কমিটি বাণিজ্যের বিষয়ে। একের পর এক অভিযোগ আর কমিটি তৈরির ক্ষেত্রে বাগড়া দেয়ার কারণে থমকে যায় এর সামগ্রিক কার্যক্রম। নখদন্তহীন নেতায় রূপ নেয়ার পর সকলেই বুঝে যান মন্তু ও সজলের দ্বারা পূর্ণ কমিটি আনা সম্ভব নয়। পরবর্তীতে থানা কমিটি করার চেষ্টা করলেও সেখানে বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছেন তাঁরা। সব মিলিয়ে কেবল খাতা কলমেই নেতা হিসেবে আছেন কমিটির পদস্থরা। বাইরে কর্মীদের কাছে মূল্য পাচ্ছেন না বললেই চলে। এক বছরেও কোন কমিটি দিতে না পারা, বিতর্কের মুখে থাকা এবং অভ্যন্তরীণ বিরোধের কারণে যুবদল হারিয়েছে তার অবস্থান। কেন্দ্রীয় নেতারাও এই কমিটির উপর রীতিমত বিরক্ত। জানা যায়, যুবদলের আহবায়ক কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার কথা বলে বছর ঘুরাচ্ছেন আহবায়ক ও সদস্য সচিব। কখনও একাশি সদস্য, কখনও একাত্তর সদস্য, কখনও একষট্টি সদস্য এবং সর্বশেষ একত্রিশ সদস্য। প্রতিবারই পদপ্রার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা হয়েছে অর্থ। কমিটির এমন বাণিজ্যে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেন কর্মীরা। এমন বাণিজ্যের খবর সর্বত্র ছড়িয়ে পরলে কেন্দ্রীয় নেতারা কমিটি প্রদান থেকে বিরত থাকেন। এরপর থেকেই ধীরে ধীরে পতন শুরু হয় এই দুই নেতার। যুবদলে মন্তু এবং সজল বিতর্কিত হবার পর তাদের আর নেতা হিসেবে গণ্য করে না কর্মীরা। কারণ সকলেই বুঝে গেছেন এদের হাতে আর কিছু করা সম্ভব না। আর তাই বাকি তিন নেতার কাছে ভিড়ছেন কর্মীরা। বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায় এই দুই নেতা ইউনিট কমিটি গঠন করতে গিয়ে কর্মীদের কাছে প্রত্যাখ্যান হবার পর। মূলত মূল কমিটি গঠন নিয়ে বিরোধের পর থানা কমিটি দিতে গিয়ে বাণিজ্য করার পরিকল্পনা ছিল। সেখানেও ভেস্তে যায় যাবতীয় পরিকল্পনা। এদিকে, মহানগর যুবদলে নতুন নেতৃত্বের মধ্যে নাম শোনা যাচ্ছে চার নেতার। যাদের মধ্যে আছেন, বর্তমান কমিটির যুগ্ম আহবায়ক সাগর প্রধান, মোয়াজ্জেম হোসেন মন্টি, শাহেদ আহমেদ এবং মাজহারুল ইসলাম জোসেফ। আগামী কমিটিতে চারজনের মধ্য থেকেই পরবর্তী শীর্ষ দুই নেতা দায়িত্ব নিতে পারেন মহানগর যুবদলের। সেই সম্ভাবনা অনুযায়ী কর্মীরাও তাদের সাথে যোগাযোগ ধরে রাখছেন। যুবদলের শীর্ষ এক নেতা বলেন, দুই নেতার এমন বাণিজ্য ও অথর্ব নেতৃত্ব শুরু দিকেই প্রমাণিত হয়েছিল। বিশেষ করে চৌরাঙ্গি পার্কে ইফতার আয়োজনকে ঘিরে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা এবং নেতাদের আনা নেয়া বাবদ চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা বাণিজ্যের অভিযোগ। এছাড়া প্রতিবার কমিটি আনার কথা বলে ‘টাকা দেন, পদ নেন’ এমন চুক্তিতে পদের লেনদেন চালু হয়। একই নেতা বা কর্মীর কাছে একাধিকবার টাকা চাওয়ার ঘটনা ঘটে। এছাড়া নিষ্ক্রিয়দের পদায়ন করারও অভিযোগ উঠে শীর্ষ দুই নেতার বিরুদ্ধে। এসব নিয়ে স্থানীয় নেতারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দিয়েও হতাশা প্রকাশ করেন। ধীরে ধীরে ফাঁস হয় অথর্ব দুই নেতার জারিজুরি। গত বছর মহানগর যুবদলের এক যুগ্ম আহবায়ক জানিয়েছিলেন, ‘প্রতি পদে ২০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকারও বেশি লেনদেন করা হয়েছে। এই বাণিজ্যে নেতৃত্ব দেয় আহবায়ক ও সদস্য সচিব। কমিটিতে পদ দেয়ার জন্য বাসায় বাজার করে দেয়া, খাসি কেনার টাকা, নেতাকে ভাড়া করে আনার টাকা, হাত খরচ, যাতায়াত খরচসহ নানান কিছু। আগ্রহীদের ফোন করে জানতে চাওয়া হয় পদ চায় কিনা? আগ্রহ প্রকাশ করলেই তাকে জানিয়ে দেয়া হচ্ছে সেই পদের মূল্য। এরপর দরাদরি করে পদে অন্তর্ভুক্ত করা হতো।’ এই বাণিজ্যের সংবাদ প্রকাশের পর তা আর আলোর মুখ দেখেনি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই মুহূর্তে যুবদলের নিধিরাম সর্দারদের হাতে পরিচালিত কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে নতুন করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করাই সবচেয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত হবে। যেকোন উপায়ে এই কমিটি বাতিল করে যোগ্যদের হাতে নেতৃত্ব তুলে দিলে আবারও সুদিন ফিরতে পারে মহানগর যুবদলে।




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা