চ্যালেঞ্জের মুখে জেলা বিএনপি

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট আগামী ১৭ জুন ১৪ বছর পর নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। তবে দলের এই আন্দোলন মুখী সময়ে এবং ১০১০ জন কাউন্সিলরের ভোটে একদিনে এ সম্মেলনকে অসম্ভব প্রায় মনে করছেন দলটির নেতাকর্মীরা। কাউন্সিলকে ঘিরে দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা দেখা যাচ্ছে। এর মধ্যে কাউন্সিল সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে ৬টি উপ কমিটি গঠন করেছে জেলা বিএনপি। দলটির নেতাকর্মীরা মনে করেন, কাউন্সিলকে ঘিরে ইতোমধ্যে প্রচার প্রচারণা হয়েছে। কাউন্সিলদের দিন ভেন্যূতে হাজার হাজার নেতাকর্মীর উপস্থিতি থাকবে। এত নেতাকর্মীদের শৃঙ্খলা, এত ভোটারদের ভোটগ্রহণ, কেন্দ্রীয় নেতাদের বক্তব্য ও তাদের আপ্যায়ন, জেলার নেতাদের নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা ও শোডাউন, ভোট গণনা, কাউন্সিলের অনুমতি পাওয়াসহ নানা বিষয় মিলিয়ে কাউন্সিল সম্পন্ন করা অনেকটা দূরহ ব্যাপার। এর মধযে কাউন্সিলের জন্য প্রয়োজন বিশাল বাজেটের। এর মধ্যে প্রতিযোগী নেতাকর্মীরা নিজেদের জয় পরাজয় মেনে নেয়া কিংবা কাউন্সিল শুরু আগেই যদি নানা বিষয়ে সংঘর্ষে জড়ায় সেটি সামাল দেয়াটাও একটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সম্প্রতি মহানগর বিএনপির এক পদযাত্রা কর্মসূচীকে ঘিরে জেলা বিএনপির নেতাকর্মীদের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। এতে রক্তাক্ত জখম হন কয়েকজন। সেই সংঘর্ষের রেশও রয়ে গেছে। সেই রেশের কারণে যুবদলের দুই গ্রুপের মধ্যে কাউন্সিলকে ঘিরে আবারো সংঘর্ষের শঙ্কা রয়েছে। সব মিলিয়ে কাউন্সিল সম্পন্ন করাটা একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জানা যায়, বিএনপির কাউন্সিলকে ঘিরে ইতোমধ্যে জেলা বিএনপির অধীনস্থ ১০ টি ইউনিট কমিটিতে উৎসবের আমেজ শুরু হয়েছে। কাউন্সিলকে ঘিরে সভাপতি ও সধারন সম্পাদক প্রার্থীরা দলের নেতাকর্মীদের সাথে যোগাযোগ বৃদ্ধি করছেন। এর মধ্যে দলের এই আন্দোলনমুখী সময়ে কাউন্সিলকে ঘিরে দলে অন্তঃকোন্দল ও সংঘর্ষের শঙ্কাও করছে নেতাকর্মীরা। জেলা বিএনপির অধীনস্থ ১০টি ইউনিট গুলো হলো- ফতুল্লা থানা, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা, আড়াইহাজার উপজেলা, রূপগঞ্জ উপজেলা, সোনারগাঁ উপজেলা, সোনারগাঁ পৌরসভা, আড়াইহাজার পৌরসভা, গোপালদী পৌরসভা, তারাব পৌরসভা, কাঞ্চন পৌরসভা। এর মধ্যে ফতুল্লা থানা বিএনপির কমিটি পূর্ণাঙ্গ হয়নি। ১০ টি ইউনিট কমিটির মধ্যে বর্তমান জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটি ৫টি ইউনিট ঘোষণা করেছে যার মধ্যে ফতুল্লা পূর্ণাঙ্গ হওয়া বাকি আছে। সোনারগাঁ উপজেলা, সোনারগাঁ পৌরসভা, আড়াইহাজার উপজেলা, আড়াইহাজার পৌরসভা, গোপালদী পৌরসভার কমিটি জেলা বিএনপির বিগত আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করে গিয়েছিল। এর মধ্যে কাউন্সিল তথ্যা ভোট ছাড়া সোনারগাঁ থানা, পৌরসভাসহ কয়েকটি কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দলটির নেতাকর্মীরা। দলীয় সুত্রমতে, ১০ টি ইউনিট বিএনপির ১০১ সদস্য করে সর্বমোট ১০১০ জন কাউন্সিলর আসন্ন জেলা বিএনপির কাউন্সিলে ভোট দিয়ে জেলা বিএনপির ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব নির্বাচন করবে। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতারা, জেলা বিএনপির কেন্দ্রে পদায়ন হওয়া নেতারা, জেলা বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা ডেলিগেট হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। দলের একাধিক সুত্র জানায়, সম্প্রতি জেলা বিএনপির এক সভায় জেলা বিএনপি নেতারা কাউন্সিল করার জন্য কিছুদিন সময় চান। পরে তাদেরকে সময় দিয়ে সম্ভাব্য তারিখ ১৭ জুন নির্ধারন করা হয়। তবে কাউন্সিলের জন্য অনুমতি পাওয়া, দলের আন্দোলনের নানা কর্মসূচী, দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের পরামর্শসহ নানা বিষয়ের উপর নির্ভর করবে কাউন্সিল ১৭ তারিখ থেকে আগানো বা পেছনোর বিষয়। কিছুদিন আগে কাউন্সিলের কথা উঠলেও জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়কদের অনুরোধে সেটি পেছানো হয়। জেলা বিএনপি নেতারা জানান, কাউন্সিলে ১০১ জন করে প্রতি ইউনিটের ভোটার থাকার কথা থাকলেও কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে আলাপ করে যেহেতু এখন বিরোধী দলের সময় ও কাউন্সিল সুন্দরভাবে করতে হবে তাই পরিবেশ পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে ভোটারের সংখ্যা কমবেশী হতে পারে। এর আগে ২০০৩ সালে শহরের চাষাঢ়ায় বিএনপির ক্ষমতাকালীন সময়ে জিয়া হলে দলের কাউন্সিলে ভোটের মাধ্যমে সভাপতি নির্বাচিত হন সাবেক প্রতিমন্ত্রী প্রয়াত অধ্যাপক রেজাউল করিম, সাধারণ সম্পাদক হন বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার ও সিনিয়র সহ সভাপতি হন জেলা বিএনপির আহবায়ক ও তৎকালীন সংসদ সদস্য গিয়াসউদ্দিন। সর্বশেষ ২০০৯ সালে শহরের আলী আহমেদ চুনকা পাঠাগারে দলের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে তৈমূরকে সভাপতি ও কাজী মনিরুজ্জামানকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত করেন কাউন্সিলররা। এবার কাউন্সিলে সভাপতি প্রার্থী হিসেবে নাম শোনা যাচ্ছে জেলা বিএনপির বর্তমান আহবায়ক মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিনের, যুগ্ম আহবায়ক মামুন মাহমুদের, লুৎফর রহমান খোকার, সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হিসেবে জোরালো আলোচনায় আছেন বর্তমান সদস্য সচিব গোলাম ফারুক খোকন, যুগ্ম আহবায়ক মাসুকুল ইসলাম রাজীব, শরীফ আহমেদ টুটুল, মোশারফ হোসেন। তাদের ঘিরে ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে নেতাকর্মীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন তাদের অনুগতরা। জেলা বিএনপির সদস্য সচিব গোলাম ফারুক খোকন জানান, আমরা কাউন্সিলের জন্য সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করেছি। এর মধ্যে আমাদের নেতাকর্মীরা কাউন্সিলের খবরে উচ্ছ্বাসিত। সবার সাথে আলোচনা করে ও কেন্দ্রের সাথে সমন্বয় করে একটি সুন্দর কাউন্সিল জেলা বিএনপি করতে পারবে বলে আমরা আশাবাদী। এই কাউন্সিলে জেলা বিএনপির জন্য উপযুক্ত নেতৃত্ব কাউন্সিলররা বেছে নেবে বলে আমার বিশ্বাস। তবে এর আগেই অনুষ্ঠিত হবে ফতুল্লা থানা বিএনপির কাউন্সিল। দলীয় সুত্রমতে, ইতোমধ্যে ফতুল্লা থানা বিএনপির প্রায় সকল ইউনিট কমিটি কাউন্সিলের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়েছে। যদিও এ কাউন্সিলকে পাতানো বলছেন দলের একাংশের নেতাকর্মীরা। তবুও এ কমিটিগুলো নিয়ে তাদের কোন অভিযোগ কেউ দলে লিখিত আকারে জানায়নি। এদিকে এসব কমিটি মিলিয়ে আগামী কাউন্সিলের আগে তথা ১৭ জুনের আগেই যেকোন সময়ে ফতুল্লা থানা বিএনপির ১০১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটী কাউন্সিলে সম্পন্ন করা হবে বলে দলের একাধিক সুত্র জানায়। এদিকে জেলা বিএনপির কাউন্সিলের অনুমতির ইতোমধ্যে স্থান নির্ধারণ করে অনুমতি চাওয়া হয়েছে। জানা যায়, জেলা বিএনপির আহবায়ক মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিনের পরিচালিত গিয়াসউদ্দিন ইসলামিক মডেল স্কুলে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এ কাউন্সিল। ইতোমধ্যে আহবায়ক নিজে এ স্থানটি নির্ধারণ করে অনুমতির জন্য আবেদন করেছেন। অনুমতি পাওয়া গেলে এখানেই হতে যাচ্ছে কাউন্সিল। সুত্রমতে, কাউন্সিলকে ঘিরে অন্তত ৫০ হাজার নেতাকর্মীর সমাগম ঘটবে এখানে। নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি ও মহানগর বিএনপির অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের সকল ইউনিটের নেতাকর্মীরা এতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেবেন। কাউন্সিলে ভোট দেবেন জেলা বিএনপির অধীনস্থ ১০ টি ইউনিটের ১০১০ জন কাউন্সিলর। যদিও ফতুল্লা থানা বিএনপির ১০১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটী কাউন্সিলের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়নি এখনো। তবুও কাউন্সিলের আগেই সেটি সম্পন্ন হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।