আজ শুক্রবার | ১৫ আগস্ট ২০২৫ | ৩১ শ্রাবণ ১৪৩২ | ২০ সফর ১৪৪৭ | রাত ২:১৯

কুতুবপুরে বড় ভাইদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে কিশোর অপরাধীরা!

ডান্ডিবার্তা | ১২ জুন, ২০২৩ | ১০:১৩ পূর্বাহ্ণ

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট বখাটে কিশোর, তরুণ ও যুবক হিসেবে তারা পরিচিত বিভিন্ন এলাকায়। কিন্তু তাদের ‘বড় ভাইরা’ সবাই রাজনৈতিক নেতা। তাই চাঁদাবাজি-ধান্ধাবাজির পাশাপাশি মারামারি-খুনোখুনিতে জড়িয়ে পড়লেও কোনো সমস্যা হয় না তাদের। মাদকাসক্ত এমন কিশোর-তরুণদের ‘হাতের পুতুল’ হিসেবে ব্যবহার করছেন ‘বড় ভাইরা’। এলাকার নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে কিশোরদের অপরাধে টানছে তারা। সম্প্রতি ফতুল্লার কুতুবপুর ইউনিয়নে এমন বখাটে ও এলাকাভিত্তিক গ্যাংয়ের তৎপরতা বেড়েছে নজর কাড়ার মতো। গত কয়েকসপ্তাহের ব্যবধানে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পাগল, নয়ামাটি, চিতাশাল, নিশ্চিতপুর, শাহীবাজার, রসুলপুর, দেলপাড়া, নুরবাগ, আদর্শ নগরসহ বিভিন্ন এলাকায় কিশোর গ্যাং বাহিনীর দফায় দফায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনায় রণক্ষেত্রতে পরিনত হয়ে উঠেছে। প্রকাশ্যে উঠতি বয়সের কিশোর ও যুবকদের হাতে দেশীয় অস্ত্র-সস্ত্রে সজ্জিত মহড়ায় পুরো ইউনিয়ন জোরে আতংক বিরাজ করছে। আহত অধিকাংশ ব্যক্তি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে মোটামুটি সুস্থতা বোধ করলেও অভিভাবকদের হয়রানির শেষ নেই। কয়েক দিনের ব্যবধানে কুতুবপুরের বিভিন্ন এলাকার মারামারির ঘটনায় ফতুল্লা মডেল থানায় একাধিক মামলা হলেও অদৃশ্য ইশারায়, প্রশাসনের গাফিলতি এবং ঢিলেঢালা গ্রেফতারি তৎপরতায় ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে মূল অপরাধীরা। প্রশাসনের এমন সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নানা অপরাধে অভিযুক্তরা আদালত থেকে জামিনে এসে পুনরায় জড়িয়ে পরছে ভয়ংকর অপরাধে। আর সেইসব কিশোর গ্যাং বাহিনীর এমন ভয়ংকর অপরাধে জড়িত অভিযুক্তদের আশ্রয়-প্রশ্রয়সহ সমাজের বিভিন্ন অপরাধ সুসংগঠিত করার লক্ষ্যে সরাসরি প্রকাশ্যেই শেল্টার দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে সরকার দলীয় স্থানীয় দুই বিতর্কিত নেতার বিরুদ্ধে। কথাই আছে, ‘বেড়ায় যখন ক্ষেত খায়, সে ক্ষেত কি রক্ষা পায়?’ প্রতিটি সমাজের দায়িত্বশীল কর্তাব্যক্তিদের সামাজিক অপরাধ নির্মূলে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করার কথা থাকলেও কুতুবপুর ইউনিয়নের বাস্তব চিত্র একেবারেই ভিন্ন। স্থানীয় দুই নেতা কুতুবপুরে রাজনৈতিক অধিপত্য প্রভাব বিস্তার ও নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় গড়ে তুলেছেন উঠতি বয়সের কিশোর গ্যাং বাহিনী। তাদের মাধ্যমেই মাদক, চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, ব্ল্যাকমেইলিং, চাঁদাবাজি, খুন, রক্তাক্ত জখমসহ প্রতিনিয়ত সুসংগঠিত হচ্ছে সমাজের ভয়ংকর অপরাধ। কুতুবপুরের একাধিক কিশোর গ্যাং বাহিনীর অপরাধ জগৎ নিয়ন্ত্রণ করে অনেকেই রাতারাতি হয়েছেন আঙ্গুল ফোলে কলাগাছ। সরেজমিনে অপরাধ অনুসন্ধানে বেড়িয়ে এসেছে কুতুবপুরের কিশোর গ্যাং বাহিনীর অপরাধ জগৎ নিয়ন্ত্রণ এবং প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দুই শেল্টারদাতার এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য। অনুসন্ধানে জানা যায়, দীর্ঘদিন যাবত পর্দার আড়ালে থেকে কুতুবপুরের কিশোর অপরাধ জগৎ নিয়ন্ত্রণে রয়েছেন, বিভিন্ন অপকর্মের জন্ম দিয়ে বার-বার আলোচনায় এসেছেন যিনি। কখনো জুয়ারি, কখনোবা ছাগল চুরির অপবাদে যুবককে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের মামলার আসামি হয়ে। সীমাহীন অপরাধে অভিযুক্ত ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের একজন বিতর্কিত নেতা আলাউদ্দিন হাওলাদার ও ফতুল্লা থানার তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী কথিত সেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মীর হোসেন মীরু। সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, আলাউদ্দিন হাওলাদার ও সন্ত্রাসী মীরু বাহিনীর কাছে ইউনিয়নের অধিকাংশ মানুষ এখন জিম্মি। তাদের দুই জনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এসব এলাকার অপরাধ জগৎ। শুধু তাই নয়, পাগলা, নয়ামাটি, শাহীবাজার, রসুলপুর, চিতাশাল, বউ বাজার এলাকায় জমি ক্রয়-বিক্রয় করলে তাদের দিতে হয় মোটা অংকের চাঁদা। বাড়ির মালিকদের অনেক বেশি দামে নির্মাণাধীন সামগ্রী নিতেও বাধ্য করা হয়। ডিস, ইন্টারনেট, ইট, বালু, সিমেন্ট, অবৈধ গ্যাস সংযোগও তাদের কাছ থেকে নিতে হয়। কেউ যদি বেশি দাম দিয়ে তাদের থেকে নিতে অস্বীকার করে, তাহলেই তার উপর নেমে আসতে পারে নির্মম নির্যাতন। জুয়ারি আলাউদ্দিন ও সন্ত্রাসী মীরুর বিশাল অপরাধ স্বর্গরাজ্যের দায়িত্বে রয়েছে একেকটি সন্ত্রাসী বাহিনী। সন্ত্রাসী মীরুর একাধিক সন্ত্রাসী বাহিনীদের মধ্যে অন্যতম কালা জাহাঙ্গীর, হাবিবুল্লাহ, রবিন, গেন্দু, খলিল, রাকিব, সোহান বাহিনী। আলাউদ্দিন হাওলাদারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে ইব্রাহিম, কনক, নিহাদ, ইউনুস, জিহাদ, নাঈম, ইমু বাহিনী। তাদের অপরাধ স্বর্গরাজ্য টিকিয়ে রাখতে কয়েক শতাধিক কিশোর ও যুবকদের দিয়ে গঠন করা হয়েছে সন্ত্রাসী বাহিনী। তুচ্ছ ঘটনায় পান থেকে চুন খসলেই শুরু হয় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। নাম প্রকাশ্যে অনইচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন, কুতুবপুরে অধিকাংশ কিশোর গ্যাং বাহিনীর শেল্টার দিচ্ছে আলাউদ্দিন ও মীরু। তাদের কারণেই আমাদের সমাজ থেকে অপরাধ নির্মূল করা সম্ভব হচ্ছে না। তাদের বাহিনীর লোকজনের মাধ্যমে কুতুবপুরের অধিকাংশ এলাকায় মাদক, চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ফিটিং, জবর দখলসহ নানা অপরাধ সুসংগঠিত হয়ে থাকে। বিভিন্ন সময় তাদের বাহিনীর অপকর্মের বিরুদ্ধে থানার অভিযোগ বা মামলা করলেও অদৃশ্য ইশারায় আসামিরা রয়ে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে। তাদের অপরাধ কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে প্রশাসনকেও তেমন তৎপর হতে দেখা যায়নি। কয়েক দিনের মধ্যে অপরাধীরা আদালত থেকে জামিনে এসে মামলা তুলে নিতে বাধ্য করা হয় বাদীদেরকে। আলাউদ্দিন ও মীরুর অপকর্মের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে তাদের অপরাধ স্বর্গরাজ্যের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করে গ্রকৃত অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। কুতুবপুরে আগামী প্রজন্মের মেধাশক্তিকে জাগ্রত রাখতে চাইলে এখন থেকেই সকল অপরাধ নির্মূলে প্রত্যেককেই কার্যকরী ভুমিকা পালন করতে হবে। আর যারা নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য উঠতি বয়সের কিশোরদের বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে তাদের জীবন বিনষ্ট করার চেষ্টা করছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি জানিয়েছেন সচেতন মহল। পাশাপাশি কুতুবপুরবাসীকে মাদক, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজদের হাত থেকে রক্ষা করতে অতিদ্রুত মুখোশধারী অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপ কমনা করেন।




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা