আজ বৃহস্পতিবার | ১৪ আগস্ট ২০২৫ | ৩০ শ্রাবণ ১৪৩২ | ১৯ সফর ১৪৪৭ | রাত ১০:১১

বিএনএফ থেকে বিএনপিতে ডিগবাজি রাজিবের

ডান্ডিবার্তা | ১৬ জুন, ২০২৩ | ১১:১৫ পূর্বাহ্ণ

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট এক সময় বিএনপি ভাঙতে যিনি ছিলেন সক্রিয়, শহীদ জিয়ার আদর্শ ছেড়ে নিয়ে ছিলেন জেলা ‘বিএনএফ’ এর সদস্য সচিব পদ এবার সেই মাসুকুল ইসলাম রাজীবই চাচ্ছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হতে। কিনেছেন মনোনয়নপত্র। দুঃসময়ে বিএনপি ভাঙার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত এমন নেতার সাধারণ সম্পাদক পদে মনোনয়নপত্র সংগ্রহের খবরে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে তৃণমূল বিএনপি। এছাড়াও গোয়েন্দা পুলিশের হাতে ফেনসিডিলসহ হাতে নাতে গ্রেপ্তার হয়ে ছিলেন রাজীব। তার বিরুদ্ধে আছে নারায়ণগঞ্জে ত্বকী হত্যায় অভিযুক্ত আজমীর ওসমানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ। চলছে চোরা চালান ও চাঁদাবাজির মামলাও। জাতীয় নির্বাচনের আগে এমন একজন বিতর্কিত ব্যক্তির জেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক হতে চাওয়ার পেছনে বিএনপির চলমান আন্দোলনকে বাধাগ্রস্থ করার ষড়যন্ত্র দেখছে তৃণমূল। সেই সঙ্গে ত্বকী হত্যায় অভিযুক্ত আজমীর ওসমানের একজন ঘনিষ্ঠ জনের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন চালিয়ে নেয়ার বিষয়েও বিব্রত বিএনপির সমমনা দলগুলোর নেতারা। টানা ১৬ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি যখন বলছে আওয়ামীলীগ সরকারের অধীনে তারা কোন নির্বাচনে অংশ নেবেনা তখনই বিএনপির সাবেক নেতা ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার তৈরি বিতর্কিত রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ) ঘোষণা দিয়েছে ৩০০ আসনে প্রার্থী দিয়ে নির্বাচনে অংশ নেয়ার। নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতৃত্ব স্থানীয় একাধিক সূত্র বলছেন, বিএনপি বর্তমান সরকারের অধীনে কোন নির্বাচনে যাবেনা। কিন্তু সরকার চাচ্ছে বহির্বিশ্বে নির্বাচনকে অংশ গ্রহণ মূলক হিসেবে প্রমাণ করতে। এর চেষ্টা হিসেবেই ২০১৩ সালের মত বিএনপির একটি অংশকে নির্বাচনে নিয়ে আসতে চায়। আর সেই আলোচনায় হাওয়া দিচ্ছে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনএফএর সদস্য সচিব রাজীবের হঠাৎ করেই জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হওয়ার দৌড়ঝাপ। সূত্রটি বলছে, একদিকে বিএনএফ ও মাদক সংশ্লিষ্টতা অপরদিকে বিগত সময়ে দলীয় কার্যক্রমে নিস্ক্রিয় ছিল রাজিব। তবুও আড়াইহাজারের এক নেতার হাত ধরে তিনি বর্তমানে জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক। এমনকি প্রায়শই রাত বিরাতে শহরের মিশনপাড়া ও আশপাশের এলাকায় আজমির ওসমানের গাড়ি থেকে নামতে দেখা যায়। ঘনিষ্ঠতার স্মারক হিসেবে তাকে উপহার হিসেবে দেয়া হয়েছে নিজের পছন্দের একটি বিলাশ বহুল মোটর সাইকেল। গত ছয় মাস ধরে রাজিব মোটর সাইকেলটি ব্যবহার করছেন। বিএনপির ওই নেতারা মনে করেন মূলত নির্বাচনের আগে সরকার বিরোধী যে আন্দোলন চলছে বিএনপির সেই আন্দোলন যেন নারায়ণগঞ্জে শক্তিশালী না হয় সে জন্যই যুগ্ম আহ্বায়ক থেকে সদস্য সচিব হতে চাইছেন রাজিব। যুক্তি হিসেবে তারা বলছেন, রাজিব মূলত বিএনএফ নেতা। ২০১৩ সালে গঠিত বিএনএফ নারায়ণগঞ্জ মহানগর কমিটির সদস্য সচিব রাজিব। সেই কমিটি এখনো বিলুপ্ত হয়নি, কিংবা রাজিব সেই কমিটি থেকে পদত্যাগ করেছে এমন দাবিও তিনি করছেন না। বিএনএফ যেহেতু সরকারের ইশারায় চলে সেহেতু সেই ইশারাতেই রাজিব সদস্য সচিব হতে উঠে পড়ে লেগেছেন। এতে করে একদিকে সে নারায়ণগঞ্জে সরকার বিরোধী আন্দলনে নিস্ক্রিয়তা আনতে পারবে। অপরদিকে নির্বাচনের আগমুহূর্তে দলে ভাঙন তৈরি করতে চাইলে সে বড় ভুমিকা রাখতে পারবে। মাসুকুল ইসলাম রাজিবের সঙ্গে মাদক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ বহু দিনের। বিএনপির ওই নেতাদের একটি পক্ষ বলছেন রাজিব ইয়াবা ও ফেনসিডিল সেবন করলেও মাদক ব্যবসায়ের সঙ্গে জড়িত নয়৷তবে আরেকটি পক্ষের দাবি রাজিব নিজে মাদক বিক্রি না করলেও মাদক ব্যবসায়ী অনুসারীদের রাজিব আশ্রয় প্রশ্রয় দেন। তার আগে ২০১১ সালের ৫ ডিসেম্বর জেলা গোয়েন্দা পুলিশের হাতে ফেনসিডিলসহ গ্রেপ্তারও হয়েছিলেন রাজিব। ডিবির তৎকালীন ওসি দেলোয়ার হোসেন বলে ছিলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ডিবি পুলিশের উপ পরিদর্শক (এসআই) তরিকুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি টিম পাঠানটুলী এলাকায় অভিযান চালিয়ে সাদা রংয়ের প্রাইভেট কারে থাকা (ঢাকা মেট্রো গ-২৫৮২০৫) ফেনসিডিলসহ ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরমধ্যে রাজিব একজন। এছাড়াও রাজিবের সঙ্গে শহরের নিতাইগঞ্জের শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী ও জাতীয়পার্টি নেতা সালাউদ্দিন বিটুর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আছে বলেও এই বিএনপি নেতাদের দাবি। কেবল মাদক সংশ্লিষ্টতাই নয় পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, মাসুকুল ইসলাম রাজীবেরি বরুদ্ধে চোরা কারবারি ও চাঁদাবাজীর মতো মামলাও আছে। প্রায় ১৪ বছর পর আগামী ১৭ জুন নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির দ্বি-বার্ষিক কাউন্সিল হচ্ছে। সভাপতি পদে জেলা বিএনপির বর্তমান আহবায়ক মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন একা হলেও সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্ধিতায় নেমেছেন দু’জন। তাদের মধ্যে একজন হলেন জেলা বিএনপির বর্তমান সদস্য সচিব গোলাম ফারুক খোকন ও অপর জন মাসুকুল ইসলাম রাজিব। তৃণমূল বলছে, ১০ম জাতীয় নির্বাচনের পর রাজিব বিএনপিতে সক্রিয় হলেও ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে ও পরে দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের নিয়ে রাজিবের তেমন কার্যকলাপ ছিলোনা। জেলা বিএনপির প্রবীন কয়েকজন নেতাও বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তাদের ভাষ্য, মাসুকুল ইসলাম রাজীব একজন সুবিধাবাদী নেতা। যিনি দলের দুঃসময়ে পালিয়ে থাকেন। তবে যখনি কেন্দ্রীয় নেতারা নারায়ণগঞ্জে আসেন তখনি তাকে দেখা যায় মঞ্চের উপরে। বিভিন্ন সভা-সমাবেশে নিজ দলের নেতা কর্মীদের সাথে তার উশৃঙ্খল আচরণের ঘটনাও কম নয়। আড়াইহাজার থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি মাহবুবুর রহমান সুমন বলেন, মাসুকুল ইসলাম রাজীবের বিরুদ্ধে জাতীয় গণমাধ্যমে ররিপোর্ট থেকেই জেনেছি যে, তিনি বিএনএফের নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সদস্য সচিব ছিলেন। তাছাড়া তার বিরুদ্ধে মাদকসহ ফৌজদারী আইনে মামলা রয়েছে। এসব নিয়ে নেতাকর্মীদের মাঝে মিশ্রপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। আসলে আমি মনে করি যে, গিয়াসউদ্দিন সাহেবের সাথে একজন যোগ্য এবং বিতর্কহীন নেতা জেলা বিএনপির নেতৃত্বে আসুক। তবে বিএনএফের সাথে জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন মাসুকুল ইসলাম রাজীব। মাসুকুল ইসলাম রাজিব বলেন, ‘আমি বিএনএফের সাথে কোন কালেই যুক্ত ছিলাম না। আমি তখন ছাত্রদলের প্রেসিডেন্ট ছিলাম। ২০১৩ সালের তৎকালিন সময়ে একটি সাদা কাগজে ১০ থেকে ১২টি নাম বেরহয়ে ছিল। ওই সময়ে আমি প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এসবের প্রতিবাদ জানিয়ে ছিলাম। আসছে কাউন্সিলে রাজিব জয়ী হলে তাকে কি জেলা বিএনপির আহবায়ক মোহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন মেনে নিবেন এই প্রশ্নের উত্তর জানতে তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেনি।




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা